চেন্নাই সুপার কিংস : আইপিএলের হলুদ দুর্গ 1 min read
Reading Time: 3 minutesক্রীড়া জগতে হলুদ রঙটা একটু বেশী প্রভাবশালী বললে অত্যুক্তি হয়না। ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে সেরা দল অস্ট্রেলিয়ার নাম বলতেই চোখে আসে হলুদ জার্সি। তেমনি ফুটবল দুনিয়াতে ৫ বারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলের জার্সিটাও হলুদ রঙা। ঠিক একই ব্যাপারটি ঘটছে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট লীগ আইপিএল এর ক্ষেত্রেও। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই পরিচালিত ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক এই ক্রিকেট যুদ্ধে সবচেয়ে সফল দলটি দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই শহরের দল ‘চেন্নাই সুপার কিংস।’
এখন পর্যন্ত ১২ আসরের মাঝে ৮ আসরেই ফাইনাল খেলেছে চেন্নাই। শেষ হাসি হেসেছে ৩ বার। তবে চেন্নাই সুপার কিংসের পথচলা মসৃণ ছিল না। বেশ কাঠখড় পুড়িয়েই নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে দলটি। ফিক্সিং কেলেঙ্কারির দায়ে দলটির মালিকানা এবং অংশগ্রহণ বন্ধ ছিল দুই আসর। তবে তাতে রঙ যায়নি দলের সাফল্যের। ফিরে এসে ঠিকই শিরোপা স্বাদ পায় মহেন্দ্র সিং ধোনীর দলটি।
আইপিএলের যাত্রার শুরু থেকেই চেন্নাই মানেই অপ্রতিরোধ্য এক শক্তি। ২০০৮ সালের প্রথম নিলামেই ধোনী, স্টিফেন ফ্লেমিং, ম্যাথু হেইডেন, মুত্তিয়া মুরালিধরন আর মাইক হাসিদের নিয়ে অসাধারণ এক দল গড়ে। প্রথম আসরে লিগ টেবিলে ৩য় হয়ে নিজেদের সেমিতে তুলে নেয় চেন্নাই সুপার কিংস। সেমিতে কিংস ইলাভেন পাঞ্জাবকে হারিয়ে প্রথম আসরেই ফাইনালের টিকেট বুঝে নেয় তারা। তবে শেন ওয়ার্নের অধীনে থাকা দুরন্ত রাজস্থান রয়্যালসের কাছে হেরে শিরোপা স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয় সেবার। আইপিএলের পরের আসরেও সাফল্য ধরে রাখে চেন্নাই। তবে এবার সেমিতে শেষ হয় তাদের যাত্রা। রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের কাছে হেরে বিদায় নেয় দলটি।

২০১০ সালে তৃতীয় আসরে এসে শিকে ছিঁড়ে চেন্নাইয়ের। লিগ পর্বের প্রথমদিকে মাত্র ২ জয় পেলেও ফিরতি সূচীতে রীতিমতো অজেয় হয়ে ওঠে তারা। সেমিতে চেন্নাইয়ের প্রতিপক্ষ ২য় আসরের চ্যাম্পিয়ন ‘ডেকান চার্জারস।’ অস্ট্রেলিয়ান পেস ব্যাটারি ডগ বলিঙ্গারের নৈপুণ্যে ১৪২ রান করেও ডেকানকে ৩৮ রানে হারায় চেন্নাই। আর ৩য় আসরের মাঝে ২ বার জায়গা হয় ফাইনালের মঞ্চে।
ফাইনালে চেন্নাইয়ের প্রতিপক্ষ আরেক শক্ত প্রতিপক্ষ ‘মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।’ ফাইনালে সুরেশ রায়নার অর্ধশতক চেন্নাইকে এনে দেয় ১৬৮ রানের পুঁজি। পরবর্তীতে শিরোপা নির্ধারণে সেটিই হয়ে যায় যথেষ্ঠ।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। ভারতীয় ক্রিকেটের সাম্প্রতিক সাফল্যে চেন্নাই সুপার কিংসের রয়েছে বিশাল এক অবদান। মুরালি বিজয়, সুরেশ রায়না, আম্বাতি রাইডু সহ অনেকের উত্থানের ভিত্তি ছিল এই দলটিই। এছাড়া রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দন আশ্বিনের অসাধারণ স্পিন জুটির মূলেও ছিল চেন্নাই সুপার কিংস।
চেন্নাইয়ের ২০১১ সালের গল্পটাও প্রায় একই রকম। ২০১১ আইপিএল ৮ দল থেকে ১০ দলে উন্নীত হয়। ২০১০ আসরের মতই এবারো প্রথম দিকে বেশ বাজে অবস্থায় থাকে ধোনীর দল। তবে শেষ আট ম্যাচের মাঝে সাতটিতেই জয় তুলে নিয়ে আবারো নিজেদের সামর্থ্যের জানান দেয় তারা। ২০১১ আসরের ফাইনালে আবারো নতুন প্রতিপক্ষ পায় চেন্নাই। এবারের দলটি ছিল রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। ফাইনালে চেন্নাইয়ের করা ২০৫ রান টপকানো সম্ভব হয়নি ব্যাঙ্গালোরের। ফলে টানা ২য় বারের মত শিরোপা উৎসব করেন চেন্নাইয়ের বাসিন্দারা।

২০১২ সালে আরো একবার ফাইনালের মঞ্চে ওঠে চেন্নাই। তবে এবার সাকিব আল হাসানের কলকাতা নাইট রাইডার্স তাদের হারায় ৫ উইকেটের ব্যবধানে।
চেন্নাই এরপরে নিয়মিত নিজেদের ক্ষুরধার খেলা চালিয়ে গেলেও শিরোপা স্বাদ আর পায়নি। সেই গেরো খুলে ২০১৮ সালে। পুরো টুর্নামেন্টে আম্বাতি রাইডু এবং শেন ওয়াটসন জাদুতে সবাইকে স্তব্ধ রাখে ধোনীর দল। ফাইনালে সাকিব আল হাসানের বর্তমান দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে হারিয়ে ৩য় শিরোপা ঘরে তোলে চেন্নাই সুপার কিংস। আর সবশেষ ২০১৯ আসরে আবারো ফাইনালে উঠে দলটি। তবে এবারের স্বপ্নভঙ্গ একটু বেশিই নির্মম ছিল তাদের কাছে। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের কাছে চেন্নাইয়ের পরাজয় ছিল মাত্র ১ রানের।
ম্যাচ গড়াপেটার চেন্নাই
২০১৩ সাল রীতিমতো ঝড় বইয়ে দিয়েছিল আইপিএল এবং ক্রিকেট বিশ্বে। রাজস্থান রয়্যালস এবং ভারত জাতীয় দলের পেসার শ্রীশান্ত সহ ফিক্সিংয়ের দায়ে আটক হন আরো দুজন। এছাড়া আটক হন চেন্নাই সুপার কিংসের মালিকপক্ষের গুরুনাথ মায়াপ্পান। মায়াপ্পানের আরো একটি পরিচয় ছিল তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই এর পরিচালক এন শ্রীনীবাসনের পুত্র। গুরুনাথ মায়াপ্পান সরাসরি ফিক্সিংয়ে জড়িত না হলেও জুয়াড়ি ভিন্দু দারা সিং এর সাথে কল রেকর্ডের প্রমাণের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ করা হয় মায়াপ্পান এবং সেই সাথে তার দল চেন্নাই সুপার কিংসকে। দুই বছরের নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০১৬ এবং ২০১৭ আসরে দেখা যায়নি ভারত ক্রিকেটের হলুদ অংশকে।
তবে ফিক্সিং বিতর্কের পরেও বেশ ভালভাবেই আইপিএলে ফিরে আসে চেন্নাই। প্রতিবারের মতই দাপট দেখিয়ে ঘরে তোলে ২০১৮ আইপিএল শিরোপা। ২০১৯ সালে রানার্সআপ হলেও চলতি আইপিএল এর জন্য আবারো নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস।
আইপিএল ২০২০
নতুন দশকের প্রথম আসরেও বেশ দাপট দেখানোর অপেক্ষায় আছে মহেন্দ্র সিং ধোনীর চেন্নাই সুপার কিংস। নিলামে প্রায় ৮৪ কোটি খরচ করে দলে টেনেছে বিশ্ব ক্রিকেটের বড় কিছু নাম।
রবীন্দ্র জাদেজা, মুরালি বিজয়, জস হ্যাজেলউড, আম্বাতি রাইডু, সুরেশ রায়না, ফাফ ডু প্লেসি, শেন ওয়াটসন, শার্দুল ঠাকুর, দীপক চাহারদের দলের অধিনায়ক বরাবরের মতই থাকছেন মহেন্দ্র সিং ধোনী।
আর দলটির কোচিং পদে ২০০৯ থেকেই আছেন নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তী স্টিফেন ফ্লেমিং।