বায়ুদূষণ বর্তমানে দিল্লিবাসীর রোজকার জীবনের সঙ্গী। হাজার চেষ্টার পরেও এই সঙ্গীর সাথে বিচ্ছেদ করা তাদের জন্য মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিল্লির আকাশে এখন আর নীলচে আভা দেখা যায় না। পুরো শহরকে গ্রাস করে নিয়েছে বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার আবরণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবানুসারে, দিল্লির বায়ু বর্তমানে নিরাপদ সীমার চেয়ে চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ গুণ বেশি। বায়ুদূষণের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে বয়স্ক ও শিশু স্বাস্থ্যের উপর। দূষণের মাত্রা বাড়ার কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের গবেষক পলাশ মুখার্জির ব্যাখানুসারে বিভিন্ন মিল কারখানার ধোঁয়ার পাশাপাশি অ্যান্টি সাইক্লোন নামের বিশেষ এক ওয়েদার প্যাটার্ন বায়ু দূষণের জন্য দায়ী। অ্যান্টি সাইক্লোনের কারণে বাতাসের গতিবেগ প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে নেমে গেছে। আর অবশিষ্টাংশে যোগ হয়েছে বাইরের পলিউট্যান্ট। পলিউট্যান্ট বাতাসের মাধ্যমে দিল্লিতে প্রবেশ করলেও শহর থেকে আর বেরোতে পারছেনা।
ঠিক এমন সময় আর্যবীর কুমার এবং মার্গারিটা কুর্তসিয়ানা প্রতিষ্ঠা করলেন দিল্লির প্রথম অক্সিজেন বার ‘অক্সি পিওর‘, যেখানে দিল্লিবাসী ২৯৯ রুপির বিনিময়ে ১৫ মিনিটের জন্য পাবেন “পিওর অক্সিজেন“। মে মাসে কার্যক্রম শুরু করা এই বার গ্রাহকদের জন্য বেশ কিছু অ্যারোমা সংগ্রহে রেখেছে যেমন: লেমনগ্রাস, ল্যাভেন্ডার, চেরি, ইউক্যালিপটাস। কাস্টমারেরা চাইলে তাদের পছন্দসই অ্যারোমা অক্সিজেনের সাথে মিশিয়ে তা গ্রহণ করতে পারবেন।
অভিনব এই বারটিতে গ্রাহকদের একটি হালকা নাসাল কাননুলা প্রদান করা হয়ে থাকে যা সাধারণত অক্সিজেন গ্রহণের জন্য ব্যবহৃত হয়। সুগন্ধযুক্ত অক্সিজেন গ্রহণের জন্য ডিভাইসটি গ্রাহকের নাকের কাছে রাখা হয়ে থাকে। বারের দুই প্রতিষ্ঠাতা জানিয়েছেন, সুগন্ধযুক্ত অক্সিজেন সাইনাস, পরিমিত ঘুম, হজমশক্তির উন্নতি, মাইগ্রেন নিরাময়, এমনকি হতাশার প্রতিরোধক হিসেবেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
মনজুল মেহতা নামের এক কাস্টমার জানিয়েছেন, “আমি রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ চোখে পড়লো ‘অক্সি পিওর‘ বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবারহ করছে। আমি বারের ভেতর গেলাম এবং লেমনগ্রাসের সুগন্ধিযুক্ত অক্সিজেনের অর্ডার করলাম। তাদের এই সেবাটি গ্রহণের পর সত্যি অনেক সতেজ অনুভব করছিলাম“।
তাছাড়া, বারের সিনিয়র বিক্রয় সহকারী বনি ইরেনগাম বলেছেন, “কাস্টমারদের প্রতিক্রিয়া বেশ ইতিবাচক। কিছু লোক, যারা প্রথমবার সেবাটি গ্রহণ করবে তাদের বেশ স্বাচ্ছন্দ্য এবং সতেজ অনুভূত হবে। কিন্তু তারাই প্রকৃত অর্থে লাভবান হবে যারা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর এই বারের অক্সিজেন গ্রহণ করবে। আমাদের নিয়মিত কাস্টমার থাকলেও আমরা গ্রাহকদের ব্যাক–টু–ব্যাক সেশন গ্রহণের জন্য উৎসাহ প্রদান করিনা। কারণ, কারণ দেহে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়লে হয়তো শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আমাদের মতে মাসে এক বা দুবার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের সেশনটি বেশ উপকারী।”
দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হসপিটালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ রাজেশ চাওলা বলেছেন, ” এই জাতীয় সেশনগুলোর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না থাকলেও দীর্ঘমেয়াদী কোন উপকারীতা থাকেনা। ধরুন, আপনি দিনে দুই ঘন্টা তথাকথিত খাঁটি অক্সিজেনের পরিবেশে শ্বাস নিচ্ছেন কিন্তু, আপনাকে বাকি ২২ ঘন্টা দূষিত বায়ুতেই শ্বাস নিতে হবে৷ ” তার মতে এই ধারণাটি নিখুঁতভাবে একটি পুঁজিবাদী পদক্ষেপ।
বারের প্রথম দিকের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে আইরেনবাম বলেছেন, ” লোকেদের মনে প্রথমদিকে এই সেবাটি সম্পর্কে সন্দেহ কাজ করতো। খুব কম লোক অক্সিজেন গ্রহণের জন্য বারে আসতো। অনেকে বিদ্রুপের সুরে বলতো আমাদের বিক্রি করা বাতাস তো কাস্টমারেরা নলের মাধ্যমে নিতে ভয় পাবে। দীপাবলির দু‘তিন দিন পর বারে গ্রাহকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, কারণ দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে জনসাধারণের মনে পিওর অক্সিজেন গ্রহণের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। “
লেখক- পূজা ধর
আরও পড়ুন- বায়ু দূষণে কেমন আছে দিল্লিবাসী?