ডিপ ওয়েব: ইন্টারনেটের অজানা জগত1 min read
Reading Time: 3 minutesবর্তমান যুগকে বলা হয়ে থাকে আধুনিক যুগ। এই আধুনিক যুগ সৃষ্টির পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট। ইন্টারনেট জগতের গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিভাষা হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব(World Wide Web)। আমরা যখন কোনো বিষয়ে তথ্য জানতে চাই, তখন আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে এই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব। আবার এই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব থেকে তথ্য খুঁজে পেতে আমাদের সাহায্য করে থাকে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন।
গুগোল, ইয়াহু, বিং ইত্যাদি হচ্ছে নামকরা ও জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। এইসব সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে আমরা যেসব ওয়েবপেজ থেকে তথ্য পেয়ে থাকি, তা সম্পূর্ণ ওয়েব জগতের খুবই নগণ্য একটি পরিমাণ। ওয়েব জগতের সীমা ও পরিসীমা খুবই ব্যাপক। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, যথা- সারফেস ওয়েব(Surface Web), ডিপ ওয়েব (Deep Web) ও ডার্ক ওয়েব (Dark Web)। এই আর্টিকেলটিতে ডিপ ওয়েব সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে।
ডিপ ওয়েব কী?
ওয়েব সাইটে মূলত বিভিন্ন পেজ ও কনটেন্ট থাকে। যেসব পেজ ও কনটেন্টগুলো ওয়েবের গভীর অবস্থান করে সেগুলোর সমন্বয়ে মূলত ডিপ ওয়েব তৈরি হয়। সার্চ ইঞ্জিনগুলোর মাধ্যমে আমরা কোনোভাবেই এই ডিপ ওয়েবের নাগাল পাই না। সার্চ ইঞ্জিন কেবল ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের সারফেস অংশের কনটেন্ট বা ওয়েবপেজ গুলোর নাগাল পেয়ে থাকে। সার্চ ইঞ্জিন এই সারফেস অংশের তথ্যগুলো ইনডেক্স করার মাধ্যমে তথ্য অনুসন্ধানকারীকে সাহায্য করে থাকে। সারফেস ওয়েবের ওয়েবপেজগুলোতে ইউআরএল, হাইপার লিংক, ডোমেন ইত্যাদির সমন্বয় ও সংমিশ্রণ বিদ্যমান থাকে। কিন্ত ডিপ ওয়েবের ওয়েবপেজ গুলোতে কোনো ইউআরএল, হাইপারলিংক কিংবা ডোমেনের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে না।
আর এই কারণেই সার্চ ইঞ্জিনগুলো এই ডিপ ওয়েবেরগুলোর নাগাল পেতে ব্যর্থ হয়। সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে আমরা যে তথ্য পেয়ে থাকি তা ওয়েবের ১ শতাংশেরও কম বলে মনে করা হয়। আর বাকি সব তথ্যই বিদ্যমান রয়েছে ডিপ ওয়েবে ও ডার্ক ওয়েবে। সারফেস ওয়েবের মতো ডার্ক ওয়েবেও খুবই অল্প পরিমাণে তথ্যের অস্তিত্ব রয়েছে, ফলে ডিপ ওয়েবেই সবচেয়ে বেশি তথ্য বিদ্যমান রয়েছে।
ডিপ ওয়েব সম্পর্কে আমরা অনেকেই না জানার কারণে, ওয়েব থেকে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাগুলো উপভোগ করতে ব্যর্থ হয়ে থাকি। আমরা সার্চ ইঞ্জিনে কোনো কিছু সার্চ করে না পেলে, ভেবে নিই এগুলো ওয়েবে নেই। প্রকৃতপক্ষে এই ধারণাটি মোটেও ঠিক নয়। মূলত আপনার অনুসন্ধানটি সারফেস ওয়েবে নেই। সারফেস ওয়েবে নেই এর অর্থ, ওয়েবেই নাই; এমন চিন্তা অযৌক্তিক। ডিপ ওয়েবে তথ্যের পরিমাণ সারফেস ওয়েবের চেয়ে বহুগুণ বেশি।
আমরা ওয়েবকে যদি একটি সমুদ্র হিসেবে কল্পনা করি; তাহলে আমরা সমুদ্রের উপরের দিকের অংশ দেখতে পাই; সমুদ্রের গভীরে আরও হাজারো প্রাণী আমাদের চোখের আড়ালে থাকে। ঠিক তেমনিভাবে ওয়েবের ক্ষেত্রেও খুব অল্প পরিমাণ তথ্য ও কনটেন্ট থাকে ওয়েবের সারফেস অংশে। আর অধিকাংশ তথ্যই থাকে গভীর এর দিকে যা ডিপ ওয়েব নামে পরিচিত।
ডিপ ওয়েবের ব্যবহার
সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ডিপ ওয়েবের নাগাল পাওয়া যায় না; এর অর্থ এই নয় যে, ডিপ ওয়েবে প্রবেশ করাযায় না কিংবা বেশ জটিল। আপনি খুব সহজেই আপনার মোবাইল কিংবা কম্পিউটার ডিভাইস দিয়ে ডিপ ওয়েব থেকে তথ্য অনুসন্ধান করতে পারেন। ডিপ ওয়েব থেকে তথ্য পেতে হলে কিংবা এই ডিপ ওয়েবে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে একটি ব্রাউজারের সাহায্য নিতে হবে। ডিপ ওয়েবে প্রবেশের ক্ষেত্রে অধিক ব্যবহৃতও সর্বাধিক জনপ্রিয়ব্রাউজার হচ্ছে টর(tor)। এই ব্রাউজারের মাধ্যমে আপনি ডার্ক ওয়েবেও প্রবেশ করতে পারবেন। ডিপ ওয়েব এবং ডার্ক ওয়েবকে অনেকেই এক করে ফেলেন বা একই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত মনে করেন। কিন্ত এই ধারণাটি একেবারেই সঠিক নয় বরং ডিপ ওয়েব ও ডার্ক ওয়েবের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।
কম্পিউটার বা অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে ডিপ ওয়েবে প্রবেশকে আরো সহজ করতে কিছু ব্রাউজার লিংকেরও সাহায্য গ্রহণ করতে পারেন। এই লিংকগুলো মূলত টর (tor) ব্রাউজারের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে ডিপ ওয়েবের ওয়েব পেজকে আপনার নাগালের মধ্যে এনে দেবে; এমনই কিছু লিংক হলো-
১. The WWW Virtual Library : vlib.org
২. Surfax : lookahead.surfwax.com
৩. IceRocket : http://www.icerocket.com/
৪. Stumpedia : http://www.stumpedia.com/
৫. Freebase : http://www.freebase.com/
৬. TechDeepWeb : techdeepweb.com/4.htmlhtml
আরেকটি বিষয় ভালোভাবে মনে রাখা উচিত যে, ডিপ ওয়েবে প্রবেশ করলেই আপনি ডিপ ওয়েবের সকল ওয়েব পেজে প্রবেশ করতে পারবেন, এমনটি কিন্ত নয়; কারণ ডিপ ওয়েবে অধিকাংশ ওয়েব পেজই গোপনীয়ভাবে রাখা হয়। আপনার ই-মেইল বক্স, ড্রপবক্স, ফেসবুকের অনলি-মি পোস্ট কিংবা কনটেন্ট,বিভিন্ন সাইটে আপনার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ইত্যাদিও ডিপ ওয়েবের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড ও বিশেষ অনুমতি ছাড়া কোনো সার্চ ইঞ্জিনই ইনডেক্স করতে পারে না। আপনার এই ব্যক্তিগত ওয়েব পেজগুলোতে যেমন আপনি ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারে না, তেমনিভাবে আপনিও অন্যদের ডিপ ওয়েব পেজগুলোতে প্রবেশ করতে পারবেন না।
অনেকের কাছেই মনে হতে পারে, ডিপ ওয়েব বোধ হয় নেতিবাচক কোনো কিছু, কিন্ত এ ধারণা যুক্তিসংগত নয়। ডিপ ওয়েবের কনটেন্ট সারফেস কনটেন্টের মতোই; সারফেস ওয়েবে যেমন ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকই রয়েছে, তেমনি ডিপ ওয়েবেও ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে তবে। ডার্ক ওয়েব নেতিবাচকদিকেই ভরপুর বলেই মনে করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গবেষকেরাই ডিপ ওয়েব থেকে সাহায্য নিয়ে তাদের মূল্যবান গবেষণাগুলো পরিচালনা করে থাকে। তাই আপনিও আপনার প্রয়োজনে ডিপ ওয়েবের শরণাপন্ন হতে পারেন।