বিশ্বের অর্ধেক মানুষের সমান সম্পদ যে ১০ জনের হাতে1 min read
Reading Time: 5 minutesপ্রতিবছরের মত বিশ্ব বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস বিলিয়নিয়ারদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে ধনীদের সংখ্যা বেড়ে দুই হাজার দুশত আট জনে দাঁড়িয়েছে। এবং তাদের সম্পদের পরিমাণও এখন অন্যসব সময়ের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক এক দাতব্য সংস্থা অক্সফ্যাম বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের যতো সম্পদ আছে তা পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষের সম্পদের সমান।
ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী ২০১৮ সালের শীর্ষ ১০ ধনীরা হলেন:
১. জেফ বেজোস
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেফ বেজোস বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। অনেক বছর ধরেই এই তালিকায় শীর্ষে ছিলেন বিল গেটস। কিন্তু ২০১৭ সালে তাকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন অ্যামাজন–এর প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস।
৫৩ বয়সী জেফ বেজোসের মূল সফলতা আসে এই আ্যামাজন থেকে। শুরুতে ১৯৯৪ সালে অনলাইন বইয়ের দোকান দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। এটি তিনি তার বাড়ির গ্যারেজে বসে পরিচালনা করতেন। আর এখন তার এই কোম্পানি বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন দোকান। ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী জেফ বেজোসের বর্তমানে সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ১১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনিই এখন এই কোম্পানিটির সিইও।
২. বিল গেটস
বহুদিন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তকমা ধরে রেখেছিলেন বিল গেটস। সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির নাম আসলে সহজেই বিল গেটসের নাম উঠে আসতো। কিন্তু এবার তা খোয়াতে হয়েছে। ফোবার্সের নতুন তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের এই বিল গেটস। তিনি ছাত্রজীবনে থাকতে ১৯৬৭ সালে প্রথম কম্পিউটার ব্যবহার করেন। পরে ১৯৭৫ সালে তিনি আর তার বন্ধু পল অ্যালেন একত্রে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি মাইক্রোসফটের সিইও ছিলেন। পরে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি এই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির একজন বোর্ড মেম্বার এবং প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। ফোবার্সের হিসাব অনুযায়ী বিল গেটসের বর্তমানে সম্পদের পরিমান আনুমানিক ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৩. ওয়ারেন বাফেট
ওয়ারেন বাফেট বার্কশায়ার হ্যাদাওয়ের সিইও হিসেবে বেশ পরিচিত। তিনি মাত্র ১১ বছর বয়সে প্রথম শেয়ার কিনেছিলেন। বর্তমানে তিনি পৃথিবীর অন্যতম সফল বিনিয়োগকারী।
ফোবার্সের হিসাব অনুযায়ী ওয়ারেন বাফেটের বর্তমানে সম্পদের পরিমান ৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ওয়ারেন বাফেট সবার কাছে আরো বেশি পরিচিত তার সাদামাটা জীবনযাপনের জন্য।
ওয়ারেন নিজে একজন বিশ্বপ্রেমিক। তিনি একটি ডকুমেন্টারিতে জানিয়েছেন যে, তিনি তার মোট সম্পদের ৯৯% মানুষের সাহায্যে দান করে দেবেন।
৪. বার্নার্ড আর্নল্ট
৬৮ বছর বয়সী বার্নার্ড আর্নল্ট একজন নির্মান প্রকৌশলী হিসেবে তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। তিনি ১৯৮০–র দশকে ফ্যাশন ব্র্যান্ড ক্রিশ্চান ডিওর কিনে নেন। তিনি বিশ্বের বৃহত্তম বিলাসবহুল সামগ্রীর কোম্পানী এলভিএমএইচ–এর চেয়ারম্যান ও সিইও।
লুই ভুটন, ডম পেরিনন, বুলগারি এবং সেফোরা বিখ্যাত ব্রান্ডগুলো তারই সৃষ্টি। ফোবার্সের হিসাব অনুযায়ী বার্নার্ড আর্নল্টের বর্তমানে সম্পদের পরিমান ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি ফ্রান্সে শিল্পীদের সাহায্যার্থে প্যারিসভিত্তিক “ফাউন্ডেশন লুই ভুটন” চালু করেন।
৫ . মার্ক জুকারবার্গ
১৯৮৪ সালে নিউইয়র্কের হোয়াইট প্লেইন এলাকাতে জন্ম নেন মার্ক জাকারবার্গ। ২০০৪ সালে হার্ভার্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় বন্ধুদের সাথে মিলে ফেইসবুক প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বর্তমানে প্রায় ১.২ বিলিয়ন মানুষের কাছে ফেইসবুক এখন প্রিয় এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। মার্ক জুকারবার্গ বর্তমানে ফেসবুকের চেয়ারম্যান ও সিইও।
ফোবার্সের হিসাব অনুযায়ী মার্ক জুকারবার্গ–এর বর্তমানে সম্পদের পরিমান ৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি আর তার স্ত্রী মিলে জুকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ সংস্থা চালু করেন। তিনি তার সম্পদের ৯৯ ভাগ দান করে দেওয়ার প্রতিশ্রতি দিয়েছেন।
৬. আমানশিও অরটেগা
১৯৩৬ সালে, নর্থ স্পেনে আমানশিও অরটেগা জন্মগ্রহন করেন। অতি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই তাকে অর্থের অভাবে বিভিন্ন ধরনের শ্রমিকের কাজ করতে হয়েছিল। তিনি তার প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিটেক্স ফ্যাশন গ্রুপের জন্য সবচেয়ে পরিচিত। এরই আর একটি অংশ হলো জারা নামের বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ডটি। বর্তমানে ইউরোপের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি তিনি। এবং বর্তমানে তার এই কোম্পানী বিশ্বজুড়ে ৭,০০০টি স্টোর পরিচালনা করে। ফোবার্সের হিসাব অনুযায়ী আমানশিও অরটেগার বর্তমানে সম্পদের পরিমান ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৯৯ সালের অাগে তাকে কেউ চিনতো না। তিনি খুব বেশি মানুষের সামনে আসেননি কখনো।
৭. কার্লোস স্লিম হেলু
মেক্সিকোর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হলেন কার্লোস স্লিম হেলু। তিনি একজন টেলিকমুনিকেশন ব্যবসায়ী। তিনি সর্বপ্রথম হোটেল ব্যবসা ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসা দিয়ে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রায় ২০০ টি কোম্পানির মালিক। ৮১ বছর বয়সী কার্লোস আমেরিকার নামকরা মোবাইল ফোন কোম্পানি আমেরিকা মোভিলের মালিক।
কার্লোসের বাবা বেশ কিছু খুচরা ব্যবসা ও আবাসন ব্যবসায় সফলতা পায়। উত্তরাধিকার সূত্রে ১৯৫৩ সালে বাবার মৃত্যুর পরে কার্লোস স্লিম সেইসব সফল ব্যবসায়ের দায়িত্ব পান। ১৯৬০–র দশকে তিনি ইনভার্সোরা বার্সাটিল নামক নিজের ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন। ফোবার্সের হিসাব অনুযায়ী কার্লোস স্লিম হেলুর বর্তমানে সম্পদের পরিমান ৬৭.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৮ . চার্লস ও ডেভিড কক (সম্মিলিত)
কক ইন্ডাস্ট্রিস হলো যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানী। ৮১ বছর বয়সী চার্লস কক হলেন কক ইন্ডাস্ট্রিস–এর সিইও, চেয়ারম্যান ও সহ–মালিক। এবং তার ৭৭ বছর বয়সী ভাই ডেভিড কক এই কোম্পানীর নির্বাহীসহ সভাপতি। তারা দুজনেই সমন্বয়ে এই ব্যবসার ৪২% মালিক। তারা এই কোম্পানি পেয়েছেন উত্তরাধিকার সূত্রে।
তাদের কোম্পানিতে ডিক্সি কাপের মতো ব্র্যান্ডের পন্য তৈরি হয়। এছাড়াও তারা স্টেইনমাস্টার কার্পেট ক্লিনারের এবং কুইল্টেড নর্দার্ন পেপার টাওয়েল নির্মান করেন। ফোবার্সের হিসাব অনুযায়ী চার্লস ও ডেভিড কক দুজনেরই বর্তমানে সম্পদের পরিমান ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এই দুই ভাই রাজনীতিতে বিপুল পরিমান অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন। তারা রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে এবং সরকারী নীতিমালাকে নিয়ন্ত্রন করতে এই অর্থ ব্যয় করেছেন।
৯. ল্যারি এলিসন
৭২ বছর বয়সী ল্যারি এলিসন ওরাকল নামের সফটওয়্যার কোম্পানিটি ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এবং সাবেক সিইও। তার খুব বেশি সাধারন জীবন ছিলো। কলেজ থেকে দুইবার ড্রপ আউট হয়ে শিকাগো থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় যান। কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে তার কখনওই প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা ছিলোনা। পরে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া গিয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সম্পর্কে শিখতে থাকেন, এবং পাশাপাশি চাকরিও করেন।
এরপর তিনি আর তার দুইজন সহকর্মী মিলে গড়ে তোলেন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডাটাবেস সফটওয়্যার ওরাকল। ফোবার্সের হিসাব অনুযায়ী ল্যারি এলিসনের বর্তমানে সম্পদের পরিমান ৫৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ল্যারি এলিসন সবসময়ই শিক্ষার জন্য এবং দাতব্যসংস্থার জন্য কোটি কোটি ডলার দান করেছেন, এবং ভবিষ্যতেও দান করার ধারা চলমান রাখতে চান বলে জানিয়েছেন।
১০. মাইকেল ব্লুমবার্গ
মাইকেল ব্লুমবার্গ এক জনপ্রিয় নাম। তিনি বিভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত। তিনি ১৯৮১ সালে ব্লুমবার্গ এল. পি. নামের একটি প্রযুক্ত ও মিডিয়া কোম্পানী চালু করেন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এর ১০০ টি শাখা রয়েছে। এখন এই কোম্পানিটি ৪৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এক কোম্পানী। তিনি ক্যারিয়ারের প্রথমে সালোমন ব্রাদার্স নামের একটি ওয়ালস্ট্রীট বিনিয়োগ ব্যাংক–এ কাজ করতেন। তখন তিনি তার নিজের কোম্পানি শুরু করেননি।
ফোবার্সের হিসাব অনুযায়ী মাইকেল ব্লুমবার্গ বর্তমানে সম্পদের পরিমান ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
নিজের কোম্পানির পাশাপাশি তিনি একজন রাজনীতিবিদ। তিনি তিনবার মেয়র হিসেবে নিউইয়র্ক শহরের দায়িত্ব পালন করেছেন।