দুবাই -আমিরদের শহর1 min read
Reading Time: 4 minutesসংযুক্ত আরব আমিরাতের ৭ টি প্রদেশের মধ্যে একটি দুবাই। আজকে দুনিয়াব্যাপী ধনীদের ভ্রমণের প্রিয় গন্তব্য এই শহর । দুবাই শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের দূরদর্শিতার কল্যাণে দুবাই বর্তমানে পৃথিবীর সবচাইতে বেশি ভ্রমন করা শহরের তালিকায় ৩ নাম্বারে অবস্থান করছে।
অনেকেরই ধারণা দুবাই হয়তো তাদের তেল নির্ভর অর্থনীতির ওপর নির্ভর করছে। কিন্ত বাস্তবে তাদের জিডিপিতে তেলের অবদান ১% এর চাইতেও কম। পাঠকদের মনে এই প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, তাহলে কীভাবে দুবাই খাদ্য, পানি, খনিজ, সোনা এসবে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়ার পরও নিজেদের এত উন্নত করেছে?
দুবাইয়ের আজকের এই ঈর্ষনীয় অর্থনৈতিক সাফল্যের পেছনের মূল কারিগর শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম। তিনি অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সাথে দুবাইয়ের তেল নির্ভর অর্থনীতিকে ট্যুরিজম ও বাণিজ্য নির্ভর অর্থনীতিতে পরিণত করেছেন। গড়পড়তা যেকোনো কিছুতেই আপত্তি তার। যেকোনো কাজে তিনি হয় নাম্বার ওয়ান, নাহয় দ্য অনলি ওয়ান হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেন। এটাই তার সাফল্যের মূলমন্ত্র।
আজকে বিশ্বের সবচাইতে বড় শপিং মল- দি দুবাই মল, বিশ্বের সব চাইতে বড় অট্টালিকা – বুরজ খলিফা। এই এক বুরজ খলিফার দখলেই আছে ১৪ টি বিশ্ব রেকর্ড। ২,৭১৬.৫ ফুট উচু এই দালানে আছে পৃথিবীর সবচাইতে দীর্ঘ লিফট, সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থান করা রেস্টুরেন্ট, ১৬০টিরও বেশি ফ্লোর।
বিশ্বের একমাত্র সেভেন স্টার হোটেলের নাম বুরজ আল আরব, সেটিও দুবাইয়ের দখলে। মরুর বুকে শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম তৈরি করেছেন কৃত্রিম দ্বীপ পাম জুমেইরাহ , যেটি দেখতে অনেকটা পাম গাছের মতোই। তালিকাটা এখানে শেষ না। মরুর বুকে তিনি গড়ে তুলেছেন ফুলের বাগান- দুবাই মিরাকল গার্ডেন। পৃথিবীর সব চাইতে বড় স্বর্ণের মার্কেট “The Gold Souk” এর অবস্থানও দুবাইতেই।
শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম ডিসনি ল্যান্ডের মতো তৈরি করেছেন দুবাই ল্যান্ড। যেটি আকারে এবং পরিসরে ডিসনি ল্যান্ডের চাইতেও বিশাল। সাধারণ মানুষের কাছে এই সব আসলেই কষ্ট কল্পনা হতে পারে কিন্ত শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম অসম্ভবকে সম্ভব করতে ভালবাসেন। তিনি পানির নীচে ব্রিজ এবং টেনিস খেলার মতো জায়গাও ইতিমধ্যে তৈরি করে ফেলেছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন “সাধারণ মানুষ টাকা জমায় আনন্দ-ফুরতি করতে, কিন্তু অসাধারণ মানুষ টাকা জমায় তার নিজের সাম্রাজ্য তৈরি করতে।” তার এই বিশ্বাসের সাথে কাজের মিল স্পষ্টভাবেই দেখা যায়।
সামনে এমন আরও অনেক অবিশ্বাস্য নতুন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন তিনি। ২০২৫ সালের মধ্যে দুবাইয়ের ২৫% গাড়ি ড্রাইভার ছাড়াই চলবে। দুবাই রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি মানুষের যাতায়াতের জন্য প্যাসেঞ্জার ড্রোনে চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। এই সব ড্রোন যাত্রী নিয়ে ৫০ কিমি পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ বেগে চলাচল করবে। ইতিমধ্যে পরিক্ষানিরীক্ষা সব শেষ।
দুবাইয়ের ২৫% বাড়ি ২০৩০ সালের মধ্যে 3D-Painting এর আওতায় নিয়ে আসা হবে। শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম হাতে নিয়েছেন দুবাই ক্যানেল প্রোজেক্ট। এই সব ক্যানেল ব্যবহার করে মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক যায়গায় যাতায়াত করতে পারবে। পানির ওপরেই হবে রেস্টুরেন্ট, থাকার জন্য বিলাসবহুল বাড়ি।
এত সব অবিশ্বাস্য প্রোজেক্ট নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই দুবাই ধনীদের বিলাসিতা করার অন্যতম ভ্রমণের জায়গায় পরিণত হয়েছে। কিন্ত আরেকটি বিষয় না উল্লেখ করলেই না, সেটি হলো দুবাইয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দুবাইয়ের পুলিশ পৃথিবীর সব চাইতে ধনী পুলিশ। দুবাইয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা পুরোটাই অটোমেটেড। স্মার্ট পুলিশ স্টেশনে যে কেউ চাইলেই কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ক্রিমিনাল রেকর্ডস চেক করতে পারবেন, কোনো কমপ্লেইন বা কোন কিছু হারিয়ে গেলে সেটির জন্য রিপোর্ট করতে পারবেন। সব কিছু অটোমেটেড হওয়ায় কোনো রকম হয়রানি বা ঘুষ নেওয়া-দেওয়ার সুযোগ নেই।
ক্রাইম এবং ডিসিপ্লিন ঠিক রাখতে দুবাইয়ের একটি পলিসি আছে। সেটি হলো জরিমানা। অনেকটা পান থেকে চুন খসলেই আপনাকে গোনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ যদি নোংরা গাড়ি চালায় তাহলে অটোমেটিকভাবে তার ব্যাংক একাউন্ট থেকে ২০০ দিরহাম জরিমানা কেটে নেওয়া হয়। কারোও যদি চেক বাউন্স হয় তাহলে তার গন্তব্য সোজাসুজি জেল।
দুবাইয়ে প্রায় ২০০ জাতীয়তার মানুষ রয়েছে। দুবাইয়ের মাত্র ১০% লোকাল শেখ বাস করে, বাকি সবাই বিভিন্ন দেশ থেকে আগত। পৃথিবীর সব বড় বড় অনেক তারকার দুবাইতে এক বা একাধিক বাড়ি রয়েছে। দুবাইয়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ট্যাক্স ফ্রি হওয়াতে বাণিজ্য বা সেরা মেধাবী মানুষগুলোও জীবন গড়ার জন্য দুবাইয়ে পাড়ি জমায়। যদিও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ফিলিপাইনের অনেক খেঁটে খাওয়া মানুষ দুবাইতে নানা রকম কাজ করছে। কিন্ত সেই কাজগুলো গর্ব করার মতো না।
২০১৭ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রশাসন ‘Fourth Industrial Revolution’ এর ব্যাপারে তাদের জাতীয় কৌশলপত্রও ঘোষণা করেছে। সামনে নিশ্চয়ই বিশ্বকে আরও বড় তাক লাগিয়ে দেওয়ার ছক কষছে শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম।