হাতছানি দিচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু1 min read
Reading Time: 2 minutesবাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের সাথে উত্তর-পূর্বাংশের অর্থাৎ লৌহজং ও মুন্সিগঞ্জের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরকে যুক্ত করার লক্ষ্যেই শুরু হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ। মূলত শিল্পায়ন এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে ঢাকার সরাসরি সড়কপথ যংযুক্ত করাই এর মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। পদ্মার মতো খরস্রোতা নদীর উপর এতো বড় একটি সেতু নির্মানে তাই শুরু থেকেই অনেক ঝাক্কিঝামেলা পোহাতে হয়েছে। বিদেশী অর্থায়নে পদ্মাসেতু প্রকল্প শুরু হলেও দূর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য দাতা সংস্থা ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। উপরন্তু মামলাও হয়। কিন্তু সেই মামলা কানাডিয়ান আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং বাতিল হয়ে যায়।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়। প্রাথমিক প্রকল্প অনুযায়ী পদ্মাসেতুর কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিলো ২০১১ সালের শুরুর দিকে। কিন্তু নানান জটিলতার মুখে পড়ে ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিঃ। কংক্রিট এবং স্টিলের তৈরি পদ্মাসেতুর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৬.১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার।
বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর মূল প্রকল্পটি পাস হয়েছিলো ২০০৭ সালে সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। প্রাথমিক প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিলো ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। তবে ঐ প্রকল্পে কোনো রেলপথ ছিলো না। ২০১১ সালে জানুয়ারিতে প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে আওয়ামীলীগ সরকার। সেইসাথে সংযুক্ত করা হয় রেলপথ এবং পরবর্তীতে ২০১৪ সালে চায়নার একটি কোম্পানির সাথে ৩০ হাজার ৭৩৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকার চুক্তিতে আবদ্ধ হয় বাংলাদেশ।
সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এখন অব্দি পদ্মাসেতুর ৮১% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মোট ২৬২ টি পাইলের মধ্যে ২৫৬ টি পাইল এবং ৪২ পিয়ার কলামের মধ্যে ২৯ টি কলামের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। উল্লেখ্য যে, গত ৩০ জুন পদ্মাসেতুর ১৪ তম স্প্যান বসানো হয়েছে এবং সেতুটির ২.১ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ২০২১ সালেই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে স্বপ্নের পদ্মাসেতু।
পদ্মাসেতু প্রকল্পের আওতায় সেতুর কাজের জন্য নদীভাঙন ঠেকাতে পদ্মার উভয় পাড়ে মোট ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫৭ টি গাছ লাগানো হয়েছে। এছাড়াও পুনর্বাসন এলাকায় পদ্মাসেতু প্রকল্পের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে ২ হাজার ৬৯০টি প্লট হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক তাদের এক সমীক্ষায় বলেছিলো, দেশের মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩.৫ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে পদ্মাসেতুর মাধ্যমে উপকৃত হবে। পদ্মাসেতু দক্ষিণ-পশিচমাঞ্চলের সাথে ঢাকার দূরত্ব গড়ে ১০০ কিলোমিটার কমিয়ে আনবে। এছাড়াও ঐ অঞ্চল পদ্মাসেতুর কল্যাণে বাণিজ্যিকভাবে সম্ররুদ্ধ হবে, দারিদ্র বিমোচন হবে এবং সার্বিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি ত্বরাণ্বিত হবে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, পদ্মাসেতু নির্মাণের ফলে দেশে আঞ্চলিক ও জাতীয় অর্থনীতিতে লক্ষণীয় অগ্রগতি দেখা যাবে। এই সেতু চালু হলে মানুষ ও পণ্য পরিবহনের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে, যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানী ও আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে।
এডিবি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সেতুর মাধ্যমে শিল্পায়ন ও বানিজ্যিক কর্মকাণ্ড প্রসারের লক্ষ্যে পুঁজির প্রবাহ বাড়বে, পাশাপাশি স্থানীয় জনগনের জন্য অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর সেতুর নির্মান চলাকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থান হবে। এডিবি’র মতে, এই সেতুর ফলে দেশের জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ এবং আঞ্চলিক জিডিপি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।