মোশাররফ করিমকেও ছাড়লাম না আমরা!1 min read
Reading Time: 4 minutesমোশাররফ করিমকেও ছাড়লাম না আমরা!
সামাজিক নানা সমস্যা ও অবিচার-অনাচার প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ‘জাগো বাংলাদেশ” নামের একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। যুক্তরাষ্ট্রের “টেডএক্স” ও ভারতের “সত্যমেভ জয়তে”র মত জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চ্যানেল টুয়েন্টিফোরে প্রচারিত এই সামাজিক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানটির দায়িত্ব নেন মোশাররফ করিম। তো, সেখানে ১৮ই মার্চ অনুষ্ঠানটির দ্বিতীয় পর্ব প্রচারের পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তার প্রবল সমালোচনা শুরু হয়, তাকে ধর্মদ্রোহী, নাস্তিক ইত্যাদি নানা জঘন্য গালাগালি দিতে শুরু করে এক শ্রেণীর মানুষ। কিন্তু কি বলেছিলেন মোশাররফ করিম? কেন তাকে গালাগালি করলো এরা?
আমাদের সমাজে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হলেই এক শ্রেণীর পার্ভাট পটেনশিয়াল রেপিস্ট পোশাকের দোষ দেয়, বলতে চায় যে অশালীন কাপড় পড়ার জন্যই নাকি ধর্ষণ হয়েছে। অথচ তখন যদি প্রশ্ন করা হয় যে একটা সাত-আট মাস বয়সের বাচ্চা কিংবা একটা তিন-চার বছর বয়সী বাচ্চা কেন ধর্ষিত হলো, তার পোশাকে কি সমস্যা ছিল, তখন এই পার্ভাটগুলো নোংরা তেলাপোকার মত পালিয়ে যায়। নারির প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে মোশাররফ করিম ঠিক এই প্রশ্নটিই করেছিলেন। তিনি বলছিলেন যে,
“পোশাক! পোশাক! পোশাক! একটা মেয়ে তার পছন্দমতো পোশাক পরবে না? আচ্ছা পোশাক পড়লেই যদি প্রবলেম হয়, তাহলে সাত বছরের মেয়েটির ক্ষেত্রে কী যুক্তি দেব, যে বোরকা পরেছিলেন তাঁর ক্ষেত্রে কী যুক্তি দেব? কোনো যুক্তি আছে?’
এরপর তিনি উপস্থিত এক মেয়েকে প্রশ্ন করেন যে সে পছন্দমত পোশাক পড়বার জন্য ইভটিজিং-এর শিকার হয়েছো কিনা কিংবা নিজের পরিবারে কিংবা আত্মীয়স্বজনদের কথা শুনেছো কিনা, তখন মেয়েটা উত্তর দেয় যে, হ্যাঁ, এবং এতে তার খারাপ লেগেছে। সে মনে করে যে সমাজের কিছু মানুষের নীচ মানসিকতার জন্যই আজ এই অবস্থা! তখন মোশাররফ করিম বলেন,
এটা আর কিছু না, এটা হচ্ছে সে (পার্ভাট পটেনশিয়াল রেপিস্ট) নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে পারে না, এবং না পেরে পরাস্ত হয়ে সে তখন তোমার পোশাকের দোষ দেয়! কিন্তু আমার মনে হয় এটা সম্ভব, নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে জেতা সম্ভব!
মোশাররফ করিম আরো বলেন,
সমস্যাটা পোশাকে না, সমস্যাটা ওখানে(মনে)। আমরা শ্লীল হয়ে উঠি, আমরা ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস করতে শিখি, সেটা না শিখলে আমি আসলে পুরুষ হয়ে উঠবো না। ইমাম গাজ্জালী (রাঃ) বলেছেন, দেয়ার আর থার্টিন এনিমিস ইনসাইড ইউ দ্যাট ইউ ক্যান নট সি। তেরোটি শত্রু তোমার ভেতরে আছে, যেগুলো তুমি দেখতে পাও না। জিহাদটা তাদের বিরুদ্ধে ঘোষণা করতে বলেছেন প্রথমে। সো, ব্যাপারটা আপনার আমার মনের মধ্যে, সেখানেই আসল সাপ, তার সাথে কথা বলেন না, তাকে থামান না, পোশাকের দোষ দেন, তাই না? মনের ওই উন্নয়ন না হলে তো হবে না!
কি, কথাগুলো খুব বাজে কিংবা জঘন্য কোন কথা শোনাচ্ছে? অথচ ঠিক এই কথাগুলোর জন্যই অনলাইনে মোশাররফ করিমকে গালাগালি করে তার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করছেন আমাদের ফেসবুক মুমিন পার্ভাটেরা। এরা মোশাররফ করিমকে নাস্তিক ট্যাগ দিচ্ছে গালাগালি করছে ইমাম গাজ্জালীর মহান বাণী উল্লেখ করায়, অথচ পৃথিবীর প্রত্যেক ধর্মে স্পষ্ট উল্লেখ আছে নিজের কামতাড়না কিংবা নফসকে সামলানোর কথা, মনের ভেতরের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করার কথা। মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার কথা উল্লেখ আছে সমস্ত নীতিবাক্যেই। এমনকি ইসলামে নিজের নফসের সাথে জিহাদকে বড় জিহাদ হিসেবেও গণ্য করা হয়েছে। অথচ এই অশিক্ষিত মূর্খ বর্বরগুলো না জানে ধর্ম, না মানে ধর্মীয় বিধিবিধান, না জানে মানুষ হিসেবে নিজের কর্তব্য। ধর্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য মোশাররফ করিমকে নাস্তিক ডেকেই এরা মনে করে যে ধর্ম পালন হয়ে গেল, সওয়াব কামানো হয়ে গেল! বেহেশতের পথ নিশ্চিত হয়ে গেল! এ কোন অসুস্থ সমাজে বাস করছি আমরা? এতো বিকারগ্রস্থ প্রাণীতে কিভাবে ভরে গেল আমাদের চারপাশ!
এই কথাটাই যেন বলছেন মোশাররফ করিম-
“এই বিকারগ্রস্থদের সুস্থ কে করবে? এই অসুস্থতা তো সমাজের অসুস্থতা। এদের চিহ্নিত করা এবং শোধরানো সমাজের জন্য খুব জরুরী! সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, এরা যদি পার পেয়ে যেতে থাকে, সেটাই বড় ব্যাধি। পার পেয়ে যেতে থাকলে ব্যাধি ছড়ায়, কমে না। একই ঘটনা(ধর্ষণের ঘটনা) এই কারণেই বারবার ঘটছে। এটা আমাদের থামাতে হবে।“
এতো সুন্দর করে এর আগে আর কেউ এই ভয়াবহ সমস্যাটা এভাবে আইডেন্টিফাই করে স্পষ্টগলায় কথা বলেছেন কিনা আমার জানা নেই। অথচ দেখুন, স্রেফ এই অসাধারণ আহ্বান জানানোর মাশুল দিতে হলো মোশাররফ করিমকে, গালাগালি আর নাস্তিক ট্যাগ এতোটাই জঘন্য পর্যায়ে চলে গেছে যে বাধ্য হয়ে তাকে গতকাল ফেসবুকে নিজের ওয়ালে করতে হয়েছে ক্ষমা প্রার্থনা-
‘চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরে আমার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের একটি অংশে আমার কথায় অনেকে আহত হয়েছেন। আমি অত্যন্ত দুঃখিত। আমি যা বলতে চেয়েছি, তা হয়তো পরিষ্কার হয়নি। আমি পোশাকের শালীনতায় বিশ্বাসী এবং তার প্রয়োজন আছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা আমার অভিপ্রায় না। এ ভুল অনিচ্ছাকৃত। আমি দুঃখিত। দয়া করে সবাই ক্ষমা করবেন। আমি সবাইকে বলব, আগে পুরো অনুষ্ঠান দেখুন। যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁরা হয়তো পুরো অনুষ্ঠানটি দেখেননি। পুরো বক্তব্য না বুঝেই দোষারোপ করছেন।“
এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বললে জাফর ইকবাল স্যারের মত নাস্তিক ট্যাগ দিয়ে গালাগালি করা হয়, কোপানো হয়, উল্লাস করা হয় কোপানোর সংবাদ পেয়ে, ক্রিকেটের ভালো খেলে দেশকে গর্বের উপলক্ষ্য এনে দিলে সাকিব আল হাসানের মত নাস্তিক, লোভী, স্বার্থপর ট্যাগ দিয়ে গালাগালি করি আমরা, ক্রিকেটারদের স্ত্রীকে-সন্তানকেও চরম নোংরা গালাগালি করা হয়, বিমানের পাইলট হয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে যাত্রীদের জীবন বাঁচালে পৃথুলা রশিদের মত চরিত্রহীনা ট্যাগ দিয়ে গালাগালি করা হয়, ওই দূরদেশের স্টিফেন হকিংকেও ছাড়া হয় না, নাস্তিক মরছে এই খুশিতে উৎকট উল্লাসে মাতে অনেকেই, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিপক্ষে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার, মনের সাথে যুদ্ধ করার আহ্বান জানালে মোশাররফ করিমের মত নাস্তিক ট্যাগ দিয়ে গালাগালি করা হয়। পৃথিবীর কোন সভ্য দেশ বাদ দিলাম, আমাদের অনেকের চোখে অসভ্য আফ্রিকান জংলীদের সমাজেও এই ধরণের জঘন্য নির্লজ্জ বেহায়তা নিকৃষ্ট তেলাপোকা গিজ গিজ করার কথা ভাবাও যায় না। যেটা ঘটছে আমাদের সমাজে, এই দেশে, আমাদের চোখের সামনে, সর্বত্র! এই দেশের একটা বিশাল অংশের মানুষের সত্যিকারের চেহারা হচ্ছে এটা, পটেনশিয়াল রেপিস্ট, পার্ভাট, ড্রেনের ময়লার ভেতরে কিলবিল করতে থাকা শাদা তেলাপোকা, কাউকে বাঁচতে দিতে চায় না, হাসতে দিতে চায় না, নারীদের পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে দিতে চায় না, ভালো কিছু চায় না, গর্বের কোন অর্জন চায় না, কেবল এই দেশটাকেই বস্তাবন্দী করে মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়! আর চায় পান থেকে চুন খসলে যে কাউকে নাস্তিক ট্যাগ দিয়ে আচ্ছামত গালাগালি করে কুপিয়ে জবাই করে বেহেশতে যেতে! কি ভয়ংকর! কি নির্লজ্জ! কি লজ্জার!
ঠিক এইভাবে প্রগতির পথে, ভালো কিছু, ভদ্র, সভ্য চমৎকার কোন কিছুকে খুব সহজে নাস্তিক ট্যাগ দিয়ে নোংরা গালাগালি করে! খুব অবাক লাগে মাঝে মাঝে, পৃথিবী সেখানে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে কিভাবে আমাদের দেশ এমন অসভ্য বর্বর ড্রেনের তেলাপোকায় ভরে যাচ্ছে একটু একটু করে? এরা কি কাউকে বাঁচতে দেবে না? ঘরে বাইরে অফিসে আদালতে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে সেখানে হিংস্র হায়েনার মত লালা ঝরাতে ঝরাতে মেয়েদের উপর হামলে পড়া এই স্পাইনলেস পার্ভাট পটেনশিয়াল রেপিস্টগুলোর হাত থেকে আমাদের মা-বোনদের কিভাবে বাঁচাবো আমরা?
জাহাঙ্গীর লুসাই
প্রযোজনা সহযোগী, চ্যানেল ২৪, চট্টগ্রাম।
(ফেসবুক স্টেটাস থেকে সংগ্রহকৃত)
Shorab Uddin
if you think he was right then call me i will tell you what he said and where is the wrong . me as a Son of Muslim i can't go agents my creator . if you so explain me how .