বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল একটি দেশ হিসেবে সচারাচর বলা হয়ে থাকে। তবে, জাতিসংঘের উন্নয়ন অভিধানে বাংলাদেশ এখনও স্বল্পন্নত দেশ। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর, জাতিসংঘ বাংলাদেশকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যার শিরোনাম ছিল, বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পন্নত দেশের তালিকা) থেকে সমাপনী পরিক্ষা শেষ করতে যাচ্ছে ২০২৪ সালে। সেখানে বলা হয়, এই দেশের উন্নয়ন যাত্রা, জনসংখ্যা চিত্র এবং অর্থনীতির যে আকার তৈরী করছে, সেই হিসেবেই ২০২৪ সালে দেশটি স্বল্পন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটাবে। আর এ কারণে মধ্য অক্টোবরেই জাতিসংঘ মিশনের তরফে বাংলাদেশ কে একটি বার্তা দেয়া হয় যে, তারা উন্নয়ন লক্ষমাত্রার তিনটি স্তর পাশ করতে যাচ্ছে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে। বাংলাদেশ সরকার ২২ মার্চ, জাতিসংঘের ঘোষিত দিনটিকে উদযাপনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে। যদিও, ঐ প্রতিনিধি দল, এই আনুষ্ঠানিকতার জন্য বাংলাদেশকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পরামর্শ দিয়েছিল।
মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ ইনডেক্স, অর্থনীতির দুরাবস্থা ইনডেক্স এই তিনটি বিষয়ের উপরেই নির্ধারিত হয় স্বল্পন্নত দেশগুলির এক তালিকা থেকে আরেকটিতে উত্তরন। গত ৬ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি টানা ৬ শতাংশের উপরেই আছে। যেটাকে জাতিসংঘের হিসেবে বলা হচ্ছে, বিশ্বের অনন্য দেশে তুলনায় সবচে দ্রুত বর্ধমান প্রবৃদ্ধি।যদিও অর্থনীতির এই প্রবৃদ্ধির পেছনে, গার্মেন্টস এবং টেক্সাইল এর বিকাশ সবচে বড় ভুমিকা পালন করছে বলে বলা হয়েছে জাতিসংঘের ঐ প্রতিবেদনে।
উড়ন্ত বাংলাদেশের বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, অনন্য দেশে দেখা যায় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটলেও তা গরীবদের ভাগ্যপরিবর্তনে কাজে আসে না। বাংলাদেশ সেক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন। তাদের এই উন্নয়ন প্রবৃদ্ধিতে গরীবরাও উপকৃত হচ্ছে। এই প্রবৃদ্ধির পেছনে কোন একক সরকারের ভুমিকা নয় বরং হিসাব টানা হয়েছে ১৯৯০ সাল থেকেই। সেখানে জানানো হয়েছে ১৯৯০ সালের পর থেকে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষ হত দারিদ্রতা কাটিয়ে উঠেছে। বিশ্বব্যাংক হিসেব দিয়ে বলেছেন, হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১৯৯০তে ৪০ ভাগ ছিল, সেটা কমে এসে ঠেকেছে ১৪ ভাগে। ১৯৯০ সালের পর থেকে সরকার গুলোর সাথে সাথে অসংখ্য বেসরকারী সংস্থা কাজ করছে মানুষের জীবন মান উন্নয়নে, সেটিও বাংলাদেশের সার্বিক দারিদ্র কমাতে ব্যাপক কাজ করেছে বলে জানানো হয় ঐ প্রতিবেদনে।
উন্নয়ন এবং গনতন্ত্রের আলোচনা।
উন্নয়ন শীল হিসেবে নিজেদের মধ্যে আত্ববিশ্বাস থাকলেও জাতিসংঘের স্বীকৃতির জন্য অনেক দিন থেকেই বাংলাদেশ অপেক্ষা করছিল। জাতিসংঘের পলিসি এন্ড এ্যানালাইসিস ডিভিশন’ এর প্রেস রিলিজে জানানো হয়েছে, ‘বাংলাদেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতেই, গত বছরের অক্টোবরের ৯-১২ তারিখ’ সিডিসি বা কমিটি ফর ডেভলপমেন্ট পলিসি’র একটি দল বাংলাদেশ সফর করে তাদের বিস্তারিত অবহিত করেছে। তাদেরকে জানানো হয়েছে, তারা প্রথমবারের মত এলডিসি তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যে তিনি অপরিহার্য শর্ত, সেটা পুরণ করেছে। তবে, এর আনুষ্ঠানিতা বা গ্রাজুয়েশন পালনের সুযোগের জন্য ত্রি-বার্ষিক পর্যালোচনাকাল ২০২১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে’।
অবস্য, ২০১২ সালের আগেই, ২২ মার্চকে একটি বিশেষ দিন ধরে, এটি উদযাপনের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা সরকার যে কাজ করছে সেটি তুলে ধরতে, রাজধানীতে বের করা হবে আনন্দ শোভাযাত্রা। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আনন্দ শোভাযাত্রার পাশাপাশি একটি সেবা সপ্তাহ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
আর স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সংবর্ধনার মূল অনুষ্ঠান হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। জানা গেছে, শেখ হাসিনার এই সংবর্ধনা ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়।
এই আয়োজনের মনিটরিংয়ের মূল দায়িত্বে থাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগের (ইআরডি) উপ-সচিব আনোয়ার হোসাইনের। তিনি এরি মধ্যে জানিয়েছেন, ‘এটা হবে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া এ যাবৎকালে সর্ববৃহৎ সংবর্ধনা।’
সাহেদ আলম, নিউইয়র্ক।