জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যা: ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসনের কলঙ্কময় অধ্যায়1 min read
Reading Time: 6 minutes১৯১৯ সালে ঘটা জালিয়ানওয়ালা বাগ গণহত্যা ভারতের ইতিহাসের অন্যতম একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের মুক্তির জন্য চলমান আন্দোলনকে বন্ধ করার জন্যই গণহত্যাটি ঘটানো হয়েছিল। যদিও এই গণহত্যার পর, ভারতের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা পিছু হটার পরিবর্তে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।
১৯১৯ সালে কী ঘটেছিল সেদিন, যার ফলে জালিয়ানওয়ালা বাগের নির্দোষ লোকজনকে হত্যা করা হয়েছিল, গণহত্যার প্রধান আসামি কে ছিল এবং তাকে কোনো শাস্তি দেওয়া হয়েছিল? এই সব প্রশ্নের উত্তরই আজ জানবো।
এক নজরে–
ঘটনাস্থলঃ জালিয়ানওয়ালা বাগ, অমৃতসর, পাঞ্জাব
দিনটি ছিলঃ ১৩ এপ্রিল, ১৯১৯
মূল হোতাঃ ব্রিটিশ ভারতীয় সৈনিক ও তাদের নেতৃত্বে ডায়ার
নিহতের সংখ্যাঃ ৩৭০ এর বেশি
আহতের সংখ্যাঃ ১০০০ এর বেশি
রাওলাট অ্যাক্টের বিরোধীতা
১৯১৯ সালে, ব্রিটিশ সরকার একটি বিল ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে মার্চ মাসে পাশ করে, পরবর্তীতে এই বিল একটি আইন হয়ে ওঠে। এই আইন অনুযায়ী, ভারতের ব্রিটিশ সরকার বিশ্বাসঘাতকতা সন্দেহে কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারবে এবং জুরির সামনে উপস্থাপন ছাড়াই সন্দেহভাজন ব্যক্তির জেল দিতে পারবে। এ ছাড়া পুলিশ কোনও তদন্ত ছাড়াই দুই বছরের হেফাজতে রাখতে পারবে। এই আইন ব্রিটিশ সরকারকে ভারতে রাজনৈতিক কার্যকলাপ দমন করার ক্ষমতা দেয়।
এই আইনের সহায়তায় ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় বিপ্লবীদের নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ভারতের স্বাধীনতার জন্য চলমান আন্দোলনকে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। একারণে এই আইন মহাত্মা গান্ধীসহ অনেক নেতারা বিরোধিতা করেছিলেন। গান্ধী সমগ্র দেশে এই আইনের বিরুদ্ধে এই সত্যগ্রাহ আন্দোলন শুরু করেন।
‘সত্যগ্রাহ‘ আন্দোলনের শুরু
১৯১৯ সালে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয়। অত্যন্ত সাফল্যের সাথে সারা ভারতে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন চলছিল এবং সমগ্র স্বাধীনতাকামী মানুষ এই আন্দোলনের সাথে ছিলেন। ১৯১৯ সালের ৬ এপ্রিল ভারতের অমৃতসর শহরে এই আন্দোলন চলাকালে একটি ধর্মঘট চালানো হয় এবং রোল্যাক্ট অ্যাক্টের বিরোধিতা করা হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে এই অহিংস আন্দোলন সহিংস আন্দোলনের রূপ নেয়।
৯ এপ্রিল, পাঞ্জাবের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করে সরকার। এদের মধ্যে ছিলেন ড. সাইফুদ্দীন ও ডা. সত্যপাল। এই দুই নেতাকে গ্রেফতারের পর ব্রিটিশ পুলিশ তাদের অমৃতসর থেকে ধর্মসালায় স্থানান্তর করে।
