ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে শীর্ষ ১০ রান সংগ্রাহক ব্যাটসম্যান1 min read
Reading Time: 5 minutes২০১৯ বিশ্বকাপের আগে এক ইনিংসে ৪০০-৫০০ রান হবে কিনা সে নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছিল। এখন পর্যন্ত কোন ইনিংসে ৪০০ এর বেশি রান না হলেও রানের ফোয়ারা থেমে নেই। ২০১৯ বিশ্বকাপে ইতিমধ্যে পাঁচজন ব্যাটসম্যান ৫০০ রানের মাইলফলক অতিক্রম করেছেন। ব্যাটসম্যানদের এই রেকর্ড ভাঙ্গাগড়ার ফাকে ২০১৫ পর্যন্ত ক্রিকেট বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রান করা ১০ ব্যাটসম্যানের পরিসংখ্যানের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিন।
শচীন টেন্ডুলকার (ম্যাচ- ৪৫, রান- ২২৭৮, গড়- ৫৬.৯৫, শতক- ৬, অর্ধশতক- ১৫)
বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানদের গড়া রেকর্ড তালিকার নেতৃত্বে আছেন শচীন টেন্ডুলকার। ভারতের হয়ে ১৯৯২ থেকে ২০১১ পর্যন্ত টানা ৬টি বিশ্বকাপে খেলেছেন এই ব্যাটিং জিনিয়াস। ২০০৩ বিশ্বকাপে তিনি করেন ৬৭৩ রান, যেটি এখনো বিশ্বকাপের এক আসরে করা কোন ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রান।
একমাত্র ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ছাড়া বাকি প্রতিটি আসরেই টেন্ডুলকারের ব্যাটিং গড় ছিল ৪০ এর উপর। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৬টি শতক ও ১৫টি অর্ধশতকের রেকর্ডও তার দখলে। ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা টেন্ডুলকার ২০১১ সালে নিজের দেশে, নিজের শহর মুম্বাইয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পান।
রিকি পন্টিং (ম্যাচ- ৪৬, রান- ১৭৮৩, গড়- ৪৫.৮৬, শতক- ৫, অর্ধশতক- ৬)
পন্টিং বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। বিশ্বকাপে তার অধীনে খেলা ২৯ ম্যাচের ২৬টিতে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলা পন্টিং টানা ৩টি বিশ্বকাপ জেতেন। এর মধ্যে তার অধিনায়কত্বেই ২০০৩ ও ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়ার ঘরে যায়।
২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে পন্টিংয়ের ১২১ বলে ১৪০ রানের অপরাজিত ইনিংসটিই ভারতের বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন শেষ করে দেয়। তবে ব্যাট হাতে ২০০৭ বিশ্বকাপে পন্টিং বেশ সফল ছিলেন। সেই আসরে একটি শতক ও চারটি অর্ধশতক মিলিয়ে ৬৭.৩৭ গড়ে ৫৩৯ রান করেন তিনি।
কুমার সাঙ্গাকারা (ম্যাচ- ৩৭, রান- ১৫৩২, গড়- ৫৬.৭৮, শতক- ৫, অর্ধশতক- ৭)
২০০৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপ খেলা শ্রীলঙ্কান এই বাঁহাতি গ্রেট বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে সফল উইকেট-কিপার ব্যাটসম্যান। ষ্ট্যাম্পের পেছনে ৫৪টি ডিসমিসালের পাশাপাশি বিশ্বকাপে ১৫০০ রান করা ৩ ব্যাটসম্যানের একজন তিনি।
ব্যাট হাতে ২০১৫ বিশ্বকাপ সাঙ্গাকারার জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। এই আসরে ১০৮.২০ গড়ে ৫৪১ রান করেন তিনি। এরমধ্যে বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা চারটি শতক হাঁকান তিনি। ২০১১ বিশ্বকাপেও ব্যাট হাতে দারুন সফল ছিলেন তিনি। একটি শতক ও ৩টি অর্ধশতকে ৯৩.০০ গড়ে ৪৬৫ রান করেন তিনি সেই আসরে।
২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা সাঙ্গাকারা ২০১১ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে নেতৃত্ব দেন।
ব্রায়ান লারা (ম্যাচ- ৩৪, রান- ১২২৫, গড়- ৪২.২৪, শতক- ২, অর্ধশতক- ৭)
বিশ্বকাপের প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং গ্রেট ব্রায়ান লারা দলগত ভাবে বিশ্বকাপে তেমন কিছু অর্জন করতে না পারলেও ব্যাট হাতে বেশ সফল ছিলেন। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তার অবস্থান চতুর্থ। ১৯৯২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত মোট ৫ টি বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনি। ১৯৯৯, ২০০৭ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নেতৃত্ব দেওয়া লারা ২০০৭ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ এক দিনের ম্যাচটি খেলেন।
এবি ডি ভিলিয়ার্স (ম্যাচ- ২৩, রান- ১২০৭, গড়- ৬৩.৫২, শতক- ৪, অর্ধশতক- ৬)
বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের এই তালিকায় ১০০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে রান করা একমাত্র ব্যাটসম্যান ভিলিয়ার্স। ব্যাটিং গড়ও ৬০ এর উপরে। ২০০৭, ২০১১, ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলা ভিলিয়ার্স ২০১৫ বিশ্বকাপে ৪৮২ রান করেন। সেই আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৬৬ বলে ১৭টি চার ও ৮টি ছয়ে ১৬২ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন তিনি।
সনাৎ জয়াসুরিয়া (ম্যাচ- ৩৮, রান- ১১৬৫, গড়- ৩৪.২৬, শতক- ৩, অর্ধশতক- ৬)
শ্রীলঙ্কার ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম ট্রাম্প কার্ড জয়াসুরিয়া ১৯৯২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। অধিনায়ক হিসেবে ২০০৩ সালে তিনি শ্রীলঙ্কাকে সেমি ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হন।
ব্যাট হাতে ২০০৭ বিশ্বকাপে জয়াসুরিয়ার সবচেয়ে ভালো সময় কাটিয়েছেন। ২০০৭ বিশ্বকাপে ২টি শতক ও ২টি অর্ধশতকসহ ৪৬৭ রান করেন তিনি।
জ্যাক ক্যালিস (ম্যাচ- ৩৬, রান- ১১৪৮, গড়- ৪৫.৯২, শতক- ১, অর্ধশতক- ৯)
দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল অর্ডারের স্তম্ভ ক্যালিস ২০ বছর বয়সে ১৯৯৬ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন। ২০১১ পর্যন্ত টানা পাঁচ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ছিলেন তিনি।
বিশ্বকাপে ৩৬ টি ম্যাচ খেলা ক্যালিস ব্যাট হাতে উজ্জল ছিলেন ২০০৭ বিশ্বকাপে। সেই আসরে তিনি ৮০.৮৩ গড়ে ৪৮৫ রান করেন। শচীন টেন্ডুলকারের পরে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৯টি অর্ধশতকের মালিক ক্যালিস।
তিলকরত্নে দিলশান (ম্যাচ- ২৭, রান- ১১১২, গড়- ৫২.৯৫, শতক- ৪, অর্ধশতক- ৪)
ক্যারিয়ারের শেষের দিকে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান নিজেকে হাজির করা দিলশান ২০১১ এবং ২০১৫ বিশ্বকাপের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় ছিলেন। ২০১১ বিশ্বকাপে ৫০০ রান নিয়ে তিনি হয়েছিলেন সেই আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনি খেলেন অপরাজিত ১৬১ রানের একটি অনবদ্য ইনিংস, যেটি এখনো বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কান কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংস।
মাহেলা জয়াবর্ধনে (ম্যাচ- ৪০, রান- ১১০০, গড়- ৩৫.৪৮, শতক- ৪, অর্ধশতক- ৫)
মাহেলা ২১ বছর বয়সে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা দলে জায়গা পান। ২০১৫ সালে শেষ বিশ্বকাপ খেলা মাহেলা পাঁচটি বিশ্বকাপে মোট ৪০ টি ম্যাচ খেলেছেন। বিশ্বকাপে টেন্ডুলকার(৪৬) এবং পন্টিং(৪৫) কেবল মাহেলার চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন। বিশ্বকাপে ঠিক ১১০০ রানের মালিক মাহেলা ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ১০৩ রানের একটি ইনিংস খেলেন। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ এক দিনের ম্যাচ খেলেন তিনি।
অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (ম্যাচ- ৩১, রান- ১০৮৫, গড়-৩৬.১৬, শতক- ১, অর্ধশতক- ৮)
গিলক্রিস্ট তার কারিয়ারে মোট তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭। প্রতিটি বিশ্বকাপের তিনি শিরোপার দেখা পেয়েছেন। বিশ্বকাপে ৩১ ম্যাচে ৯৮.০১ স্ট্রাইক রেটে ১০৮৫ রান করা গিলক্রিস্ট তার সেরা ইনিংসটি খেলেন ২০০৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচে ১৪৯ রানের একটি অতিমানবীয় ইনিংস খেলে তিনি। এটি এখনো বিশ্বকাপ ফাইনালে কোন ব্যাটসম্যানের করা সর্বোচ্চ ইনিংস।
লেখক- মাহমুদ হাসান
আরও পড়ুন- আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯: সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ১০ ব্যাটসম্যান