জানুয়ারী ২০১৮ থেকে বছরে ১২ সপ্তাহের বেতনসহ ছুটি!1 min read
Reading Time: 3 minutesবিশেষ প্রতিনিধি
পরিবারের সাথে বাড়তি কিছু সময় কাটাবেন? সেই সুযোগ আসছে নিউই্য়র্কের কর্মচারীদের জন্য। এ জন্য চাকুরী হারানোর ভয় নেই, অথবা কাজ না করলে পয়সা নেই’ এমন কোন বিষয় নয়। কাজ করবেন না আপনি বছরে, ৮ সপ্তাহ, কিন্তু সেই ৮ সপ্তাহের বেতন আপনি পাবেন।এটাকেই বলা হচ্ছে পেইড ফ্যামিলি লিভ। যা কার্যকর হচ্চে সামনের বছরের জানুয়ারী থেকেই। নিউইয়র্ক রাজ্য গভর্নর এন্ড্রু কুমো এই বিল পাশ করিয়েছেন, এসেম্বিলিতে বেশ আগেই। সরকারী তথ্য বিবরনীতে এই ঘোষনা দেয়া হয়েছে, যার জন্যেই চলছে এখন শহর ব্যাপী প্রচারণা। নিউইয়র্ক স্টেট ওয়ার্কাস কমপেনসেশন বোড এই বৈতনিক ছুটির জণ্য ভুর্তুকি প্রদান করবে।
তবে, চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠান গুলো এই বাড়তি খরচের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন ইন্সুরেন্স এর মাধ্যমে । যেটার জন্য এরি মধ্যে কাজ শুরু করেছে ইন্সুরেন্স কোম্পানীগুলো। এই স্কিমে, একজন কর্মচারী যাকে একটি প্রতিষ্ঠান বছরে ৩২ হাজার ডলার দিচ্ছে , তার জন্য বছরে মাত্র ৮৭ ডলার ইন্সুরেন্স দিতে হবে কোম্পানীকে। আর যাকে, বছরে ৬৭ হাজার ডলারের বেশি বেতন দিচ্ছে, তার জন্য সপ্তাহে ১.৬৭ ডলার মত ইন্সুরেন্স ফি দিতে হবে প্রতিষ্টান গুলোকে। চাকুরীজীবি নিজেও এই ইন্সুরেন্স পলিসির মধ্যে নিজেকে অন্তভুক্ত করে উপভোগ করতে পারবেন এই বাড়তি ছুটি।
নিউইয়র্ক রাজ্যের সরকারী ওয়েব সাইটে দেয়া ঘোষনা বলা হয়েছে, ‘জানুয়ারীর ১ তারিখ থেকে প্রায় প্রতিটি বেসরকারী চাকুরীজীবিদের জন্য পরিশোধিত ছুটি’র যোগ্য হবেন’। এই পরিশোধিত ছুটি প্রাথমিক ভাবে বছরে ৮ সপ্তাহের হলেও, ২০২১ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাড়াবে বছরে ১২ সপ্তাহ। সেই হিসেবে প্রতি মাসে অন্তত ১ সপ্তাহের বৈতনিক ছুটি পাবেন কর্মচারীরা।এই নিয়মন বাস্তবায়নে রাজ্যের শ্রম অধিদপ্তর এরই মধ্যে চিঠি দেয়া শুরু করেছে নানা প্রতিষ্ঠানকে। এই নিয়মের মধ্যেই বাধ্যতামূলক করে দেয়া হচ্ছে যে, ছুটি কাটিয়ে আসার আগ পর্যন্ত কোন কর্মচারীকে চাকুরীচ্যুত করা যাবে না, এবং তার যে স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা সেটিও বলবৎ রাখতে হবে।
গভর্নর এন্ড্রু কুমো ২০১৬ সালে নিউইয়র্কে নূনতম মুজুরী বৃদ্ধির বিল পাশ করানোর পরপরই এই বৈতনিক ছুটির বিল নিয়েও জনমত তৈরীতে কাজ করেছিলেন। কিছুটা বলা চলে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর চাপ আর কুমোর রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ থেকে তিনি নিজেও এই বৈতনিক ছুটির বিলটি এগিয়ে নিয়েছেন।
‘আমি একসময় দেখলাম, আমার বাবার শেষ সময়গুলোতে আমার উচিৎ ছিল তার সাথে কিছুটা সময় কাটানো।তার হাতে হাত রাখা, তার পাশে কিছুক্ষন শুয়ে থাকা, অথবা তার সাথে একটা বিকেল ঘুরে বেড়ানো নিয়ম করে।আমি পারিনি, কেননা তখন আমার ছুটি নেয়ার সাধ্য ছিল না। আমি ছুটি নিলে, আবার সেই একই চাকুরী করতে পারবো কিনা সেটা নিয়ে সংশয় ছিল। অথচ আমার পরিবার আমার জীবিকার সমান মূল্যবান নয়, তারা আমাকে চায়, আমার মৃত্যুশর্যার বাবাও আমার সান্নিধ্য চেয়েছিল’- বিলটি উথ্বাপনের সময় আবেগ আপ্লুত কুমো বলছিলেন সেসময়।
সেই হিসেব করেই এই বৈতনিক ছুটি প্রদানের ক্ষেত্রে অবস্য কিছু বিষয়কে প্রাধাণ্য দিয়ে রাখা হয়েছে।কোন একজন কর্মজীবি তার নতুন জন্ম নেয়া সন্তানকে সময় দেয়া, দারুন অসুস্থ নিকট জনের যত্ন নেয়ার জন্য, অথবা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে যখন কোন সামরিক কর্মচারী অনেকদিন পরিবারের বাইরে, তাদের পরিবারের দেখভাল করার জন্য বিশেষ ভাবে এই ছুটি প্রযোজ্য হবে।
কারা পাবেন বৈতনিক ছুটি?
সরকারী তথ্য বিবরিনীর হিসাব অনুযায়ী যে সকল কর্মচারী গড়ে প্রতি সপ্তায় ২০ ঘন্টা করে কাজ করেন, তারা ঐ প্রতিষ্টানে ২৬ সপ্তাহ কাজ করার পর এই ছুটির জন্য যোগ্য হবেন। যেসকল কর্মচারী ২০ ঘন্টার নিচে কাজ করেন, তারা ১৭৫ দিন পর এই ছুটির জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন। সে সকল মানুষ একাধিক প্রতিষ্টানে চাকুরী করেন, তারাও এই ছুটি পেতে পারেন, সেক্ষেত্রে দুই প্রতিষ্ঠান থেকেই একত্রে নিতে হবে ছুটি। এই বৈতনিক ছুটি সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে কোন কর্মচারীর নাগরিক স্টেটাস বা অভিবাসন গত বৈধতা আছে কি নেই, সেটি বিবেচ্য হবে না। এই ছুটি নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কে ১ মাসের নোটিশ প্রদান করার বিধান রাখা হয়েছে, তবে অনেকক্ষেত্রে আগে জানানো না গেলেও, এই ছুটি উপভোগে যোগ্য হতে পারেন কেউ কেউ, যদি পরিস্থির ব্যাখ্যা থাকে তার কাছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫ টি রাজ্যে এবং ডিস্টিক্ট্র অফ কলাম্বিয়াতে এই বৈতনিক ছুটির ব্যবস্থা আছে এরি মধ্যে। ধনী দেশ গুলোর মধ্যে একমাত্র যক্তরাষ্ট্রেই জাতীয় ভাবে কোন পেইড ফ্যামিলি লিভ এর ব্যবস্থা নেই। রাজ্যগুলো আলাদা আলাদা ভাবে এটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। নিউইয়র্কে প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষ নতুন বছরের শুরু থেকেই তাদের নতুন এই সুবিধা পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন।