Site icon Bangla Info Tube

করোনাকালে যেভাবে ভালো রাখবেন ফুসফুস

যে সাত উপায়ে ফুসফুস ভালো রাখবেন; Phot Credit: JASPER WHITE/GETTY IMAGE

Reading Time: 3 minutes

করোনাভাইরাসের এই অসহ্য সময়ে প্রতিষেধক না আসা অব্দি আমাদের মেনে চলতে হবে কতগুলো নিয়ম। এরমধ্যে ফুসফুস ভালো রাখা সবচেয়ে জরুরী। কারণ এই ভাইরাস শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে সরাসরি আক্রমণ করে। এমনকি বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা জানিয়েছেন এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা কিছু মানুষের ফুসফুসও অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই পেটের উপর গোটা বুকজুড়ে অবস্থান করা ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে থাকতে হবে সতর্ক।

ফুসফুস যাতে আক্রান্ত না হয়ে পড়ে সেজন্য সহজ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি অনেকখানি ঝুঁকিমুক্ত হতে পারেন। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের সাত পরামর্শ জানাচ্ছি আজ।

ধূমপান ত্যাগ করা

আপনার যদি ধূমপানের বদভ্যাস থেকে থাকে তবে আজই তা ত্যাগ করুন। প্রায় চার হাজার রকমের রাসায়নিক উপাদানে ভরপুর একেকটি সিগারেট মুহুর্তেই আপনার শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেয় নিকোটিন, টার, কার্বন-মনোক্সাইডের মতো ভয়াবহ সব জীবনঘাতি রাসায়নিক। এগুলো ফুসফুসে জমতে জমতে একসময় ফুসফুসের বাতাস চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। ফলে বেড়ে যায় শ্বাসকষ্ট ও ক্যান্সারের ঝুঁকি ।

অধূমপায়ীদেরও এ ক্ষেত্রে থাকা চাই সদা সতর্ক। কারণ পরোক্ষ ধূমপানে আপনিও থাকতে পারেন ঝুকির মধ্যে।

পর্যাপ্ত পানি পান

ফুসফুস কে ভালো রাখতে নিয়মমাফিক পানি পান জরুরী। পানি পান অনেকটা ফিল্টারের মত কাজ করে। তাই দৈনিক আট গ্লাস পানি পান করার সুঅভ্যাস গড়ে তুলুন।

খাদ্যতালিকায় যা যা রাখতে হবে

সবুজ শাকসবজির গুণগান এমনিতে করা হয় না। ফুসফুস ভালো রাখতে প্রাকৃতিক খাবারের জুড়ি মেলা ভার। সবুজ শাকসবজি, গাজর, টমেটো, লেবু খেতে হবে প্রচুর। এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন মৌসুমী ফল। আঙুর, আনারস, পেয়ারা আমলকীর মত ফলমূল তাই খাবারের পাতে রাখুন। সেই সাথে সামুদ্রিক মাছ দিয়ে আহার করলে তো আরো ভালো। উল্লেখিত খাবারগুলোতে আপনি পাবেন শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এন্টি অক্সিডেন্ট, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ও মিনারেল।

চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন যথা সম্ভব। সেই সাথে কোমল পানীয় ও ক্যাফেইনের আধার খ্যাত চা কফি যতটা সম্ভব না খাওয়ার চেষ্টা করবেন। আর দুই বছরের কম বয়েসী বাচ্চাদের অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ শ্রেষ্ঠ খাবার।

ব্যায়াম করুন নিয়মিত

ব্যায়াম করার উপকারিতার কথা কে না জানে। ব্যায়ামের অভ্যাস না থেকে থাকলে তা আজই শুরু করুন। সপ্তাহে ৩-৫ দিন অন্তত ত্রিশ মিনিটের জন্য হলেও ব্যায়াম করুন। এতে করে শ্বাসযন্ত্রের পেশীগুলো তো সুগঠিত হবেই সাথে উপরি হিসেবে ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রিত। তবে বেশি ভালো হয় যদি শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা যায় । জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেওয়ার এই ব্যায়ামগুলো করলে শরীরের একসাথে অধিক পরিমাণে অক্সিজেন প্রবেশের সুযোগ হয় এবং কোষ গুলোও অপেক্ষাকৃত অধিক অক্সিজেন পায়। যা দিনভর আপনাকে কর্মদ্যম রাখবে। আর শিশুদেরকেও খেলাধুলার প্রতি উৎসাহ দিতে হবে।

বাড়িতে বসে ব্যায়াম করতে আপনাকে প্রথমে পিঠ সোজা করে বসতে হবে, এরপর নাক দিয়ে ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিতে হবে যেন মনে হয় পেট পর্যন্ত বাতাস যাচ্ছে। এ বাতাস টানা ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন ও মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এ ব্যায়াম ফুসফুসকে পরিষ্কার করে কার্যক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়াতে সক্ষম।

বাতাস রাখুন বিশুদ্ধ

গবেষকরা দেখেছেন অনেক সময় আমাদের ঘরের ভেতরের বাতাস বাইরের বাতাসের চাইতেও দূষিত। যার প্রভাব সরাসরি পড়ে ফুসফুসের উপর। এজন্য সর্বদা ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরী। সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজা জানালা খুলে দিলে বাতাস চলাচল বাড়বে। আর রান্নাঘরে চিমনি, কিচেন হুড বা এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহার করুন যাতে দূষিত বাতাস ঘরে আবদ্ধ না থাকে। মাটির চুলা ব্যবহারকারীগণ বায়োগ্যাসের চুলা বা কম ধোঁয়া দেয় এমন চুলা ব্যবহার করতে চেষ্টা করুন।

এছাড়া ঘরের ভেতর কাপড় শুকানোর অভ্যাস বন্ধ করা জরুরী। কারণ এতে ঘর ভ্যাপসা হয়ে যায় ও রোগজীবাণু ঘরময় ছড়িয়ে পড়ে । এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো হয়।

শহুরে বাসিন্দারা তো সহজে আর বাইরের দূষিত বাতাস থেকে নিস্তার পাবেন না । তাই নিয়মিত ব্যবহার করুন মাস্ক আর নিজেকে রাখুন নিরাপদ। আর সাথে এটাও খেয়াল রাখুন আপনি নিজে যেন পরিবেশ দূষণের কারণ না হন।

বিশ্রাম

ফুসফুস সুস্থ রাখার আরেকটি উপায় হল পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া। আপনার যদি শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে থাকে তবে ঘুমের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। এতে আপনার ফুসফুস রোগের বিরুদ্ধে লড়তে পারবে এবং নিজস্ব সক্ষমতায় সুস্থ হয়ে উঠবে।

পরিচ্ছন্নতা

করোনা ভাইরাসকে রুখতে হাত পরিষ্কারের কথা শুরু থেকেই বলা হচ্ছে। কারণ হাত থেকেই ফুসফুসে এই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাই বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া জরুরী।

আরেকটি বিষয়, আপনার যদি দীর্ঘদিন ধরে কাশি ও শ্বাসকষ্ট থাকে, শারীরিক পরিশ্রম করলে অনেক বেশি ক্লান্ত লেগে থাকে, লম্বা শ্বাস নিতে গেলে বুকে ব্যথা হয় কিংবা এমন মনে হয় যে আপনি পর্যাপ্ত বাতাস পাচ্ছেন না সে ক্ষেত্রে অতি অবশ্যই দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আর ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত সকল ধরণের ঔষধ সেবন করা থেকে বিরত থাকুন।

নিজেকে সুস্থ, কর্মদ্যম রাখতে এখন থেকেই ভালো রাখুন ফুসফুস ,নিঃশ্বাস নিন প্রাণভরে আর কমিয়ে ফেলুন সংক্রমণের ঝুঁকি।

লেখক- মাহের রাহাত 

Exit mobile version