ডাকসু নির্বাচনের আদ্যোপান্ত1 min read
Reading Time: 2 minutesগত ১১ মার্চ মহাসমারোহে নানা সমালোচনা আর আলোচনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ডাকসু নির্বাচন। এই নিয়ে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, উৎসুক ছিল গোটা দেশ। তবে মজার ব্যাপার হল এ নির্বাচনের আগে অনেকেরই জানা ছিল না আসলে ডাকসু কি! এমন অনেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা কেবল নামটি শুনেছিলেন বা দেয়াল লিখন দেখেছিলেন।
গত ২৮ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার কারণে মানুষ ভুলতে বসেছিলেন ডাকসু বিষয়ে। চলুন আজ জেনে নেই ডাকসু নির্বাচনে শুরু থেকে শেষের ইতিহাস।
ডাকসু কি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। যাকে সংক্ষেপে বলা হয় ডাকসু বা DUCSU (Dhaka University Central Students’ Union)। এটি কোন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন নয় বরং এটি দল মত নির্বিশেষে ছাত্রদের নির্বাচিত প্রতিনিধি দল যারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আর সাধারণ ছাত্রদের মাঝে সেতুবন্ধনের কাজ করে। ডাকসুর প্রধান কাজ হল ছাত্রদের সমস্যা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত পৌছানো এবং তাদের সমাধানের ব্যবস্থা করা।
ডাকসুর ইতিহাস
ডাকসু প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২২-২৩ সেশনে। তখন এর নাম ছিল DUSU (Dhaka University Students Union) বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে সংশোধন করে ডাকসু রাখা হয়। ডাকসুর প্রথম কমিটি গঠন হয় ১৯২৪ সালে।
তখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা তিনটি হল অর্থাৎ ঢাকা হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল আর জগন্নাথ হল থেকে সদস্য নিয়ে গঠিত হত ডাকসু। সংসদে থাকতেন প্রতিটি হল থেকে একজন শিক্ষক, একজন ছাত্র এবং উপাচার্যের পছন্দানুযায়ী একজন শিক্ষক। ডাকসুর প্রথম সভাপতি ছিলেন একজন শিক্ষক প্রফেসর ডাব্লিউ এ জেটলি, সহ সভাপতি ছিলেন মমতাজ উদ্দিন এবং সেক্রেটারি ছিলেন যোগেন্দ্র নাথ সেনগুপ্ত।
১৯৫৩ সালে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে প্রথম ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবং এরপর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মোট ৩৬ বার এই নির্বাচন হয়।
স্বর্ণালী অতীত
ডাকসু হারিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত এর অত্যন্ত সুদীর্ঘ এবং স্বর্নালী ইতিহাস ছিল। ডাকসুর অনেক অবদানের একটি হল- এই ডাকসু থেকেই বাংলাদেশের বড় বড় নেতা তৈরি হয়েছেন যারা শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডীতে আবদ্ধ ছিলেন না বরং পরবর্তীতে নেত্তৃত্ব দিয়েছেন দেশকে। বড় বড় তাবৎ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল ডাকসু। যেমন- ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গিণ অভুত্থ্যান, ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ কিংবা ৯১ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন। কিন্ত আশ্চর্যের বিষয় হল স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া এই ছাত্র সংসদ কেন না জানি গণতন্ত্র আসার পরই বিলুপ্ত হয়ে গেল।
অজানা উত্তর
১৯৯২ সালে ডাকসু প্যানেল বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার নির্বাচনের উদ্যোগ করা হলেও তা আর হয়ে ওঠেনি। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে যে এত শক্তিশালী একটি সংগঠন হারিয়ে গেল কেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ নিয়ে বারবার সমালোচনার মুখোমুখি হলেও না মিলেছে কোনো জবাব, না মিলেছে সুষ্ঠু সমাধান। এমনকি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ তম সমাবর্তনে এসে ডাকসু নির্বাচনের কথা বলে গিয়েছিলেন। কিন্ত সকলের চাওয়ার বিপরীতে কেন হচ্ছিল না এই নির্বাচন তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল জনমনে।
সকল ক্ষমতাশীন দলের ছাত্র সংগঠন গুলোও ডাকসু নির্বাচন চাওয়ার কথা বললেও আদৌ কি তারা চেয়েছিল? এরশাদ সরকারের পতনের পর যে শীর্ষ দুল গুলো পালাক্রমে দেশ শাসন করেছিল তারাও কি নির্বাচন আসলেই চেয়েছিল। মনে হয় না। কারণ শীর্ষ দু দলই ছাত্রদের শক্তি সম্পর্কে অবগত ছিল। তারা জানতো ছাত্ররা বরাবরই প্রশাসন বিরোধী। প্রশাসনের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে যাওয়া নতুন কিছু নয়। আর এ কারণে প্রশাসনকে বাঁচাতেই কেউই উদ্যোগ নেয়নি নির্বাচনের।
আবার আশার আলো
দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় অবশেষে ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী আদালতে রিট করেন। এর প্রেক্ষিতে কেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন কেন হবে না তা জানতে চেয়ে আদালত রুল জারি করেন। অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় ডাকসু নির্বাচন।
নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে যতই সমালোচনা থাক অথবা হোক পুনঃনির্বাচনের দাবি, সকল বাধা কাটিয়ে দীর্ঘ ২৮ বছর পর হয়া ডাকসু নির্বাচন দেশের একটি অন্যতম মাইলফলক হয়ে থাকবে। আশা করা যায় অচলাবস্থা কাটিয়ে ডাকসু আবার তার সোনালী গৌরব ফিরিয়ে আনবে আর সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে বইবে সুবাতাস।