গুগল যেভাবে আপনাকে অনুসরণ করছে1 min read
Reading Time: 3 minutesইন্টারনেটের রাজ্যে বিচরণ করে অথচ গুগলের নাম শোনে নি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে গুগল ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত। আপনি যখন গুগল ব্যবহার করেন, তখন গুগল আপনাকে অনুসরণ করে এবং আপনার বিভিন্ন তথ্য জেনে নেয়। গুগল কীভাবে আমাদের ট্র্যাক করে, ট্র্যাকিং করে কী ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে, আবার আপনি যদি গুগলের এই ট্র্যাকিং বন্ধ করতে চান, তাহলে কোনো ব্যবস্থা আছে কি না? থাকলে সেগুলো কী? এসব বিষয় নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা থাকছে এই লেখাটিতে।
ট্র্যাকিংয়ের উপায়
১.সার্চ ইঞ্জিন
আপনি যখন সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে কোনো তথ্য খোঁজ করেন, তখন গুগল আপনার আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে আপনাকে সহজেই ট্র্যাক করতে পারে এবং আপনি কী ধরনের তথ্য খোঁজ করেন তাও জেনে যায়। খেয়াল করলে দেখবেন পরবর্তীতে আপনি যখন আবার কোনো তথ্য খোঁজ করার জন্য সার্চ ইঞ্জিনে শব্দ লেখা শুরু করেন, তখন সার্চ বারে আপনার আগ্রহের বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শব্দগুলো গুগল সহজেই প্রদর্শন করতে পারে।
২.ইমেইল
আপনি যখন জিমেইল সার্ভিস ব্যবহার করেন, তখন আপনার ইমেইলের কনটেন্ট, আপনার অ্যাড্রেস, প্রাপকের অ্যাড্রেস ইত্যাদির গুগল সহজেই স্ক্যান করে নেয়।
৩.গুগল প্লাস
আপনি গুগল প্লাস ব্যবহার করলে, স্বেচ্ছায়ই আপনি আপনার ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন বিষয় গুগলের সঙ্গে শেয়ার করেন। এতে আপনার সম্পর্কে তথ্য পেতে গুগলের বেগ পেতে হয় না।
৪.ব্রাউজার
ক্রোম, ফায়ারফক্স ইত্যাদি ব্রাউজার কিংবা ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার সঙ্গে গুগলের সরাসরি সম্পর্ক বিদ্যমান। কোনো ব্যবহারকারী যখন এসব ব্রাউজার ব্যবহার করে কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে, তখন গুগল সরাসরি ঐ ব্যবহারকারীকে ট্র্যাক করতে পারে তাদের কুকিসের মাধ্যমে।
৫.অ্যান্ড্রয়েড
গুগল সরাসরি ডিভাইস থেকে তথ্য ট্র্যাক করার জন্য তাদের নিজস্ব মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড ডেভেলপ করেছে। আপনি যখন অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন, তখন অফলাইনে কী করছেন সেটাও গুগল ট্র্যাক করতে পারে। কারণ আপনার অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে গুগলের প্রবেশাধিকার আছে।
৬.গুগল এডসেন্স
ব্লগ, পেজ, ওয়েবসাইট ইত্যাদি মনিটাইজ করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে গুগল এডসেন্স। গুগল এডসেন্স গ্রহণ করার মাধ্যমে পেজ কিংবা ওয়েবসাইট মালিকেরা তাদের সাইটের উপরে গুগলের সম্পূর্ণ প্রবেশাধিকার ও কর্তৃত্ব প্রদান করে থাকে। আর এতে এইসব ব্লগ, পেজ কিংবা ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের গুগল সহজেই ট্র্যাক করতে সক্ষম হয়।
৭.গুগল এনালাইটিক্স
ব্লগ বা ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করার অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে গুগল এনালাইটিক্স। ওয়েবসাইট মালিকেরা তাদের পেজে বা সাইটে ভিজিটরদের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করার জন্য গুগল এনালাইটিক্স ব্যবহার করে থাকে। আর যখন ওয়েবসাইট মালিকরা গুগল এনালাইটিক্স ব্যবহার করে, তখন গুগল খুব সহজেই এই সাইটের ভিজিটরদের তথ্য জেনে নিতে পারে।
এছাড়াও গুগল ম্যাপ, গুগল স্ট্রিট ভিউ, গুগল অ্যাডওয়ার্ড, ইউটিউব ইত্যাদি মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে গুগল তার ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করতে সক্ষম হয় এবং ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যসমূহ জেনে নিতে পারে।
গুগল কী ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে
গুগল তার ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে। এক নজরে দেখে নিন আপনার কি কি তথ্য গুগল সংগ্রহ করে রাখে।
১. আপনার বয়স।
২. আপনার জেন্ডার।
৩. আপনার পার্সোনাল স্ট্যাটাস।
৪. আপনার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস।
৫.আপনার ব্রাউজিং ইতিহাস।
৬. আপনি কী ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করেন।
৭. আপনি কোথায় অবস্থান করছেন।
৮. আপনি প্রতিদিন কী পরিমাণ সময় গুগল ব্যবহার করেন।
৯. আপনি কোন ভাষায় লিখে থাকেন।
১০. আপনি সার্চ ইঞ্জিনের কী ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন।
১১. আপনি অনলাইনের মাধ্যমে কোন ধরনের পণ্য ক্রয় করেন।
১২. আপনি কোন ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করেন, তা আপনার অ্যাপ ইনস্টলেশন হিস্টরির মাধ্যমে জেনে যায়।
১৩. আপনার ই-মেইলের কনটেন্ট।
১৪. আপনি কোন ওয়েব সাইটে কী পরিমাণ সময় ব্যয় করেন।
১৫. আপনি কোথায় ঘুরাঘুরি বা ভ্রমন করেন।
১৬. আপনার বন্ধু কারা।
১৭.আপনি কী পছন্দ করেন এবং কী অপছন্দ করেন।
১৮. আপনার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাস কি।
কীভাবে গুগল ট্রাকিং হতে রক্ষা পাবেন
আপনি যদি নিজেকে গুগলের ট্র্যাকিয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে চান এবং নিজের পরিচয় গোপন রেখে ইন্টারনেট জগতে ঘুরে বেড়াতে চান, তবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন।
১. ভিপিএন ব্যবহার করুন
ভিপিএন তার ব্যবহারকারীদের তথ্য এনক্রিপ্ট করার মাধ্যমে পরিচয় গোপন রাখতে সাহায্য করে থাকে। ভিপিএন অনেকটা সুড়ঙ্গের মতো, এই সুড়ঙ্গের মধ্যে ব্যবহারকারী প্রবেশ করলে আইপি অ্যাড্রেসসহ অন্যান্য তথ্য এনক্রিপ্ট হয়; এতে ব্যবহারকারী যে ওয়েবসাইটেই প্রবেশ করুক না কেনো, গুগল কিংবা অন্য কেউ ঐ ব্যবহারকারীর সঠিক পরিচয়, ব্যক্তিগত তথ্য ও আইপি অ্যাড্রেস ট্র্যাক করতে পারে না।
২. টর(TOR) নেটওয়ার্ক
ইন্টারনেটের জগতে নিজেকে গোপনীয় অবস্থায় রাখার ক্ষেত্রে ভিপিএনয়ের চেয়েও শক্তিশালী একটি মাধ্যম হচ্ছে টর নেটওয়ার্ক। টর নেটওয়ার্ক কয়টি স্তর বিশিষ্ট এবং প্রতিটি স্তরেই ব্যবহারকারীর তথ্য এনক্রিপ্ট করে থাকে। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সঠিক অবস্থান, আইপি এড্রেস ও তথ্য অন্য কেউ জানতে পারে না।
৩. গুগল অ্যাকাউন্ট ডিলিট করুন
আপনার ডিভাইসে গুগল একাউন্ট সাইন-আপ করা থাকলে ডিলিট করে ফেলুন। আর সাইন-আপ করা না থাকলে, গুগল একাউন্ট সাইন-আপ করা থেকে বিরত থাকুন। এতে গুগল আপনার ব্যক্তিগত তথ্য জানতে ব্যর্থ হবে। কারণ আপনি যখন গুগল একাউন্ট সাইন-আপ করেন, তখন আপনার অনেক ব্যক্তিগত তথ্য গুগলকে জানাতে হয় এবং আপনার ডিভাইসে গুগলের প্রবেশাধিকারের অনুমতি দিতে হয়।
৪. লোকেশান বন্ধ রাখুন
আপনি যখন আপনার ডিভাইসে লোকেশন অপশন চালু রেখে বিভিন্ন সাইটে ব্রাউজিং করেন, তখন আপনাকে গুগল খুব সহজেই ট্র্যাক করতে পারে। আর আপনার লোকেশন যদি বন্ধ থাকে, তবে আপনাকে ট্র্যাক করা গুগলের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
তথ্যের ব্যবহার
আপনার মনে এই প্রশ্ন আসা খুবই স্বাভাবিক যে এই সব তথ্য দিয়ে গুগল কি করে। অনেকেই হয়ত জানেন গুগলের আয়ের একটা বড় অংশ আসে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, অ্যাপ, ইউটিউব ভিডিওতে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে। গুগল তার ব্যবহারকারীদের থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রায় নিখুঁতভাবে বিজ্ঞাপনগুলো তুলে ধরে। এতে বিজ্ঞাপনদাতারা খুব সহজেই তাদের কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকের কাছে পৌছাতে পারে। এতে বিজ্ঞাপনদাতা, সেইসাথে গুগল উভয়ের লাভটাই সমান সমান থাকে।