বিশ্ব

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী? 1 min read

জুলাই ১৩, ২০১৯ 3 min read

author:

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী? 1 min read

Reading Time: 3 minutes

রিপাবলিকান পার্টি থেকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো বিকল্প নেই সেটা অনেক আগে থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। অন্যদিকে ডেমোক্রেট দল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌঁড়ে উঠে এসেছে অনেকগুলো নাম। তবে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ডেমোক্রেট পার্টির বিভিন্ন বিধিমালার কাটা ছেঁড়ায় এই তালিকা অনেক ছোট হয়ে যাবে।

এই মুহূর্তে ডেমোক্রেটদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন জো বাইডেন। ডেমোক্রেটদের পছন্দের শীর্ষে থাকা জো বাইডেন ৮ বছর যাবত ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন যাবত ডেলাওয়ারের সিনেটার ছিলেন। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগেও লড়েছেন। মার্কিন রাজনীতিতে নাম পরিচয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এদিক থেকে বাইডেন অনেকটাই এগিয়ে আছেন বলা যায়। মধ্যমপন্থী হিসেবে জনপ্রিয় বাইডেন তার নির্বাচনী প্রচারণায় নীতি পরিবর্তনের ব্যাপারে এখনও তেমন কিছু বলেন নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনই হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী।

তবে জো বাইডনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার দীর্ঘ হওয়ায় তার অতীত রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে কাটা ছেঁড়া করার একটা সুযোগ থেকে যাচ্ছে। এছাড়া ৭৬ এ পা রাখা বাইডেনের বয়সটা অনেক ডেমোক্রেটকে ভাবাচ্ছে। তারা মনে করেন, ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে একজন বুড়ো মানুষকে দাঁড় করানো অবশ্যই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। একজন তরুণ প্রেসিডেন্ট মার্কিনীদের ভাবনায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে অধিকতর সফল হবেন বলেই তারা আশা করছেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌঁড়ে জো বাইডেনের পরের অবস্থানে আছেন আরেক ডেমোক্রেট ম্যাসাচুসেটস এর সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এলিজাবেথ ওয়ারেনকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির উদারপন্থী গ্রুপের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। “Rethink Capitalism” বা “পুনর্বিবেচনায় পুঁজিবাদ” শিরোনামে তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার  নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি স্বাস্থ্যসেবা উন্নতকরণ, শ্রমিকদের সুবিধা বৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন।

ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ডেমোক্রেট দলের সুপরিচিত একজন রাজনীতিবিদ। উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের ডেমোক্রেট নির্বাচনে তিনি হিলারি ক্লিন্টনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। নিজেকে ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট হিসেবে দাবী করা মি. স্যান্ডার্স নির্বাচনী প্রচারণায় এমন একটি অর্থনীতি তৈরি করার প্রত্যাশা করেন ‘যা শুধু ধনীদের জন্য নয়, সব পর্যায়ের মানুষের জন্য’ কাজ করবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে হলে ডেমোক্রেট দলের সিংহভাগ ভোট পাবেন কি না এটা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ ডেমোক্রেট দলে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ছিলেন একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবুও পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মিঃ ভারমন্ট শেষ পর্যন্ত রেসে থাকবেন বলে আশা করছেন অনেকেই।

তবে অনেকেই ওয়ারেন এবং স্যান্ডার্সকে নিয়ে তেমন আশানুরূপ কিছু দেখছেন না। কেননা তারা প্রকাশ্যেই একজন অন্যজনের বিরুদ্ধে লড়ছেন। আর এমনটা করার কারনে তাদের দুইজনেরই কিন্তু অনেক ভোট ভাগ হয়ে যাচ্ছে এবং জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে।

সাউথ বেন্ড, ইন্ডিয়ানার মেয়র মিঃ পেট বুটিগিগ মোটামুটি শক্ত অবস্থানেই আছেন। উচ্চশিক্ষিত এবং আরবান ডেমোক্রেটদের পছন্দের শীর্ষে আছে তার নাম।  ২০১৬ সালের আগে কেও ভাবতোও না যে একটা মিডইস্টার্ণ টাউনের মেয়র যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী দলগুলোর একটি থেকে নমিনেশন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা করতে পারে। কিন্তু ট্রাম্পের নীতি বদলের সুবাধে পেট বুটিগিগ সেই সুযোগটা পেয়ে গেলেন। ডেমোক্রেটদের কাছ থেকে মোটামুটি ভালো সমর্থনও পাচ্ছেন। তার নির্বাচনী প্রচারণায় যে দিকটি সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে তা হলো, তিনি রক্ষণশীল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সুপ্রিম কোর্টে কিছু আইনী পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন।

কমলা হ্যারিস ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর হওয়ার আগে এটর্নি জেনারেল পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি বেশ কিছু কারণে ডেমোক্রেটদের মধ্যে ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। ডেমোক্রেটদের হয়ে জো বাইডেনের পরেই সবচেয়ে শক্ত অবস্থানেই আছেন কমলা হ্যারিস। উল্লেখ্য যে, জয়লাভ করতে পারলে তিনিই হবেন মার্কিন ইতিহাসে প্রথম আফ্রো-আমেরিকান নারী প্রেসিডেন্ট। কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী ইশতেহার জো বাইডেনের সাথে কিছুটা মিল থাকলেও তার ইশতেহারে গুরুত্ব পাচ্ছে- সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, বিনাবেতনে শিক্ষাসহ অনেক ব্যাপার। তবে জো বাইডেন এবং বার্নি স্যান্ডার্সের মতো কমলা হ্যারিসও সমগ্র আমেরিকা জুড়ে অতোটা সুপরিচিত নন।

সবাইকে ছাপিয়ে যার নাম গণমাধ্যমে সবথেকে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে তিনি হলেন টেক্সাসের সাবেক কংগ্রেস ম্যান বেটো ও’রুরক। ২০১৬’র সিনেট নির্বাচনে টেড ক্রুজের কাছে সামান্য ব্যবধানে হেরে যাওয়ার পরই তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। তহবিল সংগ্রহে অভূতপূর্ব সাফল্যের কারণে সে সময় তিনি সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবেন ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই প্রচুর পরিমাণ অনুদান পেয়েছেন নির্বাচনে লড়ার জন্য।

এদিকে ডেমোক্রেট মধ্যমপন্থী মিনেসোটার সিনেটর এমি ক্লবুচার তার নিজের জন্মস্থান মিডওয়েস্টে ভালো সমর্থন পাচ্ছেন। এছাড়াও, গণমাধ্যমে ডেমোক্রেট দলের রাইজিং স্টার খেতাব পাওয়া নিউ জার্সির সিনেটর কোরি বেকার নিউজার্সির মেয়র থাকাকালীন শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন। যদিও এ নিয়ে টিচার্স ইউনিয়নের সাথে তার বিরোধ হয়েছিলো, তারপরেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌঁড়ে তার নামটিকে গুরুত্বের সাথেই দেখতে হচ্ছে।

ডেমোক্রেটদের এতো প্রার্থীর ভিড়ে জো বাইডেন, কমলা হ্যারিস বা এমি ক্লবুচারদের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানোর মতো একজন প্রার্থীকেই বাছাই করতে হবে।

লেখক- ইকবাল মাহমুদ 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *