‘আমি এখন মুক্ত, স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীন’—কারামুক্তির পর বললেন আজহারুল ইসলাম1 min read
Reading Time: 2 minutesএকাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম প্রায় ১২ বছর পর কারামুক্ত হয়েছেন।
আজ বুধবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পূর্বতন পিজি হাসপাতাল) প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পান তিনি।
মুক্তির পর সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথোপকথনে আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, “এখানে রাস্তা আটকে সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। যেন জনগণের ভোগান্তি না হয়। এখন আর কিছু বলবো না। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে আপনার সঙ্গে বারবার দেখা হবে, বারবার কথা হবে।’
আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করছি যারা আমার নেতা ছিলেন সেসব নেতাদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। আমার শ্রদ্ধেয় নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মু. মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা, মীর কাশেম আলী, আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীসহ ভ্রাতৃপ্রতিম বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। শুধু তাদের হত্যাই করেনি গুম করা হয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যদের।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার করতে হবে এ কথা উল্লেখ করে যারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে ধরে এনে বিচার করার দাবি জানান আজহার। তাহলে এই খারাপ সংস্কৃতি বন্ধ হয়ে যাবে বলে তিনি আরও বলেন, আমি আপনাদের কাছে আমার জন্য দোয়া চাই। আমার অপরাধ কি ছিলো? আমার অপরাধ ছিল আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, এটাই তো আমার অপরাধ ছিল। আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাচ্ছি, যে কারণে আমি আপনাদের কাছ থেকে ফুলের মালা পাচ্ছি সেই ইসলামী আন্দোলনে আমি যেন আজীবন আমার রক্ত দিয়ে কাজ করে যেতে পারি সেজন্য আমাকে দোয়া করবেন। আমি যেন এই আন্দোলনের জন্য শহিদ হতে পারি। একটা কথা মনে রাখবেন আজ হোক কাল হোক আমাদের মৃত্যুবরণ করতেই হবে, মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে পারবো না।’
এর আগে, গত মঙ্গলবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড বাতিল করে তাকে খালাস দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজহারুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের সাত বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে ট্রাইব্যুনালের সেই রায় বাতিল করেন।
এই বেঞ্চের নেতৃত্ব দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ছয় বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানি হয় এবং তাতে খালাসের রায় আসে। এ ধরনের মামলায় রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগে এটাই প্রথম খালাসের ঘটনা।
জানা যায়, গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর আজহারুল ইসলাম দ্বিতীয়বারের মতো আপিল করেন। এর আগে ২০১৯ সালে তৎকালীন আপিল বিভাগ তাঁর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছিল। খালাসের রায় ঘোষণার পর বিচারপতিদের স্বাক্ষর শেষে গতকাল সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশ করা হয়। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার মুক্তির আদেশ জারি করে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২২ আগস্ট রাজধানীর মগবাজারে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন আজহারুল ইসলাম। এরপর দীর্ঘ কারাবাস শেষে তিনি বর্তমানে মুক্ত। কয়েক মাস ধরে তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আজহারুল ইসলামের খালাস ও মুক্তি দেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে।