২০১৬ সালে বিশ্ব থেকে মোট ১১ লক্ষ, ৮৩ হাজার ৫০৫ জন গ্রিন কার্ড পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে দক্ষিন এশিয়ার ৫ দেশের মধ্যে এক ভারতের ৫৪৬৪৭ টি, এর পরে পাকিস্থান ১৯ ৩১৩ এবং বাংলাদেশ থেকে, ১৮৭২৩ জন। এই ১৮ হাজারের মধ্যে আবার ৯৮৯৯ জন এসেছেন পারিবারিক অভিবাসন সুত্রে। দক্ষ বা স্কিল্ড মাইগ্রেশন এর সুযোগ পেয়েছেন- ৬৫৩ জন। ভারতের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা, ২০৭৭৪ জন, আর নেপালে থেকে এসেছেন, ১৩৮৬ জন। পাকিস্থান থেকে এসেছেন, ১৯৯২ জন। যেখানে নেপাল এবং পাকিস্থান উভয় দেশের জনসংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম। ২০১৫ সালেও ছিল একই চিত্র। ১৩৫৭৩ জনের মধ্যে ১২ হাজারের বেশি এসেছেন পারিবারিক সুত্রে গ্রিনকার্ড নিয়ে।অথচ, দক্ষ ক্যাটাগরীতে বা স্কিল্ড মাইগ্রেশন করেছে মাত্র ৬৫৩ জন।
এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন স্রোত পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে ও। বাংলাদেশ বছরে ৪৫২ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ভারত ১০৬৫৭ মিলিয়ন ডলার। নেপাল করে ৩১৪ মিলিয়ন ডলার। জনসংখ্যার হিসেবে নেপাল ২৯ মিলিয়ন, বাংলাদেশ ১৬০ মিলিয়নের বেশি। সেই হিসেবে নেপালের আয় করার কথা ৮৮ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু তারা বাংলাদেশের চেকে কিছু কম বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। অন্যদিকে, ভারতের জনসংখ্যা অনুযায়ী ৭০০ মিলিয়ন ডলার এর বেশি আয় করার কথা নয়। কিন্তু তারা করে অনেক বেশি। সেই তুলনায় পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রেরণ। সুত্র বিশ্বব্যাংকের শ্রমবাজার বৈদেশিক মুদ্রা এবং অভিবাসন পর্যালোচনা রিপোর্ট।
‘কিছু দিন আগে আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। আমি অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখে রীতিমত চমকে গিয়েছি। সেখানকার মানুষ আমার দেশ নেপালের চেয়েও অন্তত ১০০ ভাগ এগিয়ে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অভিবাসন যোগ্যতার চিত্র একেবারের নাজুক। অথচ, বাংলাদেশের মানুষ অনেক বেশি দক্ষ এবং বৈশ্বিক’ প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সাথে আলাপকালে বলছিলেন, অভিবাসন আইনজীবি নেপালি বংশোদ্ভুত এটর্নী দিল্লী রাজ ভট্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থা সংষ্কারের জন্য কাজ চলছে অভ্যন্তরীন ভাবে, যেখানে পারিবারিক অভিবাসন কমিয়ে দেয়া সহ বেশ কিছু বিষয়কে সামনে আনা হয়েছে। ডিভি লটারী এবং পারিবারিক অভিবাসন কমিয়ে পয়েন্ট ভিত্তিক কর্মসংস্থান বা এমপ্লয়মেন্ট ভিসার প্রাধ্যান্য দিতেই প্রস্তাব তুলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে এরি মধ্যে এমপ্লয়মেন্ট ভিত্তিক ভিসা ক্যাটাগরীতে তলানির দিকে আছে বাংলাদেশ। পারিবারিক অভিবাসন স্রোত কমে গেলে, বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরন অব্যহত রাখতে কর্মভিত্তিক ইমিগ্রান্ট ভিসায় বাংলাদেশের প্রাধান্য বাড়াতেই জোর দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন অভিবাসন আইনজীবিরা।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন সংক্রান্ত কাগজপত্র আর ইউএসসিআইএস এর অনলাইনে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, মূলত ইবি ক্যাটাগরীতেই কর্মভিত্তিক ভিসার সুযোগ নিচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশ। দক্ষিন এশিয়ার পাচ দেশ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে এই কর্মভিত্তিক গ্রিনকার্ড প্রাপ্তির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিক থেকে দ্বিত্বীয়।
২০১৭ সালে বিশ্বের মোট ৪১৮২৭ জনকে প্রদান করা হয়েছে এই ইবি -১ ক্যাটাগরীর গ্রিনকার্ড। যার অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ২৫ হাজারের বেশী মানুষ এসেছে এশিয়া থেকেই। আবার এশিয়ার মধ্যে শুধু ভারত থেকে এসেছে,১৩০৮১ জন। এর পরে পাকিস্থান থেকে পাকিস্থান থেকে ২০১ জন, এর পরে নেপাল থেকে ১৪৮ জন। আর বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৯১ জন। একই চিত্র ইবি-২ ক্যাটাগরীর ভিসায়। বিশ্বের ৩৯৯৬১ জনের মধ্যে এশিয়া থেকে ২১৮৭৬ জন। যার মধ্যে এক ভারত থেকেই ২৮৭৯ জন, নেপাল থেকে ৮৪৯ জন আর বাংলাদেশ থেকে নেপালের অর্ধেক, ৪৯৩ জন। ইবি-৩ এর পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এশিয়ার ২৫ হাজারের বেশি গ্রিনকার্ড প্রাপ্তির তালিকায় ভারতের, ৬৬৪১ জন, নেপালের ৪২০ জন, পাকিস্থানের ৭৮৭ জন, আর বাংলাদেশের মাত্র ১৫৪ জন।
২০১৫ সালে এই এমপ্লয়মেন্ট ভিসা (ইবি-১ থেকে ইবি ৫) ক্যাটাগরীতে বাংলাদেশ থেকে ৬৬৮ জন গ্রিনকার্ড পেয়েছেন।২০১৭ সালে কিছু সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৭৮৪ জন। সেখানে একই বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে ইবি’র সব ক্যাটাগরী মিলিয়ে, নেপাল থেকে গ্রিনকার্ড পেয়েছেন, ১৪৩৬ জন। আর ভারত থেকে পেয়েছেন, ২৩ ৪৭২ জন। এই পরিসংখ্যান বলে দেয় যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রান ভিসার মধ্যে স্কিল্ড মাইগ্রেশন এ অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ, অথচ বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে নেপাল, পাকিস্থান আর শীর্ষে ভারত।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জ্ঞানের স্বল্পতা, যোগাযোগ অভাব আর অনিহা’র কারনেই যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে বাংলাদেশ থেকে কর্মভিত্তিক অভিবাসন। আর তার প্রভাবও বেশ স্পষ্ট বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরন চিত্রে।