যখন খুনি বা সিরিয়াল কিলারের কথা আসে তখন আগে থেকেই ধরে নেওয়া হয় নিশ্চয়ই কোন পুরুষের নাম আসবে। কিন্ত ইতিহাস বারবারই আমাদের চেনা প্রেক্ষাপটকে বদলে দিয়ে নিজেই সৃষ্টি করে তাজ্জব বনে যাওয়ার মতো নতুন কিছু ইতিহাস। এমন অনেক নারী ক্রমিক খুনি রয়েছে যারা হয়তো অপরিচিত কিন্তু তাদের নৃসংশতা আমাদের কল্পনার চেয়েও ভয়াবহ। তাদের কেউ হত্যা করতো ভালোবাসার জন্য কেউবা অর্থের জন্য। আবার কেউবা ছিলো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
আজ আপনাদের জানাবো ইতিহাসের ভয়ানক ১০ জন ক্রমিক খুনি সম্পর্কে।
লেডি এলিজাবেথ বাথরি
“Bathing in the blood of virgins” এই বাগধারাটি কি শুনেছেন? এই বাগধাটি এলিজাবেথ নামক এই সাইকো কিলারের উদ্দেশ্যে প্রণিত হয়েছিলো। ধারণা করা হয় যে, ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত এই মহিলা প্রায় ৬৫০ জন গৃহ পরিচারিকা ও স্থানীয় যুবতী মেয়েদের হত্যা করেছিলো। তার ঘরে একটি ” টর্চার সেল ” ছিলো যেটি তার স্বামী তাকে তৈরী করে দিয়েছিল।
বেল্লে গুন্নেস
বেল্লে ছিলো নরওয়ে থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আগত এক অভিবাসী যে কিনা বীমা পরিশোধের জন্য তার একাধিক স্বামীকে হত্যা করেছিলো। বেল্লের একটি খামার বাড়ি ছিল। বেল্লে তার সেই খামারে বিনিয়োগের জন্য শহরের ধনী ব্যক্তিদের বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করতো। এই মহিলার কুকীর্তি ফাঁস হওয়ার পর ১৯০৮ সালে তার খামারটি পুড়ে দেওয়া হয়েছিলো। পোড়ানোর পর তার খামারের মাটির নিচ থেকে ৪০ টি মৃতদেহ পাওয়া যায়।
ডগমার ওভারবাই
১৯২০ এর শেষের দিকে ওভারবাই একটি অনাথ আশ্রম পরিচালনার ভার নিয়েছিলো। কোন সমস্যায় ভুগছে এমন মায়েদের কাছ থেকে সে এককালীন ফি’র বিনিময়ে খুব যত্নে লালন করার প্রতিশ্রুতিতে তাদের নবজাতকদের তার আশ্রমে নিয়ে আসতো। কিন্তু এই নিষ্ঠুর মহিলা নবজাতকদের হত্যা করে চুলায় তাদের শরীর পোড়াতো। ডগমার ৬০ থেকে ৮০ জন শিশুকে হত্যার কথা স্বীকার হলেও অনুমান করা হয় যে তার হত্যার সংখ্যা প্রায় ১৮০।
মেরি অ্যান কটন
মেরি অ্যান কটন ছিলো ভিক্টোরিয়ান ইংল্যান্ডের সিরিয়াল কিলার। তার বিরুদ্ধে ২১ জনকে আর্সেনিক প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগ থাকলেও মূলত সৎপুত্রকে হত্যা করার জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় ও ১৮৭৩ সালে তার ফাঁসি হয়।
অ্যামেলিয়া ডায়ার
ডায়ার বেবি ফার্মার নামে পরিচিত ছিলো। ভিক্টোরিয়ান ইংল্যান্ডে তার বিরুদ্ধে ২০০ শিশু হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ওভারবাইয়ের মতো সেও সমস্যাগ্রস্ত মায়েদের কাছ থেকে বাচ্চা দত্তক নিত ও পরে তাদের হত্যা করতো৷
ইলস কোচ
ইলস ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে নাৎসি পার্টিতে যোগ দিয়েছিলো এবং সে তার স্বামী কার্ল অট্টো কোচের সাথে বন্দী শিবির তদারককারী হিসেবে কাজ করতো। ইলস বন্দী শিবিরের বন্দীদের চামড়া থেকে বাড়ির জিনিসপত্র তৈরি করতে পছন্দ করতো। তার হিংস্রতার জন্য সে ক্যাম্পে “বুচেনওয়াল্ডের বিচ” খ্যাতি অর্জন করেছিলো। ১৯৬৭ সালে কোন এক অজানা কারণে ইলস আত্মহত্যা করে।
ডেলফিনা এবং মারিয়া ডি জেসুস গঞ্জেলস
এই মহিলারা ১৯৫০ এবং ৬০ এর দশকে সেন্ট্রাল মেক্সিকোতে বেশ্যাবৃত্তির জন্য মেয়েদের অপহরণ করতো। তারা পতিতাপল্লীর “আংটি” নামে পরিচিত ছিলো। বেশ্যাবৃত্তির জন্য ধরে আনা মেয়েদের শরীর আকর্ষনীয় করার জন্য তারা তাদের জোর করে বিভিন্ন ড্রাগস খাওয়াতো। ড্রাগসের পতিক্রিয়ায় যখন কোন মেয়ে অসুস্থ বা কুশ্রী হয়ে উঠত, তখন এই দুবোন তাদের হত্যা করতো। এরা অনেক কাস্টমার ও শিশু হত্যার সাথেও জড়িত ছিলো। ডেলফিনা তার অপরাধের জন্য কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা গিয়েছিলো এবং জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মারিয়াকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি।
ভেরা রেন্টজি
রোমানিয়ার ভেরা তার প্রেমিকদের হত্যা করতো। তার প্রেমিকের সংখ্যা ছিলো ৩৫। এই হিংস্র মহিলার কেবলই মনে হতো তার প্রেমিকরা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। সে সাধারণত “সকালে” কাজে যাওয়ার আগে তাদের “আর্সেনিক” প্রয়োগে হত্যা করতো। তাকে ৩৫ টি হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিলো এবং যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিলো। কারাগারে থাকা অবস্থায় সে মারা যায়।
জেনি আনে জোন্স
জোন্স টেক্সাসের একজন নার্স। সে তার তত্ত্বাবধানে থাকা বাচ্চাদের অযাচিত ঔষুধ মিশিয়ে ইনজেকশন দিতো যাতে যখন বাচ্চাদের বাঁচাতে হবে তখন সে যেন তার নার্সিং দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ পায়। সে দুটো শিশু হত্যার জন্য অভিযুক্ত হলেও ধারণা করা হয় যে সে কমপক্ষে ৬০ টি শিশুকে হত্যা করেছে।জোনসকে ১৯৮৫ সালে ৯৯ বছরের জন্য কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।
আইলিন ওয়ুরনোসের
আইলিন নামের এই পতিতা ১৯৯০ সালে ফ্লোরিডায় সাতজন পুরুষকে হত্যা করেছিলো। সে প্রথমে টাকা–পয়সা ছিনিয়ে নিতো তারপর তাদেরকে গুলি করে তাদের গাড়ি ছিনতাই করে পালাতো। আইলিন হচ্ছে প্রথম মহিলা যার নাম সিরিয়াল কিলার হিসেবে আমেরিকার এফবিআই প্রোফাইলে রয়েছে। ২০০২ সালে প্রাণঘাতী ইনজেকশনের মাধ্যমে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিলো। ২০০৩ সালে ওয়ুরনোসের গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয় “মনস্টার” নামের একটি সিনেমা।