বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ফেসঅ্যাপে ছবি আপলোড করছেন? বিপদটাও জেনে রাখুন!1 min read

জুলাই ২৭, ২০১৯ 2 min read

author:

ফেসঅ্যাপে ছবি আপলোড করছেন? বিপদটাও জেনে রাখুন!1 min read

Reading Time: 2 minutes

২০১৫ সালে হলিউডে মুক্তি পায় আর্নল্ড শোয়ার্জ়নেগার অভিনীত টারমিনেটর জেনেসিস চলচ্চিত্রটি। ছবিটির একটি দৃশ্যে দেখা যায়, ১৯৮৪ সালে মুক্তি পাওয়া দ্য টারমিনেটর মুভিতে দেখানো তরুণ চেহারার আর্নল্ড শোয়ার্জ়নেগার লড়াই করছেন ২০১৫ সালের বয়সী আর্নল্ড শোয়ার্জ়নেগারের সাথে। কীভাবে এটি সম্ভব? কীভাবে বয়স কমিয়ে দেখানো হল আর্নল্ড শোয়ার্জ়নেগারের?    

সিনেমাতে মেকআপ বা স্পেশাল ইফেক্ট ব্যবহার করে চেহারা পাল্টানো, কম বয়সী চরিত্রকে বৃদ্ধ বানানো খুব সহজ ছিল কিন্তু হালের প্রযুক্তি – যাকে কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজ বা সিজিআই বলা হয়, যেটার সাথে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এখন বয়স কমানো, বাড়ানো, এমনকি মৃত অভিনেতা বা অভিনেত্রীদের জীবিত করাও এখন বড় বাজেটের মুভিতে অসম্ভব কিছু না!

এ তো গেল মুভির কথা। সর্ব সাধারণের জন্য নিজের চেহারা ১০ বছর পিছিয়ে বা ১০ বছর এগিয়ে নিয়ে দেখার সুযোগ করে দিতে তৈরি হয়েছে আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলার উপযোগী মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন – ফেসঅ্যাপ।    

গত কয়েক মাস ধরে ফেসঅ্যাপ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। ২০১৭ সালের প্রথম ভাগে বের হওয়া এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি ডেভেলপ করেছে রাশিয়ান একটি সফটওয়্যার কোম্পানি – ওয়্যারলেস ল্যাব। কোম্পানিটি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিশ্বাসযোগ্যভাবে কারো ফটোগ্রাফের চেহারাকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে রূপান্তর করতে পারে। বয়স কমিয়ে তরুণ করে ফেলা বা বয়স বাড়িয়ে বৃদ্ধ বানানো – এসবের পাশাপাশি ছবির মানুষকে হাস্যোজ্জ্বোল করা, একটি পুরুষের চেহারাকে তার আদলেই একটি নারীর চেহারাতে রূপ দেয়া – এসবই হচ্ছে এই ফেসঅ্যাপ-এর ক্ষমতা! এছাড়াও মুখের অভিব্যক্তির রূপান্তর, দাড়ি সেঁটে দেয়া, বা চশমা পড়িয়ে দেয়া, ছবির পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ড, চুলের রঙ, ট্যাটু ইত্যাদি যোগ করে ছবিতে বৈচিত্র আনা যায়। 

এই মুহূর্তে ইন্টারনেটের তথ্য অনুযায়ী এই অ্যাপ্লিকেশনটির ব্যবহারকারী দশ কোটির ও বেশি। এছাড়াও ১২০টিরও বেশি দেশে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরেও শীর্ষস্থানে আছে এ অ্যাপটি। সব মিলিয়ে পনের কোটিরও বেশি মানুষ এই মুহূর্তে ব্যবহার করেছেন বা করছেন ফেসঅ্যাপ অ্যাপটি।

কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী ফেসঅ্যাপ ব্যবহারের কারণে ব্যবহারকারী ঝুঁকির মধ্যেই পড়ছেন। এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি ইন্সটলেশনের বা ব্যবহারের শর্ত মোতাবেক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়্যারলেস ল্যাব ব্যবহারকারীর ডিভাইস থেকে আইপি অ্যাড্রেস, অবস্থান, ব্রাউজারের কুকিস সহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এরই সাথে ফেসঅ্যাপ ইন্সটলের সময় ব্যবহারকারীর আপলোড করা ছবির পূর্ণ মালিকানা আজীবনের জন্য চলে যায় ওয়্যারলেস ল্যাব-এর হাতে। এসব ছবি পরবর্তীতে ওয়্যারলেস ল্যাব স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে পারবে এবং এজন্য ব্যবহারকারী কোনো ধরনের দাবি পরবর্তী সময়ে জানাতে পারবেন না। এভাবে এই অ্যাপটি ব্যবহার করলে গ্রাহক ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে পারেন।

ফেসঅ্যাপের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, এটি ব্যবহারকারীর মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের গ্যালারিতে প্রবেশ করার অনুমতি চায়, প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে ব্যবহারকারীদের এসব ছবি পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্যে নিজস্ব সার্ভারে সংরক্ষণ করে রাখছে ফেসঅ্যাপে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।  

আধুনিক বিশ্বে স্বর্ণ, টাকা-পয়সা, দামী রত্ন বা অলংকারের চেয়েও মূল্যবান হয়ে উঠেছে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে তথ্যই হবে ভবিষ্যতের অস্ত্র। কারণ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে আরও উৎকর্ষতা লাভ করবে, সাথে বেড়ে যাবে যে কোন বিষয়ে ছোটখাটো বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তার গতি প্রকৃতি, ধরণ, বৈশিষ্ট্য, অতীত-বর্তমান স্বভাব পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া, খুবই সহজে সব জেনে ফেলা। এধরণের তথ্য ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে কনজিউমার বিহেভিয়ার বা মার্কেটিং কোম্পানিগুলো, যাতে প্রাপ্ত তথ্য গুলোর উপর ভিত্তি করে ‘পার্সোনালাইজড’ বিজ্ঞাপন প্রস্তুত করতে পারে, যা কিনা একজন টার্গেটেড ভোক্তা বা গ্রাহককে সহজেই প্রভাবিত করবে।  

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবার দেখাদেখি আমরাও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হুজুগে যুক্ত হয়ে থাকি। কিন্তু এই সব কিছুতে জড়ানোর সময় অবশ্যই দেখে নেয়া উচিত যে আমাদের প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত তথ্য কোনভাবে অন্য কেউ জেনে যাচ্ছে কিনা বা কতটুকু ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করলে আমরা আসলে কোন ঝুঁকির মধ্যে পড়বো না। তা না হলে সামান্য আনন্দ করা থেকেই হয়তো হতে পারে মস্ত কোন ভুল।

লেখক- সালেহীন সাকিব

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *