অর্থনীতি

চীন-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের পরিণতি কি?1 min read

মে ৩০, ২০১৯ 3 min read

author:

চীন-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের পরিণতি কি?1 min read

Reading Time: 3 minutes

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন, বিশ্বের এই দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে যে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বটি রয়েছে তার সূচনা হয়েছিলো গত বছরের শুরুর দিকে কিছু অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়েমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছুদিন আগ পর্যন্ত চীনের অর্থনৈতিক উত্থান নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন ছিলো নাএমনকি মার্কিন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা প্রথমে এটাই বলেছেন যে, “চীন একটি দায়িত্বশীল বৈশ্বিক অংশীদার হয়ে উঠছে।” 

কিন্তু সম্প্রতি চীন কে একটি হুমকি হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র এবং এরই ফলশ্রুতিতে তারা গ্রহন করছে নানা ধরনের পদক্ষেপ যার অধিকাংশই চীনের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছেবিশ্লেষকরা মনে করেছেন যে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রতিনিয়ত যেভাবে বাড়ছে তাতে শেষ পর্যন্ত একটা যুদ্ধ বেধে যেতে পারেএবং যদি তা হয়, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া হবে বিশ্বব্যাপী

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

যুক্তরাষ্ট্র সরকার কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে, তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেচীনের পন্যগুলোর উপরে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে সেগুলো ভোক্তাদের কাছে ব্যয়বহুল করে তুলছে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রে বাজার হারাচ্ছে চীনট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ফ্ল্যাট স্ক্রীন টেলিভিশন, বিমানের অংশ এবং চিকিৎসা ডিভাইস সহ ৩৪ বিলিয়ন মূল্যের চীনা পন্যের উপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপ করেশুল্কের জন্য চিহ্নিত পণ্যগুলি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির সময় ২৫% সীমান্ত ট্যাক্সের সম্মুখীন হবে। 

চীনের প্রতিক্রিয়া

জবাবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে অর্থনৈতিক ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক যুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং গলদা, সয়াবিন, অটোমোবাইলসহ প্রায় ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করে তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়। 

চীনের কিছু বিতর্কিত বাণিজ্য অনুশীলনের তদন্ত শেষ হওয়ার পরপরই ট্রাম্প প্রশাসন এই শুল্কারোপ শুরু করেমূলত এই বাণিজ্যিক আক্রমণ চীনকে চাপের মুখে ফেলার একটি নতুন কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্রযুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো চীনে অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ পাচ্ছে যেখানে চীন তার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চাচ্ছেঅন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তা প্রতিহত করতে তাদের বাজারে চীনা পণ্যের প্রবেশ কঠিন শর্তের আওতায় আনছে

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চাপের অন্যান্য পরিকল্পনা  

ট্রাম্প বলেছেন, চীন তার শুল্কের প্রতি কীভাবে সাড়া দেয় তার উপর নির্ভর করে, তিনি আরও ৫০০ বিলিয়ন ডলারের চীনা পন্যের উপর শুল্কারোপ করবেন কিনামূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন উভয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে শুল্কের প্রাথমিক রাউন্ড অত্যন্ত গভীরভাবে আঘাত করার জন্য নকশা করেবেইজিংয়েরমেড ইন চায়না ২০২৫প্রোগ্রামের উপর অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ প্রযুক্তির চীনা পণ্যগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করছে যার মধ্যে রয়েছে চীনা সরকারের উন্নত পাওয়ারহাউস রূপান্তর করার উদ্যোগ। 

হুয়াওয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা

চীনের উপর আরো একধাপ চাপ বৃদ্ধির পরিকল্পনায় গত ১৮ মে চীনা নেটওয়ার্কিং ব্র্যান্ড ও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের কিছু আপডেট বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম  সংস্থা গুগলবিবিসি এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন বেশকিছু স্মার্টফোন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকেএনটিটি লিস্টেঅন্তুর্ভুক্ত করেছে এবং হুয়াওয়ে তার মধ্যে অন্যতমউক্ত তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা করতে হলে বিশেষ লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেন ঝেংফেই একটি জাপানি গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা এরকম কিছুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলামএখন থেকে আমরা নিজেদের যন্ত্রাংশ নিজেরাই তৈরি করার পরিকল্পনার কথা ভাবছিপশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে বেশ কিছুদিন ধরেই সমালোচনার সম্মুখীন হয়ে আসছিল হুয়াওয়েতাদের উপর অভিযোগ আনা হয় যে, তারা তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে পশ্চিমা নাগরিকদের ওপর নজরদারি করছেএমন সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকেযদিও তাদের এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে হুয়াওয়ে কর্তৃপক্ষ। 

আশার কথা এই যে এই ঘোষণার দিনের মাথায় হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রবিষয়টি চীনের সঙ্গে মার্কিনিদের চলমান বাণিজ্য দ্বন্দ্বের কিছুটা শিথিলতা হিসেবে মনে হলেও বস্তুত দুটি দেশই প্রস্তুত হচ্ছে তাদের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে

এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে হুয়াওয়ের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝুকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রেপ্তার করে কানাডাএসময় হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ করা হয়

এই ঘটনাকে একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেন হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী রেন ঝেংফেই এবং ট্রাম্প এর উপর এর দায় ভাড় চাপিয়ে দেনতিনি বলেন, হুয়াওয়ের উন্নত প্রযুক্তি ছাড়া বিশ্ব চলতে পারবে নাযুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়েকে  যতই দমীয়ে রাখা চেষ্টা করুক না কেন, তাতে সফল হবে না

দুটি দেশের মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য সংগঠিত সুস্থ ধারার বাণিজ্যিক হামলা খুব বড় বিষয় নয়কিন্তু যদি এভাবে চলতে থাকে যে দেশ দুটি একে অপরের উপর আরো বেশি শুল্ক দিচ্ছে, তাহলে এটি অর্থনৈতিক যুদ্ধকে ছাড়িয়ে আক্ষরিক অর্থে যুদ্ধে রুপান্তর হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা

লেখক- সালেহীন সাকিব

আরও দেখুন- চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে বাংলা ইনফোটিউবের বিশ্লেষণ 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *