বিশেষ প্রতিনিধি
নিউইয়র্কে পানের দাম পৌছেছে ২৫ ডলার প্রতি পাউন্ড। বাঙালী পেট ভরে খেতে পারুক না পারুক, একটি গল্প আড্ডার ছলে, পান খেয়ে মুখ লাল করার যে রেওয়াজ নিয়ে এসেছেন এই দুর প্রবাসে, সেই নেশা মেটাতে গাম ঝরাতে হচ্ছে তাদের। কেননা, পান পাতার দাম বাড়ছে হু হু করে। শুধু দাম দিলেই অবস্য মিলছে না কাড়ি কাড়ি পান পাতা।জ্যাকসান হাইটস এর মান্নান গ্রোসারীর একজন ম্যানেজার জসিমউদ্দীন আতিক জানিয়েছেন, এখন তারা ২/৩ ডলারের বেশি কাউকেই পান দিতে পারছেন না। কেননা, বাজারে পানের সরবারহের ঘাটতি তৈরী হয়েছে। আর তাতেই, পানপ্রিয় বাংলাদেশী প্রবাসীদের ঘুম হারাম হওয়ার অবস্থা।
নাসিমা সুলতানা তার মায়ের জন্য এবং নিজের পরিবারের ৩ জন পান খান, ক্রয় করেন নিউইয়র্ক থেকে। ২২ জানুয়ারী এস্টোরিয়ার বনফুল গ্রোসারী থেকে এক পাউন্ড পান ক্রয় করেন, ২৫ ডলার দিয়ে। ব্রডওয়ের হায়দারী পান এন্ড কো এর একজন পাকিস্থানী বিক্রেতা জানিয়েছেন, এক পাউন্ড (প্রতি পাউন্ডে ১০০ করে পান) আর দশ পাউন্ড, যাই কিনুন না কেন, এখন এটা ২৫ ডলারের বেশি। জ্যাকসান হাইটস এর শাহী পান বিক্রেতা বাংলাদেশী মোহাম্মদ খান অবস্য শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, গত বছরের মত হয় কিনা। গত বছর একবার ৪০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল পানের দাম। তবে তার গত ৫ বছরের পান বেচা কেনার অভিজ্ঞতায় শীতে ৫০/৬০ ডলার পর্যন্ত পানের পাউন্ড কিনেছেন তিনি পাইকারী দোকান থেকে।
ওজোন পার্ক এর মান্নান গ্রোসারীতে ৭ দিনের দোকানীর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন নতুন প্রবাসী জানিয়েছেন, তার দেখামতে ঐ সময়টাতে সবচে বেশি ক্রেতা ছিল পানের জন্য। অন্য অনেক বাজার করার পর, পান না কিনলেই যেন নয় বাংলাদেশীদের।
এক হিসেবে দেখা গেছে, প্রতিদিন ৫ শ’ বাক্স পান লাগে নিউ ইয়র্ক শহরে। এক বাক্সের ওজন ১৫ পাউন্ড করে। গ্রীষ্মে প্রতি পাউন্ড পান বিক্রি হয় ১০ ডলার এর আশে পাশে। একটু শীত বেশি পড়লে, বেড়ে যায় দাম। শীতের শুরুতে দাম ছিল ১২/১৪ ডলার। এখন সেটা বেড়ে দাড়িয়েছে ২৫ ডলারে। আবার বরফ বেশি পড়া শুরু হলে দাম ওঠে ৩০ ডলারে।
কোথা থেকে আসে নিউইয়র্কের এই পান সেই প্রশ্ন অনেকের-ই। বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এগুলি বেশিরভাগ আসে প্রসাশন্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ হাওয়াই থেকে। সেখানে আবার এগুলির বানিজ্যিক চাষাবাদ করেন চাইনিজ বংশোদ্ভুতরা। কেননা, ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, পানের উৎপত্তি চীন থেকেই। কিন্তু এটির ব্যবহারে চীনাদের পেছনে ফেলে এখন ভারতীয়র উপমহাদেশের লক্ষ কোটি মানুষ। পাকিস্থান, ভারত আর বাংলাদেশ এই তিন দেশের মানুষ সমান তালে পান খান, প্রতিদিন। তবে, নিউইয়র্কে পান বাজারের সবচে বড় ক্রেতা নাকি বাংলাদেশী প্রবাসীরাই। যদিও এই তথ্যের সত্যতা বা শুমারী করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায় না।
সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে এদেশে কৃষিজাত পণ্য আনার ব্যাপারে কিছু বিধিনিষেধ আছে। সে কারনে মহেশখালির পানের বিপুল চাহিদা থাকা সত্বেও বাংলাদেশ থেকে পান আমদানী করার উদ্যোগ নেননা কেউ।
এই পান নিয়ে কথকতা’র শেষ নেই।পান খেয়ে নাকি বাঙালী রাস্তায় পিক ফেলে নোংরা করেন, এমন একটি প্রতিবেদন নিউইয়র্ক টাইমস এ প্রকাশিত হয় ২০১২ সালে। নিকোলাস হার্সনের লেখা ‘অন জ্যাকসন হাইটস সাইডউয়াকস, এ ট্রিট’স মেসি আফ্টারম্যাথ’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়। তাতে পানের পিক ফেলে রাস্তা নোংরা করার অপবাদ পড়ে বাংলাদেশী ভারতীয় আর পাকিস্থানীদের উপর। এখন অবস্য সচারাচর পানের পিক দেখা যায় না, তবে পান খাওয়া কমেনি মানুষের। পান পাতায় আগুন লাগার কারণে হয়তো বেচা বিক্রি কিছুটা কমেছে।