ইতিহাস

ইসলামের যেসব আবিস্কারের কথা আপনি জানেন না1 min read

মে ৮, ২০১৯ 3 min read

author:

ইসলামের যেসব আবিস্কারের কথা আপনি জানেন না1 min read

Reading Time: 3 minutes

প্রাচীন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা ও আবিষ্কারে মুসলিমদের পদচারণা ছিলো চোখে পরার মতো। জ্ঞান কান্ডের এমন কোনো শাখা ছিলো না, যেখানে মুসলিম ব্যক্তিদের কোনো অবদান নেই। বর্তমানে আমরা  যেসব  বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সুফল ভোগ করছি, এগুলোর প্রায় প্রত্যেকটিতেই ইসলাম ও মুসলিম ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান রয়েছে।

আধুনিক বিশ্বের কোন কোন আবিষ্কারে মুসলিমদের প্রত্যক্ষ অবদান রয়েছে এসব বিষয় সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না।  এই লেখাটিতে ইসলামের ভুলতে বসা কিছু অবদানের কথা নিয়ে আলোচনা করবো-

বিশ্ববিদ্যালয়

কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় কোনটি? তাহলে অধিকাংশই উত্তরে বলবে, অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, হার্ভার্ড ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম। অথচ এগুলোর কোনোটিই পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় নয়। পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে অবদান রয়েছে মুসলমানদের। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, তা অনেকাংশেই বিশ্বের প্রথম প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বারা প্রভাবিত।

বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন ফাতেমা আল ফিরহি। তিনি ৮৫৯ সালে মরক্কোর ফেজেতে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি ও সনদপত্র প্রদান করা হতো অর্থাৎ বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডিগ্রি ও সনদপত্র প্রদানের যে ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, এই রীতি এসেছে  ফাতেমা আল ফিরহি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কারুইয়িন বিশ্ববিদ্যালয় নামে নামকরণ করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে জ্যোতির্বিদ্যা, ভূবিদ্যা, ধর্মতত্ত্ব, বিজ্ঞান, আইন, চিকিৎসা শাস্ত্র, গণিত, ব্যাকরণ ইত্যাদি এমনকি সংগীত বিষয়ক শিক্ষাও প্রদান করা হতো। একটি লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে, যা বিশ্বের প্রাচীনতম লাইব্রেরী। এখানে চার হাজারেরও অধিক বই ও পান্ডুলিপি সংরক্ষণ করা হয়।

হাসপাতাল

আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির আলোকে বিশ্বে প্রথম হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় মিশরের  কায়রোতে ৮৭২ সালে। আর এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন আহমদ ইবনে তুলুন; তিনি ছিলেন তুলুনিদ সাম্রাজ্যের একজন শাসক এবং তার নাম অনুসারে এই হাসপাতালের নামকরণ করা হয় আহমদ ইবনে তুলুন হাসপাতাল। এখানে যে চিকিৎসা পদ্ধতির আলোকে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হতো,পরবর্তীতে সেই পদ্ধতির অনুকরণ করে সারা পৃথিবী জুড়ে নতুন নতুন   হাসপাতালগুলো গড়ে উঠতে থাকে।

কফি

বিশ্বের অনেক মানুষই কফি খাওয়ায় অভ্যস্ত। বিশেষ করে ইউরোপীয় মানুষদের কাছে কফি বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু এই কফি আবিষ্কারে ইউরোপীয়দের কোনো অবদান নেই। কফি আবিষ্কারে প্রত্যক্ষভাবে অবদান রেখেছে মুসলিমরা। মূলত খালিদ নামক এক ব্যক্তি কফি আবিষ্কার করেন। তিনি দক্ষিণ ইথিওপিয়ার কাফাতে বসবাস করতেন। তিনি মূলত ছাগলের রাখাল ছিলেন। তিনি ছাগলদের ঘাস খাওয়াতে গিয়ে চারণ ভূমিতে এক বিশেষ ধরনের ও চমকপ্রদ উদ্ভিদ লক্ষ্য করেন। এই উদ্ভিদ বেরি নামে পরিচিত, এগুলো ছাগলেরা খেলে তারা হঠাৎ করেই লাফাতো এবং তাদের শক্তি বেড়ে যেতো। তিনি একদিন ঐ উদ্ভিদ বাড়িতে নিয়ে এসে পানিতে সিদ্ধ করেন; আর এতেই কাহওয়া তৈরি হয়ে গেলো। এটিই ছিলো বিশ্বে প্রথম তৈরিকৃত কফি।

তারপর নবম শতাব্দীতে ইয়েমেনে প্রথম কফি খাওয়া শুরু হয়। এরপর মিশরের শিক্ষার্থীরা কফি উৎপাদন কৌশলও আয়ত্ত করে। ১৩শ শতাব্দীতে তুরস্কে কফির আগমন হয়। আর ইউরোপের সর্বপ্রথম কফি আগমন ঘটে ১৬শ শতাব্দীতে। এভাবেই বিশ্বজুড়ে কফি ছড়িয়ে পড়ে। মূলত আরবি শব্দ কাহওয়া (qahwa) তুর্কিতে রূপান্তরিত হয়ে কাহভি (kahve) হয়। আবার ইতালিতে ব্যবহার করা হয় কাফে (caffé) নামে। এভাবে সর্বশেষে ইংরেজিতে এসে কফি(coffee) নাম ধারণ করে।

সাবান

পরিষ্কার-পরিছন্নতা মুসলমানদের একটি ধর্মীয় বিষয়। যিনি সর্বপ্রথম সাবান তৈরির কৌশল আবিষ্কার করেন তিনি হলেন হযরত সালেহ আলাইহিওয়াসাল্লাম। মিশরীয়রা এবং রোমানরা এক বিশেষ ধরনের সাবান ব্যবহার করতো, তবে তা তাদের কাছে সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আরবরা সোডিয়াম হাইড্রোঅক্সাইডের ভিত্তিতে এক ধরনের উদ্ভিজ্জ তেল উদ্ভাবন করে, যার সঙ্গে তারা সুগন্ধি তেল মিশিয়ে সাবান তৈরি করে।

বীজগণিত

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং প্রকৌশল বিষয়গুলোর মূল ভিত্তি হিসেবে কল্পনা করা হয় গণিতকে। আর গণিতেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে বীজগণিত। এই বীজগণিত আবিষ্কারেও মুখ্য ভূমিকা পালন করে একজন মুসলিম বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ। তিনি হলেন আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খোয়ারিজমি। তিনি নবম শতাব্দীতে রচনা করেন তার বিখ্যাত বই আল জাবর ওয়াল মুকাবলা। তার রচিত এই বইটি থেকেই মূলত এই শাস্ত্রের নামকরণ করা হয় অ্যাল জেবরা। এই বইটি অনুবাদ করে ইউরোপীয়রা প্রথম বীজগণিত সম্পর্কে ধারণা লাভ করে।

টুথব্রাশ

ইসলাম ধর্মে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। নামাজ পড়ার পূর্বে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিষ্কার করা আবশ্যিক করা হয়েছে। হাদিসে দাঁত পরিষ্কারের ব্যাপারেও যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্রাচীন মিশরীয়রা দাঁত পরিষ্কারের জন্য গাছের ডাল ব্যবহার করতেন। তাদের ব্যবহারকৃত সেই ডালই বর্তমানে মিসওয়াক নামে সুপরিচিত। এভাবেই দাঁত পরিষ্কারকে কেন্দ্র করে মিসওয়াক থেকেই আবিষ্কার হয় বর্তমান সময়ের টুথব্রাশ।

সার্জারি

বর্তমান আধুনিক সার্জারির জনক একজন মুসলিম বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক। তার নাম আবুল কাসিম খালাফ ইবনে আল আব্বাস আল জাহরাউয়ি। তিনি স্পেনের আন্দালুসিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দশম শতাব্দীতে আল-তাশরিফ(Al-Tadrif) নামে একটি মেডিকেল এনসাইক্লোপিডিয়া রচনা করেন। এই বইটি আধুনিক মেডিকেল সার্জারি শাস্ত্রের মৌলিক গ্রন্থ। এই গ্রন্থটিতে তিনি প্রায় দুই শত সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতির সচিত্র বর্ণনা দেন। এগুলোর বেশির ভাগই  ছিল তার নিজের উদ্ভাবিত। তিনি সর্বপ্রথম হিমোফিলিয়া (Haemophilia) বর্ণনা করেন। এছাড়াও তিনি সার্জারির জন্য এ্যানাটমি পাঠকে আবশ্যিক হিসাবে অবহিত করেন।

ক্যামেরা

একটি সময় ছিলো যখন গ্রিকরা মনে করতো, মানুষের চোখ থেকে আলোক রশ্মি নির্গত হয়, আর এই কারণেই আমরা মানুষেরা চারপাশের পৃথিবীকে দেখতে পারি। কিন্তু দশম শতাব্দীতে মুসলিম গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইবনে আল হাইতাম আবিষ্কার করেন, বাহির থেকেই আলোক রশ্মি আমাদের চোখে প্রবেশ করে ফলে আমরা দেখতে পাই। জানালার ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে কীভাবে আলোক রশ্মি প্রবেশ করে, তা তিনি পর্যবেক্ষণ এবংগবেষণা করেন, যা পরবর্তীতে পৃথিবীর সর্বপ্রথম পিন-হোল ক্যামেরা আবিষ্কারেরপথ খুলে দেয়। তিনি পর্যবেক্ষণ করে আবিষ্কার করেন, অপেক্ষাকৃত ছোট ছিদ্র দিয়ে আসা আলো থেকে অপেক্ষাকৃত বড় ছবি পাওয়া যায়। আর তারপরেই তিনি আবিষ্কার করলেন প্রথম ক্যামেরা অবস্কিউরা(Obscura)।

লেখক- আমিনুল ইসলাম 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *