মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট
বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলা ইনফোটিউব, নিউইয়র্ক: এপ্রিলের প্রথম অথবা দ্বিত্বীয় সপ্তাহেই মহাকাশে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’। ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরালে অবস্থিত স্পেস এক্স এর লন্ড প্যাড থেকে এটি উৎক্ষেপন করা হবে। ঢাকায় নব নির্মিত উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে সেটির উৎক্ষেপন পর্যবেক্ষন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।আর ফ্লোরিডায় থাকবেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ের এই স্যাটেলাইট প্রকল্পের উদ্বোধনকে জাতীয় ভাবে এবং আর্ন্তজাতিক ভাবে ব্যাপক প্রচার আর প্রসারে জন্য সরকার মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।
ফ্রান্সের থেলেস এলেনিয়া স্পেস ‘ নামক প্রতিষ্ঠানটি এরি মধ্যে এই স্যাটেলাইট নির্মান কাজ সম্পন্ন করেছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ শেষ করে, বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তরও করেছে, এবং সেটি এখন রাখা হয়েছে ফ্রান্সের-ই একটি জায়গায়। আগামি কিছু দিনের মধ্য সেটি বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় নেয়া হবে। এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন এর জন্য রকেট নির্মান করেছে বিশ্ববিখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারক তেসলা’র প্রধান নির্বাহী এলেন মস্ক এর প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস কর্প। ফ্যালকন -৯ নামক একটি রকেট দিয়ে এটির উৎক্ষেপন করা হবে বলে জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
এপ্রিলের প্রথম অথবা দ্বিত্বীয় সপ্তাহে এটির উৎক্ষেপন করা হবে বলে জানানো হলে, নির্দিষ্ট কোন তারিখ এখনো জানতে পারেনি বিটিআরসি।বিটিআরসি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, দিন তারিখ ঠিক হওয়ার মাত্র ১৫ দিন আগে আমাদের কে জানাবে উৎক্ষেপনের তারিখ।
এই স্যাটেলাইটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে উৎক্ষেপন এর জন্য দিন তারিখ আগে ধার্য ছিল। তবে, স্পেস এক্স এর রকেট উৎক্ষেপন কেন্দ্রে আগুন ধরে সেই প্যাড ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায়, সে সময়ে যাদের দিন তারিক নির্ধারিত ছিল সেই সিডিউল রক্ষার জন্যেই এ প্রকল্পের সমাপ্তি টানতে দেরি হয়েছে বলে জানানো হয় ব্রিফিং এ।
স্যাটেলাইটটি সঠিক ভাবে মহাকাশে পাঠানো গেলে, ৮ দিন পর পৌছাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর জন্য মহাকাশে বরাদ্দ পাওয়া ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের’র নিদৃিষ্ট জায়গায়। সেখান থেকে বাংলাদেশ , ভারত, দক্ষিন এশিয়া, দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ আর বঙ্গপোসাগরের বিস্তৃর্ন মৎস আহরণ ন্যটিক্যাল মাইলের মধ্যে নজরদারী চালাতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। সেই সাথে, বাংলাদেশের প্রায় ৩৭ টি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল যারা এখন বিদেশের স্যাটেলাইট নির্ভর ফ্রিকোয়েন্সিতে প্রচারণা চালাচ্ছে, তাদের কাছে ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ১২৫ কোটি ডলার আয় করতে পারবে বছরে। তবে, এই টিভি চ্যানেলগুলি এখনকার প্রচলিক কেবল ভিত্তিক প্রচারণার পরিবর্তে ছোট ছোট ডিস এন্টেনা’র ডিরেক্ট টিভি সিগনাল পাবে।সেই সিগনাল ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দের দায়িত্ব থাকবে, দুটি মাত্র প্রতিষ্ঠান। বেক্সিমকো গ্রুপ আর বায়ার মিডিয়া নামক দুটি প্রতিষ্ঠান এই পুরো টিভি চ্যানেল ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ এবং এবং সিগন্যাল বিকিকিনি’র পুরো ব্যাবসায়িক দিকটি উপভোগ করবে বলে জানিয়েছেন চেয়াম্যান ড. মাহমুদ। বেক্সিমকো এবং বায়ার মিডিয়া ছাড়া অন্য কোন কোম্পানি এখানে ডিটিএস প্রযুক্তির ব্যাবসায় নামতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছে। কোন পন্থায় মাত্র এই দুটি কোম্পানীকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেটা নিয়ে সাংবাদিকরা একাধিক প্রশ্ন করলেও তেমন কোন জবাব না দিয়ে এটি তথ্য মন্ত্রনালের সিদ্ধান্ত বলে এড়িয়ে যান বিটিআরসি চেয়াম্যান। বলেন, ‘এটা স্পর্শকাতর একটি বিষয়, আমার কাছে সঠিক উত্তর নেই’।
বাংলাদেশের গাজীপুরে প্রায় ১৩ একর জায়হার ৫ একর জুড়ে এরি মধ্যে এই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানে বিদেশী স্যাটেলাইট ইন্জিনিয়াররা কাজ করছে। প্রায় ১৫ জনের দলে বাংলাদেশের তাসনিয় তাহমিদ নামের একজন মাত্র বাংলাদেশীও কাজ করছেন।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশ ব্যাবহার করবে। বাকী ২০ টি বিদেশী বা প্রতিবেশী দেশের কাছে ভাড়া দিতে পারবে বাংলাদেশ। উৎক্ষেপনের পর পরবর্তী ১ বছর পর্যন্ত এর তদারকি করবে নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান।এটি আগামি ১৮ বছর পর্যন্ত মহাকাশে থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি এবং কাজ করতে পারবে বলে জানানো হয়।