Site icon Bangla Info Tube

মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর, সীমানা ও সেক্টর কমান্ডার

মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর, সীমানা ও সেক্টর কমান্ডার

Reading Time: 3 minutes

যুদ্ধ মানেই কৌশল যুদ্ধে যারা যত বেশি রণকৌশল প্রদর্শন করতে পারে, জয়ের পাল্লা তাদের দিকেই ততবেশি ঝুঁকে পড়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে ১৯৭১ সালের ২৬ই মার্চ এদেশের মানুষ চূড়ান্তভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিন্তু আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করার জন্য পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম এদেশের মানুষের কাছে ছিল নাএমতাবস্থায় স্বাধীনতার যুদ্ধ চালিয়ে নেওয়ার জন্য বাঙালিদেরকে বিভিন্ন রণকৌশল গ্রহণ করতে হয় এসব রণকৌশলের একটি পদক্ষেপ ছিল পুরো বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে ফেলা

বাংলাদেশের প্রধান সেনাপতি আতাউল গনি ওসমানী যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে সমগ্র দেশকে ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল প্রথমে ৪টি এবং পরের দিন ১১ই এপ্রিল সংশোধন করে ১১টি সেক্টর ও ৬৪টি সাব-সেক্টরে ভাগ করেনযার ফলে পরবর্তীতে যুদ্ধ পরিচালনা করা অনেক সহজ হয়ে ওঠে কীভাবে ভাগ করা হয়েছিল এই সেক্টরগুলো এবং কারা ছিলেন এসব সেক্টরের দায়িত্বে, এসব বিষয়ের আদ্যোপান্ত আজ আপনাদেরকে জানাবো

মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের মানচিত্র; Photo Source: enbanglapedia.org

সেক্টর নং ১

ফেনী নদী থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও ফেনী পর্যন্ত ছিল ‘সেক্টর নং ১’। এই সেক্টরের  সদর দপ্তর  ছিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের  হরিনা১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান এবং জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর রফিকুল ইসলাম। আর এই সেক্টরকে পাঁচটি সাব সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছিল

সেক্টর নং

ঢাকা, কুমিল্লা, আখাউড়াভৈরব, নোয়াখালী ও ফরিদপুরের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ‘সেক্টর নং ২’। এই সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল ভারতের ত্রিপুরার মেঘালয় অঞ্চলেএপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর কেএম খালেদ মোশাররফ ও সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর এটিএম হায়দার। এই সেক্টরে ৬টি সাব-সেক্টর ছিল।

সেক্টর নং

হবিগঞ্জ, আখাউড়াভৈরব রেললাইন থেকে পূর্ব দিকে কুমিল্লা জেলার অংশবিশেষ এবং কিশোরগঞ্জ ও ঢাকার কিছু অংশ ছিল ‘সেক্টর নং ৩’ এর আওতায়। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কলাগাছিয়ায় এই সেক্টরের সদর দপ্তর অবস্থিত ছিলএপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর কেএম শফিউল্লাহ। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন মেজর এএনএম নুরুজ্জামান। আর এই সেক্টরেও ছিল ৬টি সাব-সেক্টর

সেক্টর নং ৪

সিলেট জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ‘সেক্টর নং ৪’। এই সেক্টরেও ছিল ৬টি সাব-সেক্টর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর সিআর (চিত্তরঞ্জন) দত্ত এবং ক্যাপ্টেন এ রব। সদর দপ্তর ছিল প্রথমে করিমগঞ্জ, পরবর্তীতে আসামের মাছিমপুর

সেক্টর নং ৫

বৃহত্তর ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং সিলেট জেলার অংশ বিশেষ  নিয়ে সেক্টর নং ৫ গঠিত হয় । মেজর মীর শওকত আলী ছিলেন সেক্টর কমান্ডার। সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকের বাঁশতলায় এই সেক্টরের সদর দপ্তর করা হয়েছিলএই সেক্টরকেও ৬টি সাব-সেক্টরে ভাগ করা হয়ছিল

সেক্টর নং ৬

দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহাকুমা  ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী অঞ্চল ব্যতীত সমগ্র রংপুর নিয়ে গঠিত হয় ‘সেক্টর নং ৬’। এই সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল বুড়িমারী, পাটগ্রামসেক্টর কমান্ডার ছিলেন ইউং কমান্ডার এমকে বাশার। এই সেক্টরে ছিল ৫টি সাব-সেক্টর

সেক্টর নং ৭

রাজশাহী, পাবনা, ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরবর্তী এলাকা ব্যতীত সমগ্র বগুড়া, দিনাজপুরের দক্ষিণ অঞ্চল ও রংপুরের কিছু অংশ ছিল ‘সেক্টর নং ৭’ এর অন্তর্ভুক্ত। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তিনজন যথা: মেজর নাজমুল হক, সুবেদার মেজর এ রব ও মেজর কাজী নুরুজ্জামান। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তরঙ্গপুরে ছিল এই সেক্টরের সদর দপ্তরএই সেক্টরে ছিল ৯টি সাব-সেক্টর

সেক্টর নং ৮

কুষ্টিয়া, যশোর, দৌলতপুর সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত খুলনা জেলা ও ফরিদপুরের কিছু অংশ ছিল ‘সেক্টর নং ৮’ এর অন্তর্ভুক্ত। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ও আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর এম এ মঞ্জুর। এই সেক্টরে ছিল ৭টি সাব-সেক্টর

সেক্টর নং ৯

পটুয়াখালী, বরিশাল ও খুলনার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয় ‘সেক্টর নং ৯’। ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর এম এ জলিল ও তারপর মেজর জয়নাল আবেদীন এবং এছাড়াও অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন মেজর এম এ মঞ্জুর। এই সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল ভারতের বসিরহাটের টাকিতেএই সেক্টরে ছিল ৩টি সাব-সেক্টর

সেক্টর নং ১০

সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল, নৌ কমান্ডো  ও আভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন ছিল ‘সেক্টর নং ১০’ এর অধিনে। এ সেক্টরে নৌ কমান্ডোরা যখন যে সেক্টরে মিশনে নিয়োজিত থাকতেন, তখন সে সেক্টরের কমান্ডারের নির্দেশে কাজ করতেন। এই সেক্টরে কোনো সাব-সেক্টর ছিল না এবং ছিল না নিয়মিত কোনো সেক্টর কমান্ডারনির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়, নৌবাহিনীর আটজন বাঙালি কর্মকর্তা এই সেক্টরের সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন

সেক্টর নং ১১

কিশোরগঞ্জ বাদে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা নিয়ে গঠিত হয় ‘সেক্টর নং ১১’। এপ্রিল থেকে ৩ই নভেম্বর পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর এম আবু তাহের ও তারপর ফ্লাইট লেফট্যান্যান্ট এম হামিদুল্লাহ। আর এই সেক্টরের সদর দপ্তর  হিসেবে ভারতের আসামের মহেন্দ্রগঞ্জকে বেছে নেওয়া হয়েছিলএই সেক্টরকে ৭টি সাব-সেক্টর ভাগ করা হয়েছিল

লেখক- আমিনুল ইসলাম 

Exit mobile version