ট্যাক্সি চালিয়ে-ই নিউইয়র্কে সফল ডাক্তার1 min read
Reading Time: 3 minutesবাংলা ইনফোটিউব: বেশ কিছু দিন আগে, ফেসবুকের পাতায় মোটামুটি ভাইরাল হওয়া একটি স্বাস্থ্য সর্ম্পকিত ভিডিওতে চোখ আটকে যায়। যেখানে, নিউইয়র্কের ট্যাক্সি উবার চালকরা কিভাবে স্বাস্থ্য সচেতন হবেন , সে বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছিলেন একজন ডাক্তার, । প্রায় হাজার বার শেয়ার আর লক্ষবার দেখা ঐ ভিডিও টি দেখতে দেখতে এক পর্যায় অবাক হই, ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারের একটি কথায়। যেখানে তিনি বলছিলেন, এই শহরে আমি ১ বছর এর বেশি সময় ট্যাক্সি চালিয়েছি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই এই শহরের প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশী ট্যাক্সি চালকদের উদ্দেশ্য পরামর্শ দিচ্ছিলেন খুব সাবলীল ভাবেই।
ঐ ভিডিও’র সুত্র ধরেই ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারের সাথে যোগাযোগ করে তার সাথে কথা বলতে গিয়েই চোখ আটকে গেল তার দেয়ালে। যেখানে, নামী দামী সব চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের সার্টফিকেট সাজানো, তবে সবার উপরে আছে ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে পাওয়া তার ট্যাক্সি ডাইভিং এর সার্টিফিকেটটি।এই সেই কথা কৃতজ্ঞচিত্তে সবাইকে জানাতে কার্পন্য করেনি ডাক্তার ফেরদৌস।
বাংলা ইনফোটিউব, একটি আমাজন এসোসিয়েট-এ আপনাকে স্বাগতম! আপনার পছন্দের যে কোন পণ্য কিনুন নির্ভরতার সাথে। প্রয়োজনে চ্যাট অপশনে সরাসরি কথা বলুন।
‘ওটাই তো আমার গলার মালা। আমি যখন এখন ভাবি আমার নামজস আর পরিচিত, তখন এটার কিছুই ছিল না। আর দশজন সাধারণ অভিবাসীর মতই আমি ঘুরছিলাম এই শহরে ভাগ্যের অন্বষনে।ঐ ট্রাক্সি চালিয়েই আমি পরিবারের খরচ যুগিয়েছি, যুক্তরাষ্ট্রে ডাক্তারী পেশার জন্য প্রাকটিস সনদ পরিক্ষার খরচ যুগিয়েছি এবং শেষ দিকে এসে যখন এই ডাক্তারী অফিসটি ভাড়া নিয়েছিলাম, সেটার ভাড়া আর কর্মচারীদের বেতন তুলেছি।এমনও অনেক দিন গেছে আমি টানা ১৯ ঘন্টা চালিয়েছি হলুদ ট্যাক্সি। এখনও এসময়কার বন্ধুরা আছে আমার সাথে, আমার অবসর সময় তাদের সাথে আড্ডা দেই, এক সাথে খেলি। সত্যি কথা বলতে আমার সে সময়ের ট্যাক্সি চালক বন্ধুরাই অনেকাংশে আমার প্রকৃত বন্ধু’।-এক নিশ্বাসেই কথাগুলো বলছিলেন নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের নিবন্ধিত চিকিৎসক ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার।
ড, ফেরদৌস খন্দকার, জ্যাকসান হাইটস এর ব্যস্থতম ৩৭ স্ট্রিটে ওয়েস্ট্রান কেয়ার মেডিকেল পিসি নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়েছেন সমমনাদের নিয়ে। তার প্রতিষ্ঠানে দেশী বিদেশী অন্তত সাত জন ডাক্তার বসেন। ১৮ নভেম্বর তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে গেলে অপেক্ষমান প্রায় ১৫ জন রোগির দেখা মেলে। একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বাংলাদেশী, ভারতীয় এবং পাকিস্থানী নাগরিকদের মধ্যে যথেষ্ট খ্যাতি কুড়িয়েছেন তিনি এই দেড় দশকে। তার আগে তিনি এই শহরের একজন ট্যাক্সি ওয়ালাই ছিলেন।
>‘দেড় দশকে প্রায় অর্ধ লক্ষ রোগীর নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে তাদের মন জয় করেছি আমি। বৃদ্ধ এবং নারীদের প্রতি যথেষ্ট যত্নবান বলেই, আপনি সারাদিন আমার চেম্বারে রোগীদের ভীড় দেখতে পাবেন। আমি আমার সমস্থ ধ্যানজ্ঞান এখন এই চিকিৎসা সেবা, চিকিৎসা বিষয়ক জ্ঞান বাড়াতেই ব্যয় করি।’ বলছিলেন ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার।
রোগিদের আস্থা আর তাদের প্রতি সেবাকে আরো বিস্তৃত করতেই নতুন একটি ৭ তলা মেডিকেল সেন্টার দাড় করিয়েছেন তিনি জ্যাকসান হাইটস এর ৭০-৩৮ ব্রডওয়ে তে । উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা এই বিশাল ক্লিনিক টিতে এক সাথে অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বসার সুযোগ পাবেন । ড. খন্দকার বলছিলেন, বিক্ষিপ্ত ভাবে নানান জায়গায় চিকিছসার জন্য না গিয়ে, মানুষ যেন এক ছাদের নিচেই, প্রয়োজনীয় প্রায় সব চিকিৎসা সেবা নিতে পারে, সেই স্বপ্ন থেকেই আমি এই নতুন বিশাল মেডিকেল ভবনটি দাড় করিয়েছি। আগামি ৬ মাসের মধ্যেই পুরোদমে সেটি উদ্বোধন হবে বলে আশাবাদি তিনি।
চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখার পাশাপাশি, ফেসবুক এবং ইউটিউবে নিয়মিত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন ফেরদৌস খন্দকার। তার ফেসবুক পেইজ এর ফলোয়ার ৪০ হাজারের বেশি, আর নতুন শুরু করা ইউটিউব চ্যানেল এর সাবস্ক্রিপশন ছাড়িয়েছে ১৫ হাজার। এসবের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতেই তিনি কাজ করছেন বলে দাবী করেন প্রথম আলোর কাছে।
‘আমি বরাবরই চেয়েছে, সাধারন মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক জ্ঞানের পরিধি বিস্তার হোক। একজন মানুষ যখন ডাক্তারের চেম্বারে আসে, ডাক্তারী পরামর্শ কিন্তু তিনি একাই পান। সেটা যখন তিনি অন্যদের মধ্যে শেয়ার করেন ,সেখানে ভুলত্রুটি থাকতে পারে। ছোট ছোট কারনে যেন মানুষকে ডাক্তারের চেম্বারে দৌড়াতে না হয় সেই বিষয়ে ভেবেছি আমি অনেক দিন ধরে। এর পর, একটু একটু করে, আমি সামাজিক গনমাধ্যমকে বেছে নেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ধারনা ছড়িয়ে দিতে। এবং মানুস সেটা সানন্দে গ্রহন করেছে।আমি অনুপ্রেরনা পাই বলেই অনেক ব্যবস্থতার মধ্যেই ভিডিও রেকর্ড করি, এবং মানুষকে সচেতন করি।’ – বলছিলেন ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার।
বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্মগ্রহন কারী ডাক্তার ফেরদৌস খন্দবার যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়ে আসার আগে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।বর্তমানে কুইন্স এর মাউন্ট সিনাই হাসপাতাল, ফ্লাসিং এর নিউইয়র্ক প্রিজাভেটরী হাসপাতাল, এবং এলমার্স্ট হাসপাতালের সাথে কাজ করছেন তিনি আর তার প্রতিষ্ঠিত ওয়েষ্টার্ন কেয়ার পিসি।