অর্থনীতি বাংলাদেশ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য কতটুকু প্রস্তুত বাংলাদেশ?1 min read

সেপ্টেম্বর ১, ২০১৯ 2 min read

author:

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য কতটুকু প্রস্তুত বাংলাদেশ?1 min read

Reading Time: 2 minutes

বাংলাদেশে চোখে পড়ার মতো কাঠামোগত কিছু উন্নয়ন হচ্ছে এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলের মতো মেগা প্রোজেক্ট শেষ হওয়ার পথে। তবে কাঠামোগত উন্নয়ন সার্বিকভাবে দেশ ও দশের উন্নয়নের সূচক নয়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা, বেকারত্বের সংখ্যার দিকে একবার চোখ বুলালেই কারও বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা না যে সামনে বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হবে অনেক লম্বা কঠিন একটি পথ।

বিশ্ব ব্যাংকের হিসেব মতে কোন ব্যক্তির দৈনিক আয় ১.২৫ ডলার বা তার নিচে হলে সে দরিদ্র। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের চার কোটির বেশি মানুষ এখনও দারিদ্র্য সীমার নীচে অবস্থান করছে যা কিনা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪.৮৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের দেশে প্রতি বছরে প্রায় ২২ লাখ মানুষ শ্রম বাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু কাজ পায় মাত্র ৭ লাখ মানুষ। তবে বাংলাদেশের মোট বেকারের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন রকম পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেব মতে দেশে কর্মক্ষম ৫ কোটি ৬৭ লাখ লোকের মধ্যে কাজ করছে ৫ কোটি ৫১ লাখ। এই হিসেবে দেশের বেকারের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬ লাখ। কিন্তু আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বেকারের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩ কোটি। আইএলও বলছে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বেকারের সর্বোচ্চ হারের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এই অঞ্চলে বাংলাদেশের চেয়ে কেবল আফগানিস্থান ও মালদ্বীপে বেকার মানুষের হার বেশি।

দেশের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে বেকার সময় পার করছে। অপরদিকে দেশের ছোট-বড় কোম্পানিগুলো দক্ষ কর্মী খুজে পাচ্ছে না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো বাংলাদেশে দক্ষ কর্মীর চাহিদা পূরণ করছে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন প্রায় ৭০ লাখ বাংলাদেশী। প্রতি বছর তারা গড়ে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠান। অথচ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করা প্রায় মাত্র ২ লাখ কর্মী, শ্রমিকরা প্রতি বছর প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমাদের দেশ থেকে নিয়ে যায়। যদিও কত টাকা নিয়ে যায় তার প্রকৃত হিসেব পাওয়া বেশ মুশকিল।

বর্তমানে আমারা যাচ্ছি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। এই বিপ্লব প্রযুক্তির বিল্পব। উন্নত দেশগুলো প্রযুক্তির সাহায্যে ইতিমধ্যেই অনেক কিছু অটোমেটেড করে ফেলেছে যা কিনা অদক্ষ শ্রমিকদের চাকরির জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রযুক্তির ব্যবহারে আরও অনেক পেশার মানুষই বেকার হবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৭%, জার্মানিতে ৩৫%, যুক্তরাজ্যে ৩০%, জাপানে ২১% মানুষ চাকরী হারাবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। পড়তে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য যে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুরোপুরি দাঁড়িয়ে আছে আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিক ও প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্সের টাকায়। প্রযুক্তি অবধারিতভাবে এই দুই জায়গায়তেই আঘাত হানবে। ইতিমধ্যে চায়না তৈরি পোশাক শিল্পে অটোমেটেড যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। চতুর্থ এই শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ৬০% কর্মীর কাজ হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এমন একটি অবস্থায় সময় থাকতে আমরা যদি আমাদের জনবলকে দক্ষ করে না তুলি তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটি যথাযথ কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখেছে কি?

লেখক- হাসান উজ জামান 

আরও পড়ুন- গত ৫ বছরে দেশে ফিরেছে ১৭ হাজার ৩০৩ জন প্রবাসী শ্রমিকের লাশ

আরও পড়ুন- ১০ জনের মধ্যে ৯ জন পোশাক শ্রমিকেরই তিন বেলা খাওয়ার সামর্থ্য নেই

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *