ডিপোর্টেশন: ১২ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার গল্প1 min read
‘অলৌকিক ভাবে ফিরে এসেছি’
-আবু সাঈদ চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার গল্প
‘সিলেটের আবু সাঈদ চৌধুরী। এখন থাকেন নিউজার্সির নর্থ বান্সউইক এ। ডিপোর্টেশন এর পর, বাংলাদেশে প্রায় ১৩ বছর কাল কাটিয়ে আবার ফিরেছেন, তার তরুন বেলার স্বপ্নপূরনের ভুমি আমেরিকায়। স্বপ্নপূরনের কর্মক্ষম জীবনে এক দশকের বেশি তাকে কাটাত হয়েছে স্বপ্নের বাইরে, অপেক্ষায় অপেক্ষায়। বলছিলেন, ফিরে এসেছি আবার যেন মিরকলের (অলৌকিক) মতই।’
কবে ফেরত পাঠিয়েছিল আপনাকে?
– ‘২০০৫ সালের এপ্রিলের ২৮ তারিখ আমাকে আমার বাসা থেকে সাদা পোশাকের দুই পলিশ আটক করেছিল। সেই রাতে আমি একাই বাসায় ছিলাম। আমার বুকের আড়াই বছরের ছোট ছেলে তখন ঘুমিয়ে।আর পায়ে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছিল আড়াই বছরের ছেলেটি। ১৮ দিনের মত ডিটেনশন সেন্টারে ছিলাম। এর পরে, আমাকে প্লেনে তুলে দিয়েছিল। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, আমাকে একটা সপ্তাহ সময় দেন, ওরা দেয়নি।’
-কি বলেছিল দেশে ফেরত পাঠানোর সময়?
‘আসলে আমার আগে থেকেই ডেপুটেশন (বর্ধিত সময়ে অবস্থান) এ ছিলাম। আমি জানতাম যে একদিন ফিরে যেতে হবে। ওরা যাবার সময় বলেছিল, তুমি আগামি ১০ বছরের মধ্যে দেশে ফিরতে পারবো না।
এর আগে যদি ঢোক, তাহলে আরো ১০ বছরের জন্য বহি:ষ্কার করা হবে।’
কেন হয়েছিল আপনার ডিপোর্টেশন নির্দেশ?
-’সবার যে কারণে হয়, সেটা আমারও হয়েছিল। আমি এই দেশে প্রবেশ করি, ১৯৯০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। আমি একজন কাগজপত্র হীন হিসেবেই ছিলাম পরে, এই দেশে এক নাগরিক নারীকে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু সেই বিয়ে টেকেনি বিধায় আমার চলে যাওয়ার নির্দেশ ছিল। পরে অবস্য আমি যখন আসল বিয়ে করেছিলাম, সেটা ২০০১ সালে। আমার স্ত্রীর নাগরিকত্বের সুবাদে আবেদনও করেছিলাম, কিন্তু বিয়ের ৫ দিনের মাথায় আমার ডিপোর্টেশন নির্দেশ জারি হয়। এর পর, ডেপুটেশন করে বাকীটা সময় থাকতে পেরেছিলাম, কিন্তু চুড়ান্ত ভাবে তো ফেরত-ই যেতে হয়েছিল।’
আবার কিভাবে ফিরলেন?
-’অনেকটা মিরকল-ই বলতে পারেন। অবস্য আইনী পথেই আগিয়েছিলাম আমি। আমাকে যখন ২০০৫ সালে ফেরত পাঠানো হয় তখন, আমার স্ত্রীর নাগরিকত্বের সনদ প্রায় হয়ে যাবে এমন একটা সময় ছিল। আমাকে ফেরত পাঠানোর পর কদিন আমার স্ত্রী বাংলাদেশে গিয়ে আমার সাথে ছিলেন। এর পর, তিনি এখানে ফিরে নাগরিকত্ব নিয়ে একটানা ৩ বছর এখানে বসবাস করেন।আমার দুই ছেলেও তখন তার কাছেই ছিল। এর পরে সে আমার কাছে চলে যায় এবং ৮ বছর বাংলাদেশেই ছিলাম আমরা একত্রে। আমার ছেলেরা বাংলাদেশের স্কুলেই পড়েছে। এখন আবার এখানে ফিরে এসেছে আমার সাথে। এক জনের বয়স ১৫ বছর আর আরেক জনের বয়স ১৬ বছর।’
দেশে যখন ছিলেন, কি করেছিলেন?
-’১২ বছর ১০ মাস, ছিলাম আমি দেশে। এই সময়টা বেশ কষ্টের ছিল আমার জন্য। অনেক কিছুই করার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু মন বসাতে পারিনি কোন কিছুতেই। কোন কিছুই সফল ভাবে করতে পারিনি।
জীবনের সবচে কর্মক্ষন সময়টিতে আমি দোটানায় ছিলাম। এটা আমাকে পিছিয়ে দিয়েছে অনেক খানি। কেননা, এক জন মানুষ জীবনে ৩০ থেকে ৪০/৫০ বছরের মধ্যেই তার উন্নতি ব্যাবসা, ভবিষ্যত নির্ধারন করে। সেই সময়টাতে আমি পিছিয়ে পড়েছিলাম।এখণ আবার ফিরে এসেছি, কিন্তু স্বপ্ন আর বেচে নেই।
২০০১ এ আমি একবার স্থানীয় ঝগড়ার কারণে গ্রেফতার হয়েছিলাম। এবার, ২০১৭ এর সেপ্টেম্বর এর ২০ তারিখে আবার আমি ইমিগ্রান্ট ভিসার জন্য দাড়িয়েছিলাম। কারন, আমার স্ত্রী র সিটিজেনশীপ এর মাধ্যমে আমি স্পাউস ভিসা পেয়ে আবার ঢুকি এই দেশে।’
ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
‘ ভবিষ্যত পরিকল্পনা যে কি বলার আছে। এই বয়সটাতে নতুন করে কিছুই ভাব সহজ নয়। মোটামুটি কাজ করে জীবন ধারন করার চেষ্টা করছি’
ডিপোর্টেশন নিয়ে কিছু বলার আছে?
‘আমি বিশ্বাস করি ডিপোর্টেশন এর কবলে যারা পড়ছেন, তার অর্থ এই নয় যে জীবন শেষ। হয়তো স্বপ্ন এবং সময়ে ছেদ পড়ে, তবে আবার ফিরে আসা যায়। এই ভাবে যারা ডিপোর্টেশন এ গেছে, তাদের যদি অন্য কোন সমস্যা না থাকে, তাদের সবার-ই ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে। আমি যে আবার ফিরে আসতে পারবো সেটা আমি ভাবিনি। এটা একটা মিরাকল, এবং এই মিরাকল সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে’।
এপ্রিল ২০১৮ সালের প্রথম সপ্তাহের কোন এক দিন,
প্রথম আলো’র জন্য এই সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, সাহেদ আলম