বিনোদন

নগরকীর্তন: বিষণ্ণমেদুর এক প্রেম গাঁথা1 min read

আগস্ট ৮, ২০২০ 6 min read

author:

নগরকীর্তন: বিষণ্ণমেদুর এক প্রেম গাঁথা1 min read

Reading Time: 6 minutes

‘রাধার কি হৈল অন্তরের ব্যথা |
বসিয়া বিরলে                      থাকয়ে একলে
না শুনে কাহারো কথা ||
সদাই ধেয়ানে                     চাহে মেঘ-পানে
না চলে নয়ান-তারা |’

_চণ্ডীদাস

ছবির নামই ‘নগরকীর্তন’- যার ব্যবহারিক অর্থ নগরের পথে পথে ঘুরে ভগবানের নামগান। স্বাভাবিকেই রাধাকৃষ্ণের প্রেমঘন কাহিনী এবং শ্রীচৈতন্যের উল্লেখ থাকা আবশ্যক। তবে ঐতিহ্যগত শ্রীকৃষ্ণ রাধার প্রেম কাহিনীকে এতে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। সময়ের সাথে আধুনিক শহরের প্রতাপকেও এ ছুঁয়ে গেছে।

সম্প্রতি হইচই ওয়েব প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে জাতীয় পুরস্কারের ভূষিত কৌশিক গাঙ্গুলির এই সিনেমা।

নিখাদ প্রেমের কাব্য

প্রেম এক প্রতিকারহীন রোগ। যার প্রাণ আছে প্রেম তার নিঃসংশয় নিয়তি। প্রেমকে আসলে কোন আঁকা সীমারেখায় আটকানো না। পিয়াসী প্রেমিক-প্রেমিকার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষার আগুনে বাষ্পীভূত হয়ে যায় সকল বাঁধা। তাইতো যুগে যুগে লাইলি-কায়েস, রাধাকৃষ্ণ, শিরি-ফরহাদ কিংবা জুলেখা-ইউসুফের আকুতি বর্ণাঢ্য হয়ে ফিরে আসে।

সাধারণ এক ফুড ডেলিভারিম্যান আর অনিন্দ্য সুন্দরী এক তৃতীয় লিঙ্গের মেয়ের প্রেমকে ঘিরেই এই ছবির গল্প।

সাধারণ প্রেমের গল্পে যেমন এক পুরুষ, এক নারী আর ভিলেনের আনাগোনা পাওয়া যায়, এতেও ঠিক তেমন। এখানে সমাজের রক্তচক্ষু আর সংস্কারের কঠিন দেয়াল ভেদ করে বাঁচতে চায় দুই প্রণয়ী- মধু আর পরিমল ওরফে পুঁটি।

প্রাপ্য সোহাগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে পুঁটি বহু আগেই। প্রথম প্রেমের উত্তাপ হিম হয়ে যায় প্রেমিক সুভাষের (ইন্দ্রাশিস) প্রতারণায়। অথচ তাঁকে ঘিরে ‘আমেরিকা’য় সংসারের জাল বুনত পরি।

ওঁকে ডিঙ্গিয়ে কপালে সিঁদুর জোটে পরিমলের বোনের। সহস্র প্রহসনের পরেও কি ভালোবাসায় নিজেকে অর্পণ করতে পারে পুরুষ দেহে আটকে পড়া এই পোড়াকপালী?

সংসারের হাহাকার প্রচ্ছন্ন ছিল আজীবনই। হেমন্তের কোন রাত্রিতে তা ফের প্রকট হয়ে ওঠে মধুর সাথে চার চোখের মিলনে। একবার ঠকে দুর্নিবার হয়ে উঠেছিল সদ্য কৈশোরের খোল ছাড়া পুঁটি। সেজন্যই হয়তো আপন সম্প্রদায়ের অলক্ষ্যেই প্রেম প্রকাশে অশান্ত হয়ে পড়ে তাঁর আবেগ। খড়কুটোর মতো বাঁচার আকুতিতে জড়িয়ে ধরে মধুকে।

মধুর গলায় তবু সমাজের ভয়, আত্ম স্বীকৃতির দোটানা, ‘ছেলে-ছেলেয় প্রেম হয় নাকি?’ উত্তরে পুঁটির জবাব, ‘শরীর ছেলের, কিন্তু আমি আসলে মেয়ে। শরীরে ভুল আছে, ঠিক করতে হবে। ওই  স্কুলে অঙ্ক ভুল হলে যেমন আবার করে কষতে হয়।‘

সমাজের প্রথাগত ধারণার বাইরে গিয়ে কী হবে তাঁদের পরিণতি? নীলচে অশুন্যতায় বিলীন হওয়াই কি নব এই কৃষ্ণ-রাধার প্রেম।

মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে কৌশিক গাঙ্গুলি ও ঋত্বিক চক্রবর্তী; Photo: আনন্দবাজার

রুপান্তরকামী অন্যান্য বিষাদ

ঋতুপর্ণের প্রতি নিবেদন, প্রসঙ্গতই আলাপ আসে ‘চিত্রাঙ্গদা’র। তবে এর সাথে পটে অমিল থাকে প্রচুর, বেদনা-বিষাদে সেতু থাকলেও। শহুরে, আত্মসম্মানঘন রুদ্র-পার্থের জীবন যখন একদিকে যুঝতে থাকে ঘরে-বাহিরে, তখন ‘জলে কুমিরের’ সাথে লড়তে ব্যস্ত কোমল, স্নেহ কাঙ্গাল পুঁটি আর সাথে তাঁর মধুদা।

তৃতীয় লিঙ্গের শঙ্করীকে এতে দেখা গেছে গুরুমা ‘আরতি’ চরিত্রে। সিনেমা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাংলা সিনেমায় ‘নগরকীর্তনে’র মতো আর কিছু আমার চোখে পড়েনি। এটা দেখার পর অনেকেই আমাদের ভিন্নভাবে দেখবে। সংবিধানে আমাদের অধিকারের কথা বলা হলেও এখনও সমাজ কাঁটাতারের বেড়া পায়ে লাগিয়ে দেয়। তবুও কৌশিকদা যে এভাবে সবার সামনে আমাদের মনের ভাবনাটাকে তুলে ধরেছে, এই সব থেকে বড়।‘

শৈশব থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ তাঁর। যাত্রা, স্কুলের বার্ষিক নাটকে অভিনয় করলেও কৌশিক গাঙ্গুলির সাথে কাজের সুযোগ ছিল স্বপ্নের অধিক। প্রথমে ফোনে এবং পরে সোজা বাড়িতে এসে চিত্রনাট্য পড়ে শুনিয়েছিল টিম নগরকীর্তন। তাঁর সাথে একরাশ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরাও অতুলনীয় অভিনয় করেছেন।

ছবিতে মানবী গঙ্গোপাধ্যায়কেও দেখা যায় ছোট একটা চরিত্রে। বর্তমানে কৃষ্ণনগর মহিলা কলেজের প্রিন্সিপাল তিনি। লিঙ্গ পরিবর্তনের অপারেশনের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন, জানেন এর বেদনার কথা।

সংলাপেই শোনা যায়, ‘আজও কলেজের মহিলা বাথরুমে ঢুকতে দেয় না। মানুষ প্রতিদিন ঘাড়ে চড় মেরে দেখিয়ে দেবে আসল আর নকলের তফাতটা।‘

ছবিতে যুগলের দোটানায় আলোকপাত করেন এভাবে ,‘ ছবিতে প্রেমিক চাইছে পুঁটিকে মেইনস্ট্রিমে আনার জন্য। তার লড়াইয়ের কাহিনি দেখে মানুষ, সমাজ যদি উদার হয়। আশা করি‘নগরকীর্তন’ রূপান্তরকামী নিয়ে মানুষের চোখের ছানি অনেকটাই কেটে দেবে।‘

সমাজের অচ্ছুতদের কথা বলে ‘নগরকীর্তন’; Photo: আনন্দবাজার

সম্মুখে বিভীষিকা

২০১৮-র ৬ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ আমলের আইনকে খারিজ করে ভারতে সমকামী ও রুপান্তরকামী সম্পর্ককে সুপ্রিম কোর্ট বৈধতা দান করলেও সামাজিকভাবে এখনো সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এই ছবির গবেষণাকালে বেশ কজন রুপান্তরকামীর সাথে কথা বলেন পরিচালক কৌশিক। তাঁদের বরাতেই জানা যায়, সমাজের নানান স্তরে বৈষম্য প্রকট। এক তরুণী জানান, পরিবারকে তাঁর যৌন পরিচয় জানাতেই মারধোর থেকে শুরু করে মাদক প্রয়োগে অসাড় করতেও বাঁধেনি তাদের। নিয়মিত মানসিক নিপীড়ন তো ছিলই।

পথে-বাসে, জনসমাগমে গঞ্জনাও সহ্য করতে হয় অনেকের। বিদ্যালয়, নাচ-গান শেখার স্কুলেও কোণঠাসা হবার অভিজ্ঞতা খুব স্বাভাবিকই তাদের জন্য। একজন তো বলেই বসলেন,’ হাফ-লেডিস, হিজড়ে এসব যে গালি তা এখন বুঝি। অথচ আগে প্রচণ্ড ভয় পেতাম। ঘর থেকে বেরুতে চাইতাম না।‘

অনন্য মহিমার ঋদ্ধি

এ যেন এক অন্য ঋদ্ধি সেন। ‘ওপেনটি বায়োস্কোপ’, ‘ভূমি’, ‘ভিঞ্চি দা’য় আমরা যেই প্রথাগত অভিনেতার দেখা পাই তার আগল খুলে বেরিয়ে গেছেন ২২ বছরের এই তরুণ। শুধু মেকআপ, কস্টিউমে না, অঙ্গভঙ্গিমায় আপাদমস্তক পুঁটি হয়ে সামনে এসেছেন তিনি।

কীভাবে সুযোগ পেলেন এই ছবিতে? স্মিত কণ্ঠে জানান সেই যাত্রার কথা, কৌশিক গাঙ্গুলি ফোনে স্রেফ বলেছেন নায়ক ঋত্বিক আর নায়িকা আমি।

অর্থাৎ তখন কৈশোরে পা তাঁর। ভাবুন তো, কুড়ি ছোঁয়ার আগেই জাতীয় পুরস্কার শেলফে স্থান পেয়েছে!

২০১৬ তে প্রস্তাব পেলেও ছবি শুরু করতে এক বছর সময় নিয়েছিলেন পরিচালক। ফলে এই সময়ে মধু- পুঁটির ব্যাপারে বিশদ জেনে নেবার সুযোগ হয়েছিল ঋত্বিক-ঋদ্ধির।

নারীত্বের পরীক্ষাও দিয়েছিলেন কলকাতার লেক গার্ডেনসে বৃহন্নলা সাজে। পরনে চটকদার শাড়ি, পায়ে ব্লক-হিল, ঠোঁটে- গালে লিপস্টিক দেয়া ঋদ্ধি ১০০ টাকা পেয়েছিলেন রাস্তায়। তখনই নিশ্চিত হন কৌশিক।

ঋদ্ধি সেনকে বেছে নেবার পূর্ব মন্ত্র জানান এভাবে, ‘পুঁটি চরিত্রে ওকেই আমার দরকার ছিল। ও ছিল কৈশোরের শেষ ধাপে, অতএব ওর হাস্কি কণ্ঠটা চাইতাম। ওর দেহাবয়ব, চাহনিতেই পুঁটি ছিল।‘

মধুর বাঁশিতে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’; Photo: Express Indulge

রূপায়ন কঠিন মানতে নারাজ ঋদ্ধি। এই চরিত্রের জন্য শারীরিক রূপান্তরের চেয়েও এখানে মানবিক ও মানসিক দ্বন্দ্বটাকে ফুটিয়ে তোলা ছিল মুখ্য। নিয়মিত রূপান্তরকামী এবং যারা এখনও লৈঙ্গিক পরিচয় নিয়ে ক্রাইসিসে আছেন তাঁদের সাথে কথা বলেছেন। এসময় সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছেন ২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য ড্যানিশ গার্ল’ থেকে। লিলি এলবের ‘Man into Woman’ পড়েই যাবতীয় রসদ যোগান অভিনয়ের।

প্রেমিকা সুরঙ্গনা ও মা রেশমি সেনের গতিবিধি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে। তাঁদের হাঁটবার চাল, পাশব্যাগ নেয়া, আচল-ওড়নায় মুখ মোছার ক্ষুদ্রতাও চোখ এড়ায়নি। বৃহন্নলা দলের একজনের পরামর্শের কথা মনে করেন, ’মাছের কাঁটা খুব ধীরে বাছতে বলেছিলেন তিনি। নারীপুরুষের ভঙ্গিমায় বিস্তর তফাৎ থাকে।‘

ঋত্বিক উদাত্ত স্বরে বলেন, ‘ছবি দেখে চোখের জল খরচা হবে নিশ্চিত। তবে ভালোবাসার পরিধি সম্পর্কে একটা পরিবর্তন আসবে।‘ প্রেমিক মধু তথা কৃষ্ণের ন্যায় বাঁশি হাতে নিজেকে ভেঙে গড়েছেন তিনি। তাঁর প্রতিভা নিয়ে দ্বিতীয় কথা তোলাই ধৃষ্টতা।

পুঁটির মেকআপে নিজেকে সাজাতে লাগতো প্রায় এক-দেড় ঘণ্টা। দাঁড়ি কামাতে হতো দিনে দুবেলা, ক্লিপার ব্যবহার করে মাপে নিতে হতো ভ্রুকে। জিম বন্ধ রেখেছিলেন শারীরিক বদলের খাতিরে।

মধুর বৌদি বা ভাইয়ের বউ চরিত্রে আমরা দেখতে পাই বিদীপ্তা চক্রবর্তীকে। গোটা সিনেমায় সম্ভবত এই চরিত্রের কাছেই সর্বাঙ্গীণ উন্মুক্ত হয় মধু- পুঁটির প্রেম। এই যুগলের সাথেও তাঁর সম্পর্কের সমীকরণটা স্বার্থের নয়, বরং পারস্পরিক কল্যাণের।

বিশেষ করে একটি দৃশ্যে কাপড় বদলানোকে কেন্দ্র করে পুঁটির নারীত্বের আকাঙ্ক্ষা এবং বৌদির সারল্য অনুধাবন করতে পারেন দর্শক।

বাড়তি প্রশংসা প্রাপ্য মেকআপম্যান রাম রজ্জাকের। অন্যদিকে গোবিন্দ মণ্ডলের পোশাকে মানিয়ে গেছে প্রতিটি চরিত্র। প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গীত আয়োজন অভিসার দৃশ্য থেকে শেষ অব্দি অসাধারণ সঙ্গ দিয়ে গেছে ছবিকে। গান, কীর্তন, বৈষ্ণব পদাবলী ও আবহ সঙ্গীতের ব্যবহার প্রভাব ফেলেছে ভীষণ।

‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’ র সুরে নৃত্যরত পুঁটি; Photo: আনন্দবাজার

আলোচনাসমালোচনায় 

প্রচলিত বক্স অফিস কী বলে? কীভাবেই বা একে গ্রহণ করেছে দর্শক? প্রথাগত প্রেমের আকুতি নাকি সমকাম বা রূপান্তরের বিতর্কে অগ্নিবাণ ছুঁড়েছে?

সেন্সর বোর্ডের আপত্তিতে তিনটি অন্তরঙ্গ দৃশ্য কাটতে হয়েছে। এতে অবশ্য বিরাট কোন প্রভাব পড়েনি মূল গল্পে ।

বড় পর্দায় মুক্তির আগেই উক্ত ছবির গুণে জাতীয় পুরস্কার পেয়ে যান ঋদ্ধি সেন, সেরা ফিচার ফিল্মের পুরস্কারও মেলে। ফলে সিলমোহরও চেপে যায় এর ঘাড়ে। তবে হলে ছাড়বার আগে পেছাতে হয় বেশ কবার।

২০১৮-র ডিসেম্বরে প্রথম কথা থাকলেও শেষে ছাড়পত্র মেলে উনিশের ১৫ ফেব্রুয়ারি কালে। দেরি হল কি? – প্রশ্নে পরিচালক রসিকতার স্বরেই বলেন, ‘না তা নয়। একেক ছবি একেক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে বানানো হয়। পেছানোয় আমাদের সুবিধেই হলো, ভালোবাসা দিবসে প্রেমের ছবিই পাচ্ছে দর্শক।‘

ঋত্বিকের মতে, এ সমপ্রেম না অসমপ্রেম তা নিয়ে তর্ক হওয়া নিষ্প্রয়োজন। সকল আলোচনার উপরে গিয়ে মানুষের প্রেমই প্রাধান্য পায় এতে।

শেষ দৃশ্যে চমকে দিয়েছেন ঋত্বিক; Photo: আনন্দবাজার

‘পথের পাঁচালী’ (১৯৫৫) যখন মুক্তি পেয়েছিল অনেক সমালোচকই তখন বলেছিলেন, এ ছবি বক্স অফিসের কথা ভেবে নির্মিত নয়। তাঁদের শুধরে দিতেও দেরি করেননি সত্যজিৎ রায়,’ আমি কিন্তু এ ছবিকে বক্স অফিস অগ্রাহ্য করে তৈরি করিনি। আমি কেন, কোন পরিচালকই চাইবেন না যে ছবিটা তাঁকেই শুধু ঘনিষ্ঠদের সাথে দেখতে হবে। মানুষের জন্যই তো ছবি, প্রত্যেকেই চান তৈরি ছবিটা যতটা বেশি সম্ভব দর্শক দেখুন।‘

চলচ্চিত্র কি শুধুই আঁটকুড়ে বিনোদনের মাধ্যম? চারকোনা পর্দায় একরাশ নায়ক-নায়িকাকে দেখে খিল্লি ছুঁড়তেই যায় দর্শক, নাকি ভাবতে শেখায়, জানায় বোধের সাথে চাক্ষুষ অভিজ্ঞতার সম্পর্ক। সার্জেই আইজেনস্টাইন এই Visual Perception বা দৃষ্টিলব্ধ উপলব্ধি এবং Intellectual Perception বা চেতনালব্ধ জ্ঞানকে সন্নিবেশের তাড়া দেন। ডব্লিউ গ্রিফিথও তাগাদা দেন ফিল্মের সাথে বার্তার গুরুত্বের।

কৌশিক গাঙ্গুলিও তাই কঠিন ভঙ্গিতে নয়, সিনেমার ভাষাতেই পৌঁছুতে চান মানবিকতার বার্তা।

লেখার যবনিকায় আনি পুঁটির এক সংলাপ, ‘কেউ ভিক্টোরিয়ায় প্রেম করছে, আর আমরা খালের ধারে দাঁড়িয়ে গুয়ের গন্ধ শুঁকছি।‘

শরীরি বলয়ের বাইরে বেরিয়ে এক অনন্য উপাখ্যান কৌশিক গাঙ্গুলির ‘নগরকীর্তন’। সাহসী প্রেমের কাহিনী বলে এর নাম উচ্চারিত হলেও সত্যিই কি তাই? প্রেম কি সরল-সবুজ হবার কথা ছিল না, যেখানে জাতি-ধর্ম-শরীরের বাইরেও আত্মার আকুতিই প্রবল হয়ে দাঁড়ায়!

লেখক- সারাহ তামান্না

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *