‘বর্তমান বিশ্ব চলচ্চিত্রের দিকে তাকালে আমি বেশ আশা পাই। কত বলিষ্ঠ কাহিনি, অসাধারণ চিত্রধারণ আর মুগ্ধকর পরিবেশনা করছে এই সময়ের নারী পরিচালকেরা। অথচ ফরাসি চলচ্চিত্রের উত্থানের সময় আমি ছিলাম একমাত্র মহিলা।‘
ফরাসি চলচ্চিত্রে যখন নতুন দিনের ঢেউ তখন ক্লদ শাবোল, জনিক গুদ্যা, এরিক রোমার প্রমুখ নির্মাতারা স্বকীয়তার গুণে এগিয়ে যাচ্ছেন। সেই বাঁধনহারা সৃষ্টিশীলদের দলে একমাত্র নারী নির্মাতা ছিলেন আগনেস ভারদা। পঞ্চাশের দশক হিসেবে বেশ সাহসীই ছিল তাঁর এই পদক্ষেপ। কিন্তু সৌম্যদীপ্ত কর্মপন্থা ও ব্যতিক্রমী শিল্পবোধ তাঁকে করে তোলে সর্বকালের অন্যতম সেরা পরিচালকে।
ফরাসি চলচ্চিত্রের কোঠা রেখে এবার ফিরি বাঙাল মুলুকে। ১৯৭০ সালে প্রথম কোন বঙ্গদেশি ললনার হাতে ক্যামেরা ওঠে। পশ্চিমে এর শুরুটা আগে হলেও বাংলাদেশে প্রথম নারী পরিচালক ছিলেন রেবেকা। তাঁর ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’ ছিল যুগের চাইতে অনেক অগ্রসর শিল্প। দুর্ভাগ্যবশত পাকিস্তানি সরকার এর একমাত্র নেগেটিভ ধ্বংস করে ফেলে সে সময়। এর আরও দেড় দশক পর ১৯৮৬ সালে অভিনেত্রী রোজীর ‘আশা নিরাশা ’ ও ১৯৮৮ সালে সুজাতার ‘ অর্পণ ’ আশা জাগানিয়া হলেও এদের কেউই নির্মাতা হিসেবে নিয়মিত হননি।
যুগ বদলালেও নারী নির্মাতার সংখ্যা ঢাকাই চলচ্চিত্রে নগণ্যই। নানান ঘাত-প্রতিঘাত সত্ত্বেও বেশ কিছু নারী পরিচালক নিয়মিত কাজ করার ব্রত গ্রহণ করেছেন। আজ বিশ্ব নারী দিবসে চলুন শুনি তাঁদের কথা।
কোহিনূর আক্তার সুচন্দা
প্রথম শট দেখেই সুভাষ দত্ত সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন, ‘আমাদের সুচিত্রা সেনকে আমরা পেয়ে গেছি।‘ ওদিকে রক্ষণশীল পরিবারের বড় মেয়েটি প্রথম দেখছে ‘লাইট, ক্যামেরা, একশনে’র নতুন দুনিয়া। ভড়কে গেলেও ‘না অমন করে আর বেজো না’ গান দিয়ে চলচ্চিত্র দুনিয়ায় মিষ্টি মুখের আবির্ভাব ঘটলো ১৯৬৬ সালে। সুভাষ দত্তের ‘ কাগজের নৌকা’ দেখেই জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ ছবিতে ডাক পান সেই কোহিনূর আক্তার ওরফে সুভাষ দত্তের দেয়া নামের সুচন্দা। নায়করাজ রাজ্জাকের অভিষেক ছবিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি।
এরপর আর পিছু ফেরার সময় পাননি বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম এই অপ্সরীতুল্য অভিনেত্রী। ‘আনোয়ারা’(১৯৬৭), ‘ সংসার’(১৯৬৮), ‘জীবন থেকে নেয়া’(১৯৭), ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’(১৯৭২), ‘তিন কন্যা’(১৯৮৫) সহ প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন জহির রায়হানের সহধর্মিণী এই নায়িকা। স্বামী পরিচালক হওয়ার সুবাদে ক্যামেরা ও চিত্রনাট্যের খুঁটিনাটি শিখতে শুরু করেন সত্তরের কালেই।
নব্বইয়ের দশকে নিজেকে চলচ্চিত্র জগত থেকে গুটিয়ে নিলেও ২০০৮ সালে প্রত্যাবর্তন করেন জহির রায়হানের কালজয়ী উপন্যাস ‘হাজার বছর ধরে’ পরিচালনার মধ্য দিয়ে। অকুণ্ঠ প্রশংসা ও পুরস্কারে আবারও সিক্ত হন এই গুণী। এর খাতিরে সেরা পরিচালকের জাতীয় পুরস্কারও অর্জন করেন সুচন্দা এবং ২০১৯ সালে ‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কারে’ ভূষিত হন । তবে তাঁর প্রথম পরিচালিত ছবি ছিল ‘বিদেশ যাত্রা’(১৯৯৮)। ১৯৯৯ সালে ‘সবুজ কোট কালো চশমা’ তাঁর দ্বিতীয় পরিচালিত ছবি। এছাড়াও আশির দশক থেকেই প্রযোজনার সাথে যুক্ত আছেন তিনি।
নার্গিস আখতার
সমাজ কল্যাণের ছাত্রী নার্গিস আক্তার কখনো ভাবেননি পুরোদস্তুর পরিচালক হবেন। শিক্ষাজীবনের খাতিরে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করতে গিয়েই টের পান একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে সমাজ সংস্কারের বার্তা পৌঁছাতে হলে চলচ্চিত্রের চেয়ে ভালো মাধ্যম আর নেই। অনেকটা ঋত্বিক ঘটকের মতোই বহু লোকের কাছে তরী ভেড়াবার তাড়নায়ই পরিচালনায় নাম লেখান।
২০০২ সালে এইচআইভি এইডস বিষয়ক সচেতনতামূলক চলচ্চিত্র ‘মেঘলা আকাশ ’ মুক্তি পায় নার্গিস আক্তারের হাত ধরে। মৌসুমি, শাকিল খান, শাবানা আজমি, আইয়ুব খান, পূর্ণিমা অভিনীত এই ছবিটি জাতীয় পুরস্কারেও অভিনন্দিত হয়। সেরা চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার জিতে নেন নার্গিস। ২০০৫ সালেও বহুবিবাহের অন্যায়কে নির্দেশ করে সেলিনা হোসেনের গল্প অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘চার সতীনের ঘর’ । ববিতা, আলমগির, শাবনুর, মাহফুজ, সুচরিতা ও দিতি অভিনীত ছবিটি মুক্তির আগে থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল।
২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মেঘের কোলে রোদে ’ রও গল্প আবর্তিত হয় এইডস সম্পর্কে সচেতনতাকে উদ্দেশ্য করে। টনি ডায়েস, রিয়াজ, দিতি ও সাদিকা পারভিন পপি অভিনীত চলচ্চিত্রটি ৩৩তম জাতীয় পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রী , সেরা কাহিনিসহ ছয়টি বিভাগে জয়লাভ করে। ২০১০ সালেও বিজয় নিশান উড়ান এই গুণী পরিচালক। ববিতা , নিপুণ, ফেরদৌস অভিনীত ‘ অবুঝ বউ’ লগ্নিকৃত অর্থ তুলে আনার পাশাপাশি ৩৫ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারেও সেরা চিত্রনাট্য, সুর ও সম্পাদনার তিনটি পুরস্কার ঘরে তোলে।
পাঁচ বছর বিরতির পর ববিতার সর্বশেষ ছবি ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’র লাল ফিতে কাটেন নার্গিস। ব্যবসায়িক সাফল্যেও পিছিয়ে ছিল না এই ছবি। রোমান্টিক ঘরানার ছবি নির্মাণে নিজের পারদর্শিতা দেখান ২০১৬ সালের ‘পৌষ মাসের পীরি’তে । নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘রস’ গল্প অবলম্বনে পপি ও রিয়াজকে মুখ্য ভূমিকায় নিয়ে তৈরি করেন মিষ্টি প্রেমের এই ছবি। সেলিম আল দীনের কথ্য- নাট্য ‘যৈবতী কন্যার মন’ নিয়ে বর্তমানে চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যস্ত আছেন এই চলচ্চিত্রের কারিগর।
শাহনেওয়াজ কাকলী
নারী পরিচালক হিসেবে প্রথম ছবি নির্মাণেই বাজিমাত করেছেন শিল্পনির্দেশক ও নাট্যনির্মাতা শাহনেওয়াজ কাকলী। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে নির্মিত তার পরিচালিত প্রথম ছবির ‘উত্তরের সুর’ মুক্তি পায় ২০১২ সালে। নারী নির্মাতা হিসেবে যে তিনি বলিষ্ঠ তা প্রমাণ করেছেন শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ ৪টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। এর মধ্যে কাকলী নিজেও পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারের পুরস্কার। পল্লিদেশের পথ গায়ক আর তার সাংসারিক টানাপোড়েনের চিত্র ৩৫ মিলিমিটারের পর্দায় সুনিপুণতার সাথে তুলে ধরেন এই নির্মাতা। এতে অভিনয় করেন উৎপল, মেঘলা, লুসি প্রমুখ।
তানিয়া আহমেদ
নব্বইয়ের দশকে মডেল হিসেবে যাত্রা শুরু করে গত তিন দশকে পোক্ত অবস্থানই গড়েছেন তানিয়া আহমেদ। আফজাল হোসেনের হাত ধরে ‘ডায়মন্ড হেয়ার অয়েলে’র বিজ্ঞাপন দিয়ে যাত্রা শুরু করে এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন জয়রথ। ফারিয়া হোসেনের নাটক ‘সম্পর্ক’ মাধ্যমে পদার্পণ ঘটে ছোট পর্দায় সুচিত্রা সেন আদলের এই অভিনেত্রীর। ‘আমাদের আনন্দবাড়ি’, ‘শ্রীকান্ত’, ‘69’, ‘বেলাভূমি’, ‘ সাপলুডু’, ‘ঘুণপোকা’ সহ অসংখ্য দর্শকনন্দিত নাটকে অভিনয় করে বরাবরই দর্শক মাতিয়েছেন তানিয়া।
শুধু টেলিভিশনেই নয়, চলচ্চিত্র অঙ্গনেও সুরুচি ও অভিনয়ের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। হুমায়ুন আহমেদের ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর ‘মেড ইন বাংলাদেশ’, শহিদুল ইসলাম মিন্টুর ‘দেবদাস’, মেহের আফরোজ শাওনের ‘কৃষ্ণপক্ষ’ এ দেখা গেছে তাঁকে।
এর মধ্যে শেষোক্তের জন্য সেরা পার্শ্বচরিত্রে জাতীয় পুরস্কারও পান ২০১৮ সালে। আর ‘শ্যামল ছায়া’র কল্যাণে লাভ করেন বাচসাস পুরস্কার।
পরিচালক হিসেবে আসিফ আকবরের ‘উড়ো মেঘে’র মিউজিক ভিডিও দিয়ে হাতেখড়ি হলেও ২০১২ সালে ‘দ্য এ টিম’ নামক একটি ধারাবাহিক নাটক পরিচালনা করে নজরে আসেন। অবশেষে ২০১৭ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ভালোবাসা এমনই হয়’। বিদ্যা সিনহা মিম, ইরফান সাজ্জাদ, মিশু সাব্বির, তারিক আনাম খান ও মীর সাব্বির অভিনীত রোমান্স ও হাস্যরসাত্মক এই ছবি ব্যবসায়িক সাফল্য না পেলেও নানান মহলে তানিয়ার কাজ প্রশংসিত হয়। মূলত আফজাল হোসেনকেই এই ক্ষেত্রে কাজ করার প্রেরণা হিসেবে দেখেন তিনি।
মেহের আফরোজ শাওন
মেঘবরণ কেশের সোনারবরণ কন্যার উত্থানও অভিনয়ের মাধ্যমে। হ্যাঁ, বলছি মেহের আফরোজ শাওনের কথা। বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম নাম লেখান মিডিয়া অঙ্গনে। ১৯৮৮ সালে ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ র মধ্য দিয়ে অভিনয় জগতে প্রবেশ। এরপর ‘সুপ্রভাত ঢাকা ’(১৯৮৯), ‘খোঁয়াড়’(১৯৯০) দিয়ে কর্মজীবন অব্যাহত রাখলেও তাঁকে নতুন করে আবিষ্কার করেন হুমায়ূন আহমেদ। ফলাফল, ১৯৯১ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত কিংবদন্তী এই সাহিত্যিকের সাথে কাজ করেন স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের জোরে।
‘আজ রবিবারে’র তিতলির হুমায়ূন যাত্রার আরম্ভ হয় ‘জননী’র মধ্য দিয়ে। ক্রমে ‘আজ রবিবার’, ‘মোহর আলী সিরিজ’, ‘সবুজ ছায়া’, ’খাদক’, ‘সবুজ সাথী’ প্রভৃতিতে নিয়মিত অভিনয় করেন। এছাড়াও হুমায়ূনের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’(১৯৯৯), ‘দুই দুয়ারী’( ২০০১), ‘চন্দ্রকথা’(২০০৩), ’শ্যামল ছায়া’(২০০৪), ‘আমার আছে জল’(২০০৮) চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় উপস্থিত ছিলেন।
২০০৫ সালে লেখক হুমায়ূন আহমেদের সাথে গাঁটছড়া বাঁধলে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন এই মেধাবী অভিনেত্রী। তবে দমে যাননি তিনি। ২০১২ সালে প্রবাদপ্রতিম এই লেখকের মৃত্যুর পর ‘নুহাশ চলচ্চিত্রে’র দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর হাতে। এর আগে ২০০৯ সালে ‘নয়া রিকশা’ নাটকটিতে পরিচালকের ভূমিকায় দেখা যায় শাওনকে।
অবশেষে ২০১৬ সালে তাঁর প্রথম পরিচালিত ছবি ‘কৃষ্ণপক্ষ’ মুক্তি পায় দেশিয় প্রেক্ষাগৃহে। ছবির গল্পটাও কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের বহুলপঠিত উপন্যাস অবলম্বনে। এর চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন , ‘দর্শকের একটা বড় অংশ হলো পাঠক। তাদের কল্পনাকে ধারণ করাটা কঠিন ছিল। কিন্তু আমি নিজের ও হুমায়ূনের কল্পনাকে ছবিতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।‘ রিয়াজ ও মাহিয়া মাহিকে নিয়ে তৈরি এই ছবি ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি সমালোচকদের চোখেও প্রশংসিত হয়েছে।
সামিয়া জামান
সাংবাদিকতা তাঁর প্রথম ভালোবাসা। বিবিসি ও একুশে টেলিভিশনে সাংবাদিক ও উপস্থাপক হিসেবে উত্থান ঘটে নব্বইয়ের দশকেই। আশির দশকে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আন্দোলনের সাথেও যুক্ত ছিলেন কর্মী হিসেবে। বর্তমানে একাত্তর টেলিভিশনের কর্ণধার ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাংবাদিকতার সুবাদে ক্যামেরা ও প্রকাশ মাধ্যমের প্রতি আলাদা অনুরাগ ছিল তাঁর। এরই প্রকাশ ঘটে ২০০৬ সালের ‘রাণী কুঠির বাকি ইতিহাস’ ছবি দিয়ে। পপি, আলমগির ও ফেরদৌস অভিনীত ছবিটি স্বল্প পরিসরে মুক্তি পেলেও এর আগে থেকেই ছবির গানগুলো জনপ্রিয়তা পায়। সুধীজনের কাছে অকুণ্ঠ প্রশংসা পেলেও বেশি কাজ করেননি।
২০১৪ সালে দ্বিতীয় ছবি ‘আকাশ কত দূরে’ মুক্তি পায় সরকারি অনুদান ও ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে। রাজ্জাক, শর্মিলি আহমেদ অভিনীত ছবিটিও দর্শকের ভালোবাসা আদায় করতে সমর্থ হয়।
রুবাইয়াত হোসেন
মানিকদা তথা সত্যজিৎ রায়কে নমস্য মানেন রুবাইয়াত হোসেন। এর কার্যত প্রমাণও মেলে তাঁর কাজগুলোয়। তরুণ নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ২০১১ সালের ‘মেহেরজান’ দিয়ে। সে সময়ই সমালোচকদের সুদৃষ্টি মেলে তাঁর।
নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র নিশ্চিতের জন্য বরাবরই উচ্চকিত তিনি। ২০১৫ সালে তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশনে’ তাই সহকারী পরিচালক থেকে চিত্রগ্রাহক- সবক্ষেত্রে নারীদের প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। স্বল্প ব্যাপ্তিতে মুক্তি পেলেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতি বলিষ্ঠ বার্তা পাঠাতে সফল হয় ছবিটি।
২০১৯ সালে টরেন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয় রুবাইয়াতের ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। তৈরি পোশাক খাতে নারীদের বেতন বৈষম্য ও সামাজিক ত্রুটিকে কটাক্ষ করে তৈরি এই ছবি সেই বিদেশ মুলুকেও পায় তুমুল করতালি। টরিনো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ও আফ্রিকান ডায়াসপোরা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কৃত হয় এটি।
বাংলাদেশের নারী শিল্পীদের বেতন ব্যবধান নিয়েও সরব তিনি। সুষ্ঠু নীতি ও সামাজিক অনগ্রসরতাই এর কারণ বলে তিনি মনে করেন। সহধর্মী আশিক মোস্তফা ও রুবাইয়াত দুজনের প্রচেষ্টায় তৈরি করেছেন প্রযোজনা সংস্থা ‘খনা টকিজ ’। তরুণ ও মেধাবী নির্মাতাদের পৃষ্ঠপোষকতাই এর মূল লক্ষ্য।
কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য, হয়রানি এই একবিংশ শতাব্দীতেও বিদ্যমান। এর পরিবর্তনে চলচ্চিত্র একটি পরিপূর্ণ শিল্প মাধ্যম। বাঙালি নারী নির্মাতারা অল্প কদমে হলেও এগিয়ে আসছেন এই অঙ্গনে। প্রখ্যাত পরিচালক মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী তাই নারী পরিচালকদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান এভাবে, ‘পুরুষের চোখে বিশ্বকে অনেক অনেকবার দেখেছি আমরা। এখন নারীদের দৃষ্টিভঙ্গিটা জানানো দরকার। তাহলেই সমান ও বৈষম্যহীন শিল্প গড়ে উঠবে।‘