featured খেলা

কোন পথে বাংলাদেশের ফুটবল?1 min read

অক্টোবর ১১, ২০১৯ 3 min read

author:

কোন পথে বাংলাদেশের ফুটবল?1 min read

Reading Time: 3 minutes

একটু একটু করে যেন আশার আলো উঁকি দিচ্ছে বাংলদেশের ফুটবলে। সত্তর আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকের পর থেকে ফুটবল উন্মাদনার নিম্নগামী গ্রাফ যেন খানিক আলোর মুখ দেখেছে গত দেড় দুই বছরের মাঝে। সালাম মুর্শেদী, সালাহউদ্দিন, আশফাক, চুন্নুর পর মোনেম মুন্না, আরিফ খান জয়, আমিনুল কিংবা এমিলি, আলফাজের মত আইকনিক ফুটবলার অনেক দিন দেখা যায়নি দেশের ফুটবলে। সাম্প্রতিক সময়ে সেই আক্ষেপ ঘোচাবার দায়িত্বটা কাঁধে নিয়েছেন বর্তমান অধিনায়ক ডেনমার্ক প্রবাসী ফুটবলার জামাল ভূঁইয়া। যদিও সেই পথে যাবার আগে বাংলাদেশের দরকার নতুন কিছু। যার শুরুর কান্ডারি বসুন্ধরা গ্রুপ, সাইফ পাওয়ারটেকের মত কিছু প্রতিষ্ঠান, সেই সাথে বাংলাদেশ ফুটবল দলের তরুণ কোচ জেমি ডে।

ক্লাব ফুটবলে নতুন শক্তি, নতুন জাগরণ

আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে ঢাকাই লিগের উন্মাদনা ছিলো অন্যরকম। মোহামেডানে খেলে গিয়েছিলেন নাইরেজিয়ান বিশ্বকাপ স্কোয়াডের খেলোয়াড় এমেকা। এরপর নিয়মিতভাবে বিদেশীরা দলে এলেও এক সনি নর্দে ছাড়া আর কেউই লিগে বা অন্য কোথাও নিজের জাত চেনাতে সক্ষম হননি। সেই ধারায় দাগ বসিয়েছেন কলিন্দ্রেস কিংবা টেডি শেরিংহাম।

কোস্টারিকার হয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশ নেয়া কলিন্দ্রেস এবার লিগেরই সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের জার্সিতে। ঢাকায় এসেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ১৯৯৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে গোল করা চার্লি শেরিংহামের ছেলে টেডী শেরিংহাম। নতুন এইসব বিদেশী লিগের মান বাড়ালেও কাজের কাজ করেছে মূলত দেশীয় ফুটবল ক্লাবের মালিকপক্ষ।

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ক্লাব মার্চেন্ডাইজিং শপ খুলেছে বসুন্ধরা গ্রুপের অধীনস্থ ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। চলছে ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজও। শুরুতেই ঘরোয়া লীগের শিরোপা জয় করা এই ক্লাবের সামনের কার্যক্রম যে আরো গতিশীল হবে সে কথা বলাই বাহুল্য। ঘরোয়া ফুটবলে ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক আবাহনীও নিজেদের সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছে সদ্য সমাপ্ত এএফসি কাপে সেমিতে অংশ নিয়ে। উত্তর কোরিয়ান লিগের চ্যাম্পিয়ন দলের কাছে আবাহনী হার মেনেছে বাঘের মত লড়াই করেই। এছাড়া সাইফ পাওয়ারটেকের মালিকানায় থাকা সাইফ স্পোর্টিং আলো ছড়িয়েছে নিজস্ব ফুটবল কালচারের মাধ্যমে।

ছড়িয়ে যাচ্ছে লীগ, বাড়ছে প্রতিদ্বন্দীতা

সদ্যই রেলিগেটেড হলেও নবাগত দল হিসেবে আলো ছড়িয়েছে নোফেল স্পোর্টিং ক্লাব। নোয়াখালী, ফেনী আর লক্ষীপুরের প্রতিনিধি দল লীগে এসেই জমাট কিছু খেলা দেখিয়েছে। লিগে এবারের প্রতিযোগীতা দুই এক ক্লাবের মাঝে না থেকে ছড়িয়েছে অনেক দূর। শিরোপাজয়ী বসুন্ধরা কিংসের সাথে সমানে লড়েছে আবাহনী। সেই সাথে সাইফ স্পোর্টিং, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র এমনকি শেখ জামালও উপহার দিয়েছে দারুণ কিছু ম্যাচ। রেলিগেশন থেকে ইঞ্চিখানেক দূরে থাকলেও মোহামেডানও আশার বাণী দেখিয়েছে বেশ কিছু ম্যাচে। বিশেষ করে চিরশত্রু আবাহনীর সাথে তাদের চার গোলের জয় নতুন করে আশা দেখাচ্ছে মতিঝিল পাড়ার ক্লাব সমর্থকদের। যদিও নতুন করে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির কবলে সেই পথ থেকে মৌসুম শেষে অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে দলগুলো। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মোহামেডান কিংবা আরামবাগের মত ঐতিহ্যবাহী দলগুলো পড়েছে বিশাল সংকটে।

বয়সভিত্তিক দল… এবং নতুন স্বপ্ন

বাফুফের ফিক্সচার অনুয়ায়ী মাত্রই শেষ হলো বয়সভিত্তিক ফুটবল দলের টুর্নামেন্ট। ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে নোফেল অনুর্ধ্ব ১৮ এবং সাইফ স্পোর্টিং এর অনুর্ধ্ব ১৮ দল। দেশীয় দুই শক্তিধর ক্লাব বসুন্ধরা কিংস এবং আবাহনীর বিপক্ষে সেমিতে তাদের জয় ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে দেশের ফুটবলে। টুর্নামেন্টে নোফেল স্পোর্টিং ক্লাবের জয় বুঝিয়ে দিয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে এখনো মান সম্মত ফুটবলার আছে বাংলাদেশের। কিন্তু বাফুফে কি পারবে তাদের বড় করে তুলতে?

এছাড়াও সাফের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিলো বাংলাদেশ। যদিও আরো একবার ভারতের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট জেতা হয়নি তাদের। তবুও জাতীয় দল যেখানে প্রায় বছরখানেক নির্বাসিত ছিল ফুটবল থেকে সেখানে বয়সভিত্তিক দলের এই সাফল্য বাফুফে এবং ক্রীড়া অনুরাগীদের জন্য ছিলো বিশাল পাওনা।

বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এবং জেমি ডে

ব্রাজিলের এডসন সিলভা ডিডো, আর্জেন্টাইন ডিয়েগো আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি, কিংবা টোগোকে বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়া বেলজিয়ান টম সেইন্টফিস্ট… ২০১০ সালে এসএ গেমসে স্বর্ণপদক জয়ী জোরান দর্দেভিচের আগে পরে অনেকেই ছিলেন দেশের ফুটবলের ডাগআউটে। কিন্তু কাঙ্খিত সাফল্য দূরে থাক, জয়ের মানসিকতাই দেখাতে পারেননি অনেক কোচ। ভুটানের কাছে হেরে ২০১৭ সালের পর দীর্ঘদিন নির্বাসিত ছিলো দেশের ফুটবল।

এমন সময়ই রীতিমতো ত্রাতা হয়ে আসেন বিখ্যাত ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল একাডেমির ছাত্র জেমি ডে। ইংলিশ পঞ্চম বিভাগের দল থেকে সরাসরি বাংলাদেশ দলের এসাইনমেন্ট নিলেও আপাতত দারুণ কাজ করেছেন এই কোচ। দলের মাঝে রীতিমতো জয়ের মানসিকতা ফিরিয়ে এনেছেন জেমি ডে। জিততে কিংবা গোল করতে ভুলে যাওয়া দলকে একের পর এক জয় এনে দিয়েছেন ডে। সাফে সেমিতে জায়গা না হলেও ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। পিছিয়ে পড়েছিল কেবল গোল ব্যবধানে।

যদিও জেমি ডের দলে দরকার আরো কিছু টনিক। কেবলমাত্র সেট পিস নির্ভর খেলা কিংবা এলোমেলো লং পাসের ধারা থেকে বেরিয়ে আসা জেমি ডের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জও হয়ত নিয়ে ফেলবেন এই কোচ। ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে তিনি নিয়ে গিয়েছেন ফিফা এবং এএফসি কাপের বাছাইপর্বে। নতুন বাংলাদেশের সূচনার হয়ত এখানেই শুরু করেছেন জেমি ডে।

স্ট্রাইকার সমস্যা, সমস্যা গোলরক্ষকের

এত আশার ভিড়েও আক্ষেপ এই দুই জায়গায় রয়েই যাচ্ছে। আলফাজ বা এমিলির পর দীর্ঘদিন মানসম্মত স্ট্রাইকার আর পায়নি বাংলাদেশ। বর্তমান নাম্বার নাইন নাবীব নেওয়াজ জীবন আছেন গোলখরার মাঝে। বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার সহজ মিসের কারণেই মূল্যবান পয়েন্ট এবং অ্যাওয়ে গোল থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। মতিন মিয়া, কিংবা তরুণ জাফর ইকবাল জাতীয় দলে স্ট্রাইকার হলেও ক্লাবে খেলছেন উইংব্যাক কিংবা অন্য পজিশনে। এমন অবস্থায় সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।

গোলরক্ষকের দিক থেকেও আমিনুল-বিপ্লব যুগের পর আর কাউকে থিতু করতে পারেনি বাংলাদেশ। আশরাফুল ইসলাম রানা কিংবা শহিদুল ইসলাম সোহেল কেউই খুব বড় আস্থা হয়ে ওঠেননি। গোলরক্ষক নিয়ে জেমি ডে কে তাই পড়তে হচ্ছে বিশাল বিপাকে।

এতকিছুর ভিড়েও গল্পটা আশার। সবশেষ ৭ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় চারটি ম্যাচে। ড্র একটি এবং হার দুটি। সবশেষ কবে এমন সাফল্য ছিল ফুটবলে? এই প্রশ্নটিও অনেক বড় ভাবনার।

লেখক- জুবায়ের আহম্মেদ 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *