সৌদি আরবের হাতে পারমাণবিক প্রযুক্তি তুলে দিল যুক্তরাষ্ট্র1 min read
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর প্রশাসন সৌদি আরবের কাছে পারমাণবিক প্রযুক্তি এবং সাহায্য বিক্রি করার অনুমতি প্রদান করেছে। জ্বালানী মন্ত্রী রিক পেরি বলেন, জানুয়ারি ২০১৭ সাল থেকে তার ডিপার্টমেন্ট থেকে ইতোমধ্যেই সৌদি আরবসহ আরো ৩৭ টি এপ্লিকেশনে অনুমতি স্বাক্ষর প্রদান করা হয়েছে। সৌদি আরব ছাড়াও এ তালিকায় রয়েছে জর্ডানের নাম।
ট্রাম্প প্রশাসন ও সৌদি আরবের মধ্যকার এই আন্তরিক সম্পর্ক নিয়ে কংগ্রেস বেশ অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বৈদেশিক নীতিমালার মধ্যে সৌদি আরবের প্রতি ঠিক যতটা আন্তরিকতা প্রকাশ করছেন ঠিক ততটাই ইরানকে একঘরে করে দেয়ার প্রচেষ্টায় আছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মধ্যকার একটি বাণিজ্য সম্মেলনে উপস্থিত থাকা অবস্থায় সৌদি আরবের সাথে আন্তরিকতা প্রদর্শন করে বলেন, এই দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক ও ব্যবসার উপর যুক্তরাষ্ট্র সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিবে। একই দিনে এই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরানকে তুলনা দেন উত্তর কোরিয়ার সাথে। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে সৌদি আরবের অন্যতম প্রধান শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে প্রথমেই আসে ইরানের নাম।
যদিও প্রাথমিক অবস্থায় পুরো বিষয়টি নিয়েই কিছুটা গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমতাবস্থায় কংগ্রেসে যখন যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানী মন্ত্রী পেরিকে সৌদির সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি সেই প্রশ্নের উত্তর সুকৌশলে এড়িয়ে যান। তবে এই গোপন চুক্তির খবরটি দুইজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিবৃতিস্বরূপ প্রকাশ করেছে মার্কিন একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল “ডেইলি বিস্ট”। এই গোপনীয়তার বিষয়ে জ্বালানী মন্ত্রণালয়ে থেকে বলা হয়, কোম্পানিগুলোর অনুরোধেই তারা এই গোপনীয়তা রক্ষা করে আসছেন। এমনকি এখন পর্যন্ত কোম্পানিগুলোর নাম জানানো হয়নি।
আমেরিকার বেশ কিছু গণমাধ্যমের ভাষ্যমতে, সৌদির বর্তমান শত্রু ইরানের পারমাণবিক তৎপরতার কারণেই হয়তো সৌদি আমেরিকা থেকে এই প্রযুক্তি ক্রয় করার জন্য জোর দমে প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কেননা, ইরানের এই ধরনের তৎপরতা হয়তো সৌদি আরবকে কিছুটা হলেও উদ্বেগের মুখে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম একটা সংবাদ সংস্থা টাইমস একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকাশ করে, প্রায় আট হাজার কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তির জন্য যুবরাজ বেশ কিছুদিন থেকেই জোরালো প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এদিকে ট্রাম্প জামাতা কুশনার সৌদি যুবরাজ এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে রিয়াদে সাক্ষাৎ করেন। গোপন সূত্রমতে জানা যায় যে, সেই সাক্ষাতের সময় সৌদি আরবে অবস্থিত মার্কিন এমব্যাসির কাউকে সেখানে রাখা হয়নি। যার ফলে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, সেখানে হয়তো পারমাণবিক চুক্তি বিষয়ক আরো অন্য কোনো গোপন আলাপ হয়েছে দুইপক্ষের মধ্যে।
তবে এখন পর্যন্ত কোন কোন কোম্পানিগুলো এই চুক্তির আওতাধীন রয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এই বিষয়ে জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, আমেরিকার সেই কোম্পানিগুলো তাদের নাম নিরাপত্তাজনিত কারণে জনসম্মুখে প্রচার করতে চায়নি বলেই এই ধরনের গোপনীয়তা বজায় রাখছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সৌদি আরব যদি এই পারমাণবিক প্রযুক্তি কিনে নেয় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে কতটা স্থিতিশীলতা বিরাজ করবে এই নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির একটি পরিষদ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। বিবিসি অনলাইনের খবর অনুযায়ী, অনেকের মতে এই প্রযুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।
ইতোপূর্বে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদির সম্পর্কের মধ্যে বেশ শীতলতা বিরাজ করছিল। এমনকি সৌদি আরবের অনেক কূটনীতিক প্রভাব এবং চাপের পরেও বারাক ওবামা’র প্রশাসন ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি করেছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যকার সেই আগের সম্পর্কটি এখন সৌদি প্রীতির কারণে পুরোপুরি ভাঙ্গনের পর্যায়ে রয়েছে বলে কূটনীতিবিদদের বিশ্বাস। এছাড়াও সেই অবস্থাকে আরো স্থায়ী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই যেন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জিম ম্যাটিস পুরোপুরি ইরান বিরোধী অবস্থানে রয়েছেন।
অনেকের মতেই সৌদির সাথে এই পারমাণবিক চুক্তিটি ইতোপূর্বে করা ইরানের সাথে চুক্তিতে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। সরাসরি ইরানের সাথে এই চুক্তি বাতিল না করলেও অলিখিতভাবে হয়তো সেটা ইতোমধ্যেই বাতিল বলে দুই দেশই ধরে নিয়েছে। ইতোপূর্বে একটি সংবাদ সম্মেলনে ইরানের সাথে করা এই পারমাণবিক চুক্তিকে বিব্রতকর বলে আখ্যায়িত করেছেন ট্রাম্প।
দুই দেশের মধ্যকার যে চুক্তিটি হচ্ছে তাঁকে বলা হচ্ছে ‘পার্ট ৮১০ অনুমতিপত্র’। এই চুক্তির মধ্যে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি গুলোকেই যাতে পরবর্তীতে সকল ধরনের কাজের জন্য চুক্তিবধ্য করা হয় সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে। আদতে এই চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরবকে পরমাণু প্রযুক্তির বিষয়ে সরাসরি অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। এই চুক্তি নিয়ে সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন আইন প্রণেতা বলেন, এই ধরনের প্রযুক্তি স্থানান্তরের চুক্তি আমেরিকার আইনের পরিপন্থী। এছাড়াও সৌদি আরবের হাতে যদি পারমাণবিক শক্তি চলে যায় তাহলে মধ্যপ্রাচ্য আরো অনেক বেশি অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এমনকি পরবর্তীতে বিপদজনক হয়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।
তবে এই মতামতের বিরোধিতা করে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোন ধরনের অস্ত্র নির্মাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই প্রযুক্তি কেনা হচ্ছেনা বরং দেশের বৈদ্যুতিক চাহিদার ক্রমবর্ধনের উপর দূরদৃষ্টি রেখেই সৌদি প্রশাসন এই ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। এছাড়াও দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই পারমাণবিক কর্মসূচি বেশ জোরালো ভূমিকা পালন করবে মনে সরকার মনে করছে।