Site icon Bangla Info Tube

মৃত্যু নিয়েও যখন বাণিজ্য

জেকেজি হেলথ কেয়ারের করোনা নিয়ে ভুয়া রিপোর্ট; Photo: bdjournal

Reading Time: 3 minutes

পুরো বিশ্ব জুড়ে চলছে করোনা ভাইরাসের তাণ্ডব। প্রতিনিয়তই পৃথিবীব্যাপী প্রাণ যাচ্ছে হাজারো মানুষের। প্রতিনিয়তই এই ভাইরাসের থাবায় লাখো মানুষের চোখে নেমে আসছে অবিরত কান্নার জলধারা। আবার সেই ভুক্তভোগীদের ছলছল চোখের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ বিছিয়ে যাচ্ছেন তাদের অবৈধ ব্যবসার জাল। এই ভয়ংকর সময়ে যখন পুরো মানব জাতির ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা উচিৎ, সেখানে কিছু মানবরূপী পিচাশেরা এতটাই ঘৃণ্য অপরাধ করছেন যে মানুষ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়ার আর কোন সুযোগই তারা রাখেননি।

বলছিলাম করোনা টেস্টের নামে নিজেদের পকেট ভারী করে ভুয়া রিপোর্ট সাপ্লাই করা জেকেজি হেলথ কেয়ারের কথা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রাপ্ত এই সংগঠনটির মূলত বিনা মূল্যে নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে যে, তারা পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন একেকটি নমুনা সংগ্রহের জন্য। তবে তাদের অপরাধ এখানেই শেষ নয়। যেখানে নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল বিনামূল্যে সেখানে এত টাকা নিয়েও যদি তারা সঠিক রিপোর্টটি প্রদান করত তাহলেও হয়ত অপরাধের মাত্রা এতটা তীব্র হয়ে উঠত না।

এই সংগঠনটি নমুনা সংগ্রহ করার পর সেগুলো ফেলে দিত এবং রোগীদের দিয়ে দিত নিজেদের বানোয়াট রিপোর্ট। এই দুর্দিনে পুরো জাতিকে বিশাল এক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে ঠিক এভাবে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি হাতিয়ে নিচ্ছিল কোটি কোটি টাকা।

তাদের ভুয়া রিপোর্ট যে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট রোগীদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে তা নয় বরং করোনা নেগেটিভের এই ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে যখন রোগীরা নিশ্চিন্তে চলাফেরা করছেন তখন নিজেদের অজান্তেই তারা হয়ত আরো অনেক মানুষকেই আক্রান্ত করে দিচ্ছেন। ‘নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার মধ্যে তীব্রভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে এই সংগঠনটির ভূমিকা রয়েছে’ এটি খুব সহজেই অনুমেয়।

কথা ছিল এই সংগঠনটি সারা দেশে দেড়শটির মত বুথের মাধ্যমে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহ করবে। কিন্তু মাত্র সাতটি স্থানে বুথ তৈরি করে তারা। তবে সেখানেও সংগ্রহ করা হত না কোন নমুনা! স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে সেখানে তারা সামাজিক দূরত্ব তো বজায় রাখতই না বরং সন্ধ্যার পর মদ, ইয়াবা, নারী সহ নানা রকম অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হত!

মানুষের চোখকে ধোঁকা দেয়ার জন্যই মূলত তারা এই কয়টি বুথ খুলেছিল। প্রকৃতপক্ষে এসব বুথের আড়ালে বিভিন্ন বাসা বাড়ি থেকে টাকার বিনিময়ে তারা নমুনা সংগ্রহ করে আসছিল। প্রতিদিন প্রতিটি নমুনা সংগ্রহের জন্য পাঁচ থেকে আট হাজার টাকার বিনিময়ে প্রায় একশটিরও বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হত।

এই প্রতারক সংগঠনের প্রধান নির্বাহী আরিফ সহ তেইশজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হলে বের হয়ে আসে এই ধরণের নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য। আর এদিকে গ্রেফতার করার পর এই সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় মাস্তান ও ক্যাডার বাহিনী তেজগাঁও থানায় হামলা করার সাহস পর্যন্ত করেছিল।

তবে রিমান্ড শেষে নিজেদের সব দোষ স্বীকার করার পর সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী আরিফকে কারাগারে পাঠানো হয়। এই সম্পর্কে তেজগাঁও জোনের সহকারী উপ-কমিশনার মাহমুদ খান বলেন, ‘ঠিক কতজন করোনা রোগীকে এই পর্যন্ত ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদান করেছে এই সংগঠনটি সেটা এখনো জানা যায়নি। তবে জব্দ-কৃত ল্যাপটপ এবং কম্পিউটার থেকে তথ্য ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে করোনা প্রাদুর্ভাবের একদম প্রাথমিক দিক থেকেই এমন ভয়ংকর জালিয়াতির কাজ করে আসছে এই সংগঠনটি। তাই ভুক্তভোগীর সংখ্যাও নেহায়েত কম হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।’

এই সংগঠনটি নিজেদের ওয়েবসাইটের প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে অনলাইনে নমুনা সংগ্রহের জন্য টাকা দাবী করার পাশাপাশি বুকিং বিডি এবং হেলথ কেয়ার নামক দুটি অনলাইন পেজের মাধ্যমেও নমুনা সংগ্রহ করে টাকা আত্মসাৎ করতো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে তারা রোগীদের আকৃষ্ট করতো।

তবে শুধুমাত্র জেকেজি নয় বরং আরো একটি চক্র করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জাল সার্টিফিকেট প্রদানের অবৈধ ব্যবসা করত বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। ঢাকা সহ ঢাকার আশেপাশে বিভিন্ন হাসপাতাল কেন্দ্রিক ছিল এই চক্রটির তৎপরতা। এই চক্রটি বিভিন্ন চিকিৎসক এবং হাসপাতালের নাম ও স্বাক্ষর জাল করে করোনা নেগেটিভ এবং পজিটিভ উভয় ধরণের সার্টিফিকেট বিক্রি করতো। জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে ঢাকা র‍্যাব-৩ এর একটি দল রাজধানীর করোনা চিকিৎসা প্রদানকারী মুগদা হাসপাতাল এলাকা থেকে সার্টিফিকেট জাল করা চক্রের বেশ কয়েকজনকে আটক করেছিল।

আটক করা কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জানা গিয়েছে তারা ইতোমধ্যে প্রায় দুইশরও বেশি জাল সার্টিফিকেট বিক্রি করেছিল। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু জাল সার্টিফিকেট এবং সার্টিফিকেট তৈরির কাজে ব্যবহৃত কয়েকটি কম্পিউটার এবং প্রিন্টার উদ্ধার করেছে র‍্যাব।

লেখক- ইকবাল মাহমুদ ইকু 

Exit mobile version