বাংলাদেশ

ইতোপূর্বে যে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলো বাংলাদেশে আঘাত হেনেছিল1 min read

মে ৩, ২০১৯ 3 min read

author:

ইতোপূর্বে যে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলো বাংলাদেশে আঘাত হেনেছিল1 min read

Reading Time: 3 minutes

আমাদের এই দেশটা নদীমাতৃক দেশ, সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বলতে যা বুঝায় ঠিক তেমনই। কিন্তু সবুজে ঘেরা এই সুন্দর দেশটাকে মোকাবেলা করতে হয় বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের। পৃথিবীর তাপের বৈপরীত্যকে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক করার একটা প্রাকৃতিক প্রচেষ্টা হল ঘূর্ণিঝড় অথবা অন্যভাবে বলা যায় যে তাপের ভারসাম্য নষ্ট হলেই ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। প্রতি বছর গড়ে পৃথিবীতে প্রায় ৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার পর সেগুলো বেশীরভাগই সমুদ্র পৃষ্ঠেই মিলিয় যায়। তবে তার মধ্যে কিছু কিছু সমুদ্র উপকুলে আঘাত হানে।

সমুদ্র উপকূলে অবস্থান করার কারণে কিছু ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবেলা বাংলাদেশকেও করতে হয়। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আতঙ্কে উপকূলের মানুষ। আজ ৩ মে সন্ধ্যায় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ফণী বয়ে যাবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ কিছু ঘূর্ণিঝড়ের কথা একনজরে দেখে নিন।

বাকেরগঞ্জ ঘূর্ণিঝড়

১৮৭৬ সালের পহেলা নভেম্বরে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ দুর্যোগটিকে অনেকেই বাকেরগঞ্জ ঘূর্ণিঝড় নামে চেনেন। এই ঘূর্ণিঝড়ের কবলে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ২ লাখেরও বেশি মানুষ। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তৎকালীন উপকূলীয় এলাকায় প্রায় দশ ফুট থেকে পঁয়তাল্লিশ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল, আর এত মানুষ মৃত্যুর কারণ হিসেবে এই জলোচ্ছ্বাসকেই দায়ী করেন আবহাওয়াবিদরা।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলে হওয়া ঘূর্ণিঝড়

বাংলাদেশ এ পর্যন্ত যতগুলো ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করেছে তার মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড়টি অন্যতম। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত হয়। এছাড়া প্রায় ১০ লক্ষ্য ঘর-বাড়ি ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়। ধারনা করা হয় ১৯৯১ সালের দিকে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের অবস্থান অতটা ভালো না থাকার কারণে এই ধরনের ভয়াবহ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রায় এক কোটি মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে একদম নিঃস্ব হয়ে পড়ে।

সিডর

সিডরের ভয়াবহতার কথা স্মৃতির পাতায় একটু ধুসর হয়ে উঠলেও, এর নাম শুনেননি এমন মানুষ হয়ত দেশে খুঁজে তেমন একটা পাওয়া নাও যেতে পারে। সময়টা ছিল ২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর, এই ঘূর্ণিঝড়টা সমুদ্রপৃষ্ঠে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের দিকে সৃষ্টি হয়েছিল। সমুদ্র পৃষ্ঠেই বঙ্গোপসাগরের মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি বৃদ্ধি করে প্রবল আকারে সমুদ্র উপকূলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বালেশ্বর নদীর কাছাকাছি অঞ্চলের সমুদ্র উপকূলে এই ঝড়টি আঘাত হানে নভেম্বর মাসের ১০ তারিখে। এই ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার এবং পনের থেকে বিশ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস ছিল এই ঝড়ের সঙ্গী।

সিডরের আঘাতে প্রায় দশ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল, তবে সরকারী পরিসংখ্যানে এই সংখ্যার পরিমাণ এসেছিল ছয় হাজার। এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় পুরো দেশে প্রবল ঝড়ো হাওয়া সহ মুশলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। মানুষ ছাড়াও অনেক প্রাকৃতিক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে সুন্দরবন অঞ্চলে বেশকিছু হরিণও মারা গিয়েছিল এই ঘূর্ণিঝড়ে। এছাড়া প্রায় ৯ লাখ ৬৮ হাজার ঘরবাড়ি ভেঙ্গে চুরে দুমড়ে গিয়েছিল সিডরের আঘাতে, এর সাথে প্রায় একুশ হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

আইলা

উত্তর ভারত মহাসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠে ২০০৯ সালে জন্ম নেয়া এই ঘূর্ণিঝড়টির নাম দেয়া হয় আইলা! ২০০৯ সালের পঁচিশে মে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাংশে এই ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে। সত্তর থেকে নব্বই কিলোমিটার বেগে ধেয়ে এসে আঘাত করা এই ঘূর্ণিঝড়টির ব্যাস ছিল প্রায় তিনশ কিলোমিটার। তবে এর আগে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিডর থেকে আইলায় ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক ভাবে বেশ কিছুটা কম হয়েছিল।

মোরা

কিছুদিন আগেই ২০১৭ সালের মে মাসে এই ঘূর্ণিঝড়টির উৎপত্তি হয়েছিল, এর নাম দেয়া হয় মোরা।তৎকালীন সময়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকায় ১০ নম্বর স্থানীয় মহাবিপদ সংকেত দেয়া হয়েছিল এবং ৮ নাম্বার সংকেত দেয়া হয়েছিল মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায়। ১৩৫ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা এই ঘূর্ণিঝড়টি মে মাসের ত্রিশ তারিখ কক্সবাজার এলাকার টেকনাফে প্রচণ্ড আঘাত হানে।

আদতে মোরা শব্দটি থাই ভাষার একটি শব্দ, যার অর্থ হল সমুদ্রের তারা। এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিনষ্ট হয়ে যায়। তৎকালীন সময়ে কক্সবাজারের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং টেকনাফের সাথে সকল ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। প্রচুর পরিমাণ জমি ও লবণ চাষীদের লবণ নষ্ট হয়ে পড়ে। এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১৮০ জন মানুষ মারা গিয়েছে বলে জানা যায়।

এছাড়া আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘূর্ণিঝড়

২০০৮ সালের দিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গিয়েছিল নার্গিস নামে একটি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ ভাবে আঘাত হানতে পারে তবে পরবর্তীতে এই ঘূর্ণিঝড়টি গতি পরিবর্তন করে বার্মার উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত করে। এর ফলে মিয়ানমারে প্রচুর পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

২০১৩ সালের দিকে “মহাসেন” নামে আরো একটি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত করবে বলে ধারনা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপকূলে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল এবং গতিবেগ পরিবর্তন করে এই ঘূর্ণিঝড়টি শ্রীলংকায় আঘাত হেনেছিল। তখন এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল “ঘূর্ণিঝড় ভিয়ারু”।

২০১৫ সালে কোমেন নামক একটু ঘূর্ণিঝড় কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে। উল্লেখ্য যে জুলাই মাসের ৩০ তারিখে আঘাত করা এই কোমেন নামক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাংলাদেশে বন্যা হয়েছিল। এছাড়া এর কারণে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছিল।  প্রায় ৮৮ হাজার ঘর এবং অনেক ফসলি জমি বন্যায় আবৃত হয়ে পড়ে। কোমেনের কারণে বাংলাদেশে প্রায় ৪৫ জন মানুষ মারা গিয়েছিল বলে খবর পাওয়া গিয়েছিল।

লেখক- ইকবাল মাহমুদ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *