Site icon Bangla Info Tube

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবীতে বশেমুরবিপ্রবিতে রক্তাক্ত ছাত্র আন্দোলন

বশেমুরবিপ্রবিতে রক্তাক্ত ছাত্র আন্দোলন; Photo Credit: jugantor.com

Reading Time: 2 minutes

দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকা ক্ষোভ হুট করেই বারুদের মধ্যে স্ফুলিঙ্গের রূপ নিয়ে নেয়। আর ঠিক তেমনই এক পরিস্থিতি এখন চলছে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি)। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ড. খন্দকার নাসিরুদ্দিনের পদত্যাগের দাবী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন উত্তাল। গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত চলছে আন্দোলন, এর মধ্যে ২১ সেপ্টেম্বর আন্দোলন বানচাল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহের বন্ধের সাথে সাথে পানি ও বন্ধ করে দেয়া হয় সেদিন থেকে। কিন্তু এরপরেও আন্দোলনকারীরা বিন্দুমাত্র দমে যায়নি। 

যেভাবে শুরু এই আন্দোলন 

দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগে অপরিষ্কার ক্লাসরুম নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার কারণে পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। উপাচার্যের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের অনুগত সন্ত্রাস বাহিনী রাখা, শিক্ষক এবং কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে হাজারো রকম দুর্নীতি, ভর্তি বাণিজ্য, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের সম্পূর্ণ টাকা লুটপাট এবং সম্প্রতি সময়ে একাধারে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিক জেবিনের উপর হামলা। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার পর আইন বিভাগের ছাত্রী জিনিয়াকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এই বহিষ্কার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনেকেই সমালোচনা শুরু করেন। এই থেকেই মূলত আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। 

উপাচার্যের বক্তব্য 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ রূপে অস্বীকার করেছেন উপাচার্য। তার মতে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটা চক্র কাজ করে আসছে। এই আন্দোলন সেই চক্রের উস্কানির ফলাফল। উপাচার্য আরও বলেন, আন্দোলন থামানোর জন্য ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন দাবী দাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছে তবুও তাদের আন্দোলন চলছেই। 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা

বশেমুরপ্রবি’র উপাচার্যের পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের উপর গত শনিবার হামলা করা হয়েছিল। উক্ত হামলায় প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপাচার্যের লোকজন লাঠি, রাম দা এবং বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা করে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন হয়ত ধারণা করেছিল যে সবগুলো হল একত্রে বন্ধ ঘোষণা করে দিলেই এই আন্দোলন থেমে যাবে। তবে তেমনটা হতে দেখা যায়নি, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘোষণা শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছে। বর্তমানে হাজারো ছাত্র-ছাত্রী এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে এবং তাদের ভাষ্যমতে ভিসি’র পদত্যাগের মাধ্যমেই কেবল এই আন্দোলন থামবে। 

টিভিতে উপাচার্যের সাক্ষাৎকার

এই আন্দোলনের জন্য সাংবাদিকদের দায়ী করেছেন উপাচার্য নাসিরুদ্দিন। যমুনা টেলিভিশনকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারের সময় তিনি এই দাবী করেছেন। তার মতে সাংবাদিকরা যদি শুধু দুই ঘণ্টার জন্য এই আন্দোলন কাভার করা বন্ধ করে দেয় তাহলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমি চলে যাব কোন সমস্যা নেই। তবে মিথ্যে দাবীর মাধ্যমে যদি আমি চলে যাই তাহলে ৪২ জন উপাচার্যের একজনকেও রাখা যাবে না। সরকারকে প্রতি তিন মাস পরপর নতুন উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে। 

তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ করেন যে সাংবাদিকরা শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্যগুলোই বড় করে করে প্রচার করছে। এমনকি সাংবাদিকরা নাকি ছাত্র ছাত্রীদের শিখিয়ে দিচ্ছে কখন কি করতে হবে, কীভাবে আন্দোলন আরও জোরদার করা যাবে। অথচ কেউ প্রশাসনের বক্তব্যগুলো প্রচার করছে না। এক তরফা এই প্রচার প্রচারণা না চালিয়ে তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বক্তব্যগুলোও প্রচার করে। 

 এই সাক্ষাৎকার টিভিতে প্রচার হলে শিক্ষার্থীরা ঝাড়ু নিয়ে মিছিলে বের হয়। এই মুহুর্তে হাজারো ছাত্র-ছাত্রী বশেমুরপ্রবি’র প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছেন। আর এই আন্দোলনকে খুবই যৌক্তিক বলে অভিহিত করে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি শামস জেবিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অশান্ত পরিবেশ ঠিক করার জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। 

Exit mobile version