কৃত্রিম কিডনির আবিষ্কারক বাংলাদেশের শুভ রায়1 min read
Reading Time: 3 minutesকৃত্রিম কিডনি আবিষ্কার করে সারা পৃথিবীতে হইচই ফেলে দেয়া বাংলাদেশী বিজ্ঞানী শুভ রায়। ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে প্রকাশিত জার্নাল ‘টেকনোলজি রিভিউ’তে ছাপা হয়েছে শুভ রায়ের এই যুগান্তকারী আবিষ্কার। চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁর এ আবিষ্কার অসামান্য অবদান হিসেবে গণ্য। শুভ রায় ও তাঁর গবেষণা দলের আবিষ্কৃত কৃত্রিম কিডনি ইতিমধ্যেই প্রাণিদেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মানবদেহে কৃত্রিম কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে।
শুভ রায়ের পেশা
শুভ রায় ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার স্কুল অব ফার্মাসি অ্যান্ড মেডিসিনের বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড থেরাপিউটিক সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক। তিনি দশ বছর আগে চল্লিশ জন সহকর্মী নিয়ে কৃত্রিম কিডনি তৈরির গবেষণা শুরু করেন। টানা তিন বছর তিনি ও তাঁর দল নিরবচ্ছিন্নভাবে গবেষণা করেন। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁরা গবেষণার ফল প্রকাশ করেন।
পারিবারিক পরিচয় ও শিক্ষাজীবন
শুভ রায়ের জন্ম ১৯৬৯ সালের ১০ নভেম্বর, ঢাকায়। তবে উনার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির রোসাঙ্গোগিরিতে। শুভ রায়ের বাবার নাম অশোক নাথ রায়। তিনি ছিলেন পেশায় চিকিৎসক। আর মা রত্না রায় পেশায় একজন শিক্ষিকা ছিলেন। শুভ রায়ের দাদা নগেন দে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর স্যার কানুনগোপাড়া আশুতোষ কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
শুভ রায়কে পাঁচ বছর বয়সে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে একটি নার্সারি স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু বাবার পেশাগত কারণে তিনি ১৯৭৪ সালে পরিবারের সঙ্গে চলে যান উগান্ডায়। সেখানে জিনজা সেকেন্ডারি স্কুল থেকে তিনি সেকেন্ডারি পাস করেন। তারপর সেখান থেকে শুভ রায় চলে যান আমেরিকায়। তিনি আন্ডার গ্রেজুয়েশন শেষ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আলিয়ন্স ওহাইওর মাউন্ট ইউনিয়ন কলেজ থেকে।
জীবনের লক্ষ্য
২০১০ সালের ডিসেম্বরে ‘দৈনিক প্রথম আলো’ পত্রিকার একজন প্রতিবেদক শুভ রায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, কৃত্তিম কিডনি তৈরির ধারণা কিভাবে এল? এমন প্রশ্নের উত্তরে শুভ রায় বলেন, “আমার বাবা চিকিৎসক, পরিবারের আরো অনেকে চিকিৎসক। আমি কিন্তু চিকিৎসক হতে চাইনি। ভিন্ন কিছু হতে চেয়েছি, তাই প্রকৌশলবিদ্যা অধ্যয়ন করেছি। আমি একজন প্রকৌশলী হিসেবে অধিক কার্যকর ডায়ালাইসিস যন্ত্র তৈরি করতে আগ্রহী ছিলাম। আর তা করতে গিয়ে আশ্চর্যের সাথে লক্ষ করলাম কৃত্রিম কিডনি তৈরির সম্ভাবনার দিকটি। গত তিন বছরে সব মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলাম এ বিষয়ে, আমি সাফল্যের ছোঁয়া পেয়েছি বলতে পারেন।”
কিডনি তৈরির আদ্যোপান্ত
ডা. শুভ রায়ের তৈরিকৃত কৃত্রিম কিডনি দেখতে অনেকটা কফি কাপের মতো বা হাতের মুঠোর মতো। এটি রক্ত থেকে বর্জ্য পরিশোধন করে রক্তকে বিশুদ্ধ করবে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হরমোন উৎপাদন ও ভিটামিন ডি সংশ্লেষণ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সহায়তা করে। ইঁদুর ও শূকরের দেহে সফলভাবে কৃত্রিম কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তারপর পাঁচ বছর ব্যাপকভাবে বিভিন্ন প্রাণির ওপর এ পরীক্ষা চালিয়ে এখন মানবদেহে প্রতিস্থাপনযোগ্য কিডনি বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কৃত্রিম কিডনি মানবদেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করতে পারলে ব্যয়বহুল ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হবে না।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার কৃত্রিম কিডনি তৈরি প্রকল্পের একজন বিজ্ঞানী বলেন, এটি রক্ত থেকে বর্জ্য পরিশোধনের জন্য খুব সূক্ষ্ম ফিল্টার স্বরূপ। এছাড়াও জীবন্ত কিডনি কোষ দিয়ে তৈরি বায়ো রিঅ্যাক্টর এবং সূক্ষ্ম পর্দার মাধ্যমে রক্ত শোধনের কাজ নিখুঁতভাবে করতে পারে কৃত্রিম কিডনি। ২০১০ সালের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ভারতে গুরুতর কিডনি সমস্যায় ভুগতে থাকা রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এদের মধ্যে মাত্র তিন হাজার পাঁচশ জনের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়। ছয় থেকে দশ হাজার রোগী ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভর করেন। আর বাকিরা হয়ত চিকিৎসার তেমন সুযোগ পান না। আর শুভ রায় বলেছেন কৃত্রিম কিডনি আবিষ্কারের ফলে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয়তা দূর হবে।
শুভ রায়ের মা ‘প্রথম আলো’কে বলেছেন, “শুভ যে অনেক দূর যাবে, সেটা আমি জানতাম। কিন্তু সে কী কাজ করছে সেটা নিয়ে খুব একটা কথা বলত না। সে যে কৃত্রিম কিডনি তৈরি করছে, সে ব্যাপারে আমাদের কিন্তু আগে থেকে কিছুই বলে নি। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে যখন তাকে নিয়ে হইচই হলো এশিয়ান এজ, ডেইলি মেইল, টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো পত্রিকাগুলোতে লেখালেখি হলো, তখন তাকে ফোন করলাম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলল, মা, এখনও অনেক কিছুই বাকি।” শুভর মা রত্না৷ রায় আরো বলেন, “আমরা সেইদিনের প্রত্যাশায় আছি, যেদিন বিশ্বের দরবারে আরেকবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাঙালি জাতি।”