বিনোদন

শিশু নিপীড়নের গল্প যখন চলচ্চিত্রে1 min read

জুলাই ৭, ২০১৯ 4 min read

author:

শিশু নিপীড়নের গল্প যখন চলচ্চিত্রে1 min read

Reading Time: 4 minutes

এই স্যারকে র‍্যাব ধরল, তাহলে আমাদের হুজুরকে ধরে না কেন? হুজুরও আমাদের সঙ্গে এসব করে।‘ 

বছরের মেয়ের মুখে এই কথা শুনে চমকে ওঠেন মা। অথচ তিনিই দিনের পর দিন মেয়েকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে মাদ্রাসায় জোর করে পাঠাতেন। ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে আটক এক শিক্ষকের গ্রেপ্তার ঘটনার ভিডিও দেখছিলেন এই মা। তখনই পাশ থেকে মেয়ের কথায় সংবিৎ ফিরে তার। দ্রুতই যোগাযোগ করেন র‍্যাবের সাথে। ফলে বেরিয়ে আসে আরও ১২ ছাত্রী ধর্ষণ নিপীড়নের চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গত জুলাইপ্রথম আলো প্রথম পাতায় আসে খবরটি। নারায়ণগঞ্জের এক মাদ্রাসা অধ্যক্ষ বহুদিন যাবত যৌন নিপীড়ন এবং ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন ছাত্রীদের। তবে এটাই একমাত্র খবর নয়। পত্রিকার পাতা খুললে অথবা অনলাইন নিউজ পোর্টালের বদৌলতে প্রতি ঘণ্টায়ই এমন রোমহর্ষক ঘটনা আসছে সকলের সামনে। শিশু নিপীড়ন একটি বিশ্বজনীন সমস্যা। সেই সমস্যাকে সামনে তুলে ধরার দায়টি শুধু নিউজ মিডিয়ারই নয়, প্রত্যেকের। বিশাল চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিও সেই কর্তব্য পালনে পিছ পা হয়নি। বিশ্বজুড়ে ঘটে চলা শিশুদের প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদ জানিয়ে অসংখ্য ছবি নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে চুম্বক কয়েকটির কথাই জানাবো আজকে। 

Spotlight (২০১৫)

আমেরিকার বোস্টন শহরের সমস্ত শান্তিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়দ্য বোস্টন গ্লোবএর ২০০২ সালের সিরিজ রিপোর্ট। ২০০১ সালেদ্য বোস্টন গ্লোবেনতুন সম্পাদক হিসেবে আসেন মার্টিন ব্যারন। এক স্থানীয় রিপোর্টের ভিত্তিতে পত্রিকার তদন্তকারী দলকে তিনি নির্দেশ দেন শহরের চার্চগুলোতে যৌন নিপীড়নের ঘটনা তুলে আনতে। সেই তদন্তকারী দলের নামইস্পটলাইট 

তদন্তের মাধ্যমে ক্রমেই বেরিয়ে আসে নানারকম চমকে দেয়া তথ্য। যাজক জন গেওগানের উপর ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে মামলা চলছিল সেসময়। তদন্তে ক্রমে বের হয়ে আসে আরও ৭০ জন নিপীড়ক যাজকের ইতিহাস। গোটা শহর জেগে ওঠে এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে। তবে সবচেয়ে রোমহর্ষক তথ্য হলো, এই সমগ্র নিপীড়নে সায় ছিল চার্চ কমিটির। এমনকি অনেক অভিযোগ পাওয়ার পরেও তারা কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে যৌন উন্মাদ যাজকদের আশ্রয় দিয়েছে তারা। 

ছবিটিতে স্পটলাইট দলের চার সদস্যের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মার্ক র‍্যাফেলো,  র‍্যাচেল ম্যাক অ্যাডামস, মাইকেল কিটন ব্রায়ান জেমস। অস্কারের ৮৮তম আসরে তম ম্যাকার্থি পরিচালিত এই ছবিটি জিতে নেয় সেরা চলচ্চিত্র সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার।  

স্পটলাইট দলের তদন্ত কাজ নিয়েই নির্মিত ছবিটি; Image Credit: Amazon.com

Silenced (২০১১)

চলচ্চিত্রের সফলতা কোথায় ? নিছক বিনোদনে, শিক্ষায় না গোটা সমাজ বদলে? সে হিসেবে ‘Silenced’ কে ধরা যায় মহৎ চলচ্চিত্র হিসেবে। কারণ, এর প্রভাবে বদলে ফেলতে হয় শিশু নির্যাতন আইনের বেশ কিছু ধারা। 

দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজু ইনহোয়া স্কুলটি মূলত বাক শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নির্মিত।  আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ বিদ্যালয় মনে হলেও এর ভেতরের পুতিগন্ধময় সত্য বেরিয়ে আসে শীঘ্রই। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক কাং ইন হো প্রথম দিন থেকেই টের পেতে থাকেন স্কুলের অস্বাভাবিক পরিবেশের আঁচ। বিদ্যালয় কমিটি কিছু স্বীকার না করলেও ক্রমে কাং হো এবং স্থানীয় এক সাংবাদিকের হস্তক্ষেপে বেরিয়ে আসে গোটা স্কুল জুড়ে ঘটতে থাকা শিশু যৌন নির্যাতনের চিত্র। 

উপন্যাসিক গং জি ইয়ংয়ের ‘The Crucible’ উপন্যাসের আদলে নির্মিত এই ছবি মুক্তির পরপরই উত্তাল হয়ে ওঠে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ। জনতার চাপেই সরকার ‘নাবালক প্রতিবন্ধীদের প্রতি যৌন নিপীড়ন আইনবদল করে আরও কঠোর আইন প্রণয়নে বাধ্য হয়।

ছবিটিতে অভিনয় করে গং সেবছর ব্লু ড্রাগন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা জনপ্রিয় অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেন।  

গোয়াংজু ইনহোয়া স্কুলে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া যৌন নির্যাতনের গল্প উঠে এসেছে এই ছবিতে; Image Credit: IMDB

Michael (২০১১)

অস্ট্রিয়ান চলচ্চিত্রটির ঘটনা আবর্তিত হয়েছে মাইকেল নামের এক পেডোফাইলকে ঘিরে। দীর্ঘদিন ঘরের বেজমেন্টে একটি ছেলেকে আটকে রেখে ধর্ষণ নির্যাতন করে। 

মাইকেল আর ওলফগ্যাঙয়ের সম্পর্ক চমকে দেবে আপনাকেও ; Image Credit: Bonjourtrislees

ছবিটি সমালোচক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তবে এর সবচেয়ে ভীতিকর ব্যাপার ছিল শিশুর মানসিক বশ স্বীকারের প্রক্রিয়াটি। মনোবিদদের মতে, শিশু নিপীড়নের ক্ষেত্রে প্রথম প্রধান হাতিয়ারই এটি।

One Hour Photo ( ২০০২)

পরিচালক মার্ক রোমানেকের প্রথম পছন্দ ছিল জ্যাক নিকলসন। কিন্তু শেষকালে স্ক্রিপ্ট পড়ে রবিন উইলিয়ামসের হাতে। রবিন উইলিয়ামস তাঁর অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স দেন এই ছবিতে। 

এতে শৈশবে বাবার হাতে নিগৃহীত ধর্ষণের শিকার হয় সাইমুর পারিশ। সেই স্মৃতিই তাঁকে আজীবন তাড়া করে ফেরে। নিঃসঙ্গ জীবন এবং পরিবারের অভাবে ভালোবাসার কাঙাল হয়ে ওঠে সাই। ঘটনাচক্রে ইয়র্কিন পরিবারের সাথে জড়িয়ে পড়ে সে। আবিষ্কার করে তাদের পরিবারের অন্ধাকারাচ্ছন্ন দিক। 

রবিন উইলিয়ামসের দুর্দান্ত অভিনয়ই ছিল এই ছবির প্রাণ; Image Credit: Just Watch

By The Grace of God (২০১৯)

বর্তমানে ফ্রান্সের লিও শহরের আলোচনার  অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে হলো আর্চ বিশপ ফিলিপ বারবেইন। দীর্ঘদিন যাবত অন্য যাজকদের যৌন বিকারগ্রস্ত আচরণ নিপীড়ন ধামাচাপা দেয়ার জন্য সম্প্রতি বিচারের সম্মুখীন হন তিনি। 

ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই পরিচালক ফ্রাসোয়া ওজোন মুক্তি দেন ‘By The Grace of God’। এই ছবির গল্পও আবর্তিত হয়েছে ফ্রান্সের চার্চে বিশপদের অন্যায় নিপীড়নকে ঘিরেই। অনেকের মতে এটি ফ্রান্সের ‘Spotlight’। তবে এই ছবিতে আরও গভীর এবং সম্যকভাবে ভিক্টিমদের অভিজ্ঞতা দেখানো হয়েছে। এই ফ্রেঞ্চবেলজিয়ান চলচ্চিত্রটি বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে জুরিদের নির্বাচনে গ্র্যান্ড পিক্স জিতে নেয়।  

প্রত্যেক ভাষাতেই কমবেশি শিশু নিপীড়ন নির্যাতন বিরোধী চলচ্চিত্র রয়েছে। বর্তমানে সব দেশই এই ব্যাপারে সোচ্চার। সেই তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান অনেক পেছনে। 

লেখক- সারাহ তামান্না 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *