ক্লাসিক হরর মুভি নির্মাণের আড়ালে থাকা কিছু বাস্তব কাহিনী1 min read
Reading Time: 3 minutesহলিউডে হরর বা থ্রিলারধর্মী চলচ্চিত্রের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। The Exorcist, The Conjuring এর মতো হরর মুভিগুলো বাস্তব ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত। “এতো ভয়ংকর গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের কারণ কি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলা যাবে?” এমন প্রশ্নের উত্তর হিসেবে ভৌতিক বইগুলোর প্রকাশক বা চলচ্চিত্র নির্মাতারা একটি সহজ বাক্যের ব্যবহার করে আসছেন বহুকাল ধরে, ” গল্প নয় সত্যি“।
কিছু সিনেমা নির্মিত হয় লোকেরা বিশ্বাস করে তেমন কিছু বিশ্বাসযোগ্য গল্প নিয়ে। আবার কিছু নির্মিত হয় প্রচলিত লোককাহিনীকে কেন্দ্র করে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক হলিউড হরর মুভিতে সবকিছু প্রেতের দখলে চলে যাওয়ার পরেও আবার কিভাবে লোককাহিনীর নায়কেরা তাদের পরাজিত করে সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
Nosferatu (1922)
১৯২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জার্মান চলচ্চিত্র নসফেরাতু মূলত ব্রাম স্টোকারের ১৮৯৭ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ড্রাকুলার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত। চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মৃত স্টোকারের নিকট হতে অনুমতি নেওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই তারা সামান্য পরিবর্তন এনে গল্পটি ব্যবহার করেছে। চলচ্চিত্রে ড্রাকুলার পরিবর্তে মূল ভিলেন হিসেবে দেখানো হয়েছে অরলোককে।
সিনেমায় কিছু অংশের বর্ণনা মূল গল্পের চেয়ে দীর্ঘ ছিলো। ধারণা করা হয় যে, ভ্যাম্পায়ারের আধুনিক ধারণা প্রাচীন ইউরোপীয় লোককথা থেকে এসেছে। কীভাবে রোগ ছড়ায় তা আবিষ্কার করার আগে ভ্যাম্পিরিজম সম্ভবত একটি মাধ্যম ছিলো সাধারণ লোককে বোঝানোর জন্য কিভাবে প্লেগ, যক্ষ্মা এবং অন্যান্য অদেখা অসুস্থতার কারণে মৃত্যু ঘটে। বিভিন্ন অঞ্চল ভ্যাম্পায়ারের প্রভাব বন্ধ করতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতো। রোমানিয়ায় সন্দেহভাজন ভ্যাম্পায়ারের হৃদপিন্ড কেটে পুড়িয়ে ফেলা হতো।
The Exorcist (1973)
১৯৪৯ সালের আগস্টে, ওয়াশিংটন পোস্ট মেরিল্যান্ডে ১৪ বছরের একটি ছেলের আত্মত্যাগ সম্পর্কে কমপক্ষে দুটি গল্প লিখেছিলেন। একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, “ছেলেটি এমন একটি ভাষা (ল্যাটিন) উচ্চারণ করে অভিশাপ দিত যা তার অজানা ছিলো।” লেখক উইলিয়াম পিটার ব্লেট্টির লেখক উইলিয়াম পিটার ব্লেট্টির ১৯৭১ সালে প্রকাশিত উপন্যাস দ্য এক্সোরিস্টকে কেন্দ্র করে ১৯৭৩ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়।
মার্ক অপ্পাসনিক নামক একজন মেরিল্যান্ডের গল্পটি সম্পর্কে অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন এবং ১৯৯৯ সালে সে অনুসন্ধানের ফলাফল স্ট্রঞ্জ ম্যাগাজিনে প্রকাশ করেছিলেন। তিনি ছেলেটিকে চিহ্নিত করে এমন লোকদের সাক্ষাৎকার নেন যারা তাঁকে চিনে (যদিও তিনি ছেলের নাম প্রকাশ করেননি)। তিনি জানান, ছেলেটির মানসিক সমস্যা ছিলো তাই সে পুরোহিতের ল্যাটিন নকল করছিলো।
The Amityville Horror (1979)
১৩ নভেম্বর, ১৯৭৪ সালে ২৩ বছর বয়সী রোনাল্ড “বুচ” ডিফিও জুনিয়র ঘুমের মধ্যে তার পুরো পরিবারকে হত্যা করেছিলো। এক বছর পরে, লুটজ পরিবার নিউইয়র্কের অ্যামিটিভিলের বাড়িটি কেনার পর সম্মুখীন হতে থাকেন নানা রকম অলৌকিক ঘটনার। জর্জ এবং ক্যাথি লুৎস জানান, ঘরটিতে নানারকম ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন তাদের হতে হয়েছে। দেওয়াল থেকে সবুজ কাঁচা ঝর্ণা, লাল চোখযুক্ত একটি প্রাণী এমন অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনার সাক্ষী তারা।
তাদের অভিজ্ঞতার কাহিনী স্থান পেয়ছিলো জয় আনসনের ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত “দ্য অ্যামিটিভিল হরর ” বইটিতে। পরবর্তীতে একই শিরোনামে ১৯৭৯ সালে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়, যা আরও অনেক সিনেমা নির্মাতাকে অনুপ্রাণিত করেছিলো। বুচ ডিফির আইনজীবী পরে স্বীকার করেছেন যে তিনি, জর্জ এবং ক্যাথি “অনেকগুলো বোতল ওয়াইন শেষ করে এই মনগড়া ভৌতিক গল্পটি তৈরি করেছিলেন।”
The Serpent and the Rainbow (1988)
১৯৮৫ সালে ওয়েড ডেভিস নামে একজন স্নাতক ডিগ্রীধারী হোয়াইট আমেরিকান শিক্ষার্থী “The Serpent and the Rainbow” নামক দীর্ঘ শিরোনামে একটি বই প্রকাশ করে। যে বইটিতে স্থান পেয়েছে হার্ভার্ড সায়েন্টিস্টের ভুডো, জম্বি এবং ম্যাজিকের অবাক করা যাত্রা। এতে ডেভিস দাবি করেছেন যে, গোপন হাইতিয়ান সমাজগুলো টেট্রোডোটক্সিন ব্যবহার করেছে। গল্পটি হরর ফিল্মমেকার ওয়েস ক্র্যাভেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরবর্তীতে তিনি ১৯৮৮ সালে কাহিনীটি চলচ্চিত্ররূপে দর্শকদের কাছে উপস্থাপন করেন।
The Conjuring (2013)
এড এবং লোরেন ওয়ারেন তাদের কয়েক দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এত বেশি হান্টিং প্রচার করেছিলেন যে একসময় তারা নিজেরাই হরর মুভি চরিত্রে পরিণত হয়েছিলেন। অভিনেতা প্যাট্রিক উইলসন এবং ভেরা ফার্মিগা এই জুটি The Conjuring (2013), The Conjuring 2 (2016), The Nun (2018) and Annabelle Comes Home (2019) এই ছবিগুলোতে অভিনয় করেছেন। ২০২০ সালে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা Conjuring 3 ছবিতে তাদের আবার জুটি হিসেবে দেখা যাবে বলে শোনা যাচ্ছে।
প্রথম কনজুরিং মুভিটি পেরোন পরিবার সম্পর্কে, যিনি ১৯৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে দাবি করেছিলেন যে প্রেতরা তাদের রোড আইল্যান্ডের বাড়িতে অবস্থান করছে। মুভিটিতে ওয়ারেনের মামলার কিছু ছায়া রয়েছে। দ্বিতীয় কনজুরিংটি ৭০ দশকের শেষের দিকের এনফিল্ড পল্টরিজিস্টের সাথে জড়িত। “এটি কোন রূপকথার গল্পগুচ্ছ নয়“, এড ওয়ারেন ১৯৭০ দশকের গোড়ার দিকে কানেক্টিকাট ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন্টাই বলেছিলেন।
কনজুরিং ৩ সম্ভবত ১৯৮১ সালের একটি গণহত্যা বিচারের দিকে মনোনিবেশ করবে যেখানে আসামী আর্নে শায়েন জনসন দাবি করেছিলেন যে তিনি নির্দোষ ছিলেন কারণ অপরাধের সময় তাকে শয়তান প্রভাবিত করেছিলো।