১১ দিন নিখোঁজ থাকার পর ২০ জুন, বৃহস্পতিবার ভোরে ময়মনসিংহ থেকে উদ্ধার করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোহেল তাজের ভাগনে সৌরভকে। প্রথমে এই তথ্য বৃহস্পতিবার ভোর ৬ টায় সোহেল তাজ নিজেই ফেসবুক লাইভে এসে দেন। পরে সকাল ১১ টায় আরেকবার ফেসবুক লাইভে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় তিনি জানান, ‘সৌরভকে যখন পাওয়া যায় তখন তার হাত-পা বাঁধা ছিল। গায়ে কোনো জামা ছিল না, শুধু পায়জামা পরা ছিল। তার চোখ বাঁধা ছিল। ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার তাকে বাসায় নিয়ে গোসলের ব্যবস্থা করেন এবং কিছু খাবার দেন। উদ্ধারের পর সৌরভ বুঝেই উঠতে পারেনি সে কোথায় আছে।’
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ কার্যালয়ের সামনে এক প্রেস ব্রিফিং এ পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান, তারাকান্দা উপজেলার বটতলা নামক এক স্থানের জামিল অটো রাইস মিলের সামনে থেকে সৌরভকে উদ্ধার করে পুলিশ। অজ্ঞাত কিছু লোক রাইস মিলের সামনের রাস্তায় সৌরভকে রেখে চলে যায়। এরপর সৌরভ সেই মিলের লোকজনকে নিজের পরিচয় দিলে মিলের লোকজন সৌরভের পরিবারকে খবর দেন। পরে সৌরভের পরিবারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যাপারটি অবহিত করা হলে চট্টগ্রাম এন্টি-টেরিরিজম ইউনিটের ডিসি ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারকে ফোন করে সৌরভের অবস্থান জানান।
খবর পেয়ে তারাকান্দা থানার পুলিশসহ পুলিশ সুপার শাহ আবিদ নিজে গিয়ে সৌরভকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহে নিয়ে আসেন। পরে সৌরভের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ পাহারায় তাকে বনানীতে পরিবারের কাছে পাঠানো ব্যবস্থা করা হয়।
সৌরভকে বহন করা পুলিশের প্রিজন ভ্যানটি সৌরভের বাসার সামনে পৌঁছামাত্র সেখানে একটি আবেগঘন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। প্রিজন ভ্যান থেকে নেমে মাকে কাছে পেয়ে মায়ের কাঁধে মুখ লুকিয়ে কেদে ওঠেন সৌরভ। সৌরভকে কাছে পেয়ে তার মা আরজুমানও কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। সৌরভের মা এবং সৌরভ সোহেল তাজসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।
এতদিন সৌরভকে কোথায় রাখা হয়েছিল, নির্যাতন করা হয়েছিল কিনা স্বাভাবিকভাবেই এমন অনেক প্রশ্ন সবার মনে। কিন্তু সোহেল তাজ জানান, “আতঙ্কগ্রস্ত সৌরভকে এতদিন কোথায় আটকে রাখা হয়েছিল সে বিষয়ে সে মুখ খুলতে চাইছে না। সে মানসিকভাবে একেবারেই বিপর্যস্ত। এখন তাকে চাপমুক্ত রাখতে চাই। আমরা তাকে একটু স্বস্তিতে রাখতে চাই। সৌরভ আভাস-ইঙ্গিতে কিছুটা জানিয়েছে, সে কী পরিস্থিতিতে ছিল। তবে এখন তার ওপর কোনো চাপ দেয়া যাবে না। আমরা তার অপেক্ষায় আছি।”
এর আগে গত ৯ জুন চট্টগ্রামের মিমি সুপার মার্কেটের আগোরার সামনে থেকে সৌরভ অপহৃত হন। সৌরভের মা আরজুমান অভিযোগ করেন ৮ জুন র্যাব সৌরভকে ফোন করে চাকুরী সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট, সার্টিফিকেট ও জীবনবৃত্তান্ত রেডি রাখতে বলেন। ৯ জুন দুপুর ৩টায় র্যাব সৌরভের সাথে যোগাযোগ করে তাকে প্রয়োজনীয় কাগজ ও পাসপোর্টসহ চট্টগ্রাম মিমি সুপার মার্কেটের আগোরার সামনে সন্ধ্যা ৭টায় উপস্থিত হতে বলে। এরপর সৌরভ তাদের সাথে দেখা করতে বাসা থেকে বের হলে আর ফিরে আসেন নি।
লেখক- হাসান উজ জামান
আরও পড়ুন- ১০ জনের মধ্যে ৯ জন পোশাক শ্রমিকেরই তিন বেলা খাওয়ার সামর্থ্য নেই
আরও পড়ুন- গত ৫ বছরে দেশে ফিরেছে ১৭ হাজার ৩০৩ জন প্রবাসী শ্রমিকের লাশ