NEWS TUBE বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

সহজেই মিলছে না গ্রিনকার্ড!1 min read

জানুয়ারি ৩০, ২০১৮ 4 min read

সহজেই মিলছে না গ্রিনকার্ড!1 min read

Reading Time: 4 minutes

সাহেদ আলম,

যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের জন্য গ্রিনকার্ড আবেদন করলেই, সেসব আবেদনে ইতিবাচক ফল মিলছে সম্প্রতি। তবে, মামলা বা আবেদনের ফলাফল হওয়ার পরও, গ্রিনকার্ড হাতে পেতে আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে। আর, সবার জন্যেই গ্রিনকার্ড পাওয়ার আগে আরেকবার মৌখিক পরিক্ষার বাধ্যবাধকতার কথা বলা হলেও, মূলত ডাকা হচ্ছে এশিয় এবং মুসলিমদেরকেই। তাতেও জটিলতা বাড়ছে গ্রিনকার্ড হাতে পেতে। বিভিন্ন অভিবাসন আইনজীবি, ভুক্তভোগীদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা, সরকারী নথিপত্র আর অভিবাসন সংক্রান্ত সংবাদ পর্যালোচনা করেই এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অভিবাসন দপ্তরে এই মুহুত্বে ঝুলে থাকা আবেদনের পরিমান প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ, বিপরিতে, ফলাফল দেয়া যাচ্ছে, প্রতিবছর , আড়াই লক্ষের কিছু বেশি মামলার ক্ষেত্রে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর যদিও, এই অভিবাসন ব্যাকলগ (মাত্রারিক্ত আবেদন নিষ্পত্তির তালিকা) কমিয়ে ফেলার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়েছে, তবে বাস্তবে মাঠে তার ফল দেখা যাচ্ছে কমই।  বরং,গ্রিনকার্ড দেবার আগে সরাসরি বা মৌখিক পরিক্ষার জন্য ডাকা হচ্ছে অনেককেই। এসব কারনে, গ্রিনকার্ড হস্তান্তরের ক্ষেত্রে আগে যেখানে ৬-৭ মাস লাগতো এখন সেটা ৯ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্তও সময় নিচ্ছে। কারো কারো ক্ষেত্রে এই অপেক্ষার প্রহর দেড় বা ২ বছরের বেশি হয়ে যাচ্ছে। তবে, আশার কথা হলো, মামলা বা বসবাসের আবেদনপত্রে যৌক্তিক কারন দেখানো গেলে, অভিবাসনের অনুমতি মিলছে সহজেই।

১৪ নভেম্বরে , অভিবাসন নীতি নিয়ে কট্টর মতাদর্শের এটর্নী টম হমান কে ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস (আইস) এর প্রধান হিসেবে নিয়োগ চুড়ান্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টম হমান গত জানুয়ারীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেবার পর, তার আগের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন, এবং বিভিন্ন গনমাধ্যমে শক্ত অভিবাস নীতি বাস্তবায়নের পক্ষে জোরালো মতামত দিয়ে আসছিলেন। অবস্য, তার এই নিয়োগে সব পরিস্থিতি উলট পালট হবে কিনা সেটা এখনও জানা যাচ্ছে না। তবে গত কয়েক মাসের আবেদন প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করে, আইনজীবিরা দেখছেন, আবেদন যথাযথ ভাবে করা থাকলেই, সেটা গৃহীত হচ্ছে, বাতিল হচ্ছে কমই।

নিউইয়র্কে কর্মরত ফিলিপিনো আইনজীবি লিজ কোবরাডর, প্রথম আলোর সাথে কথোপকথনে  বলছিলেন,’ এটা ঠিক, সাম্প্রতিক সময়ে আমার হাতে জমা দেয়া কোন কেইস (আবেদন) বাতিল হয়নি। যদি স্থায়ী বসবাসের আবেদন এর কেইস এর মেরিট ( বিশ্বাসযোগ্য কারণ) থাকে, তাহলে সেগুলো বেশ সহসাই তারা গ্রহন করছে, অর্থাৎ সিদ্ধান্ত দিয়ে দিচ্ছে যে, কেইস এপ্রুভড। কিন্তু সমস্যা বাধছে, সেই সব সিদ্ধান্ত দেয়া আবেদন গুলির দ্বিত্বীয় ধাপ ‘গ্রিনকার্ড’ ছাড়পত্রের বেলায়। যেটা আগে অনেক ক্ষেত্রে কোন জটিলতা না থাকলে ৫ থেকে ৭ মাসের মধ্যেই চলে আসতো এখন সেখানে, মুখোমুখি সাক্ষাৎকার বা অনন্য বাড়তি যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরন করা হচ্ছে। সেকারনে, গ্রিনকার্ড হাতে এসে পৌছাতে দেরি হচ্ছে।

তাহলে, কি সব জমে থাকা কেইস এর ক্ষেত্রেই এটা হচ্ছে? পাল্টা প্রশ্নের উত্তের এটর্নী লিজ প্রথম আলোকে বলেন, না সব ক্ষেত্রেই এমনটা হচ্ছে বলে আমি মনে করছি না। যদিও, ট্রাম্প প্রসাশননের বাড়তি কড়াকড়িতে সবার জন্যে মৌখিক পরিক্ষার কথা বলা হয়েছে, তবে এটা নির্ভর করে, নেবরাস্কা’র অভিবাসন অফিসের সিদ্ধান্তের উপর। অনেক ক্ষেত্রেই, আমার ইউরোপীয় ক্লায়েন্টরা মৌখিক পরিক্ষা ছাড়াই পেয়ে যাচ্ছেন গ্রিনকার্ড। তবে বাংলাদেশ ভারত বা পাকিস্থান এবং আরো বড় করে বললে, পুরো এশিয়দের আবেদন এর ক্ষেত্রে এখন এই মৌখিক পরিক্ষা কিছুটা বাধ্যতামূলক মনে হচ্ছে, কারন সবাইকেই ডাকছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশীদের তরফে যতগুলি এক্সট্রা অর্ডিনারী বা ইবি-১ ক্যাটারীর গ্রিনকার্ড আবেদন হয়েছে তার সিংহভাগ হয়েছে,  লিজ কোবরাডর এর মাধ্যমে। ঢাকার অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন সামনের সারির সাংবাদিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মীর ইবি-১ ক্যাটাগরীর অভিবাসন আবেদন তিনি সম্পন্ন করেছেন।প্রায় সবারই আবেদন গৃহীত হয়েছে এবং দু একজন বাদে সবার গ্রিনকার্ডও চলে এসেছে।আবার এদের অনেককেই, ডাকা হয়েছে মৌখিক পরিক্ষার জন্য। আবার মৌখিক পরিক্ষা দেবার পর প্রায় দেড় বছর পার হতে চলেছে, তবুও এখনও সোনার হরিন গ্রিনকার্ড এর দেখা মেলেনি এমন দু একজনও আছেন। এই প্রতিবেদনকের সাথে আ্লাপকালে তাদের নাম উল্লেখ না করার অনুরোধ জানিয়ে বেশ হতাশাই প্রকাশ করেছেন তারা। যদিও, কেইস আবেদন তাদের গৃহীত হয়ে আছে অনেক দিন ধরেই। এ্কই প্রেক্ষাপট পারিবারিক বা অন্যভাবে যারা গ্রিনকার্ড এর আবেদন করেছেন তাদের বেলাতেও এই ধীর নীতি প্রযোজ্য হচ্ছে।

ইবি-১, (একস্ট্রা অর্ডিনারী কোয়ালিফাইড) ইবি-৫ (বিনিয়োগ কোট) এর বাইরে অন্যন্য ক্যাটাগরীর আবেদনের যেমন রাজনৈতিক আশ্রয়া অথবা ইউ ফোর ( বিধবা, নারী নির্যাতন সংক্রান্ত আবেদন) এর ক্ষেত্রে যাদের আবেদন করা ছিল, তাদের অনেক কেই বেশ খানিকটা লম্বা সময় পরে হলেও হাতে পাচ্ছেন না গ্রিককার্ড।

সম্প্রতি বাংলাদেশী কমিউনিটির যারাই আবেদন করে রেখেছিলেন, আদালতে তাদের ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ফল পেয়েছেন। এই তালিকায় রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, ক্যামেরা সাংবাদিক, অনলাইন সাংবাদিক সবাই আছেন। এখন, তারা প্রয়োজনীয় বিধিবিধান মেনে, গ্রিনকার্ডের আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে গেছেন। তবে, তাদের অনেকের অস্বস্তি দিনে দিনে বাড়ছে। কেননা, ইমিগ্রেশন কোর্ট তাদের মামলার পক্ষে রায় দিলেও, গ্রিন কার্ড আবেদনের ফল আসতে দেরি হচ্ছে অনেক বেশি। জ্যামাইকায় বসবাসরত এক পরিবার, প্রায় ৩ বছর হতে চলল, তবুও তাদের গ্রিনকার্ড এখনো আসেনি। অন্য পরিবার, আবেদন করে রেখেছে, প্রায় দেড় বছর, তবুও দেখা নেই এখনও গ্রিন কার্ডের।

বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত এটর্নী মঈন চৌধুরী বলছিলেন, অভিবাসন এর জন্য আবেদন গ্রহন করা না করার সম্পূর্ন এখতিয়ার যারা এটার সিদ্ধান্ত দেন তাদের উপর। তবে, ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে আপনার আবেদন এর শক্ত ভিত্তির উপরেই নির্ভর করে, যে আপনার আবেদনটি ওরা গ্রহন করবে, নাকি বাতিল করে আপনাকে দেশে ফেরত যেতে বলবে। তিনি আরো বলছিলন, এমন কোন নির্দেশনা বা নিয়ম জারি করা হয়নি যে, যেই আবেদন করবে, তাকেই দিয়ে দেয়া হবে স্থায়ী বসবাসের আবেদন পত্র। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে, এখন একটু বাড়তি যাচাই বাছাই এর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে কারনেই গ্রিনকার্ড হাতে পেতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। তবে, আবেদন খুবই কম প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে বলে মনে করেন তিনিও।

‘প্রতি বছর ইমিগ্রেশন দপ্তরের একটি নির্দষ্ট সংখ্যাক কোটা থাকে।ধরুণ এ বছর তারা ৫০ হাজার গ্রিন কার্ড দেবে বলে কোটা নির্ধারন করে রেখেছে, এখন যদি আবেদন পড়ে. ২ লক্ষ সেক্ষেত্রে তারা একটু বাড়তি যাচাই বাছাই এর প্রেক্ষাপট তৈরী করে। আগের প্রসাশন যেমন করেছে, এখনও তেমনটি হচ্ছে। তবে ভিতরের খবর হলো, অভিবাসন বৈধতা পেতে যেসব আবেদন তার যে জট তৈরী হয়েছে, সেটা কমিয়ে ফেলতে সচেষ্ট হচ্ছে প্রসাশন।’ -বলছিলেন, এটর্নী মঈন চৌধুরী।

অভিবাসন দপ্তরের এই লেজে গোবরে অবস্থা নিয়ে সরব মূলধারার গনমাধ্যমগুলিও। দ্যা হিল- এ প্রকাশিত ‘আওয়ার ইমিগ্রেশন কোর্ট আর ড্রনিং’ বা আমাদের অভিবাসন আদলতগুলো ডুবতে বসেছে শীর্ষক একটি সংবাদ ১৩ নভেম্বরে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ইমিগ্রেশন রিভিউ এক্সিকিউটিভ অফিস এর   যে তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ঝুলে থাকা অভিবাসন আবেদন এর সংখ্য, ৫ লক্ষ ১৫ হাজর ৩১ টি। এক বছর পরে অর্থাৎ ২০১৭ সালে এই ঝুলে থাকা আবেদন এর সংখ্যা এক লক্ষের বেশি বেড়ে দাড়িয়েছে,  ৬ লক্ষ ২৯ হাজার ৫১ টি। এই বাড়তি আবেদন প্রতি বছর যোগ হচ্ছে অমিমাংশিত কেইস হিসেবে। যেটা প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০১৫ সালে যেখানে মোট গ্রিনকার্ড এর আবেদন ছিল ২ লক্ষ ৮৭ হাজার, সেটা ২০১৬ সালে বেড়ে দাড়িয়েছে ৩ লক্ষ ২৮ হাজারে। অন্যদিকে এসব কেইস বা আবেদন এর মধ্যে ২১০৫ সালে প্রায় ২ লক্ষ ৬২ হাজার কেইস সমাধান করে দেয়া গেছে, তবে ২০১৬ সালে এসে ২ লক্ষ ৭০ হাজার কেইস এর ফলাফল দিতে পেরেছে বিচারকরা। অর্থাৎ এই এক বছরেই ঝুলে থাকা কেইস এর ঘরে চলে গেছে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি আবেদন। এসব পরিসংখ্যান দিয়ে বলা হয়েছে, যদি অভিবাসন ব্যবস্থার সুষ্ট এবং নিয়মতান্ত্রিক সমাধানে অতিরিক্ত জনবল এবং বিচারক নিয়োগ না দেয়া হয়, তাহলে নানামুখি জটিলতার আবর্তেই ঘুরতে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন সংস্কার পদক্ষেপ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *