গুঞ্জন অপেক্ষা আর সহিংসতার দ্বিতীয় দিন1 min read
Reading Time: 3 minutesনির্বাচনের পর আরেকটি দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত নতুন প্রেসিডেন্ট পায়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি অপেক্ষা বেড়েছে সারা বিশ্বের সাংবাদিকদের। বাংলাদেশ সময় মধ্যরাত থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে থেমে আছে ভোটের ফলাফল। এখনো ২৬৪ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিয়ে বিজয়ের পথেই আছেন জো বাইডেন। আর ২১৪ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিয়ে হোয়াইট হাউজে আক্ষেপে পুড়ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বারবার ঘোষণা আসছে যেন ভোট গণনা বন্ধ করে রাখা হয়। সমীকরণ এখন পর্যন্ত যেখানে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে অবশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘুরে দাঁড়াবার সম্ভাবনা অনেকটাই কম। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প ২৪৪ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতেই পরাজয় মেনে নিয়েছিলেন প্রতিদ্বন্দী হিলারি ক্লিনটন। তবে সে পথে এগুচ্ছেন না ট্রাম্প। বরং আইনজীবী নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবার পথেই আছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট।
ক্রুদ্ধ ট্রাম্প, নেটিজেনদের মাঝে আলোড়ন
রাগে ক্ষোভে রীতিমত ফুসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফেসবুক আর টুইটারে একের পর এক স্ট্যাটাস দিয়ে চলেছেন তিনি। আর তাতেই হাসির খোরাক পাচ্ছেন নেটিজেনরা। বাংলাদেশ সময় রাত ৮ টা ১৪ মিনিটে ট্রাম্প ফেসবুকে পোস্ট করেন, “ভোটগণণা বন্ধ করো”। তাতে বেশ সাড়াও পড়েছে। এছাড়া আরেক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “নির্বচনের পরদিন যেসব ভোট আসবে তার একটিও গ্রহণ করা হবেনা”। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যের অবস্থান নিয়েও আলাদাভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে তাকে। টুইটারে এক বার্তায় তিনি লিখেছেন, বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে তিনি দেশই ত্যাগ করবেন।
এছাড়াও বিভিন্ন ভাবেই ট্রাম্পকে নিয়ে হাসির শোরগোল পরেছে নেটিজেনদের মাঝে। নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি নিয়ে তার বক্তব্যগুলো অনেক ক্ষেত্রেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের কাছেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পেনসেলভানিয়া, অ্যারিজোনা সহ বিভিন্ন রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন গণমাধ্যমের সামনে।
অপেক্ষাতেই কেটেছে পুরো দিন
প্রায় সারাদিন জুড়েই ভোটের গণনা চলেছে। তবে তাতে কোন প্রকার হেরফের হয়নি। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ফলাফল প্রদর্শন করলেও এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দুই সূত্র বিবিসি এবং সিএনএন জানিয়েছে বাইডেনের ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ২৬৪ আর ট্রাম্পের দখলে আছে ২১৪ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট।
এখনো ভোট গণনা চলছে বেশ কিছু রাজ্যে। তবে সব আলো কেড়ে নিয়েছে চারটি দোদুল্যমান রাজ্য। পেনসেলভানিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাডা এবং জর্জিয়া। এছাড়াও মেইন রাজ্যের একটি ইলেকটোরাল কলেজের ভোট গণনাও এখন চলছে। এই চার রাজ্যের মাঝে এখন পর্যন্ত নেভাডা আর অ্যারিজোনায় এগিয়ে আছেন বাইডেন। ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার কারণে অ্যারিজোনায় ভোট গণনা বেশ কিছু সময় বন্ধ ছিল। তবে আপাতত নেভাডার দিকে সবচেয়ে বেশি নজর রাখছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নেভাডায় মাত্র সাড়ে ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছে বাইডেন। সবচেয়ে বড় কথা, এই ব্যবধান প্রতি মুহুর্তেই কমে আসছে। এমনকি যেকোন মুহুর্তেই এখানে নিজের আধিপত্য হারাতে পারেন বাইডেন।
জেতার জন্য যত সমীকরণ
জেতার জন্য বাইডেনের কাছে সমীকরণ খুবই সোজা। এখনো বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন নেভাডা অঙ্গরাজ্যে। নেভাডার ৬ ভোট পেলেই ২৭০ ভোট নিয়ে প্রেসিডেন্ট হবেন তিনি। কিন্তু যদি নেভাডায় ট্রাম্প জয়ী হন, তাহলেও খুব বেশি শঙ্কার কিছু নেই। সেক্ষেত্রে তাদের নজর রাখতে হবে আরো দুই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল জর্জিয়া এবং পেনসেলভানিয়ার দিকে। জর্জিয়াতে প্রতি মুহুর্তেই নিজের ব্যবধান কমিয়ে আনছেন জো বাইডেন।
পেনসেলভানিয়া থেকে ৯২ শতাংশ ভোটের হিসেব এরইমাঝে চলে এসেছে। যেখানে ১ লাখ ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অথচ ২৪ ঘন্টা আগেও এখানেই ৫ লাখের বেশি ভোটে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। প্রতিমুহুর্তেই ব্যবধান কমার কারণে এখনো পেনসেলভানিয়ার ব্যপারে আশাবাদী বাইডেনের সমর্থকরা। বলে রাখা দরকার, পেনসেলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়াতে ২০১৬ সালে প্রায় ৫ লাখ ভোট পেয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন। আর এবার এখানে বাইডেন আরো প্রায় ১ লাখ ভোট পেতে পারেন। তাই পেনসেলভানিয়ার ২০ ইলেকটোরাল কলেজের আশা ছাড়ছেন না ডেমোক্র্যাটরা। তবে এই রাজ্যের ২৯ হাজার ব্যালট শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে নিশ্চিত করেছে সিএনএন।
অন্যদিকে জর্জিয়াতেও ব্যবধান কমিয়ে আনছেন জো বাইডেন। জর্জিয়াতে আপাতত মাত্র ১৪ হাজার ভোট এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এখানেও সম্ভাবনা আছে বাইডেনের। জনবহুল ক্লেটন, আটলান্টায় এখনো বেশ কিছু ভোট গণনা বাকি। এর দুটোই ডেমোক্র্যাটদের দূর্গ নামে খ্যাত। এখনো প্রায় ৫০ হাজার ভোট গণনা বাকি এই রাজ্যে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য সমীকরণ বেশ কঠিন। ট্রাম্পকে এখন শুধুমাত্র এগিয়ে থাকা পেনসেলভানিয়া বা জর্জিয়ায় জিতলে হবেনা। তাকে এর বাইরেও নেভাডা কিংবা অ্যারিজোনায় বাইডেনের হাত থেকে জয় ছিনিয়ে আনতে হবে। সেই সাথে রক্ষা করতে হবে আলাস্কায় নিজের অবস্থানও। যদিও এতকিছু করাটা কিছুটা অসম্ভব ট্রাম্পের জন্য।
সহিংসা চলছে সারা যুক্তরাষ্ট্রে
পুরো যুক্তরাষ্ট্রেই ব্যাপক আকারে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সহিংসতার সাথে বিশেষভাবে জড়িয়ে আছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভক্ত সমর্থকরা। অ্যারিজোনায় ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখতে হয়েছে। পেনসেলভানিয়াতে আইনি লড়াইয়ের কারণে ২৯ হাজার ভোট গণনা বন্ধ আছে। এবং তার জন্য শুক্রবার আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সেই সাথে জর্জিয়াতেও একই অবস্থা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। নেভাডাতেও ভোট বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়াও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নেভাডায় ক্লার্ক কাউন্টিতে বিপুল পরিমাণ ডাক ভোট গণনা করা হয়নি। সেখানে ১৩ হাজার ল্যাপটপে জমা হওয়া ভোট গণনা করতে শনিবার কিংবা রবিবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে নিশ্চিত করেছেন সেখানকার নির্বাচনী কর্মকর্তা। সেক্ষেত্রে নেভাডার ফলাফল আসতেও অনেকখানি দেরি হতে পারে।
ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের বাইরে দুই পক্ষের ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। এছাড়াও ফিলাডেলফিয়াতেও ব্যাপক পরিমাণ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার খবর নিশ্চিত করেছে একাধিক গণমাধ্যম। সব মিলিয়ে এক উত্তেজনাপূর্ণ সময় পার করছে যুক্তরাষ্ট্র। এরইমাঝে সুপ্রিম কোর্টে যাবার ব্যাপারেও অটল আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর সে ব্যাপারে নিজেদের প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন অপর প্রার্থী জো বাইডেন।
লেখক- জুবায়ের আহম্মেদ