দিন গুনেই দিন কাটছে আজাদ আরজু’র
-কাজী আজাদ আরজু’র ফেরার প্রতিক্ষায় পরিবার
বাংলা ইনফোটিউব, নিউইয়ক; চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে দীর্ঘ ২৮ বছর পর দেশে ফিরেছেন নিউইয়র্কের জ্যামাইকার হলিসের রিয়েল এস্টেট ব্যাবসায়ী কাজী আজাদ আরজু। এর আগে, জানুয়ারীর ১০ তারিখে তাকে ইমিগ্রেশন পুলিশের শুনানী আদালত থেকেই গ্রেফতার করা হয়। প্রায় মাস খানেক ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী থাকার পর, ফেব্রুয়ারীর দ্বিত্বীয় সপ্তাহেই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। জ্যামাইকার বাড়িতে তখনও বাবার ফিরে আসার অপেক্ষায় কাজী আরজু’র স্ত্রী, তিন সন্তান।
দেশে ফেরত পাঠানোর পর, বেশ কিছুদিন সময় নিয়েছেন আরজু, পরিস্থিতি বুঝে উঠতে। ফেব্রুয়ারীর ২৬ তারিখে নিজের প্রথম একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে খোচা-খোচা দাড়ি মুখে বিমানবন্দর থেকে ফিরছেন কোন একজনের গাড়ীতে করে। সেখানে তিনি লিখেছেন, আই এ্যাম ইন বাংলাদেশ নাও”
নিউইয়র্কে রিয়েল এস্টেট ব্যাবসা আর ঢাকায় পারিবারিক সচ্ছলতার কারনে, টিকে থাকার সংগ্রাম করতে হচ্ছে না ঠিকই কিন্তু, বেচে থাকার সংগ্রাম করছেন নিয়মিত কাজী আরজু। ১০ এপ্রিল যখন তার সাথে কথা হয়, তখন বাংলাদেশে ভোর রাত্রি। কেমন আছেন, এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় সজোরে মশা মারার শব্দ শোনাচ্ছিলেন তিনি।
‘ভাল আছি, এখন মশা মারছি’
কেমন কাটছে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জীবন?
– (একটু চুপ থেকে) এইতো, কেটে যাচ্চে। এখানে তো এখনও শরীর এবং মন কোনটাই বসাতে পারিনি। দীর্ঘ ২৮ বছরের এক অভ্যস্থের জীবন ফেলে এসেছি নিউইয়র্কে। এখন ঘুমানোর কথা, কিন্তু মশা মারতে হচ্ছে, ঘুমাতে পারছি না। আমার মন পড়ে আছে বাচ্চাদের কাছে। কবে ফিরবো সেই প্রতিক্ষায় দিন গুনছি।’
কবে ফিরবেন বলে জানছেন আপনি? কোন আশাবাদ?
-আমার আইনজীবি জানিয়েছেন, আড়াই বছর লাগতে পারে। হয়তো একটু বেশিও লাগতে পারে।তবে, ২ বছর পরেই আমি আবার ইমিগ্রান্ট ভিসার জন্য দাড়াতে পারবো। আমার স্ত্রী যেহেতু আমেরিকার নাগরিক, আর এমনিতেই আমার গ্রিনকার্ড আবেদনটি প্রক্রিয়াধীন ছিল, তাই এখন ২ বছরের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেই আমি আবার আবেদন করতে পারবো বলে জানিয়েছে আমার আইনজীবি।
২ বছর পরেই তাহলে ফিরতে পারবেন?
-দেখা যাক। প্রথমবাড় ভিসার জন্য দাড়ালে ঢাকার দূতাবাস আমাকে প্রত্যাক্ষান করতে পারে বলে জানানো হয়েছে। সেই প্রত্যাক্ষান পত্র নিয়ে আমেরিকায় আবার আইনী প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সেটা নিয়ে দ্বিত্বীয় বার দাড়ালেও আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারে বলে জেনেছি, কিন্তু আমি যে আবার ফিরে আসতে পারবো সেটা নিশ্চিত। কেননা, এটা আইন দিয়েই স্বীকৃত, আর আমি আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত দিন অবস্থান করিনি।
স্ত্রী, সন্তানদের কে অনেকদিন মনে হয় দেখেননি?
– প্রতিটি সময় আমি ওদের সাথেই থাকি। স্পর্শ করতে পারিনা শুধু। আমার স্ত্রী চেয়েছিলেন সন্তানদের নিয়ে এখানে চলে আসতে। কিন্তু তাতে ওদের পড়াশুনার সমস্যা হবে। আমি বলেছি গ্রীষ্মের ছুটিটা আমার এখানে কাটিয়ে যেতে। ওরা টিকেট কেটে ফেলেছে, গ্রীষ্মের ছুটিতে ২ মাস এখানে থাকবে। সেই সময়টা্ ভাল কাটবে আশা করছি।
দেশে স্থায়ীভাবে কিছু করার চেষ্টা করছেন?
-কিভাবে সম্ভব? আমি চেষ্টা করছি, কিন্তু কিছুই আমার সাথে নেই। এখানকার সিস্টেম বা রাষ্ট্রযন্ত্র অথবা মানুষের লেনদেন রীতি আমার আগের জায়গা থেকে একেবারেই ভিন্ন।এখানে গায়ের জোর আর অনিয়ম-ই নিয়ম। সেটা মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি কটা দিনের জন্য। কিন্তু আমি ফিরবো সহসাই, এবং সেদিনের অপেক্ষা করছি। আমার মূল ব্যবসা এখনো নিউইয়র্কে, এবং আমি না থাকলেও আমার ব্যবসায়িক পার্টনাররা সেটা চালিয়ে নিচ্ছেন।
কিছু বলার আছে আপনার ডিপোর্টেশন নিয়ে?
-এটা অমানবিক। পরিবার বিচ্ছিন্নের মাধ্যম। আমাকে সম্পূর্নভাবে বন্চিত করা হয়েছে আইনের সুরক্ষা থেকে। আমার বাচ্চাদের কে কঠিন সময়ের মুখোমুখি করা হয়েছে। এটা আর কারো ক্ষেত্রে না হোক। এটাই কামনা করি। এটা একটা বড় শাস্তি। এই শাস্তি কেউ না পাক।
কাজী আজাদ আরজু’র ফিরে আসার বিষয়টি একটি অপেক্ষা মাত্র। অভিবাসন আইনে সেটাই উল্লেখ আছে বলে জানিয়েছেন একজন আইনজীবি। স্বাভাবিক ভাবে ডিপোর্টেশন এর ক্ষেত্রে যদি যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত আসার কোন বিধি নিষেধ আরোপ না করা থাকে তাহলে ১ বছর অতিরিক্ত অবস্থানের শাস্তি ২ বছরের নিষেধাজ্ঞা। ২ বছর অতিরিক্ত অবস্থানের কারনে ৪ বছর না ফিরতে পারার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আর সর্বচ্চ নিষেধাজ্ঞা হয় ১০ বছরের। সেই ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা পার করেও যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন অনেক ডিপোর্টেশন ভুক্তভোগী।
প্রথম আলোর জন্য এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
সাহেদ আলম