‘ইয়ে উসকা স্টাইল হোয়েঙ্গা
হোটো পে না, দিল পে হা হোয়েঙ্গা।‘
লিরিকসটা পরিচিত ঠেকছে? Josh ছবিতে ঐশ্বরিয়ার ঠোঁটে এই গানের অর্থ ছিল বেশ আপত্তিকর। এক নারী হয়েই আরেক নারীর অসম্মতির ভুল ব্যাখ্যাই ছিল এর প্রতিপাদ্য। তখনও বলিউডে নারী কেন্দ্রিক ছবির উত্তাল সমুদ্র জাগেনি। উল্টো গানেই নারীকে হেনস্তার আমন্ত্রণ জানাতেন প্রযোজক, পরিচালকেরা।
All India Progressive Women’s Association এর সেক্রেটারি কবিতা কৃষ্ণান আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘ বলিউডের মতো বড় একটা ইন্ডাস্ট্রি যারা চালাচ্ছেন তাদের অধিকাংশের দৃষ্টিভঙ্গি পিতৃতান্ত্রিক।‘ সহকারী পরিচালক স্বাতি ট্যান্ডন এর কারণ হিসেবে বলেন, ‘ সিনেমা জগতে নারী গল্পকারের সংখ্যা হাতেগোনা। স্বভাবতই পুরুষ লেখকেরা তাদের দৃষ্টিতেই নারীকে মূল্যায়ন করেন।‘ তবে একবিংশ শতাব্দীর অভিনেত্রীরা মোটেই ছাড় দিতে রাজি নন। পুরুষ সহকর্মীর পাশাপাশি নিজেদের দক্ষতা প্রমাণে বদ্ধপরিকর তাঁরা। এ সময়ের বেশ কজন নায়িকাই এর পথিকৃৎ। চলুন জেনে নেই তাঁদের কথা।
কঙ্গনা রানাউত
হিমাচল কন্যা কঙ্গনার পথটা মোটেও মসৃণ ছিলনা। বাড়িতে মেডিকেলে পড়বার জন্য তাগাদা থাকলেও তিনি নিজের হৃদয়ের কথাই শুনেছেন। মডেলিং করে হাতখরচা জুগিয়েছেন নিজের। বলিউডে শীর্ষ অভিনেত্রী হবার পরেও অবশ্য সেই সংগ্রামে ক্ষান্ত দেন নি।
কঙ্গনার অভিষেকের পেছনে বড় অবদান ছিল পরিচালক অনুরাগ বসুর। ‘গ্যাংস্টার’ ছবির জন্য তখন নতুন মুখ খুঁজছিলেন অনুরাগ। তবে মহেশ ভাটের মনে হয়েছিল ‘সিমরান’ চরিত্রের জন্য মেয়েটি নিতান্তই বাচ্চা। শুটিং আরম্ভের কদিন আগে থেকেই লাপাত্তা নির্বাচিত চিত্রাঙ্গদা, তাই অনুরাগের পছন্দই মেনে নেন ভাটরা।
২০০৬ সালের অভিষেকেই ফিল্মফেয়ারের শ্রেষ্ঠ নবাগতার পুরস্কার বাগিয়ে নেন কঙ্গনা। প্রথম পদক্ষেপে নিজেকে প্রমাণ করলেও প্রযোজক- পরিচালকদের পাত্তা পাননি। ‘ওহ লামহে’ (২০০৬) তে পারভিন ববির চরিত্রে সাহসী অভিনয় দিয়ে সমালোচকদের দৃষ্টি কাড়তে সমর্থ হন আবারও। তবে মূল পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন মধুর ভান্ডারকারের ‘ফ্যাশন’ এর সোনালি গুজরাল চরিত্রের খাতিরে। ২০০৮ সালে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কারও জেতেন । তবে ক্যারিয়ারের গ্রাফটা ওঠা শুরু করে ২০১১ সালের আনন্দ এল রাইয়ের ‘তানু ওয়েডস মানু’র হাত ধরে। সে বছরের সারপ্রাইজ হিট ছিল ছবিটি। এরপর ‘গেম’, ‘ডাবল ধামাল’, ‘রাসকেলস’ এর মতো ব্যর্থ ছবিতে কাজ করে আড়ালেই চলে যান। কিন্তু আগের সব রেকর্ড ভেঙে আবার ফেরত আসেন ২০১৪ সালে, বিকাশ ভেলের ‘কুইন’ দিয়ে। জাতীয় পুরস্কার বগলদাবার পাশাপাশি বলিউডের ‘রানি’ও বনে যান কঙ্গনা।
এছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে ‘রাজ ২’ (২০০৯), ‘তানু ওয়েডস মানু রিটার্নস’(২০১৫), কৃষ ৩’ (২০১৩), ‘শুটআউট এট ওয়াডালা’ (২০১৩), ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বাই’ (২০১০) ইত্যাদি। ব্যবসা যেমনই করুক কঙ্গনার অভিনয় দক্ষতা নিয়ে কখনোই প্রশ্ন ওঠে নি। উল্টো বলিউডের নানান অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সরব থেকেছেন এই নায়িকা। ২০১৯ সালে তাঁর দুইটি মাত্র ছবি মুক্তি পেয়েছে , যার মধ্যে ‘মণিকর্ণিকা: কুইন অফ ঝাঁসি’ তে অভিনয়ের পাশপাশি ক্যামেরার পেছনেও কাজ করেছেন এই গুণী। বর্তমানে বলিউডে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীও তিনি। কঙ্গনার সাথে কাজ করতে হলে পরিচালককে গুনতে হবে ৩.৪ মিলিয়ন ডলার!
দীপিকা পাড়ুকোন
প্রথম ছবিতেই কিং খানের বিপরীতে কাজের সুযোগ পেয়ে একেবারে ভেসে যাননি দীপিকা পাড়ুকোন সিং। ২০০৭ সালে ফারাহ খানের ‘ওম শান্তি ওমে’র আনকোরা শান্তিপ্রিয়া এখন বলিউডের সবচেয়ে লাস্যময়ী ও আরাধ্য অভিনেত্রী। বছর বারোর ক্যারিয়ারে ঝুলি ভরে পুরস্কারের সাথে সম্মানও অর্জন করেছেন প্রচুর। নায়িকাদের আয় বাড়াবার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
‘ওম শান্তি ওম’ এর পর বেশ কিছু কাজ করলেও সুঅভিনেত্রীর তকমাটা সহজে জোটেনি। ইন্ডাস্ট্রির বাঘা বাঘা সব নায়কের বিপরীতে কাজ করলেও টেনিস খেলোয়াড় প্রকাশ পাড়ুকোনের কন্যার নিজস্ব পরিচয়ের তাগাদা ছিল বেশ। ২০০৯ সালে সাইফ আলি খানের বিপরীতে ইমতিয়াজ আলির ‘লাভ আজ কালে’ তাই নিজের জাত চেনালেন। ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ককটেলে’ও সাইফ আর ডায়নাকে ম্লান করে সগৌরবে জানিয়ে দিলেন ‘বলিউডটা তার’ই। এরপরে আর পেছনে তাকাতে হয় তাঁকে। ২০১৩ সালে ‘রেস ২’, ‘ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’, ‘বোম্বে টকিজ’, ‘গোলিও কি রাসলীলা: রামলীলা’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ প্রত্যেকটাই ছিল ব্যবসাসফল। পরের বছরেও সেই সাফল্য ধরে রাখেন তিনি। আর ২০১৫ সালে ‘পিকু’, ‘তামাশা’, ‘বাজিরাও মাস্তানি’ দিয়ে তো সর্বমহলের প্রিয় পাত্রীতে পরিণত হন। হলিউডেও নাম লিখিয়েছেন এই দক্ষিণী সুন্দরী। ‘ট্রিপল এক্স: রিটার্ন অফ জ্যান্ডার কেজ’ এ ছোট চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে।
তবে বলিউডে দীপিকার নিজেকে প্রমাণে সবচেয়ে বেশি সহায়ক ছিল সঞ্জয় লীলা বানসালির ছবিগুলো। ২০১৮ সালে ‘পদ্মাবতে’ অনবদ্য অভিনয় করে আলোচিতও ছিলেন। বর্তমানে তাঁর পারিশ্রমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর হবেই বা না কেন? মেঘনা গুলজার, কবির খানের মতো রাঘব বোয়াল পরিচালকদের সাথে যে কাজ করছেন এখন।
বিদ্যা বালান
বিদ্যার কাছে অভিনেত্রী হওয়াটা এক চলমান সাধনার মতো। একেক চরিত্রে নিজেকে ফুটিয়ে তোলার পরপরই তাই মনে হয়, ‘অসাধারণ! আরেকজনের জীবনে বেঁচে ওঠার চেয়ে চমৎকার আর কি হতে পারে?’ সেকারণেই ‘ডার্টি পিকচারে’র সিল্ক স্মিতা, ‘পরিণীতা’র মিষ্টি ললিতা বা ‘কাহানি’র রহস্যময়ি বিদ্যা বাগচী-প্রতিটি চরিত্রেই নিজের সর্বস্বটা ঢেলে দেন তিনি।
বিদ্যার শুরুটা অবশ্য আজকের দিনে নয়। ১৯৯৫ সালে ‘হাম পাঁচ’ নামক এক সিরিয়ালে প্রথম নাম লেখান তিনি। তবে সোনালি জগতে আসেন আরও পরে। ২০০৩ সালে ‘ ভালো থেকো’ নামের এক বাংলা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় তাঁর। তবে বলিউডের প্রথম ছবি দিয়েই নজর কাড়েন তিনি। দীর্ঘ ছয় মাস অডিশনের পর বিগ বাজেটের ‘পরিণীতা’য় সুযোগ পান কেন্দ্রীয় চরিত্রে। ব্যস! সেবছরই ফিল্মফেয়ারে শ্রেষ্ঠ নবাগতা নির্বাচিত হন বিদ্যা। এরপর থেকেই পরিচালকদের লাইন লেগে যায় ঘরের সামনে। রাজকুমার হিরানির ‘ লাগে রাহো মুন্না ভাই’ (২০০৬), মনিরত্নমের ‘গুরু’ (২০০৭), আর বাল্কির ‘পা’ (২০০৯), অভিষেক চৌবের ‘ইশকিয়া’ (২০১০), ‘ভুল ভুলাইয়া’ দিয়ে বারবার প্রমাণ করেন নিজেকে।
তবে ২০১১ সালটা ছিল শুধুই বিদ্যার। ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’ আর ‘দ্য ডার্টি পিকচারে’র বদৌলতে ফিল্মফেয়ার ও জাতীয় পুরস্কার দুটোই জোটে তাঁর। পরের বছর সুজয় ঘোষের ‘কাহানি’ দিয়ে ফের তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। কিন্তু এরপর থেকেই ক্যারিয়ার নিম্নমুখী হতে থাকে বলিউডের ‘নারী খান’ তকমা পাওয়া বিদ্যার। ‘ঘনচক্কর’, ‘শাদি কি সাইড ইফেক্টস’, ‘তিন’, ‘ববি জাসুস’, ‘হামারি আধুরি কাহানি’, ‘কাহানি ২’ – ভালো গল্প থাকা সত্ত্বেও আশানুরূপ ব্যবসা করেনি। অন্যদিকে বিদ্যার মুটিয়ে যাওয়া নিয়েও মিডিয়া ছিল সরব। ২০১৭ সালে আবার ক্রিজে আসেন বিদ্যা। ‘বেগম জান’, ‘তুমহারি সুলু’ দিয়ে জানান দেন, শরীর নয় মেধাই তাঁর অস্ত্র। ছবি প্রতি ১০ কোটি রূপি আদায় করেন বিদ্যা।
প্রিয়াংকা চোপড়া
প্রিয়াংকা চোপড়া- নিক জোনাসের বিয়ে ছিল গত বছরের সবচাইতে আলোচিত ঘটনা। তবে ব্যক্তিজীবনের চাইতে কর্মজীবনকে নিয়েই মেতে থাকতে ভালোবাসেন পিগি চপস। ২০০০ সালে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ খেতাব জয়ের পরপরই বলিউডে ব্যস্ত হন প্রিয়াংকা। ২০০৩ সালে সানি দেওল- প্রীতি জিনতার সাথে ‘হিরো’ চলচ্চিত্রে স্ক্রিন ভাগাভাগির মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় তাঁর। সেবছরই ‘আন্দাজ’ ছবির জন্য ফিল্মফেয়ারের শ্রেষ্ঠ নবাগতা হন প্রিয়াংকা। পরবর্তীতে ‘অ্যাইতরাজ’ (২০০৪) এর মাধ্যমে নিজের ভিন্ন রূপটাও দেখান এই আন্তর্জাতিক সুন্দরী। ‘গুপ্তে’ কাজলের পর একমাত্র নারী হিসেবে তিনিই ফিল্মফেয়ারে শ্রেষ্ঠ নেতিবাচক চরিত্রের পুরস্কারটা পান। এরপর ‘ব্লাফমাস্টার’ (২০০৫), ‘ওয়াক্ত’ (২০০৫), ‘মুঝসে শাদি কারোগি’ ( ২০০৪) এর মতো সফল ছবিতে কাজ করলেও তাঁর চরিত্রের গুরুত্ব ছিল নিতান্তই কম।
২০০৮ সালে মধুর ভাণ্ডারকার চেনালেন নতুন প্রিয়াংকাকে। ‘ফ্যাশন’ ছবিতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও বিপর্যস্ত সুপার মডেল মেঘনা মাথুরের চরিত্রটি তাঁকে এনে দিলো জাতীয় পুরস্কারসহ অজস্র সম্মাননা। এরপরের বছরগুলোয় অবশ্য খুব ভালো কোন চিত্রনাট্যে কাজ করেন নি তিনি। তবে ‘দোস্তানা’ (২০০৮) ও বিশাল ভরদ্বাজের ‘কামিনে’ (২০১০), ‘সাত খুন মাফ’ (২০১১) আবার তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এর মধ্যেই ‘বারফি’র (২০১২) ঝিলমিল , ‘ডন’ ( ২০০৬, ২০১১) এর রোমা, ‘কৃষ’ (২০০৬, ২০১৩) এর প্রিয়া হিসেবে নজর কাড়তে সমর্থ হন। ২০১৪ সাল থেকে হলিউড ও গানের জগতে ব্যস্ত হতে থাকেন তিনি। জীবনিভিত্তিক ‘মেরি কম’ (২০১৪) ও জোয়া আক্তারের ‘দিল ধাড়াকনে দো’ (২০১৫) এর পর বলিউডে খুব কম কাজ করেছেন তিনি।
হলিউডের বেশ কটি ছবিতে দেখা গেছে তাঁকে। ‘বেওয়াচ’ (২০১৭), ‘আ কিড লাইক জেক’ (২০১৮), ‘ইসন্ট ইট রোমান্টিক’ (২০১৯) এ নিজের সেরাটাই দিয়েছেন। তবে সীমানার বাইরে তাঁর পরিচিতি বেড়েছে মার্কিন টিভি সিরিজ ‘কোয়ান্টিকো’ (২০১৫-১৮) এর বদৌলতে। বর্তমানে ছবি প্রতি ২.৫ মিলিয়ন ডলার নিচ্ছেন তিনি।
টাবু তাবাসসুম
‘উপমহাদেশীয় নায়িকা মানেই ত্রিশের পর ফুরিয়ে যাওয়া’- এই ধারণাটা উল্টে দিয়েছেন লাস্যময়ী টাবু। কিংবদন্তী দেব আনন্দের Hum Nawjawan দিয়ে টাবুর অভিষেক ঘটে ১৯৮৫ সালে। বেশ লম্বা বিরতি দিয়ে Mashooq দিয়ে ফেরেন ১৯৯২ সালে। Vijapaath এ অজয় দেবগণের বিপরীতে কাজ করে সফলতাও পান। কিন্তু সব হিসেব পাল্টে ফেলেন ১৯৯৬ সালের Maachis ছবির মাধ্যমে। গুলজারের রাজনৈতিক থ্রিলারের জন্য প্রথমবার জাতীয় পুরস্কার পান তিনি। এরপর থেকেই বেছে কাজ করতে থাকেন তিনি। মনিরত্নমের Iruvar, জে পি দত্তের Border, কমল হাসানের Chachi 420, সুরাজ বারজাতিয়ার Hum Saath Saath Hain, Astiva দিয়ে ক্রমেই সুঅভিনেত্রির খেতাব জিততে থাকেন। ২০০১ সালে Chadnibar এ অসহায় বার ড্যান্সারের চরিত্রে কাজ করে ফের জাতীয় পুরস্কার হাতে তুলে নেন টাবু।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কাজ করেছেন প্রচুর। মীরা নায়ারের The Namesake, অ্যাং লির Life of Pie এর মধ্যে উল্লেখ্য। ভিন্ন মাত্রার কাজে বরাবরই আগ্রহী পদ্মশ্রী খেতাব পাওয়া এই অভিনেত্রী। ২০০৭ সালের চিনি কম, ২০১৪ হায়দার, ২০১৫ এর দৃশ্যম আর ২০১৮ এর আন্ধাধুনই এর প্রমাণ।
রাধিকা আপ্তে
রাধিকার মতো বৈচিত্র্য নির্ভর প্রোফাইল কালেভদ্রেই মেলে। বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, মালায়লাম, তামিল,মারাঠি, তেলেগু- এই সাত ভাষার ছবিতে কাজ করেছেন চৌদ্দ বছরের ফিল্মি ক্যারিয়ারে। ২০০৫ সালে শহীদ কাপুর-সঞ্জয় দত্তের ‘বাহ! লাইফ হো তো অ্যাসি’ তে অভিষেক হলেও নজরে পড়েননি। কত্থক জানা এই তরুণীর প্রথম বড় ব্রেক মেলে রাহুল বোসের বিপরীতে বাংলা আর্ট ফিল্ম ‘অন্তহীনে’। ‘যাও পাখি বলো, হাওয়া ছলো ছলো’র সেই মিষ্টি সাংবাদিকটাই কিন্তু রাধিকা।
এরপরের কয়েক বছর একনাগাড়ে শ্রম দিয়ে যান। Shor in the city, I Am, Rakht Charitra 1 এবং Rakht Charitra 2 দেখা যায় তাঁকে। মারাঠি, তামিল ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যস্ত সময় কাটালেও ২০১৫ তেই বলিউড ভাগ্যের শিকে ছেঁড়ে। একই বছরের তিন আলোচিত ছবি Badlapur, Manjhi: The Mountain Man ও Hunterr দিয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করেন। এছাড়াও রাধিকার উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে আছে Parched (২০১৬), Phobia (২০১৬), Kabali (২০১৬), Padman (২০১৮), Andhadhun (২০১৮), The Wedding Guest (২০১৯)। নেটফ্লিক্সের চলচ্চিত্র Lust Stories (2018), সিরিজ Sacred Games (২০১৮) ও Ghoul (২০১৮) দিয়ে মেধার সাক্ষর রাখেন।
আলিয়া ভাট
ভাটকন্যার আগমনটা পরিবারের সহায়তায় হলেও নিজেকে সেই পরিচয়ে আটকে রাখেন নি। করণ জোহরের Student of the Year (২০১২) এ একরকম শোপিসই ছিলেন আলিয়া। কিন্তু এক বছর বাদেই ইমতিয়াজ আলির Highway তে বুঝিয়ে দিলেন গ্ল্যামারহীন চরিত্রেও সমান স্বচ্ছন্দ তিনি।
নতুন প্রজন্মের নায়িকাদের মধ্যে আলিয়ারই গড় সাফল্য বেশি। ২০১৪ সালের 2 States, Humpty Sharma ki Dulhania, ২০১৬ সালের Kapoor and Sons, Udta Punjab, Dear Zindagi – সব ছবিতেই তাঁর অভিনয় প্রভাবিত করেছে দর্শক- সমালোচককে। বিশেষত Udta Punjab এর লড়াকু বাউরিয়া চরিত্রে আলিয়ার বিকল্প তো একেবারেই নেই। ২০১৮ সালের অন্যতম নন্দিত ছবি Raazi এর কল্যাণে ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রীও নির্বাচিত হয়েছেন এই নায়িকা। এ বছরেও সেই জয়রথ অব্যাহত রণবীর সিংয়ের বিপরীতে Gully Boy ও Kalank এর মাধ্যমে। ছবি প্রতি ২ মিলিয়ন ডলার গোনেন মিষ্টি আলিয়া।
তাপসী পান্নু
সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া মেয়েটি আচমকাই হয়ে গেলেন বলিউডের বাসিন্দা। ভাবছেন হিন্দি ছবিরই কোন প্লটের কথা বলছি? না, এটাই তাপসীর আসল গল্প। দিল্লীর গুরু তেগ বাহাদুর ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির ছাত্রী তাপসী বেশ কিছুদিন চাকরিও করেছেন। ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া সহ বেশ কিছু প্রতিযোগিতায় যোগ দেবার সুবাদে মডেলিং জগতে প্রবেশ করেন। ২০১০ সালে প্রথম তেলেগু মুভি Jhumaandi Naadam এ কাজ করেন তিনি। তবে দৃষ্টি কাড়েন ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তামিল ছবি Aadukalam দিয়ে। ধানুশের বিপরীতে এংলো ইন্ডিয়ান তরুণী হিসেবে সমালোচকদের বিপুল প্রশংসা অর্জন করেন। বলিউডে প্রবেশের পূর্বেই মামুত্তি, প্রভাস, রবি তেজার মতো তারকাদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা যুক্ত হয়ে ঝুলিতে।
Chaashme Badoor দিয়ে বলিউড যাত্রা শুরু হয় ২০১৪ সালে। পরের বছরেই নিরাজ পান্ডের থ্রিলার Baby তে অক্ষয় কুমারের সাথে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেন। তবে তাপসীর সেরা পারফরম্যান্স হিসেবে Pink (২০১৬) কেই মানা হয়। এই ছবি শুধু ব্যবসায়িক ভাবে সফলই ছিল না, গোটা সমাজকে নারীর প্রতি হিংসাত্মক মনোভাবের বিরুদ্ধে কড়া জবাবও ছিল। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৭ এর Naam Shabana, Judwaa 2, ২০১৮ সালে Mulk, Soorma, Manmarziyan, এ বছরের Badla, Saandh Ki Aankh, Mission Mangal প্রতিটিতেই ছিল তাপসীর সফল পদচারণ। অল্প সময়েই ফিল্মফেয়ার, আইফা, জি সিনে এ্যাওয়ার্ড সহ বলিউডের নামীদামী পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ত্রিশ পেরুনো এই নায়িকা।
বলিউডেও ‘মি টু’ আন্দোলনের ধাক্কা লেগেছিল গত বছরেই। তবে বলিউডে নারীর প্রতি ধ্যান ধারণা, অবমূল্যায়ন কিংবা কাস্টিং কাউচের অপবাদ নতুন কিছু নয়। এতসবের ভিড়েও কিন্তু দিনবদলের সুবাস প্রগাঢ়। ছিপছিপে, ফর্সা, তীক্ষ্ণ নাক আর কড়া মেকআপের জালে নিজেদের আটকে না রেখে অভিনেত্রী হওয়াতেই মনযোগী নায়িকারা। ভালো গল্পের চাহিদা আর অভিনেত্রীদের আগ্রহের কারণেই বলিউডে এখন নারী প্রধান ছবির জয় জয়কার।