যে পাঁচটি জিনিস পৃথিবী থেকে দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে 1 min read
Reading Time: 4 minutesআমরা হয়তো অনেকেই জানি, পানি, তেল, মৌমাছি ইত্যাদি পৃথিবী থেকে ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এমন আরও কিছু জিনিস আছে যেগুলো অতিরিক্ত ব্যবহার, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানুষ সৃষ্ট বিপর্যয়, রোগ ইত্যাদি কারণে আমাদের অজান্তেই প্রতিনিয়তই হারিয়ে কিংবা ফুরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা মোটেও উপলব্ধি করতে পারছি না যে, এইসব বস্তুগুলো পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে পারে। আপনাদের পুরনো ভাবনাকে নতুন ভাবনায় রূপ দিতে আপনাদেরকে আজ জানাবো এমন পাঁচটি জিনিসের কথা যেগুলো পৃথিবী থেকে ক্রমশ ফুরিয়ে যাচ্ছে।
বালি
অনেকের কাছে মনে হতে পারে, বালি কীভাবে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে? অনেক মরুভূমি, সমুদ্র সৈকত, নদী এবং চর অঞ্চল রয়েছে; আর এই প্রত্যেকটি ক্ষেত্রই বালিতে ভরপুর। এত বালি থাকা সত্ত্বেও বালির ঘাটতি দেখা দিতে পারে-এমনটি হয়তো কখনো ভেবে দেখেননি! কিন্তু প্রকৃতপক্ষেই পৃথিবীতে বালি পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আমাদের চারপাশের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়তই প্রচুর বালি ব্যবহার করতে হয়; দালান-কোঠা নির্মাণ, রাস্তাঘাট ও সড়ক নির্মাণ, কাঁচ তৈরি, পানি বিশুদ্ধকরণ এমন প্রতিটি কাজেই বালি ব্যবহার করা হয়; এমনকি আমাদের মোবাইল-ফোন এবং টুথপেস্টেও বালুর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।
এভাবে প্রচুর বালুর ব্যবহারের ফলে পৃথিবী থেকে বালি ক্রমশ কমে যাচ্ছে। কারণ বালি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়, আর প্রাকৃতিকভাবে যত বালু তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত তার চেয়ে বেশি বালু আমরা ব্যবহার করছি। বালুর পরিমাণ ক্রমাগত কমে যাওয়ার কারণে আমাদের আগামীর পৃথিবীতে পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিতে পারে, তাই ইতিমধ্যেই বালি ব্যবহারের উপর বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মাটি
মাটির হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ; যা কৃত্তিম উপায়ে তৈরি করা সম্ভব নয়। অথচ নদী ভাঙ্গন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বনভূমি উজাড়, অতিরিক্ত মাত্রায় কৃষিকাজ, ঘরবাড়ি নির্মাণ, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার ইত্যাদি কারণে প্রতিনিয়তই পৃথিবী থেকে মাটি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। আর যে পরিমাণে মাটি ক্ষয় হচ্ছে, সেই পরিমাণে মাটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হচ্ছে না। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাকৃতিকভাবে এক ইঞ্চি পরিমাণ জমি তৈরি হতে প্রায় ৫০০ বছরের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই পৃথিবীতে এর চেয়ে দ্রুতগতিতে মাটি ক্ষয় হচ্ছে, ফলে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে বসা বস্তুগুলোর মধ্যে নাম লিখিয়েছে মাটি।
ফসফরাস
মানুষের জীবনধারণে সাহায্যকারী অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে ফসফরাস। মানুষের শরীরের ডিএনএ–এর গঠন, কৃষি কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সার তৈরি, মাংস ও দুগ্ধজাত খাদ্য মজুদ করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ফসফরাসের ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। মূলত মানুষের খাদ্যের সুরক্ষায় ফসফরাসের ব্যবহারের জুড়ি নেই।
যদিও ফসফরাস নবায়নযোগ্য বিষয়; তথাপি ফসফরাসের অত্যাধিক ব্যবহার এবং ফসফরাসের উৎপাদন চক্রে বিপর্যয়ের ফলে পৃথিবীতে এই উপাদানটি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে এবং আগামীতে ফসফরাসের একেবারে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এতে খাদ্য উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে; যা কি–না একটি ক্ষুধার্ত পৃথিবী তৈরি করতে পারে।
হিলিয়াম
পৃথিবীতে যত ধরনের গ্যাস রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্যাসের নাম হচ্ছে হিলিয়াম; যাকে ম্যাজিক্যাল গ্যাস হিসেবেও নামকরণ করা হয়। অনেকেই হয়ত মনে করেন, হিলিয়াম গ্যাস শুধুমাত্র বেলুন ফোলানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চিকিৎসাশাস্ত্রসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে হিলিয়াম ব্যবহার হয়।
বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজে হিলিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও দরকারি একটি গ্যাস। এছাড়াও ক্যান্সার, মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের আঘাত নির্ণয় করার জন্য এমআরআই(MRI) করা হয়; আর এমআরআই– এ ব্যবহারকৃত চুম্বক ঠান্ডা রাখতে প্রয়োজন হয় হিলিয়াম গ্যাস। এছাড়াও সেমিকন্ডাকটর শিল্পে ও উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয়ের যন্ত্রের ক্ষেত্রেও হিলিয়াম গ্যাসের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
এতো গুরুত্বপূর্ণ অথচ এই গ্যাসটি ক্রমশ পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। কারণ এই গ্যাস কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা যায় না, বরং এটি মাটি থেকে উত্তোলন করতে হয়; মূলত ইউরেনিয়ামের পারমাণবিক ক্ষয় থেকে হিলিয়াম গ্যাস পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক উপায়ে প্রচুর পরিমাণে হিলিয়াম গ্যাস তৈরি না হলেও আমরা কিন্তু প্রতিনিয়তই প্রচুর পরিমাণে হিলিয়াম গ্যাস ব্যয় করতেছি। যার ফলে গবেষকরা হিলিয়াম গ্যাসের ঘাটতি নিয়ে বেশ চিন্তার মধ্যে পড়েছেন। এজন্য এখনি খেলাচ্ছলে হিলিয়াম গ্যাসের ব্যবহার রোধ করবার সময় এসেছে।
কলা
আমাদের প্রায় সবার কাছেই অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাদ্য হচ্ছে কলা। পৃথিবীজুড়েই কলার চাহিদা বাড়ছে বৈকি কমছে না। কিন্তু বিশ্বব্যাপী কলার উৎপাদন ক্রমশ কমে যাচ্ছে। কারণ কলা গাছ ইতিমধ্যেই “পানামা“ নামক এক ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর আমরা যেসব কলা দেখতে পাই; তা মূলত ক্যাভেন্ডিস প্রজাতের। আর এই জাতের কলা মূলত একটি গাছ থেকে পাওয়া যায় এবং অন্যসব জাত ক্লোনের মাধ্যমে আসে। ফলে এই রোগটি কলা গাছের মধ্যে খুব দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে।
পূর্বেও পৃথিবীতে এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৫০ সালে; তখন রোগের কারণে কলার চাষ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপর পরই ক্যাভেন্ডিস জাতের কলার উৎপাদন শুরু হয়। কলা যেন পৃথিবী থেকে হারিয়ে না যায়, এইজন্য বর্তমানে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা নতুন প্রজাতের কলার উদ্ভাবনে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদি এসব বিজ্ঞানীরা রোগ প্রতিরোধকারী কলার জাত উদ্ভাবন করতে না পারে, তবে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে পারে জনপ্রিয় সুস্বাদু খাদ্য কলা।
এ পাঁচটি জিনিসই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিংবা পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এসব বস্তুগুলো যেন পৃথিবী থেকে হারিয়ে না যায়, এজন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় আগামীর পৃথিবীতে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে।
MHReza
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। ভাই আপনার ওয়েভ সাইট থেকে বেশ কিছু নতুন তথ্যের সুস্পষ্ট জ্ঞান ধারণা ভালো ভাবে শিখতে ও বুঝতে পেরেছি। যদিও সব কিছু জানার মধ্যেও বেশ কিছু জ্ঞানের অভাব আমার ছিল যেটা এখানে অনেক ভালভাবেই পরিস্কার হয়ে গেছে। আমি আশা করি ভবিষ্যতে আরও অনেক নতুন তথ্য জানতে এবং শিখতে পারব। দোয়া করবেন এবং সকলের জন্য দোয়া রইল।