Site icon Bangla Info Tube

হার্নান্দো কলম্বাসের হারানো লাইব্রেরি

Photo Source: www.latimes.com

Reading Time: 2 minutes

ক্রিস্টোফার কলম্বাসের কথা সবাই জানি। এই বিখ্যাত অ্যাডমিরাল পশ্চিম ইউরোপ থেকে পাল তুলে প্রাচ্যের ভূখণ্ডের নতুন নৌপথের সন্ধানের জন্য বেড়িয়ে কিছু অনাবিষ্কৃত দ্বীপে পৌঁছে যান। তিনি বুঝতে পারেননি যে তাঁর গন্তব্যে যাওয়ার পথে কোন মহাদেশও আছে। কয়েক দশকের মধ্যেই, এই অনাবিষ্কৃত ভূখণ্ডটি স্পেনের জন্য লাভজনক ট্রান্সএ্যাটল্যান্টিক সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত হয়েছিল।

কলম্বাসের ছিল দু’টি ছেলে – হার্নান্দো এবং ডিয়েগো। হার্নান্দো কলম্বাস ছিলেন অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাসের অবৈধ পুত্র আর ডিয়েগো কলম্বাস ছিলেন বৈধ পুত্র। ডিয়েগো যখন ইন্ডিজের গভর্নর ও অ্যাডমিরাল হিসাবে তাঁর পিতার উত্তরাধিকার অব্যাহত রাখতে ব্যস্ত, তখন হার্নান্দো তার লক্ষ্য স্থির করেন মুদ্রিত বইয়ের সবচেয়ে বড় সংগ্রহ তৈরি করে পণ্ডিত হওয়ার প্রতি। 

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যের অধ্যাপক এডওয়ার্ড উইলসন-লি সম্প্রতি “দ্য ক্যাটালগ অফ শিপরেকড বুকস” (২০১৯) নামে একটি বই প্রকাশ করেছেন। এটিই একমাত্র বই যেখানে কলম্বাসের দ্বিতীয় পুত্র হার্নান্দোর জীবন ও তাঁর অবিশ্বাস্য আবেগের বর্ণনা করা হয়েছে।

হার্নান্দো কলম্বাসে; Photo Source: www.pri.org

তাঁর বাবা যেমন স্বর্ণের লোভে এবং খ্রিস্টান ধর্মান্তরের জন্য নতুন ভূখণ্ডের সন্ধানে অভিযান করেছিলেন, তেমনি হার্নান্দোও বইয়ের দোকানগুলো চষে বেড়িয়েছিলেন মুদ্রিত বই ও মানচিত্রের খোঁজে। তাঁর লক্ষ্য ছিল একটি সার্বজনীন গ্রন্থাগার তৈরি করা। কিছু স্পেনিয়রা বিশ্বের প্রতিটি বিষয়ের তথ্যের জন্য উচ্চকিত ছিল। তাদের এই চাহিদা যেন এই গ্রন্থাগারেই পূর্ণ হয় এটাই ছিল তাঁর লক্ষ্য ।

হার্নান্দোর বিশাল উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল সে তার দুর্দান্ত গ্রন্থাগারটিকে তথ্যের প্রথম “ডাটাবেস” এ পরিণত করবে। বারবার ভ্রমণ করে তিনি কমপক্ষে পনেরোটি বড় ইউরোপীয় শহরের বেশিরভাগ বইয়ের দোকানে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। এসব দোকান থেকে মুদ্রিত প্রতিটি নতুন বই কিনেছিলেন তিনি। ১৫৩৯ সালে তাঁর জীবনের শেষে এসে তিনি ১৫০০০ থেকে ২০০০০ বইয়ের মালিক হন।

হার্নান্দো ১৪৮৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যার চল্লিশ বছর আগে ইউরোপে প্রথম মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার হয়েছিল এবং ১৪৫২ সালে গুটেনবার্গ প্রথম দোকানে বিক্রি করার মত বাইবেল মুদ্রণে সফল হন। অর্থাৎ হার্নান্দোর সময়ই বইগুলো প্রথমবার মুদ্রিত হয়েছিল।

হার্নান্দো মুদ্রিত সমস্ত বইগুলো দিয়ে তাঁর গ্রন্থাগারটি সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন প্রতিটি ভাষায় এবং প্রতিটি বিষয়ে মানুষের সমস্ত জ্ঞানকে তালিকাভুক্ত করতে । তিনি একাকী এই মহাযজ্ঞ শেষ করতে পারেন নি, তবে তিনি নিজের মালিকানাধীন প্রত্যেকটি বইয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তৈরি করার জন্য একদল পাঠকের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।

২০১৯ এর প্রথমদিকে, স্ক্যান্ডিনেভিয়াতে ২০০০ পৃষ্ঠার পুরু একটি সংকলনের সন্ধান পাওয়া যায়। “এল লিব্রো দে লস এপিটোমস” বা “বুক অফ এপিটোমস” শিরোনামের এই সংকলনটি সাড়ে তিনশত বছর ধরে নিখোঁজ ছিল। এতে অনেকগুলি বইয়ের বিষয়বস্তু সংক্ষিপ্ত করে কিছু পদ্ধতিগত কাঠামোর মধ্যে শ্রেণিবদ্ধ করা ছিল। লি বিশ্বাস করেন যে এই সংকলনে সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা অনেকগুলি বইয়ের এখন আর অস্তিত্ব নেই। তবে পাঁচ শতাধিক বছর পূর্বে ইউরোপীয়রা কী পড়েছিল, সৌভাগ্যক্রমে তা এটা থেকে বোঝা যায় ।

 প্রফেসর এডওয়ার্ড উইলসন-লি সম্প্রতি তার “দ্য ক্যাটালগ অফ শিপরেকড বুকস ” বইতে হার্নান্দো সম্পর্কে আলোকপাত না করা পর্যন্ত তার সম্পর্কে খুব কমই জানা ছিল আমাদের। তিনি হার্নান্দোকে তার বহু বইয়ের সংক্ষিপ্তসার সহ আসল ডাটাবেস “সার্চ ইঞ্জিন” এর প্রস্ততকারক হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার মতে, “হার্নান্দো নিজের সংগ্রহে রাখা যায় এমন সমস্ত কিছু সংগ্রহ করেছিলেন। পাণ্ডুলিপি, পত্রপত্রিকা, ট্যাভার্ন পোস্টার – সবই তাঁর লাইব্রেরিতে ঢুকে গেছে” 

আজ হার্নান্দোর সংগ্রহের মাত্র এক-চতুর্থাংশ বই স্পেনের সেভিলের ক্যাথেড্রালে ১৫৫২  সাল থেকে সংরক্ষিত আছে। বাদবাকির অনেকগুলি হয় চুরি হয়ে গেছে নয়তো বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরেও এই অবশিষ্ট পরিমাণটাও বিশাল, এমনকি আজকের দিনের গড় আকারের লাইব্রেরির তুলনাতেও।

লেখক- ইকবাল মাহমুদ ইকু 

Exit mobile version