অমৃতসরের এই দুই নেতা মানুষের মধ্যে খুব জনপ্রিয় ছিলেন। এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে তাদের মুক্তির লক্ষ্যে তারা ডেপুটি কমিশনার আরভিন মিলস এর সাথেও দেখা করতে চাইছিলেন। কিন্তু ডেপুটি কমিশনার এই লোকদের সাথে দেখা করতে অস্বীকার করেন। এর ফলে এই রাগান্বিত জনতা রেলওয়ে স্টেশন, টেলিগ্রাফ বিভাগ সহ বিভিন্ন সরকারী অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। এই আগুনে সরকারি কর্মকাণ্ড খুব খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল, কারণ টেলিগ্রাফের মাধ্যমেই সেই সময়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ করা হয়। এই সহিংসতার কারণে তিনজন ব্রিটিশ নাগরিক নিহত হন। ফলে ব্রিটিশ সরকার এই হত্যাকান্ডের জন্য অত্যন্ত রেগে যায়।
ডায়ারের অমৃতসরের দায়িত্ব গ্রহণ
ভারতীয় ব্রিটিশ সরকার অমৃতসরের খারাপ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য রাজ্যের দায়িত্ব মিলস আরভিং এর হাত থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ারের কাছে হস্তান্তর করে এবং ডায়ার, ১১ এপ্রিল থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করে। পাঞ্জাব রাষ্ট্রের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এই রাজ্যের অনেক শহরে ব্রিটিশ সরকার একটি সামরিক আইন প্রয়োগ করেছিল। এই আইনের অধীনে, নাগরিকদের জনসমাবেশের আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
মার্শাল ল অধীনে, যেখানেই তিন জনের বেশি লোক পাওয়া যাচ্ছিল, তাদের গ্রেফতার করে জেলে রাখা হচ্ছিল। প্রকৃতপক্ষে, এই আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার বিপ্লবীদের একসাথে হওয়া আর বৈঠক করা থেকে আটকাতে চেয়েছিল। তাই বিপ্লবীরা কোনঠাসা হয়ে পড়ে এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারছিল না।
১২ এপ্রিল, ব্রিটিশ ভারতীয় সরকার অমৃতসরের অন্য দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছিল যারা ছিলেন চৌধুরী বুগা মল ও মহাস রতন চাঁদ। এই নেতাদের গ্রেপ্তারের পর, অমৃতসর জনগণের মধ্যে ক্রোধ শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। যার ফলে এই শহরের পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে মনে করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোরভাবে ব্রিটিশ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সেই কালো দিন
১৩ ই এপ্রিল, অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালা বাগে বেশ লোক জড়ো হয়েছিল। এই দিনে এই শহরে কারফিউ আরোপ করা হলেও এই দিনে বৈশাখী উৎসবও ছিল যা পাঞ্জাবের মানুষদের সবচেয়ে বড় উৎসব। যার ফলে বিপুলসংখ্যক লোক অমৃতসরের গোল্ডেন টেম্পল, অর্থাৎ স্বর্ণমন্দিরে প্রার্থণা করতে এসেছিলেন। জালিয়ানওয়ালা বাগ স্বর্ণ মন্দিরের কাছাকাছি ছিল। এই বাগানটি দেখার জন্য অনেক সেখানে পরিবার নিয়ে, সন্তান নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল। এদিন বাগে ২০,০০০ লোক উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে কয়েকজন এসেছিলেন তাদের নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে। কিন্তু তা ছাড়া বেশিরভাগ মানুষই এসেছিলেন ঘুরতে, আনন্দ করতে। কিন্তু কে জানত তাদের আনন্দে রক্তের ছোপ লেগে যাবে।
সকাল ১২ টা বেজে ৪০ মিনিট। জালিয়ানওয়ালা বাগের সভার ব্যাপারে ডায়েরকে জানানো হয়। এই তথ্য পাওয়ার পর, ডায়ার প্রায় ৪ টার দিকে দফতর ছেড়ে প্রায় ১৫০ সৈনিক নিয়ে বাগের উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা হন। ডায়ারের মনে হয়েছিল যে দাঙ্গা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই জমায়েত হচ্ছে। তাই, বাগে পৌঁছানোর পর উপস্থিত জনতাকে কোন সতর্কবাণী না দিয়েই সৈন্যদের গুলি চালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। বলা হয় যে এই সৈন্যরা নাকি প্রায় ১০ মিনিট বিনা বিরতিতে টানা গুলি চালিয়েছিল। এ সময়ে, মানুষ গুলি থেকে বাঁচতে পালাতে চাইছিল কিন্তু বাগের মূল ফটকটিও সৈন্য দিয়ে ঘেরা ছিল। বাগানের চারপাশে ছিল ১০ ফুট উঁচু দেয়াল। এই দেয়াল টপকে অনেকে পার হতে পারলেও বেশিরভাগ মানুষই আটকে পড়ে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই বাগানের রঙ লাল হয়ে যায়।
লাশের সারি
এই হত্যাকান্ডে ৩৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে ছোট শিশু ও নারী। এই গণহত্যাতে সাত সপ্তাহের শিশুকেও রেহাই দেয়া হয়নি। এ ছাড়াও, বাগের কূপ থেকে ১০০ টিরও বেশি মৃতদেহ সরানো হয়েছে। লাশগুলো বেশিরভাগই ছিল শিশু ও মহিলাদের। তার মানে বোঝা যাচ্ছে যে গুলি এড়ানোর জন্য মায়েরা সন্তান নিয়ে কূপের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, কিন্তু তারপরও তারা তাদের জীবন বাঁচাতে পারেনি। কংগ্রেস পার্টি দাবি করে এই গণহত্যায় প্রায় ১০০০ নিহত এবং প্রায় ১৫০০ আহত হন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার কেবল প্রায় ৩৭০ জন লোকের মৃত্যুর কথা স্বীকার করে। যাতে তাদের দেশের ভাবমূর্তি সারা বিশ্ব জুড়ে ঠিক থাকে।
ডায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন
এই গণহত্যার নিন্দা ভারতের সকল নেতারা এক যোগে বিশ্বে দরবারে করেন এবং এর ফলে ভারতের স্বাধীনতার আগুন দেশের কোণায় কোণায় পৌঁছে যায়। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের কিছু কর্মকর্তারা এই হত্যাযজ্ঞকে এবং ডায়ারের সিদ্ধান্ত কে সঠিক বলে মনে করেছিল।
এতগুলো নিরীহ মানুষ হত্যার পর ডায়ার হেড অফিসে রিপোর্ট করলে লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাইকেলকে একটি চিঠি মাধ্যমে বলেন যে ডায়ার কাজ অত্যন্ত নিখুঁত ছিল এবং আমরা তা স্বীকার করি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর প্রতিবাদ
জালিয়ানওয়ালাবাগ এর ঘটনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর কাছে গেলে তিনি এ ঘটনায় ভীষণ দুঃখ পান। এ ঘটনায় তিনি এতটাই আঘাত পান যে, এর প্রতিবাদে তিনি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক দেয়া ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লর্ড চেমসফোর্ড, যিনি সেই সময়ে ভারতের ভাইসরয়, তাকে লেখা চিঠিতে এ কথা জানান। এই উপাধিটি ১৯১৫ সালে রবীন্দ্রনাথকে দেওয়া হয়েছিল।
জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার কমিটি (হান্টার কমিটি)
১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালা বাগের ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং এই কমিটির প্রধান লর্ড উইলিয়ম হান্টারকে করা হয়। উইলিয়াম হান্টার ছাড়া, কিছু ভারতীয়সহ এই কমিটিতে আরও সাতজন ছিলেন। কমিটি জালিয়ানওয়ালা বাগ গণহত্যার পেছনের ঘটনা পরীক্ষা করে এটিই জানার চেষ্টা করেছিল যে ডায়ার জালিয়ানওয়ালাবাগে যে নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছিল তা ঠিক ছিল কি ভুল ছিল।
১৯১৯ সালের ১৯ নভেম্বর ডায়েরকে কমিটির সামনে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিল এবং তাকে হত্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। ডায়ার কমিটির সামনে তার বয়ানে যা জানায়, সে হিসেবে সকাল ১২ টা ৪০ এ ডায়ার জালিয়ানওয়ালাবাগে বিপ্লবীদের বৈঠক সম্পর্কে জানতে পারেন কিন্তু তিনি তখনও কোন পদক্ষেপ নেন নি। ডায়ার এর মতে প্রায় ৪ টার দিকে সৈন্যদের সঙ্গে তিনি বাগের দিকে রওয়ানা দেন এবং তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে, সভায় কোন ধরণের বৈঠক যদি হয়, তাহলে তাদের উপর গুলি করা শুরু করা হবে।
কমিটির সামনে ডায়ের এটিও স্বীকার করেছিলেন যে, যদি তিনি চাইতেন, তিনি জনগণকে গুলি না করেই ছাড়িতে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি এটা করেননি। কারণ তিনি মনে করেছিল যে যদি তাদের ছেড়ে দেয়া হয় তবে মানুষ সেখানে আবার জড়ো হবে এবং ডায়েরের উপরে হাসবে। ডায়ার নিজের সাফাই গাইতে গিয়ে জানান যে তিনি জানতেন যে তারা সবাই বিদ্রোহী ছিলেন, তাই তার দায়িত্ব ছিল তাদের গুলি করা। ডায়ের আরও পরিষ্কার করে বলেন যে আহতদের সাহায্য করা তাদের দায়িত্ব ছিল না। হাসপাতাল খোলা ছিল ও আহতরা তাদের চিকিৎসা নিজেই করতে পারত। এতটাই নিষ্ঠুর আর কঠিন মনের মানুষ ছিল ডায়ার।
কমিটি ৮ ই মার্চ হান্টার কমিটি নিজের রিপোর্ট প্রদান করে এবং জানায় ডায়ারের সিদ্ধান্ত একেবারেই ভুল ছিল। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের উপর গুলি চালানো ডায়ারের ভুল ছিল। ডায়ার তার সীমা অতিক্রম করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে পাঞ্জাবে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর কোন ষড়যন্ত্রই হয়নি। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, ২২ মার্চ ডায়েরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং তাকে চাকরি থেকে অবসর দেয়া হয়।
উইনসটন চার্চিল, যিনি সেই সময়কার সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ওয়ার ছিলেন, তিনি ১৯২০ সালে হাউজ অব কমন্সে এক বক্তৃতায় জানান যারা গুলি বর্ষণে মারা গিয়েছিল তাদের কাছে কোন অস্ত্র ছিল না, শুধু লাঠি ছিল। গুলিবর্ষণ শুরু হলে এই নিরস্ত্র জনতা জীবন বাঁচাতে এদিক ওদিক ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। যখন এই লোকেরা জীবন বাঁচাতে এখানে সেখানে লুকিয়ে পড়ে, সেখান থেকে খুঁজে বের করে তাদের গুলি করা হয়। চার্চিল ছাড়াও, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও এই গণহত্যা কে বড় ভুল বলে আখ্যায়িত করেন।
ডায়ার হত্যা
ডায়ার অবসর নেওয়ার পর লাইদানে নিজের অবসর জীবন কাটাতে শুরু করলেন। কিন্তু ১৩ মার্চ, ১৯৪০ সাল ছিল তার জীবনের শেষ দিন। জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার প্রতিশোধ নিতে উধম সিং ডায়ারকে ক্যাক্সটন হলে গুলি করে হত্যা করে। সিং একজন ভারতীয় বিপ্লবী যার সম্পর্কে ধারণা করা হয় যে, ১৩ এপ্রিল যেদিন ডায়ার জালিয়ানওয়ালাবাগ আক্রমণ করে সেদিন সেও সেখানেই উপস্থিত ছিল। এমনকি গুলিতে সে আহতও হয়েছিল।
উদম সিং এর এই পদক্ষেপ দেশে বিদেশে সাধারণ জনগণের মধ্যে অনেক প্রশংসিত হয়। সংবাদপত্রে লেখালেখি হয়। যদিও ১৯৪০ সালে উধাম সিংকে লন্ডনে হত্যার জন্য ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। আদালতে উদম সিং তার পক্ষে বলেন যে তিনি ডায়ারকে হত্যা করেছেন কারণ তার এটা প্রাপ্য।
“আমি মৃত্যু থেকে ভীত নই, আমি আমার দেশের জন্য মরে যাচ্ছি”। ভারতে উদম সিং এর এই বলিদানকে সম্মানিত করা হয় এবং জওয়াহারলাল নেহেরু, ১৯৫২ সালে উদম সিং কে শহীদ হিসেবে ঘোষণা করেন।
জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যা নিয়ে চলচ্চিত্র
এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে ১৯৭৭ সালে একটি হিন্দি চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়েছিল এবং এই ছবিটির নাম ছিল জালিয়ানওয়ালাবাগ। বিনোদ খান্না ও শাবানা আজমী এই ছবিতে মূখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এ ছাড়া, ভারতের স্বাধীনতার উপর ভিত্তি করে প্রায় প্রতিটি চলচ্চিত্রে (যেমন ভগত সিং, রং দে বসন্তি) জালিয়ানওয়ালা বাগ গণহত্যা অবশ্যই দেখা যায়।
এ ছাড়াও, এই ঘটনার উপর অনেক বই লেখা হয়েছে। ১৯৮১ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত মিডনাইটস চিলড্রেন উপন্যাসে ১৩ এপ্রিলের এই ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে। এই উপন্যাসটি সালমান রুশদির লেখা একটি মাস্টারপিস।
ক্ষমা চায়নি ব্রিটিশ সরকার
ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন সময় এই গণহত্যার উপর তার দুঃখ প্রকাশ করেছে, কিন্তু এই গণহত্যার জন্য কখনোই ক্ষমা চায়নি। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ভারত সফরকালে জালিয়ানওয়ালা বাগ যান। জালিয়ানওয়ালা বাগ পৌঁছানোর পর, তিনি তাঁর জুতা খুলে ফেলেন এবং এই বাগানে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের কাছে কিছু সময় কাটান এবং ৩০ মিনিটের জন্য নীরবতা পালন করেন। অনেক ভারতীয় নেতা রানী এলিজাবেথ এর থেকে ক্ষমা আশা করছিলেন। অপরদিকে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দর কুমার গুজরাল রাণীকে রক্ষায় বলেন, রানী এই ঘটনার সময়ে জন্মগ্রহণ করেননি এবং তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে না।
ইংল্যান্ডের প্রিন্স উইলিয়াম এবং কেট মিডলটন ২০১৬ সালে ভারত এসেছিলেন, এই বিষয়ে দূরত্ব বজায় রাখতে জালিয়ানওয়ালা বাগযাননি। ব্রিটিশ মেয়র মেয়র সাদিক খান, যিনি ২০১৭ সালে স্মৃতিসৌধে গিয়ে এক বক্তৃতায় বলেছিন যে ব্রিটিশ সরকারের এই গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল।
১০০ বছর পূর্তি
২০১৯ এ এই ঘটনার ১০০ বছর পূর্তি হল। ১০০ বছর পরও এই গণহত্যা বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যার মধ্যে গণনা করা হয়। ১০০ বছর হয়ে গেলেও এর যন্ত্রণা ১০০ বছর আগের মতোই ছিল। প্রতি বছর ১৩ এপ্রিল, এই গণহত্যায় যারা প্রাণ হারায় তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।