‘মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়।‘
মুনীর চৌধুরীর ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটকের সবচাইতে আলোচিত লাইন এই দুটো। মানবজীবনের সবচেয়ে করুণ অথচ প্রলয়ঙ্করী সত্য প্রকাশ পায় মাত্র আট শব্দের এই ছত্রেই।
অনিবার্য জেনেও মানুষ কখনো লুটিয়ে পড়েনি নিশ্চিত মরণের কবলে, নতজানু হয়নি বিনা প্রচেষ্টায়। বর্তমান পরিস্থিতির দিকে আলোকপাত করেই দেখুন। পরিসংখ্যান মতে, বিশ্বে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা চল্লিশ লাখেরও বেশি। মৃত্যুর মিছিলে নব নামের সঞ্চার হলেও থেমে থাকেনি প্রাণের কোলাহল, দুর্জয়কে জয়ের চেষ্টা।
অজস্র বৈরিতা সত্ত্বেও প্রবল প্রাণশক্তির উপর ভর করেই মানবজাতি এগিয়ে চলেছে। প্রতিকূলতা জয়ের ভুরিভুরি উদাহরণ সততই আমাদের চতুর্দিকে পাই আমরা। এর কিছু ঘোরে লোকমুখে, কিছু কালির পাতায় আবার কিছু ঠাই নেয় সিনেমার ক্যামেরায়।
পূর্ববর্তী লেখার হাত ধরেই এই কিস্তিতেও চলুন জেনে নিই পাঁচটি প্রতিকূলতা অতিক্রমের কথকতা।
Trapped (২০১৭)
শহুরে জীবন মানেই ব্যস্ততা, দম ফেলার ফুরসতই মেলে না এখানে। গলি থেকে রাজপথ- জনারণ্যই সর্বদা প্রকট। অথচ শহরের ভীষণ ভিড়েও মানুষ একলা হতে পারে, বিছিন্ন হয়ে যেতে পারে যেকোনো সময়।
কাহিনী সংক্ষেপ: মুম্বাইভিত্তিক একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজের সুবাদে শৌর্যের (রাজকুমার রাও) পরিচয় ঘটে সহকর্মী নুরীর (গীতাঞ্জলী থাপা) সাথে। পরিচয় ক্রমেই প্রণয়ে পরিণত হয়। পরিণয়ের ভাবনা ভাবতেই সংসার পত্তনের জন্য ফ্ল্যাট খুঁজতে থাকে শৌর্য, ওদিকে প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ের চাপও বাড়ছে।
এহেন যখন অবস্থা, তখনই এক দালালের মাধ্যমে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটের সন্ধান পায় সে। পুরনো মেস ছেড়ে নতুন ঘরে সংসার পাতার আয়োজনও অনেকটা সেরে ফেলে অচিরেই। কিন্তু বিধি বাম! ছেলেমানুষি বোকামির জন্য ৩৫ তলা দালানের সুনসান ফ্ল্যাটে আটকা পড়ে যায় শৌর্য।
বিপদ যখন আসে চতুর্দিক রোধ করেই আসে। একে তো খালি ফ্ল্যাট, আশেপাশেও জনমানুষের চিহ্ন অল্প, যারা আছে তারাও ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাহায্যের জন্য চিৎকারও বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে তার কাছে। অগত্যা শুরু হয় খাবার-পানি শূন্য ফ্ল্যাটে একলা টিকে থাকার লড়াই। বেঁচে থাকার তাগিদে উন্মত্ত শৌর্য একসময় ঘরের তেলাপোকা, পিঁপড়ে মুখে পুরতেও বাধ্য হয়।
অপুষ্টি আর বৈরি অবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবশেষে জিতে ফিরলেও বদলে যায় শৌর্যের জগত আর বাস্তবতা। জাগতিক সত্যকে মেনে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে সে, টের পায় নাভিশ্বাস তোলা এই শহরে সঙ্গীহীনতাই সবচেয়ে বড় বন্দিত্ব।
ব্যতিক্রমী চরিত্র রূপায়নে সিদ্ধহস্ত রাজকুমার রাও এই ছবির জন্যেও কাঠখড় পুড়িয়েছেন বেশ। ছবির একটি দৃশ্যে রক্ত ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও আপোষ করেননি এই উঠতি তারকা। শুটিংয়ে টানা ২০ দিন শুধু গাজর আর কফি খেয়ে কাটিয়েছেন, যেন শৌর্যের কমতি ওজন সহজেই খাপ খাইয়ে যায় ক্যামেরায়।
১০৫ মিনিটের এই ছবির পরিচালনায় ছিলেন ‘উড়ান’, ‘লুটেরা’ খ্যাত বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে। ছবির গল্পের পেছনে ছিলেন অমিত জোশি ও হারদিক মেহতা। অমিত একবার নিজের ফ্ল্যাটেই মাত্র আধা ঘণ্টার জন্য আটকে পড়েছিলেন। মূলত সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আস্ত চিত্রনাট্য লিখে ফেলেন তিনি।
Gravity (২০১৩)
চার দেয়াল অথবা ধুলোর গ্রহে আটকে পড়া মানুষের গল্প হরহামেশাই দেখছেন গল্প, কবিতা অথবা সেলুলয়েডের ভাঁজে। কিন্তু একেবারে শুন্যে বন্দি হলে কী হবে ভাবুন তো?
শূন্য? সে আবার কী? শূন্য মানে মহাশূন্য। অবাধ, অবিরত বেড়ে চলা বিশাল আকাশ সমগ্র সৃষ্টির পথিকৃৎ বলেই হয়তো একে নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই মানুষের। সেই জিজ্ঞাসার উত্তর জোগাতেই পৃথিবীর মহীরুহ দেশগুলো মহাশূন্যে উৎক্ষেপণ করছে স্পুটনিক, ভয়েজার, পাইওনিয়ার ১১ ইত্যাদি।
স্পেসশিপসহ নভোচারীর জীবনযাপন সম্পর্কে কল্পবিজ্ঞান আর নাসার কল্যাণে অনেক কিছুই আজ আমরা জানি। সেই জ্ঞানের চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা আরও একধাপ উসকে দেয় আমাদের কৌতূহলকে। আর কে না জানে জ্ঞানের সাথে বিনোদনকে মিশিয়ে দিলে তা আরও সর্বজনীন হয়ে ওঠে!
পরিচালক আলফান্সো কুয়ারনও তাই তাঁর ২০১৩ সালের ফিল্ম ‘গ্র্যাভিটি’ তে বিজ্ঞান আর শিল্পের অসাধারণ সমন্বয়ই ঘটিয়েছেন।
কাহিনী সংক্ষেপ: নাসা স্পেস শাটল এক্সপ্লোরার কর্মী ম্যাট কওআলস্কি এবং রায়ান স্টোন বেরিয়েছিলেন নিয়মমাফিক স্পেসওয়াকে। স্বল্প কাজ সেরে গৎবাঁধা সময়েই স্পেস স্টেশনে ফেরার কথা ছিল দুজনের। কিন্তু বিপত্তি বাঁধায় আরেক ঘটনা। রুশ মিসাইলের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিকটবর্তী এক স্যাটেলাইট।
আর এতেই বদলে যায় দুই মহাকাশচারীর জীবনের গতিপথ। শূন্য চরাচরে বস্তুত বেঁচে থাকার সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয় তাদের। পদার্থবিদ্যার জ্ঞান আর আকুতিকে সম্বল করে একসময় অতিকায় আকাশের বুক থেকে মাটিতে নামলেও এর বিনিময়ে তাদের দিতে হয় চরম মূল্য।
কী ঘটেছিল সেই মহাকাশচারীদের ভাগ্যে? বায়ুহীন অসীম দ্যুলোকের পরিবেশটাই বা কেমন? এটুকু প্রশ্নের উত্তরই মিলে যাবে ২০১৩ সালের ‘গ্র্যাভিটি’ সিনেমায়।
স্যান্ড্রা বুলক ও জর্জ ক্লুনি- মাত্র দুজন অভিনেতার আন্তরিক অভিনয়ের গুণেই ৯১ মিনিটের ছবিটি এগিয়েছে। কল্পবিজ্ঞান জনরার হলেও পরিচালক কুয়ারন একে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই যাচাই করতে বলেছেন।
সারভাইভালই হোক বা কল্পবিজ্ঞান- এই ছবির প্রাপ্তি আর প্রশংসার ঝুড়ি কিন্তু উপচেই উঠেছিল । অস্কারের ৮৬-তম আসরে সেরা পরিচালক, সেরা সিনেমাটোগ্রাফি, সেরা ভিজুয়াল ইফেক্টস সহ সাত বিভাগে জয় করে নেয় স্বর্ণ মূর্তি। প্রধানত ইমানুয়েল লুবেজকির চোখ ধাঁধানো সিনেমাটোগ্রাফি একে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
Castaway on the Moon (২০০৯)
ছবির নাম শুনে নিশ্চয়ই টম হ্যাংকসের ‘কাস্ট ওয়ে’র কথা মনে পড়ছে! এই নাহলে তুখোড় মুভিখোর! হাই ফাইভ দেয়ার আগে মনে করিয়ে দেই, দুটোকে গুলিয়ে ফেললে কিন্তু আপনারই ক্ষতি।
হ্যাংকসের ‘কাস্টওয়ে’ যদি রবিনসন ক্রুসো ধাঁচের হয় সেক্ষেত্রে জুং জে-ইয়ং এর ‘কাস্টওয়ে’ পুরোই ডার্ক হিউমারে ঠাসা। সিনেমার ১ ঘণ্টা ৫৭ মিনিট আপনাকে একই সাথে হাসাবে, কাঁদাবে, আবার জীবনের নিগূঢ় সত্যও উপলব্ধি করতে শেখাবে।
কাহিনী সংক্ষেপ: ঋণের চাপে অতিষ্ঠ হয়েই যুবক কিম সং-গুন জীবনের কঠিনতম সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলে। আত্মহত্যা করবে সে, চুকিয়ে দেবে দুনিয়ার সাথে যাবতীয় সকল লেনাদেনা।
জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত হলেই যে রণে ভঙ্গ দিতে হবে তা বোধয় ঈশ্বরের নিয়মের বাইরে। হান নদীতে ডুব দিলেও স্রোত ঠিকই কিমকে টেনে নিয়ে যায় বামসম চরে। ঘোর ভাঙলেও কিম বুঝতে পারে ফিরে যাবার উপায় একেবারেই সামান্য, আবার ফিরলেও বিপদ।
‘জলে কুমির ডাঙায় বাঘ’ পরিস্থিতিতেই কিম নিজেকে মানিয়ে নিতে থাকে টুকরো জমিনের দুনিয়ায়। তৈরি করে একান্ত স্বপ্নরাজ্য, জড়িয়ে যায় আপন নৈপুণ্য আর মায়ায় মেশানো এক চিলতে সুখী জীবনে। খাবার, কাপড় নিত্যপ্রয়োজনীয় সব দ্রব্যের অভাব থাকলেও কিম আবিষ্কার করে বেঁচে থাকবার জন্য কাড়িকাড়ি টাকা আসলেই নিষ্প্রয়োজন। অভ্যন্তরীণ সন্তুষ্টিই মানুষের পরম পাওয়া।
ছবির অন্য অংশে দেখা যায়, সাইবার জগতে নিজেকে খুঁজে ফেরা কিম জং-ওনের বাস্তবতা। তার গল্পটা একেবারেই ভিন্ন। অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে সেও। বছরের পর বছর ঘরবন্দি থেকে আত্মানুসন্ধানে ধ্যানী এই তরুণী অদ্ভুত ভাবেই খুঁজে পায় যুবক কিমকে। মিলিয়ে নেয় দুজনের জীবনের অর্থ, একাত্ম্ হয় তার সাথে।
জুং রিও-ওন এবং জুং জে-ইয়ং এই ছবির মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। পরিচালনা আর চিত্রনাট্য দুটোই ছিল লি হা-জুনের মেধার সাক্ষর। ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নির্মিত দক্ষিণ কোরিয়ান এই ছবির বক্স অফিস রেকর্ড ভালো না হলেও পুরস্কারের ঝুলি ছিল ভরপুর। ব্লু ড্রাগন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ফ্যান্টাসিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সহ স্বনামধন্য বেশ কিছু উৎসবে সেরা চিত্রনাট্য ও চলচ্চিত্রের পুরস্কার বগলদাবা করে এটি।
The Tunnel(২০০৯)
‘২০১৮ সাল, ২৩ জুন থেকে ৯ জুলাই – টানা ১৭ দিন উত্তর থাইল্যান্ডের এক গুহায় আটক ছিল ফুটবল দলের ১২ জন কিশোর ফুটবলার এবং তাদের ২৫ বছর বয়সি কোচ৷ তিন দিনের ঝুঁকিপূর্ণ উদ্ধার অভিযান শেষ হয় ১০ জুলাই৷ শেষ হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৩টি প্রাণ বাঁচানোর মানবিক দায়িত্ব৷ ১০ জুলাই অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সবাইকে। সমাপ্তি ঘটে রুদ্ধশ্বাস এক অভিযান।‘
বিশ্বের খবরাখবর যারা নিয়মিত রাখেন তাদের কাছে এই খবরখানা পুরনো হয়নি এখনো। মাত্র দুবছর আগেই গোটা বিশ্বকে সচকিত করে তুলেছিল থাই কিশোরদের অসহায় এই দলটি। ভাগ্য আর সাহসের সম্মিলনে জিত হয়েছিল তাদেরই।
উপরোক্ত ঘটনার বছর দুয়েক আগেই অনেকটা এই ঘটনার আদলেই নির্মিত হয়েছিল এক ছবি, ‘The Tunnel’। বাস্তবে ১৩ জন কিশর-তরুণ ভাগ্য বিড়ম্বনায় পড়লেও চলচ্চিত্রে কিন্তু একলা একজনকেই লড়তে হয়েছিল বিরূপ অবস্থার সাথে।
কাহিনি সংক্ষেপ: একমাত্র মেয়ের জন্মদিন। স্বভাবতই বাবার কাছে কেকের আবদার করেছে পুচকে কন্যা। কাজ চুকিয়ে বাড়ির পথ ধরেছে বাবা লি জুং-সু। মেয়ের আনন্দকে বাড়িয়ে দেবার জন্য সাথে নিয়েছে সরেস ভ্যানিলা কেক।
ঘরে ফেরার তাড়া থাকলেই ঘাড়ে কাজ চেপে বসে- এই অভিজ্ঞতার সাথে কমবেশি সকলেরই চেনা জানা আছে। লির বেলাতেও ঠিক তাই হলো- তবে একটু তফাতে। অর্থাৎ গোটা একটা টানেলই ভেঙে পড়লো লির মাথায় মানে গাড়ির উপর।
দুর্ঘটনার পরেই গোটা কোরিয়ায় নেমে এলো আতঙ্ক। শুধুমাত্র লিই নয়, আরও অনেকেই আটকা পড়ে গেছে সেই টানেলের ধ্বংসস্তূপের তলে। উপর মহলের তাগাদা সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ আমলাতন্ত্রের কবলে পিছিয়ে যেতে থাকলো উদ্ধারকাজ। অপরিণামদর্শী কর্মকর্তা ও ত্রুটিপূর্ণ টানেলের তলে বলি হলো সাধারণ মানুষ।
আর লির ভাগ্যে কী ঘটলো? রড- বালির স্তুপের নিচে কীভাবে বেঁচে থাকলো সে? তার মরণপণ লড়াইটাই বা কেমন ছিল?
‘A Hard Day’ খ্যাত নির্মাতা কিম সেওং-হুন আবারও প্রমাণ করে দিলেন ‘ওয়ান ম্যান স্টোরি’ র উপস্থাপনায় তার আলাদা দ্যুতি আছে। ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা এই ছবিতে অভিনয় করেছেন হা জুং-ও, ওহ দাল-সু, বা দু-না প্রমুখ। ১২৭ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই সারভাইভাল ছবির বলিষ্ঠতম দিক ছিল এর সিনেমাটোগ্রাফি। কিম তাএ-সুন সুনিপুণ ভাবেই লির অকুতোভয় লড়াইকে রিলে তুলে আনতে পেরেছেন, আর তাতেই দর্শকের কাছে এর মানবিক আবেদন উঠে এসেছে স্বচ্ছন্দ্যে।
127 Hours(২০১০)
ড্যানি বয়েল সিনেমার পর্দায় বরাবরই মাটি ও মানুষের গল্প বলতে ভালোবাসেন। ব্যত্যয় ঘটেনি ২০১০ সালের ‘127 Hours’ এর বেলাতেও। অভিযাত্রী অ্যারন রালস্টোনের বাস্তব অভিজ্ঞতা নির্ভর বই ‘Between a Rock and a Hard Piece’ অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ২০১০ সালে। খোদ অ্যারনই এই ছবিকে নিজ অভিযানের প্রমাণ্য চিত্র হিসেবে মনে করেন।
কাহিনী সংক্ষেপ: ২০০৩ সালের ঝকঝকে গ্রীষ্মের দিন। আকাশের খর রৌদ্র, ভূমিতে রোমাঞ্চের সুতীব্র উচ্ছ্বাস শত শত ভ্রমণ পিপাসুর মতো টেনেছিল অ্যারন রালস্টোনকেও। তাইতো হিসেবের ধার এড়িয়েই নিজের মতো বেরিয়ে পড়েছিলেন ইউটাহর দুর্গম গিরিপথে।
দুর্ভেদ্য, নিবিড় পাহাড় আর খাদের মধ্য দিয়ে বেশ ভালোই চলছিল অ্যারনের পথচলা। তবে সেই সময়ও স্থায়ী হলো না বেশিক্ষণ। আচমকাই সুউচ্চ পর্বত থেকে পিছলে নেমে গেলো তার শরীর, আটকে পড়লো এক বিশাল পাথরের খাঁজে। জনশূন্য ব্লু জন ক্যানিয়নে ৫ দিন ধরে চলে অ্যারনের ধৈর্য আর সাহসিকতার যুগল পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় উতরে যাবার জন্য নৃশংস সিদ্ধান্তও নিতে হয় তাঁকে। কী সেই রক্তক্ষয়ী সিদ্ধান্ত?
বাকি গল্পটা রহস্যই থাকুক। দর্শক হিসেবে আপনার দায়িত্ব সেই রহস্যভেদের। মুখ্য চরিত্রে জেমস ফ্র্যানকো ছাড়াও কেট মারা, অ্যাম্বার ট্যাম্বলিন প্রমুখ অভিনয় করেছেন এতে। মাত্র ১৮ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত ছবিটি বিশ্বব্যাপী আয় করে নেয় ৬২ মিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি অস্কারের ছয়টি বিভাগে মনোনয়নও পেয়েছিল সেসময়।
স্রোতের বিপরীতে অদম্য সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার মানুষের স্বতঃসিদ্ধ বৈশিষ্ট্য। নিয়তির হাতে অনায়াসে সমর্পণের বদলে তীক্ষ্ণ নিনাদে অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার মধ্য দিয়েই প্রমাণ হয়, মানুষই সৃষ্টির সেরা।
লেখক- সারাহ তামান্না