বিনোদন

ভালোবাসি তবু বিরহে1 min read

ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০ 7 min read

author:

ভালোবাসি তবু বিরহে1 min read

Reading Time: 7 minutes

‘ভালোবাসি ভালোবাসি

সেই সুরে কাছে-দূরে, জলে-স্থলে বাজায়

বাজায় বাঁশি। 

ভালোবাসি ভালোবাসি।‘

জগত জুড়ে প্রায় সাতশো কোটি মানুষের পদচারণ প্রতিদিন। তাদের মুখের বুলিও হাজারের কোঠায়। কিন্তু এক অনুভূতির ছায়াতলে শ্রেণিভাষার সকল দাগ যেন অবলীলায় মুছে যায়। সেই অনুভূতির নাম ভালোবাসা।

ভ্যালেন্টাইনস ডে আজ গোটা বিশ্বে পালিত হচ্ছে বেশ জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে। তবে এই দিনটি যার নামে উৎসর্গ করা, প্রেম প্রতিষ্ঠায় তাঁকে কিন্তু বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল, হাসিমুখে মেনে নিতে হয়েছিল অন্যায় দণ্ড। সতেরশো বছর পূর্বের সেই আত্মবিসর্জন আজও শিহরণ জাগায় মানুষের মনে। তবে যেই ভালোবাসার তরে এত অর্ঘ্য নিবেদন, সেই প্রেম কি সবার বেলাতেই পরিণয়ে গড়ায়? নাকি বেদনায় পর্যবসিত হয় প্রেমিক হৃদয়

সেলুলয়েডের ফিতেয় সেই বিরহ বেদনের প্রেম নিয়ে কেচ্ছাও হয়েছে বিস্তর। সে প্রসঙ্গেই চলুন জেনে নিই সাতটি ভিন্ন ভাষার কালজয়ী রোমান্টিক চলচ্চিত্রের কথা।

Casablanca(১৯৪২)

‘সারাবিশ্ব যখন ঘৃণার যুদ্ধে মত্ত, তখনই আমরা প্রেমে পড়লাম।‘ 

হামফ্রে বোগার্টের মোহনীয় কণ্ঠের এই সংলাপই যেন বলে দেয় ভালোবাসার তীব্র শক্তি অস্বীকার করে সমস্ত ধ্বংসযজ্ঞ, ঘৃণার উন্মত্ততাকে। 

বিচ্ছেদও কখনো কখনো মহীয়ান- Casablanca যেন তারই প্রতিধ্বনি; Photo: Nantwitch Film club

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত মঞ্চ নাটক ‘Everybody Comes To Ricks’ এর চলচ্চিত্র রূপই ১৯৪২ সালের ক্লাসিক রোমান্টিক ছবি ‘Casablanca’। ১৬ তম অস্কারে সেরা চলচ্চিত্র এবং শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার জিতে নেয় এটি। মাইকেল কার্টিজের পরিচালনায় ছবির মূল ভূমিকায় ছিলেন কিংবদন্তী ইনগ্রিড বারগম্যান হামফ্রে বোগার্ট।  

যুদ্ধের দামামার মাঝেই রিক আর ইসার প্রণয়। শত্রুপক্ষের ধ্বংসযজ্ঞের মাঝেই দুজন রচনা করে ভবিষ্যতের কাব্য। কিন্তু আকস্মিকভাবেই ইসা হারিয়ে যায় দৃশ্যপট থেকে। দিশেহারা রিক ধীরে ধীরে নিমজ্জিত হয় হতাশায়, ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে জগত সংসারের উপর। এর ঠিক এক বছর বাদেই রিকের পান্থশালায় ফের দেখা মেলে ইসার। তবে এখন ইসা আর একলা নয়, চেক বিপ্লবী স্বামীর সাথেই সে থিতু। প্রতীক্ষারত রিক প্রণয়ীর পরিবর্তনে অবাক হলেও নিজেকে সামলে নেয়। অন্যদিকে ইসা আজও ভালোবাসে রিককে। কিন্তু সমাজ দায়িত্বের আবর্তে আবদ্ধ সে। ক্ষমা প্রার্থনার উদ্দেশ্যেই সেই রাতে রিকের কাছে আসে ইসা। আর সেসময়ই বদলে যায় সকলের ভাগ্য। জার্মান শত্রুপক্ষ, ইসার স্বামী আর সংস্কারের বিরুদ্ধে কী অবশেষে রিকইসার মিলন হয়? স্বপ্নিল প্যারিসের কোলে ফের ঘর বাঁধতে পারবে দুজন?  

সপ্তপদী (১৯৬১)

‘তুমি কিছুই হারাওনি রিনা, তোমার সব আছে।‘

শয্যাগত রিনা রুপী সুচিত্রার প্রতি উত্তম কুমারের অবোধ বাণী শুনে কাঁদেননি এমন বাঙালি দর্শক পাওয়া ঢের মুশকিল।  

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সফল জুটি উত্তমসুচিত্রা। আর তাঁদের রোমান্সের আইকনিক গান হিসেবে তালিকায় শীর্ষে অবধারিত ভাবেই উঠে আসে সপ্তপদীর  ‘এই পথ যদি না শেষ হয়হারানো সুরথেকেপথে হলো দেরিঅথবাদেয়া নেয়াকোন ছবিতেই এই জুটির রসায়নের কমতি নেই। 

তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়েরসপ্তপদীঅবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন অজয় কর। স্বাধীনতা পূর্ব ভারতের তরুণ কৃষ্ণেন্দু এবং এংলো ইন্ডিয়ান তরুণী রিনা ব্রাউনের অসম প্রেমের গল্পই উঠে এসেছে এতে। নানান ঘাতপ্রতিঘাতের তোড়ে বিচ্ছেদ ঘটলেও জীবনের শেষ ধাপে ফের মুখোমুখি হয় দুই প্রেমাস্পদ। সেই শেষ মিলনের মাঝেই সমাপ্তি ঘটে নিবিড় ভালোবাসার। 

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কালজয়ী সুর এবং উত্তমসুচিত্রা জুটির অনবদ্য যুগলবন্দীই এই ছবিকে দিয়েছে অনন্য মাত্রা। ব্যবসাসফল এই ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন উৎপল দত্ত, ছায়া দেবী ছবি বিশ্বাস। 

রিনা ব্রাউনের মূল্যের তুলনায় একদিন ঈশ্বরের মূল্যও তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল কৃষ্ণস্বামীর কাছে; Photo: IMDb

Abre Los Ojos (১৯৯৭)

ধরুন,চোখ খুলতেই টের পেলেন গতকালের আপনি আর আজকের আপনার মাঝে বিস্তর ফারাক। গতকালই যেই অনিন্দ্য সুন্দরী আপনাকে ভালোবাসতো আজ সে নিখাদ অপরিচিতা। আপনার চেনা পৃথিবী একরাতের মাঝেই পাল্টে গেছে অনেকখানি। বাস্তবতা অসহ্য ঠেকছে এখন, পঙ্কিল পরিবেশ থেকে পালাবার জন্য ক্রমেই মরিয়া হয়ে উঠছেন। স্বপ্নের ঘোরেই ফিরে পেতে চাইছেন হারানো ভালোবাসা, ডুবে যেতে চাইছেন প্রেমিকার বাহুডোরে। কিন্তু সেই স্বপ্নের মূল্য যে আকাশছোঁয়া! তবে কি চিরকালের মতো হারাতে হবে মহার্ঘ্য ভালোবাসা? নাকি দুঃস্বপ্নের রেশ কাটতেই ফিরে পাবেন আগের জীবন?

স্বপ্ন- মৃত্যু- ভালোবাসা; Photo: IMDb

আলেজান্দ্রো আমেনবার মাতেও গিলের গল্পে  ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায় স্প্যানিশ সাইফাই রোমান্টিক ছবি ‘Abre Los Ojos’ যার অর্থনয়ন মেলে দেখো আলেজান্দ্রো আমেনবারের পরিচালনায় ছবির প্রধান তিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন পেনেলোপ ক্রুজ, চেতে লেরা এবং এদুয়ারদো নোরেগা। সমালোচক মহলে প্রশংসা পাওয়ার পাশাপাশি হলিউডে এর রিমেকও নির্মিত হয় অচিরে। টম ক্রুজ, পেনেলোপ ক্যামেরন ডিয়াজ অভিনীত ‘Vanila Sky’ এরই রিমেক। ১১৭ মিনিটের এই ছবিটি শুধু রোমান্টিক নয়, সাইফাই ঘরানাতেও সমাদৃত। 

In The Mood For Love(২০০০)

আধুনিক ক্লাসিক রোমান্সের সেরা নিদর্শন হিসেবে ফিল্ম বোদ্ধারা অকপটে নাম নেন ওং কার ওয়াইয়ের ‘In the Mood for Love’ এর। ফ্রেম থেকে ফ্রেমে শুধু গল্পই বলে যাননি পরিচালক, পাশাপাশি শিল্পের অনবদ্য ব্যঞ্জনাও এঁকেছেন সুগভীর পরিচর্যায়। ছবির প্রথম পাঁচ মিনিট পর্যবেক্ষণ করলেই দর্শক বুঝতে পারবে, প্রতিটা ফ্রেমের ভেতরই আরেকখানা ফ্রেম গুঁজে কাহিনি টেনেছেন পরিচালক। এর ফ্রেমিংয়ে এরকম দ্যোতনা সৃষ্টির মাধ্যমে পরিচালক দেখাতে চেয়েছেন সমাজের একেকটি মানুষ কীভাবে পর্যবেক্ষণের আওতায় পড়েন এবং তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন। 

১৯৬২ সালের হংকং। ফ্ল্যাটে ওঠার প্রথম দিন থেকেই সাংবাদিক চৌ মো ওয়ান আর পাশের ফ্ল্যাটনিবাসী সু লি ঝেনের মাঝে গড়ে ওঠে আন্তরিকতা। কিন্তু এই অন্তরঙ্গতার আড়ালেও ছিল দীর্ঘশ্বাস। একাকীত্বের আবর্তে দুজনই গুটিয়ে ফেলছিল নিজেদের। এক পশলা বন্ধুত্বের খোঁজে একসময় চৌ আর লি ঝেন কাছে আসতেই আবিষ্কার করে তাদের স্বামী স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত। রুঢ় সত্যকে একপাশে রেখে প্লেটোনিক প্রেমের পথে এগোতে থাকে দুজনের সম্পর্ক। শীঘ্রই চৌ টের পায় ধীরে ধীরে লি ঝেনের প্রতি প্রণয়াসক্ত হয়ে পড়ছে সে, অথচ পুরো সমাজ, সংস্কার এই সম্পর্কের বিরুদ্ধে। বৃষ্টিস্নাত এক রাতে লি ঝেনের কাছে অনুভূতি প্রকাশ করে চৌ, প্রার্থনা করে সম্মতির। কিন্তু করুণ স্বরে তাকে ফিরিয়ে দেয় লি। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই সময়ের বলয়ে হারিয়ে যায় দুজন। 

‘আমরা আসলে ওদের থেকে আলাদা নই।‘- বক্র অথবা সরল, প্রেম আসলে সর্বজনীন; Photo: European Film Awards

ছবির প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন টনি লিওং এবং ম্যাগি চিউং। ২০১৬ সালে বিবিসির জরিপে একুশ শতকের সেরা চলচ্চিত্রের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে এটি। অং কার ওয়াইয়ের রোমান্টিক ট্র্যাজিক ট্রিলজির দ্বিতীয় কিস্তি এই ‘In the Mood for Love’। এর প্রথম কিস্তি ছিল ‘Days of Being Wild’ এবং তৃতীয় কিস্তি ছিল ‘2046’। এবছরই এর চতুর্থ কিস্তি ‘Blossoms’ মুক্তি পাবে।

Baran(২০০১

‘আলগা করো খোঁপার বাঁধন

দিল ওয়াহি মেরা ফাঁস গ্যায়ি, দিল ওয়াহি মেরা ফাঁস গ্যায়ি।‘

বারানের দীঘল কেশ দেখে প্রথমবার হয়তো তাই ভেবেছিল লতিফ। কৈশোরের প্রথম প্রেমে প্রণোদনা আফগান কন্যার মিষ্টি হাসি আর নিটোল চাহনি দিয়েই এসেছিল তার জীবনে। আখেরে মিলন না হলেও স্রেফ চোখের ভাষায় লতিফ জানিয়েছিল উদ্বাস্তু বারানের প্রতি তার অক্ষয় ভালোবাসার আহ্বান। 

বিশ্ব চলচ্চিত্রে মাজিদ মাজিদি স্বনামধন্য তার ব্যতিক্রমী গল্প পরিবেশনের আবহাওয়ার জন্য। ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ইরানি ছবিবারানএর বেলাতেও একই ছন্দে কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন দখল করে আফগান ভূমি। দশ বছর পর সোভিয়েতরা ঘাঁটি ত্যাগ করলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে লাখ লাখ নাগরিক পাড়ি জমাতে বাধ্য হয় ইরানে। পেটের দায়েই নির্মাণ শিল্পে শ্রমিক হিসেবে যোগ দিতে থাকে শরণার্থীরা। এদেরই একজন নাজাফ। আকস্মিক দুর্ঘটনায় পা ভাঙায় তার স্থলে কাজ পায় পুত্র রাহমাত। একই দলে কাজ করে সতের বছরের কিশোর লতিফ। প্রতিদ্বন্দ্বী রাহমাতের প্রতি প্রথম থেকেই বিতৃষ্ণ ছিল সে, নানান উপায়ে হেনস্থাও করতো শান্ত রাহমাতকে। অচিরেই সে টের পায় এই চুপচাপ কিশোর আদতে একজন মেয়ে।

একদিনের মাঝেই সরল, সুশীল কিশোরীর প্রেমে পড়ে যায় লতিফ, প্রেম নিবেদনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সে। কিন্তু ঘটনা উল্টোদিকে মোড় নেয় যখন ইরান সরকার আফগান শ্রমিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। দরিদ্র নাজাফ তার পরিবার অকূল পাথারে পড়ে সিদ্ধান্ত নেয় জন্মভূমিতেই ফিরে যাবার। লতিফ তার সারাজীবনের সঞ্চয় নিঃসংকোচে তুলে দেয় নাজাফের হাতে, শুধু স্মৃতির মুঠোয় ভরে নেয় আফগান রমণী বারানের স্নিগ্ধ হাসি। 

নাম ভূমিকায় এতে অভিনয় করেছেন যাহরা বাহরামি এবং লতিফ চরিত্রে রূপদান করেছেন হোসেন আবেদিনি। ফজর ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, গিজন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ মন্ট্রিল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ২০০১ শালে সেরা চলচ্চিত্র সেরা পরিচালক পুরস্কারের সম্মান অর্জন করেছিল ৯৪ মিনিটের এই ছবিটি।  

‘বারান’-নীরবতাই যেখানে প্রেমের ভাষা; Photo: IMDb

A Moment to Remember (২০০৪)

কোরিয়ান সিনেমার ইতিহাসে সর্বকালের সফল রোমান্টিক ছবি হিসেবে ‘A Moment to Remember’ এর নাম একেবারে উপরেই আসবে। লি জে হানের পরিচালনায় ছবিটি দক্ষিণ কোরিয়ায় মুক্তি পায় ২০০৪ সালে। তবে ছবিটি কিন্তু একবারে মৌলিক ছিলনা। একই গল্প এবং একই কলা কুশলীর অভিনয়ে ২০০১ সালের কোরিয়ান ড্রামা সিরিজ ‘Pure Soul’ থেকে ছবি তৈরির ইন্ধন পান লি। 

ছবির গল্প এগোয় তরুণ স্থপতি চুল সু ফ্যাশন ডিজাইনার সু জিনকে ঘিরে। তিন ভাগে বিভক্ত ছবির প্রথম ভাগে আকস্মিক ভাবেই পরিচয় হয় দুজনের চুল সুর স্বপ্নিল চোখ আর মুগ্ধ কণ্ঠস্বরের তোড়ে বেশ তড়িঘড়িই তার প্রেমে পড়ে যায় সু জিন। ছবির দ্বিতীয় ভাগে সেই সুতীব্র ভালোবাসাই অবশেষে সংসারে গড়ায়। তবে এতেই নটে গাছটি মুড়ায় না। সু জিনের আজন্ম লালিত ভালোবাসার ঘর ভরে উঠতে থাকে অমরত্বের স্বপ্নে। কিন্তু সেই পরিকল্পনাও স্থায়ী হয়না বেশিদিন। দ্রুতই সুজিনের স্মৃতি পট থেকে মুছে যেতে থাকে তাদের প্রেম,সংসার,বাস্তবতার ছবি। দুরারোগ্য আলঝেইমারের কবলে হারিয়ে যায় দুরন্ত প্রেমের সমস্ত ভাবনা। এক সময় চুল সুকে চিনতেই পারেনা সে। স্মৃতির আঙিনা থেকে বিদায় নিলেও চুল সু ঠিকই বাকি জীবন সুজিনকে আঁকড়েই বেঁচে থাকে। 

ছবির গল্পের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল এর সুরারোপে। কিম তায়েওনের কম্পোজিশনে পিয়ানোর সুর একেবারে আনকোরা শ্রোতাকেও মোহিত করতে যথেষ্ট। মুক্তির পরপরই জুং সাং ইয়ে জিন জুটি উঠে আসেন খ্যাতির চূড়ায়। ১৪৪ মিনিটের রোমান্টিক ঘরানার ছবিটি এতই আলোচিত হয় যে আরও পাঁচটি ভাষায় নির্মাণ করা হয় একে। সারাবিশ্বে এটি আয় করে ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

স্মৃতি ম্লান হলেও কি বেঁচে থাকে ভালোবাসা? Photo: Asian Wiki

Goliyon ki Rasleela: Ram Leela(২০১৩)

রোমিওজুলিয়েটের বিচ্ছেদ সর্বজনীন, সর্বজনগ্রাহ্য। আমি স্রেফ এরই দেশি আমেজ এনেছি এই ছবিতে। এর সাথে ভগবান রাম বা ধর্মীয় কোন বিষয়ের সম্পৃক্ততা নেই।২০১৩ সালে কোর্টের কড়াকড়িতে এভাবেই আপন কাজের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন সঞ্জয় লীলা বানসালি। 

বলিউডে বানসালি মানেই মহাসমারোহ। জমকালো সেট, ক্ষুরধার অভিনয়, বলিষ্ঠ স্ক্রিপ্ট আর মন্ত্রমুগ্ধকর একরাশ গানের সম্পূর্ণ প্যাকেজ বানসালির ছবি। রোমান্টিক সিনেমার বেলাতেও পিছপা নন তিনি। দীপিকা পাদুকোন রণবীর সিং জুটির প্রথম ছবিই আসে তাঁর হাত ধরেই। 

শেক্সপিয়ারের রমিওজুলিয়েটের আদলেই গল্প বলেছেন বানসালি। গুজরাটি দুই পরিবার সানেরা রাজাদির মধ্যকার শীতল যুদ্ধের মাঝেই দুই পরিবারের রাম লীলা ভালোবেসে ফেলে পরস্পরকে। ঘর পালিয়ে মালা বদল করলেও দুই পরিবার মেনে নেয়না তাদের। দুপক্ষের দ্বৈরথ জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে ক্রমেই।অবশেষে ক্ষমতার বাগবিতণ্ডার বলি হয় দুই তরুণ প্রেমিক প্রাণ, সমাজকে তীব্র কণ্ঠে জানিয়ে যায়ঘৃণা নয়, প্রেমই সত্য এবং সুন্দর।

মিথ্যে গৌরবের গ্লানি মুছতেই ভালোবেসেছিল রাম-লীলা

‘কাহারে জড়াতে চাহে দুটি বাহুলতা-

কাহারে কাঁদিয়া বলে, ‘যেয়ো না, যেয়ো না!’

রবিঠাকুর তাঁর ছন্দেগীতিতে প্রচ্ছন্ন রূপে প্রকাশ করে গেছেন ব্যথিতশুন্য হৃদয়ের ব্যাকুল আবেদন। অন্যদিকে প্রাবন্ধিক গোলাম মুরশিদের মতেপ্রেম সবচাইতে বিধ্বংসী ছোঁয়াচে রোগ এই প্রেমের তরেই গড়ে উঠেছে শিল্পের পীঠস্থান পারী, আবার এই প্রেমের বাসনাতেই ট্রয় আর স্পার্টা মেতেছে যুদ্ধে। শিরিফরহাদ, লাইলিমজনু, ত্রিস্তানইসল্টের মতো বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছে অসংখ্য তরুণ। তবু দিনশেষে এই ভালোবাসাই বেঁচে থাকার শক্তি যোগায়, স্বপ্ন দেখায় রঙিন ভবিষ্যতের।

লেখক- সারাহ তামান্না 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *