চকলেট আবিষ্কার হয়েছে যেভাবে1 min read
Reading Time: 2 minutesবর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধরণের ও আকারের চকলেট রয়েছে। তবে আমরা এখন যেরকম চকলেট দেখি, এটি চকলেটের প্রথম রুপ নয়। মূলত শোকোলাটল বা জোকোলাটল(Xocolatl) নামক এক ধরনের পানীয় থেকে ক্রমাগত পরিবর্তন পরিবর্ধন ও উন্নয়নের মাধ্যমে চকলেট আজকের রূপ ধারণ করেছে।
চকলেট আবিষ্কারে প্রধান অবদান রেখেছে মধ্য আমেরিকার মায়া ও অ্যাজটেক সভ্যতা। তবে চকলেটের প্রসারে ও উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ইউরোপীয়রা। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন ও ওরিনোকো নদীর অববাহিকায় কোকো বা ক্যাকাউ (Cacao) নামের এক ধরনের উদ্ভিদ জন্ম নিতো। এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম হলো থিওব্রোমা কোকো(Theobroma Cacao)। গ্রিক শব্দ Theos অর্থ দেবতা আর broma অর্থ খাদ্য; ফলে শব্দটির সম্পূর্ণ অর্থ দাঁড়ায় দেবতার খাদ্য।
১১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে মধ্য আমেরিকায় কোকো গাছ ও এই গাছের বীজ অত্যন্ত মূল্যবান বস্তু হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিল। এই সময়ে তাঁরা কোকো গাছের বীজ থেকে গাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘ্রাণ উৎপন্ন করতো। তারপর তা শুকিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রোস্টের মতো তৈরি করতো। এরপর তাপ দিয়ে বীজের খোসা ছাড়িয়ে ফেলে দিতো। খোসা ছড়ানোর পর যা অবশিষ্ট থাকতো তাকে বলা হতো নিব। আর এই নিবের সঙ্গেই বিভিন্ন মসলার সংমিশ্রনে তৈরি করতো এই শোকোলাটল।
এই পানীয় তিক্ত প্রকৃতির হলেও তখনকার সময়ে এটি অভিজাত শ্রেণীর মানুষেরা কাছে জনপ্রিয় ছিল এবং বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবে এই পানীয় পান করা হতো। এই পানীয় অত্যন্ত মূল্যবান হওয়ায় তা সাধারণ মানুষের পক্ষে ক্রয় করে খাওয়া সম্ভব ছিল না। এই গাছ এতটাই মূল্যবান ছিল যে, এই কোকো গাছের বীজ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
বিখ্যাত পরিব্রাজক কলম্বাস ইউরোপে কোকো বীজ প্রথম নিয়ে আসলেও বিখ্যাত স্প্যানিশ যোদ্ধা হার্নান কোর্টেসের মাধ্যমে ইউরোপে শোকোলাটল পানীয় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তিনি কোকো বীজ মেক্সিকো থেকে জাহাজে করে নিয়ে এসে শোকোলাটল তৈরি করে এটির সঙ্গে চিনি ও অন্যান্য সুগন্ধি জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে স্পেনের রাজা পঞ্চম চার্লসকে খেতে দেন। এটি পান করে রাজা অত্যন্ত খুশি হন। ক্রমেই স্পেনের রাজপরিবারের এই পানীয় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। একটি মজার ব্যাপার হলো স্প্যানিশ রাজকুমারী মারিয়া থেরাসা ও ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুইয়ের মধ্যে বিয়ে ঠিক হলে মারিয়া থেরেসা উপহার হিসেবে এই কোকো বীজ ফরাসি রাজ পরিবারে পাঠায়। সেখান থেকে ফ্রান্সেও চকলেটের আদিরূপ শোকোলাটল ছড়িয়ে পড়ে।
ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে শোকোলাটলের পরিবর্তিত রূপ চকলেটের আবির্ভাব ঘটে যায়। আর সপ্তদশ শতকের মধ্যেই ইউরোপে পানীয় হিসেবে চকলেটের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে। এরপর উনিশ শতকে এসে পানীয় চকলেট থেকে সলিড চকলেটের আবির্ভাব ঘটে। ১৮৪৭ সালে জোসেফে ফ্রে বিশেষ উপায়ে চকলেট পেস্ট তৈরি করেন; যার মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন আধুনিক চকলেটের জনক। এরপর চকলেট তৈরীর জন্য বিভিন্ন কোম্পানির উদ্ভব ঘটে। কোম্পানিগুলো নিত্য নতুন ও বিভিন্ন স্বাদের চকলেট বাজারে নিয়ে আসার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। চকলেটের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার কারণে বেশ কিছু দেশে চকলেট জাদুঘর গড়ে উঠেছে। আবার ৭ই জুলাই বিশ্বব্যাপী চকলেট দিবস পালন করা হয়।