featured বাংলাদেশ

‘প্রশ্ন সাহিত্য’- সাংবাদিকতার রোল মডেল!1 min read

অক্টোবর ১৫, ২০১৯ 7 min read

author:

‘প্রশ্ন সাহিত্য’- সাংবাদিকতার রোল মডেল!1 min read

Reading Time: 7 minutes

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনগুলো এখন লাইভ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ইতোমধ্যে বহু হাস্যরস হয়েছে। নিন্দুকেরা গণভবনকে দেশের সবচেয়ে বড় তেলক্ষেত্র বলেও ব্যঙ্গ করেন। প্রশ্ন নয়, যেন আয়োজন করা হয় স্ততি সম্মেলনের। সাংবাদিকরা সব প্রশ্ন ভুলে গিয়ে হাত কচলাতে কচলাতে মুখে মিষ্টি হাসি টেনে শুধু গদগদ প্রশংসা করে যান সরকারের আর শেখ হাসিনার।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন নিয়ে আলাপের আগে দেখে আসা যাক বিশ্বের সবেচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্ট সংবাদ সম্মেলনগুলো কেমন হয়। আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা বলছি। মিডিয়ার সাথে বৈরি আচরণে জন্য তিনি ইতোমধ্যে কুখ্যাত। কিন্তু তারপরও তার সামনে দাড়িয়ে সাংবাদিকরা কিভাবে কথা বলেন দেখা যাক।

১.

Trump clashes with Jim Acosta in testy exchange

২.

Trump’s most heated exchanges with reporters at his longest press conference

 

আমাদের পাশের দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী কথাবার্তায় বেশ পটু লোক। কিন্তু তিনি মাঝে মাঝেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া থেকে দূরে থাকতে চান। কয়েক মাসে তাই এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে কিছুক্ষণ কথা বলেন, এরপর কোনো প্রশ্ন না নিয়ে উঠে চলে যান। কারণ, তিনি জানেন ভারতের মূল ধারার অনেক সাংবাদিকের বিব্রতকর প্রশ্নের বান তার ওপর দিয়ে যেতে পারে। তিনি নিজেকে ক্যামেরার সামনে বিব্রত অবস্থায় দেখাতে চান না। তাই প্রশ্ন এড়িয়ে চলতে ভালোবাসেন।

মোদির সেই সংবাদ সম্মেলন:

 

এবার চলুন গণভবনে যাই। ওখানে সাংবাদিকরা কেমন কসরত করেন দেখে আসা যাক। গত ৯ অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের করা কিছু প্রশ্নের নমুনা দেখুন।

৯ অক্টোবরের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের যত প্রশ্ন–

আলী আসিফ শাওন, দৈনিক আমাদের সময়

আমি প্রথমে আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি আপনি যে তিনটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন সে জন্য। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনার সাম্প্রতিক ভারত সফর প্রসঙ্গে। সম্প্রতি, ভারত সফরে আপনি ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং আপনি- আপনারা একটি যৌথ প্রকল্পে স্বাক্ষর করেছেন। সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে ভারতের ত্রিপুরায় বাল্ক এলপিজি গ্যাস রপ্তানির বিষয়ে এবং ফেনী থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পানি দেওয়ার ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটা নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা উঠছে। আমার প্রশ্ন যে এখানে বাংলাদেশের স্বার্থ কতোখানি সংরক্ষিত হয়েছে? সরকার প্রধান হিসেবে আপনার কাছে জানতে চাই। ধন্যবাদ।

ফারজানা রূপা, একাত্তর টেলিভিশন

আবরার হত্যা প্রসঙ্গ। আমরা আসলে অনেককিছুই ভুলি না। ২০০২ সালে যখন সনিকে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের টেন্ডারবাজি নিয়ে গুলি বিনিময়ে হত্যা করা হয়- বুয়েটের ছাত্রী- লম্বা সময় হচ্ছে- আমাদের শিরোনাম করতে হয়েছিলো যে হত্যাকারীরা ধরা পড়ছে না। অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা স্বস্তির যে দ্রুততম সময়ে (আবরার হত্যার) অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু, আপনার কাছে জানতে চাই যখন আপনি প্রমাণ রাখছেন প্রতিটি কথার যে ‘জিরো টলারেন্স’ যেকোনো ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে, মাস্তানির বিরুদ্ধে, টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে- তখন এই বার্তা তৃণমূলে কেনো পৌঁছাচ্ছে না এখনো? কেনো আপনার যারা কর্মী হিসেবে পরিচিত তারাই এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে যেটা দেশের মানুষের জন্যে অস্বস্তির হচ্ছে? তাদের জন্য আপনার বার্তা কী? ধন্যবাদ।

সোহেল হায়দার চৌধুরী, বিশেষ সংবাদদাতা, দৈনিক যায় যায় দিন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার এই আবেগ আমাদের সবার হৃদয় স্পর্শ করে যায় বারবারই। আমরা যখনই ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে যাই, আপনার এই আবেগ দেখলে আমরা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বাংলাদেশের ‘বাতিঘর’, আমাদের আশা-ভরসার প্রতীক। আমরা যখন দেখি আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে আপনি বলেন যে, মায়ের অনুভূতি নিয়েই আমি এটির বিচার করবো। তখন আমাদের কোনো সন্দেহ থাকে না। এবং সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে আপনাকে এই যে তিনটি পুরস্কার আপনি পেয়েছেন- ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে- আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং একই সঙ্গে দুটো বিষয়ে আলোকপাত করে আপনার জবাবটি যদি পাই খুব ভালো লাগবে। প্রথমত, আপনি নবম ওয়েজ বোর্ডের গেজেটে স্বাক্ষর করেছেন- আমরা আপনার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। কিন্তু, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নবম ওয়েজ বোর্ডে যে বিষয়টি হয়েছে- সাংবাদিকদের দুটো গ্রাচুইটি ছিলো এর আগে। কিন্তু, এবার একটি হয়েছে। দুটো গ্রাচুইটি দেওয়া হতো যে সাংবাদিকদের পেনশন নেই সেই কারণে। এবার একটি হয়েছে।

আরেকটি বিষয় হয়েছে- সাংবাদিকদের যে আয়কর সেটি মালিক পক্ষ পরিশোধ করতেন এবং মালিক পক্ষের কোর্টে একটি মামলার পরে কোর্টও বলেছেন যে মালিক পক্ষকে সেটি পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু, ওয়েজ বোর্ডে যেটি হয়েছে- এটি সাংবাদিকদের পরিশোধ করতে হবে। এই বিষয়টি আপনি আবার একটু চিন্তা করতে পারেন কী না? ভেবে দেখতে পারেন কী না? কারণ, আপনি সাংবাদিকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। এবং বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্যে ১৯৭৪ সালে সাংবাদিকদের মর্যাদার জন্যে একটি আইন করেছিলেন যে আইনটি আমাদের সাংঘাতিক রকমের আপ্লুত করেছিলো। সেই আইনটির আদলে ‘গণমাধ্যম কর্মী আইন’ করা উচিত। সেটি খুব শিগগির সংসদে নেওয়া যায় কী না? আর আমাদের ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বন্ধুদের জন্য ওয়েজ বোর্ড করার পরিকল্পনা সরকারের আছে কী না?- একটু জানতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার আশায়, আপনার আলোতে আমরা পথ চলবো- এই কথা বলে শেষ করছি।

পারভীন চৌধুরী, জাপান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রিসেন্টলি একটা দাবি উঠেছে যে স্টুডেন্ট পলিটিক্স ব্যান করার জন্য। আপনার এতোক্ষণের ধারা বর্ণনায় স্টুডেন্ট পলিটিক্সের কষ্টের কথাই কিন্তু শুনলাম। আমি কিন্তু, কোনো খুশির কথা শুনি নাই। এমন কি হবে না কী যে নেক্সটে আপনি স্টুডেন্ট পলিটিক্স ব্যান করবেন না কি? ফর দ্য টাইম বিং।

আমার নেক্সট কোয়েশ্চেন ছোট- যারা কী না এজিটেশন করতেছে স্টুডেন্ট- তাদেরকে আপনি সেইফটি- ফুল সেইফটি দিচ্ছে না কি আপনার সরকার? ওরা যাতে সেইফ থাকে। যারা এখন এজিটেশন করতেছে- বুয়েট স্টুডেন্টস। থ্যাঙ্ক ইউ।

জ ই মামুন, এটিএন বাংলা

আমার জানা মতে, ১৯৭৮ সালে সম্ভবত জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পরে ছাত্র সংগঠনগুলোকে রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে আইন করেছিলেন। তার আগে প্রত্যেকটি ছাত্র সংগঠন এমনকী, বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগও স্বাধীন সংগঠন হিসেবে কাজ করতো। জিয়াউর রহমানের আইনের পরে যখন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড় হিসেবে পরিণত হলো ছাত্র সংগঠনগুলো, তখনই তারা ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া শুরু করলো। এবং তারপর থেকেই বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো উত্তপ্ত হওয়া, অস্ত্রবাজি ইত্যাদি শুরু হয়েছিলো। পারভীন আপা যে প্রশ্নটি করেছিলো তার সূত্র ধরে আমি বলি যে এখন বুয়েটের ছেলে-মেয়েরা যে আন্দোলন করছে সেখানে আট দফা দাবির অষ্টম দাবি হচ্ছে- ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা। কিন্তু, এরই মধ্যে পত্র-পত্রিকায় বা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে- এমনকী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও বলছেন আবার যদি ছাত্ররাজনীতিকে স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়া যায়, তাহলে হয়তো দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে তারা নিজেদের মতো কাজ করতে পারবে।- এই ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানতে চাচ্ছি।

আর একটা ছোট্ট দুঃখের কথা বলি- সেটি হচ্ছে, আপনাকে আমরা অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি, আপনাকে সবাই আশার প্রতীক, ‘বাতিঘর’ ইত্যাদি বলেন। এটি আমাদের জন্যে আনন্দের। কিন্তু, একই সঙ্গে দুঃখেরও। কারণ, যখনই যে ঘটনা ঘটে- আপনাকে পুলিশকে নির্দেশ দিতে হয়। আপনাকে ফায়ার ব্রিগেডকে নির্দেশ দিতে হয়। আপনাকে ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিতে হয়। সকল কিছু কেনো আপনাকে করতে হবে? তাহলে আপনার রাষ্ট্রযন্ত্র, প্রশাসন কী করছে? সকল ক্ষেত্রে- যুবলীগের ক্যাসিনো উদ্ধার করার জন্যে আমরা শুনি প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সকল কিছুর নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কেনো আসতে হয়? ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

ইমদাদুল হক মিলন, সম্পাদক, কালের কণ্ঠ ও লেখক

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার প্রশ্নটা একটু সাহিত্য বিষয়ক। আপনার অনেক লেখা আমি পড়েছি। নিয়মিতই পড়ি। সব লেখাই আমি পড়েছি। যেটা আমার জানতে চাওয়া- আপনার বিভিন্ন বইতে আপনি টুকরো-টাকরাভাবে আপনার জীবনের কথা লিখেছেন। আমি জানতে চাই আপনি একটা পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনী লিখবেন কী না? এবং আপনি এখন যে বয়সে আছেন, এই বয়সে প্রতিদিন একটু একটু করে লিখে আপনি কি একটি পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনী লিখবেন কী না? এটি আমি জানতে চাই এবং আমি আশা করি, আপনি এটা লিখবেন।

মঞ্জুরুল ইসলাম

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার জন্য এবং জন্মদিনের বিলম্বিত শুভেচ্ছা। আপনি যেমনটি বললেন যে- কোনো দল, মত নির্বিশেষে যারা অপরাধ করবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। আপনি এবার যখন সরকার গঠন করেন আপনার অঙ্গীকার ছিলো- সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা। এবং সেই লক্ষ্যে আমরা দেখলাম আপনি দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছেন। ঘর থেকে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। এটা জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে যখন প্রশংসনীয় হচ্ছে তখনই আমরা দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক সাথে প্যারালালি অশান্ত হয়ে উঠছে। এই দুইটার মধ্যে কোনো সংযোগ আপনি দেখেন কী না? এবং আপনি আজকে যে ঘোষণা দিলেন এর ফলে আমরা… আপনি ভারত সফরের পর আমরা আবার দেখছি যে তিস্তা নিয়ে, এনআরসি নিয়ে এবং রোহিঙ্গা নিয়ে আমরা শঙ্কিত অবস্থায় আছি। আপনি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে কতোটা আশ্বস্ত হলেন, যাতে অপপ্রচারে আমরা আবারো শঙ্কিত না হই? সামগ্রিকভাবে আমরা আশ্বস্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে আছি কী না? ধন্যবাদ।

উত্তম চক্রবর্তী, দৈনিক জনকণ্ঠ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ঘর থেকে শুদ্ধি অভিযানে নামেন… শুদ্ধি অভিযানে দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে ‘জিরো টলারেন্স’ কম্পন সৃষ্টি করেছে… এই কম্পনটা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। অনেকে বলে- এটা কি সারাদেশে যাবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই ভূমিকম্পটা কতো দূর স্থায়ী হবে? ধন্যবাদ।

লাবণ্য ভূঁইয়া, এশিয়ান টেলিভিশন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশন আমরা কাভার করেছি। সেই সঙ্গে দিল্লি সফরও কাভার করেছি। দুটি সফল সফর কাভার করতে পেরে সাংবাদিক হিসেবে সেখানে আমাদের তৃপ্তির জায়গা।

আমরা জানি যে প্রত্যেকটি সফরে আপনি একটি ভিশন নিয়ে যান দেশের কল্যাণে। সেই নিউজগুলো যখন আমরা সংবাদপত্রে, কিংবা টিভিতে দেখিয়ে থাকি- সাংবাদিক হিসেবে সেখানেই আমাদের সার্থকতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার প্রশ্ন হলো এখানে যে সম্প্রতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনার যে অভিযান দেশে-বিদেশে সেটা অনেক প্রশংসিত হয়েছে। এবং আমি জানতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী- সামনে সম্মেলন কিংবা আগামীদিনের রাজনীতিতে এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান এটা আপনার মেসেজ কী না- সেটি আমার আসলে প্রশ্ন। আমার জানার জায়গাটা ওখানে যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনার যে অভিযান এটা আসলে ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদদের মেসেজ দিচ্ছেন কী না? ধন্যবাদ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

সৈয়দ আশিক রহমান, আরটিভি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার প্রশ্ন আপনার কাছে- আপনি ঘর থেকে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। এবং ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি তারা পদত্যাগ করেছে। আপনি ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিন্তু, এতো বড় সতর্ক বার্তা থাকার পরেও কেনো সংগঠনের অন্যান্যরা সতর্ক হচ্ছে না? বুয়েটের যে ঘটনাটি দেখলাম- আপনি এতো বড় একটি কঠিন বার্তা দিয়েছেন সবাইকে তারপরও কেনো তারা সতর্ক হচ্ছে না?

মূলত কী কী নেই শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে?

১.

শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা একবার মাত্র প্রশ্ন করা সুযোগ পান। একবারে এক থেকে তিনটি পর্যন্ত প্রশ্ন করতে পারেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নিজের পছন্দ অনুযায়ী এক বা একাধিকটির উত্তর দেবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে তার জবাবের পরে সম্পূরক প্রশ্ন করা যাবে না! তার জবাব সুবোধ বালকের মতো করে শুনে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ইন্টারাপ্ট করে কোনো নতুন প্রশ্ন করার দুঃসাহস কোনো সাংবাদিক দেখান না।

অন্যদিকে গণতান্ত্রিক সভ্য কোনো দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা প্রশ্ন-পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন এবং করেন। অনেক সময় কোনো কোনো নির্দিষ্ট ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে করতে রীতিমতো হেনস্তা করে ছাড়েন।

২.

গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সংবাদ সম্মেলনে নির্দিষ্ট বিটের (যেমন হোয়াইট হাউজ বিট/রাজনীতি বিট) ওয়ার্কিং জার্নালিস্টরা হাজির থাকেন। আর বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে বেশিরভাগই হাজির থাকেন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক-মালিকরা! যারা বহু বছর ধরে মাঠের সাংবাদিকতা নেই। বয়সের ভারে ন্যুজ্ব। সংবাদ সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়ে তেমন হোমওয়ার্ক নেই এমন লোকজন।

৩.

অন্যান্য দেশের এমন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা টু দ্য পয়েন্ট কথা বলেন। যা জানতে চান সরাসরি অল্প কথায় সেই প্রশ্ন করেন। কিন্তু বাংলাদেশে প্রশ্ন করা আগে প্রশ্নের চেয়ে দীর্ঘ ভূমিকা টানেন সাংবাদিকরা। এসব ভূমিকায় থাকে প্রধানমন্ত্রী কত স্মার্ট, কত দক্ষ, কিভাবে তিনি এত কাজ করেন- এসব প্রসঙ্গ।

৪.

সভ্য গণতান্ত্রিক অন্যান্য দেশে এমন কোনো সাংবাদিক প্রশ্ন করতে দাড়ান না, যিনি প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রশ্নই করেন না! প্রধানমন্ত্রীর কিছু প্রশংসা করে শেষে বলেন, ‘আমার কোনো প্রশ্ন নেই’। অথবা প্রধানমন্ত্রীর আত্মজীবনী লেখা উচিত, আর শরীরের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত বলেই মাইক রেখে দেন না। কিন্তু বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব করেন সংবাদ সম্মেলনে হাজির সাংবাদিকরা।

৫.

বিদেশে কোনো সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করতে দাড়িয়ে সাংবাদিকদের জন্য বাড়তি সুযোগ সুবিধা চেয়ে রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের কাছে দরখাস্ত করার নজির নেই। কিন্তু বাংলাদেশের সাংবাদিকরা এমন উদাহরণও সৃষ্টি করেছেন।

৬.

গণতান্ত্রিক দেশে নিজের অনুগত মিডিয়ার অনুগত সাংবাদিকদের শুধু দাওয়াত করা হয় না। সাধারণত মিডিয়া হাউজ নির্ধারণ করে তাদের কোন প্রতিনিধি সংবাদ সম্মেলনে হাজির থাকবেন। কিন্তু বাংলাদেশে নির্দিষ্ট অনুগত মিডিয়া হাউজের সাংবাদিদের ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয় না প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, কোন হাউজের কোন সাংবাদিক হাজির থাকবেন তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হাউজ চাইলেই যে কাউকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠাতে পারে না।

৭.

অন্যান্য দেশের সাংবাদিকরা রাষ্ট্র/সরকাপ্রধানকে সম্বোধনের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব বজায় রাখেন। কিন্তু বাংলাদেশে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি এসব ছেলেদের মা’ এ ধরনের স্তুতিও আওড়ানো হয়। কোন গঠনমূলক প্রশ্ন ছাড়া শুধুমাত্র সরকারের বিভিন্ন কাজের ফিরিস্তি দিয়ে সেগুলোর প্রশংসা করতে দেখা যায় না গণতান্ত্রিক দেশের সাংবাদিকরা।

৮.

গণতান্ত্রিক দেশে সংবাদ সম্মেলনে মূল ফোকাস থাকে সাংবাদিকদের ওপর। প্রেসিডেন্টের সামনে চেয়ারে সরাসরি সাংবাদিকরা বসেন। আর বাংলাদেশে কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিককে সামনে এক সারিতে  দিয়ে বাকি সবগুলো সামনের চেয়ারে বসানো হয় সরকারের নানান মন্ত্রী উপদেষ্টা আমলাকে। তাদের পেছনে বসেন বেশিরভাগ সাংবাদিক। যেন সাংবাদিকরা সংবাদ সম্মেলনে গৌণ অতিথি!

লেখক-আকিব আহমেদ, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *