বিশ্বের সেরা ১০ গোয়েন্দা সংস্থা- প্রথম পর্ব1 min read
Reading Time: 4 minutesবড় ভাই থাকার সুবাদে ক্লাস ফোর-ফাইভে থাকতেই জেমস বন্ডের সাথে পরিচয় হয়ে গিয়েছিল আমার। শুরু হয়েছিল ‘ডাই অ্যানাদার ডে’ দিয়ে, পিয়ার্স ব্রসন্যান ছিল জেমস বন্ডের চরিত্রে। আর এমআই৬ নামটাও সেখানেই প্রথম শুনলাম। স্পাই এর ব্যাপার-স্যাপার মাথায় অল্পস্বল্পই ঢুকল। আমার কাছে স্পাই বা গুপ্তচর মানে তখন শুধুই পিয়ার্স ব্রসন্যান। তারপর মাসুদ রানার গণ্ডি পেরিয়ে, মিশন ইম্পসিবল সিরিজ দেখে দেখে গুপ্তচরদের নিয়ে একটা অবাস্তব-বাস্তবের মিশেলে ধারণা তৈরি হল। সেসব ধ্যান-ধারনার কোনটাই আজকের লেখায় নেই। যা আছে সবই বাস্তবের ইন্টেলিজেন্স নিয়ে। আজকের লেখা দুইটি পর্বে বিভক্ত; ১ম পর্বে বিশ্বের সেরা ৪টি গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে, পরের পর্বে থাকবে বাকিগুলো।
এমআই ৬ (MI6)
ইয়ান ফ্লেমিং এর জেমস বন্ডের খাতিরে এমআই৬ বিশ্বে বেশ খ্যাত। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো এ গোয়েন্দা সংস্থা ১১০ বছর ধরে যুক্তরাজ্যেকে বহিরাগত সকল বিপদ থেকে রক্ষা করে আসছে। ১৯০৯ সালে এম আই ৫ ও এম আই ৬ প্রতিষ্ঠা করা হয় যথাক্রমে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত আক্রমণ থেকে যুক্তরাজ্যকে সুরক্ষিত রাখার জন্য। সে থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে এম আই ৬ গুরত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যদিও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তারা জার্মানিতে কোন নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির গোপন কোড ব্রেকিং এর জন্য এনিগমা তৈরি হয় ব্রিটেনের ব্লেচলি পার্কেই। এই এক আবিষ্কারের জন্য যুদ্ধের সময় কমে গিয়েছিল ১ বছরেরও বেশি, বেঁচে গিয়েছিল হাজারো মানুষ। এছাড়া তাদের ‘ডাবল-ক্রস’ সিস্টেমের মাধ্যমে জার্মানিকে ভুল তথ্য পাচারের প্রজেক্টও সফল হয়েছিল।
এ এজেন্সির অন্যতম বিখ্যাত গুপ্তচর ছিলেন ওলেগ আন্তনোভিচ গরদিয়ভস্কি। তিনি প্রায় নয় বছর ব্রিটেনের গুপ্তচর হয়ে কেজিবিতে কাজ করেন। পরে তিনি ধরা পড়ে গেলে এমআই৬ তাঁকে রাশিয়া থেকে লুকিয়ে ব্রিটেনে ফেরত আনে। এছাড়া এমআই৬ এর অন্যতম বিশ্বাসঘাতক চর ছিল কিম ফিলবি, যে কিনা ২০ বছর ধরে এমআই৬ এ কাজ করেছে কেজিবির গুপ্তচর হিসেবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ফান্ড পাওয়া এই এজেন্সি সিআইএ ও মোসাদের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
সিআইএ (CIA)
১৯৪৭ সালে আমেরিকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় সি আই এ। হ্যারি এস ট্রুম্যান ছিলেন তখনকার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। মূলত দেশের বাইরের ইন্টেলিজেন্স সরবরাহ,সংরক্ষন ও বিশ্লেষণ করাই ছিল তাদের প্রাথমিক কাজ। যদিও এখন তারা এ বাদেও আরও নানা কাজ করে থাকে। বর্তমানে বিশ্বে আমেরিকার যে প্রভাব তৈরি হয়েছে তাঁর কারণ সিআইএ। সময়ের সাথে সাথে সিআইএ নিজের কাজের পরিধি বাড়িয়েছে। সিআইএ-র সাহায্যে গুয়েতেমালার বিদ্রোহীরা ভোটে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষ্মতাচ্যুত করেছিল, ইরানে পশ্চিমা সমর্থিত শাহ-কেও ক্ষমতায় ফেরত আনে তারা। তবে সবচেয়ে গুরত্বপুর্ন মিশন ছিল ২০১১ সালের ওসামা বিন লাদেন হত্যা অভিযান। তবে তারা ব্যর্থও হয়েছে যেমন কিউবার সাথে স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন বে অফ পিগস অভিযানে। এমনকি ৯/১১ এর ঘটনার পর সিআইএ মূল হোতাদের ধরতে ব্যর্থ হয়।
সিআইএর ৫০তম বার্ষিকীতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তাঁর বক্তব্যে বলেন,”By necessity, the American people will never know the full story of your courage. Indeed, no one knows that what CIA really does”.প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত ও বিশাল ফান্ডের অধিকারি এ সংস্থা ধীরে ধীরে ইন্টেলিজেন্স এর দুনিয়ায় নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
মোসাদ (MOSSAD)
১৯৪৯ সালে তৎকালীন ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট ডেভিড বেন-গুরিওন সিদ্ধান্ত নেন শিনবেট (অভ্যন্তরীণ ইন্টেলিজেন্স) ও আমান(সামরিক ইন্টেলিজেন্স) এর পাশাপাশি নতুন আরেকটি সংস্থা তৈরি করার যা দেশের বাইরের ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহে কাজ করবে ও সংস্থাগুলোর মাঝে সম্পর্ক বজায় রাখবে। আর এভাবেই শুরু হয় ইন্সটিটিউট ফর ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অপারেসন্স বা মোসাদের। তখন থেকে মোসাদ পরিণত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিতে।
মোসাদের অন্যতম বড় ও বিতর্কিত সাফল্য আসে ১৯৬০ সালের দিকে। নাৎসি লেফটেন্যান্ট কর্নেল অ্যাডলফ আইখম্যানকে আর্জেন্টিনা থেকে কিডন্যাপ ও পরবর্তীতে ইসরায়েলে নিয়ে তাঁকে মৃত্যদন্ড দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন হোলকস্টের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। পুরো বিশ্ব তাজ্জব হয়ে গিয়েছিল এ ঘটনায়। এছাড়া ১৯৭৬ সালে এন্তেবে উদ্ধারে মোসাদ গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে এগারজন ইসরায়েলি অ্যাথলেটকে হত্যা করে ফিলিস্তিনি গ্রুপ ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর। প্রতিশোধ হিসেবে মোসাদ পিএলওর বিভিন্ন অপারেটিভকে এক এক করে খুঁজে বের করে হত্যা করে।
ধারণা করা হয় ইসরায়েলের অন্যতম শক্তি মোসাদ। মোসাদের জন্য ইসরায়েলকে সব দেশই সমীহ করে চলে।
আইএসআই (ISI)
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স। সে থেকে পাকিস্তানের জন্য বিভিন্ন কাজ করে আসছে আইএসআই। ধারণা করা হয় যে এ সংস্থার সবচেয়ে বেশি অপারেটিভ ছড়িয়ে আছে বিশ্বে। যদিও তাদের ফান্ড বেশ কম। নিজ দেশে তারা সকল আইনের উর্ধে-“A state within a state”.
আইএসআই বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করে ১৯৮০ সালের দিকে। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে পাকিস্তান আফগানের পক্ষ নেয়। আইএসআই আফগান মুজাহিদিনকে সিআইএর সহায়তায় ট্রেনিং দেয় ও অন্যান্য সাহায্য দেয়। ফলস্বরূপ সোভিয়েত ইউনিয়নকে পিছু হটতে হয়। পাকিস্তানের নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের জন্য সব ধরনের উপাদান যোগাড়ে তারা কাজ করে। পাকিস্তান বিরোধী যেকোনো হুমকি শক্ত হাতে তারা মোকাবেলা করে।
পাকিস্তানের মেরুদন্ড মনে করা হয় আইএসআই-কে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সবধরনের হুমকি তারা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করে। অন্যতম বিশাল এ এজেন্সি ভারতের ‘র’ এর সাথে টেক্কা দিয়ে দক্ষিন এশিয়াতে নিজেদের আধিপত্য তৈরি করেছে।
আজকের লেখা থাকল এ পর্যন্তই। পরের পর্বে থাকবে রাশিয়ার এফএসডি,ভারতের র সহ আরও অনেককিছু।