বিশ্ব

চূড়ান্ত বিতর্ক শেষে কে কোথায় দাঁড়িয়ে?1 min read

অক্টোবর ২৫, ২০২০ 3 min read

author:

চূড়ান্ত বিতর্ক শেষে কে কোথায় দাঁড়িয়ে?1 min read

Reading Time: 3 minutes

চূড়ান্ত টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিয়ে ফেলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প আর জো বাইডেন। দুই পক্ষের বিতর্কের শেষে বিভিন্ন গণমাধ্যম অবশ্য ট্রাম্প বা বাইডেনকে নয় বরং বিজয়ী ভাবছেন কৃষাঙ্গ উপস্থাপিকা ক্রিস্টেন ওয়ালকারকেই। নিজের দায়িত্ব বেশ ভালোভাবেই পালন করেছেন এনবিসি নিউজের এই হোয়াইট হাউজ প্রতিনিধি। ১৯৯২ সালে এনবিসি নিউজের ক্যারল সিম্পসনের পর তিনিই প্রথম কৃষাঙ্গ মহিলা যিনি প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের সঞ্চালক ছিলেন। প্রথম বিতর্কে দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর কথার স্রোতে রীতিমতো দিশেহারা ছিলেন ফক্স নিউজের সঞ্চালক ক্রিস ওয়ালেস। এদফায় অবশ্য মিউট বাটনের ব্যবহার নিবৃত্ত করতে পেরেছে দুই প্রার্থীকে।

আমিই সবচেয়ে কম বর্ণবাদী

“যদিও দর্শকদের আমি দেখতে পাচ্ছিনা, কারণ তারা সবাই অন্ধকারে আছেন। কিন্তু আমি নিশ্চিত আমার যতদূর চোখ যায় আমিই সবচেয়ে কম বর্ণবাদী”

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বক্তব্য বেশ শোরগোল ফেলে দিয়েছে নেটিজেনদের মাঝে। ট্রাম্পের দাবী আব্রাহাম লিঙ্কনের পর কৃষাঙ্গদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রভাব তিনিই রেখেছেন। স্বাভাবিকভাবেই এই কথায় আরো একবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের খামখেয়ালি মনোভাব প্রকাশিত হয়। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর যেখানে এখনো সারাবিশ্বেই ‘ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটার্স’ এর আন্দোলন চলছে সে সময়ে ট্রাম্পের এমন কথায় আবারো প্রকাশ পেয়েছে, তিনি হয়ত এখনো পর্যন্ত মার্কিন জনগণের কাছাকাছি যেতে সক্ষম হননি। কৃষাঙ্গদের অধিকারের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবেই বর্ণবাদ ইস্যুতে ট্রাম্পের নিন্দা করেছেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রসঙ্গ এসেছে মেক্সিকান সীমান্তে দেয়াল ও মেক্সিকানদের প্রতি ট্রাম্পের নেতিবাচক মনোভাব নিয়েও। এমনকি ইসলাম ধর্ম ও মুসলমান সমাজ নিয়েও ট্রাম্পের আচরণের নিন্দা করেছেন জো বাইডেন।

তবে এখানে ট্রাম্প যথেষ্ট চুপ ছিলেন। সেটা কি কেবল পরাজয় মেনে নেয়া নাকি সঞ্চালকের কৃতিত্ব তা নিয়ে দ্বিমত আছে।

স্বাস্থ্যনীতিতে বিভক্ত দুই প্রার্থী

বিগত চার বছর ধরে যে কথা বলে আসছিলেন ঠিক একই কথাই আবারো বলতে বাধ্য হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী কদিনের মাঝেই নতুন স্বাস্থ্যনীতি আসছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্সির শুরু থেকেই বারাক ওবামার স্বাস্থ্যনীতির ব্যাপক সমালোচনা করলেও নতুন স্বাস্থ্যনীতি চালু করতে পারেননি বর্তমান প্রেসিডেন্ট। আর জো বাইডেনের মতে, মার্কিন জনগণ আরো সহজ স্বাস্থ্যনীতির দাবি রাখে। তাদের আরও সহজ নীতির প্রয়োজন এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে ‘বাইডেনকেয়ার’ সেই দাবি পূরণ করবে।

দেশ না, ভাইরাস বন্ধ করুন

পুরো আলোচনাতেই আরো একবার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল করোনা ভাইরাস। ব্যক্তিজীবনে ব্যবসায়ী ট্রাম্প ভাইরাস ইস্যুতে কথা বলেছেন ব্যবসায়ীর মতো করেই। তার দাবী, চাইলেই জো বাইডেনের মতো ঘরে বসে থাকা সম্ভব নয়। সারাদেশ বন্ধ করে রাখা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না তার পক্ষে। অন্যদিকে সাবলীল জবাব দিয়েছেন জো বাইডেন। তিনি এক বাক্যেই বলেছেন, দেশ নয় ভাইরাস বন্ধ করুন।

ট্রাম্পের দাবী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এবং ভাইরাস একসময় দূর হয়ে যাবে। অপরদিকে জো বাইডেন বলেছেন, “নিউইয়র্ক কি করছে সেটা দেখুন। তারা ভাইরাস সংক্রমণ রেখা কমিয়ে আনার জন্য দারুণ চেষ্টা করেছে। তারা মৃত্যুর হার কমিয়ে এনেছে। আর আমি তার (ডোনাল্ড ট্রাম্প) মতো করে লাল রাজ্য বা নীল রাজ্য আলাদা করে দেখছিনা। বরং সবমিলিয়ে এটাই যুক্তরাষ্ট্র।“

জরিপে বিজয়ী বাইডেন

চূড়ান্ত টেলিভিশন বিতর্কে ট্রাম্পের ৪২ মিনিটের বিপরীতে জো বাইডেন কথা বলেছেন ৩৮ মিনিট। তবে সিএনএন পরিচালিত জরিপে বিতর্ক উপভোগ করা মানুষের মাঝে ৫৩ শতাংশের মত গিয়েছে বাইডেনের দিকেই। আর ৩৯ শতাংশের দাবী এই বিতর্কের জয়ী ব্যক্তি ট্রাম্প। বাকিরা ছিলেন নিরপেক্ষ। সিএনএন পরিচালিত জরিপে অংশ নেয়া মানুষের মাঝে ৩২ শতাংশ ছিলেন ডেমোক্র্যাট সমর্থক আর ৩১ শতাংশ ছিলেন রিপাবলিকান সমর্থক। যদিও এই বিতর্ক মানুষের মাঝে ব্যাপক কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি। বিতর্কের আগে বাইডেনের জনসমর্থন ছিল ৫৫ শতাংশ। সেটি এই বিতর্ক শেষে ৫৬ শতাংশ হয়েছে। আর ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে ১ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৪১ শতাংশে।

কি অপেক্ষা করছে সামনের দিনগুলোতে

প্রথম বিতর্কে রীতিমতো কাঁদা ছোড়াছুড়ি করেছিলেন দুই প্রার্থী। সঞ্চালক ক্রিস ওয়ালেসকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। সে তুলনায় দারুণ জমেছিল দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বিতর্ক। বাইডেনের রানিংমেট কামালা হ্যারিস বেশ ভালোভাবেই লড়তে পেরেছিলেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের বিপক্ষে। প্রায় ৬৯ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন হ্যারিস দারুণ দক্ষতা দেখিয়েছেন বিতর্কে। আর মাইক পেন্সের ক্ষেত্রে সেটি ছিল ৬০ শতাংশ এর কম।

৩ তারিখের নির্বাচনের আগে শেষ বিতর্কে অবশ্য নিজের রানিংমেটের মতোই দক্ষতা দেখিয়েছেন জো বাইডেন। তবে মূল কাজ এখনো বাকি। এখনো প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মার্কিন নাগরিক নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছেন। এই মানুষদের নিজের ক্যাম্পেইনে নিয়ে আসাই বড় চ্যালেঞ্জ দুই প্রার্থীর সামনে। সেদিক থেকে কিছুটা চাপে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বেশ কিছু কারণে এখনো জনগণের কাছ থেকে অনেকটা দূরে রয়েছেন ট্রাম্প। বিশেষ করে অভিবাসী, মেক্সিকান সীমান্তে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া শিশু এবং কোভিড ইস্যুতে অনেকখানিই পিছিয়ে আছেন তিনি। আর জো বাইডেনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মূলত চাপ সামলে চলা।

বাইডেন সমর্থকদের মতে শেষ বিতর্কে এসে ট্রাম্পের পাশার দান সম্পূর্ণ উলটে দিয়েছেন বাইডেন। বিশেষ করে আয়কর সংক্রান্ত প্রশ্নে ট্রাম্প যে বেশ বেকায়দায় ছিলেন তা সবার কাছেই স্পষ্ট ছিল। তবে আশঙ্কার দিক হলো বিদেশী হস্তক্ষেপ নিয়ে। ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন উত্তর কোরিয়ান সামরিক নেতা কিম জং উন তার ভাল বন্ধু। এবং কিম যথেষ্ট ভালো একজন মানুষ। ট্রাম্প মনে করেন, কিমও তার ব্যাপারে একই ধারণা পোষণ করেন। এখানেই নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারণ এখনো পর্যন্ত বেশিরভাগ মার্কিনীর কাছেই কিম জং উন একজন খলনায়ক হিসেবেই বিবেচ্য। অন্যদিকে বিদেশী হস্তক্ষেপ প্রশ্নে, ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন মার্কিন নির্বাচনে ইরান ও রাশিয়া হস্তক্ষেপ করতে আগ্রহী। তিনি অভিযোগ করেছেন বিদেশী এই হস্তক্ষেপ কেবলই তার পরাজয় নিশ্চিত করার জন্যে। যদিও অতীত জানান দিচ্ছে, বিদেশী হস্তক্ষেপের জেরেই হোয়াইট হাউজের টিকেট পেয়েছিলেন ট্রাম্প। বাইডেন শিবিরে তাই শঙ্কা আর বিজয়ের আনন্দ দুটোই এখন সমান্তরাল অবস্থানে।

লেখক- জুবায়ের আহম্মেদ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *